• এডিটরস চয়েস
  • ভ্রমণ
  • সব পোস্ট
এডিটরস চয়েস ধূপপানি ঝর্ণা

ধূপপানি ঝর্ণা

-

ধূপপানি ঝর্ণা

নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা ২২০- ২৭” ও ২৩০- ৪৪” উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১০- ৫৬” ও ৯২০- ৩৩” পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। রাঙ্গামাটির উত্তরে ভারতের ত্রিপুরা, মিজোরাম, দক্ষিণে বান্দরবান, পূর্বে মিজোরাম ও পশ্চিমে চট্রগ্রাম ও খাগড়াছড়ি। এ জেলা আয়তনের দিক থেকে দেশের সর্ববৃহৎ জেলা। দেশের এক মাত্র রিক্সা বিহীন শহর, হ্রদ পরিবেষ্টিত পর্যটন শহর এলাকা। এ জেলায় চাকমা, মারমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, মুরং, বোম, খুমি, খেয়াং, চাকমা, পাংখোয়া, লুসাই, সুজেসাওতাল, রাখাইন সর্বোপরি বাঙ্গালীসহ ১৪টি জনগোষ্ঠি বসবাস করে। রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান- এই তিন পার্বত্য অঞ্চলকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা সৃষ্টির পূর্বের নাম ছিল কার্পাস মহল। পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা থেকে১৯৮১ সালে বান্দরবান এবং ১৯৮৩ সালে খাগড়াছড়ি পৃথক জেলা সৃষ্টি করা হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার মূল অংশ রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে।

ধূপপানি ঝর্ণা বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার মনোহর ঝর্ণাগুলোর মধ্যে একটি ৷ এটা বিলাইছড়ির ফারুয়া ইউনিয়নের ওড়াছড়ি নামক স্থানে অবস্থিত। যেতে হলে কাপ্তাই হয়ে যেতে হয় ৷ ঐদিকে আরো বেশ কয়েকটি ঝর্না রয়েছে গাছকাটা, মুপ্পোছড়া ও ণ-কাটা ঝর্ণা । একটা জ্বীন ঝর্না ও রয়েছে তবে সেখানে মানুষ যেতে সাহস করে না , কথিত আছে সেখানে জ্বীন আছে ৷ শুনেছি বেশ কিছু আদিবাসী ও নাকি মারা গেছে সেখানে গিয়ে ৷

মনোহর এই ঝর্ণাটি একসময় লোক চক্ষুর আড়ালেই ছিলো বলতে গেলে । কথিত আছে এক বৌদ্ধ ভিক্ষু গভীর অরণ্যের এই ধূপপানি ঝর্ণার নিচে ধ্যান শুরু করেন । প্রথমে তিনি একনাগারে প্রায় তিন মাসের মত রাতদিন একটানা ধ্যান করেন এখানে ৷ পরে লোকাল আদিবাসীরা ঐ বৌদ্ধ ভিক্ষুকে দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময় বা উপলক্ষ্যে সেবা করতে গেলে এই ঝর্নাটি জন সম্মুখে প্রকাশ পায় ৷

নামকরণ


এর নামকরন ও বেশ সুন্দর তঞ্চঙ্গ্যা ভাষা থেকে এর উৎপত্তি ৷ ‘ধূপ ’ অর্থ সাদা আর তার সাথে পানি যোগ করে ধূপ্পানি হয়েছে ৷ ধূপপানি অর্থ সাদা পানির ঝর্ণা ৷

এই ঝর্ণার পানি খুব স্বচ্ছ আর যখন অনেক উঁচু থেকে তার জল নীচে তীব্র গতিতে নীচে পাথরে আছঁড়ে পড়ে তখন তা পাথরে সাথে সংঘর্ষে সাদা ফেনার মতন সৃষ্টি করে ৷ ভূমি থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১৫০ ফুট এর মতন । ঝর্ণা থেকে পানি আছড়ে পড়ার শব্দ প্রায় বেশ কয়েক কিলোমিটার দুর থেকেও শোনা যায়। বর্ষাকালে আরও দুর থেকেও শুনা যায় বলে বলেছেন অনেকে ৷

এই ঝর্ণার ওপরে একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু তাঁর আশ্রমে ধ্যান করেন। স্থানীয় ভাষায় এই বৌদ্ধ ভিক্ষুকে বলা হয় ‘ভান্তে’। তিনি সপ্তাহের ছয় দিন ধ্যান করেন৷ শুধু রোববারে খাবার খাওয়ার জন্য নিচে নেমে আসেন বলে কথিত। এই ছয় দিনে ভান্তে কোনো চিৎকার-চেঁচামেচি পছন্দ করেন না বলে জানা যায় । তাই শুধু রোববারেই প্রথম দিকে সবাইকে যাবার অনুমতি দিত ৷ এখন যে কোন দিনই ঝর্ণাটায় লোকজনের যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

 

ধূপপানি যাওয়ার পথে কাপ্তাই লেকের দুপাশের সৌন্দর্য্য যে কোন মানুষকেই বিমোহিত করবেই । লেকের উপর দিয়ে বয়ে চলা নানা রঙের-ঢঙ্গের, ছোটো-বড় নৌকাগুলা দেখতে বেশ সুন্দর লাগে আর তা মনকে দোলা দেয়াটাই স্বাভাবিক ৷ এসব নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে দেখতেই লম্বা সময়েয় পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাবেন বিলাইছড়ি । প্রায় আড়াই থেকে তিন ঘন্টার মত লাগে কাপ্তাই থেকে বিলাইড়িতে পৌঁছাতে ৷

বিলাইছড়ির মূল আকর্ষন যে তিনটি ঝর্ণা রয়েছে তার মধ্যে “ণ-কাটা ও মুপ্পোছড়া” যদি আপনার মকে প্রশান্তি এনে দেয় তবে আমি নিশ্চিত ধূপপানি আপনাকে তার বিশালতা আর সৌন্দর্য দিয়ে দিবে পরিপূর্ণ তৃপ্তি । প্রকৃতির অপার মায়ায় সৃষ্ট এই ঝর্না নিজের রুপে-গুনে-সৌন্দর্য্যে নিজেকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায় ৷ তার সৌন্দর্য আর বিশালতায় নিজেকে ধরে রাখা দুষ্কর ৷ নিজেকেই হারিয়ে ফেলে সবাই তার সৌন্দর্যের মাঝে ৷

ধুপপানি ঝার্ণার পথে লেখক
ধুপপানি ঝার্ণার পথে লেখক

ধূপপানি যাবার পথে বেশ কিছু আর্মির প্রথম চেকপোস্ট পড়বে। সেখানে বৈধ পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। এখানে বলে রাখা ভালো-সবার জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে ভাল অন্যথায় কলেজ/ভার্সিটি আই,ডি,কার্ড বা জন্মসনদ/পাসপোর্ট এর ফটোকপি সাথে রাখতে হবে । এটা প্রত্যেকের জন্যই লাগবে আর্মির পাশ নিতে ৷

কিভাবে যাবেন


কাপ্তাই জেটিঘাট থেকে বিলাইছড়ি দুই ভাবে যাওয়া যায় লোকাল এবং রিজার্ভ বোটে ৷ দেশের যেকোন জায়গা থেকে প্রথমে কাপ্তাই আসতে হবে ৷ তারপর কাপ্তাই জেটিঘাট থেকে লোকাল বা রিজার্ভ বোটে বিলাইছড়ি। লোকাল বোটের ভাড়া পড়বে ৬০ টাকা করে প্রতিজন এখন বাড়তেও পারে ৷ আর রিজার্ভ নিলে ২০০০-৩০০০। লোকাল বোট ছাড়া শুরু হয় সকাল ৮.৩০ থেকে। তারপর প্রতি ১/১.৩০ ঘন্টা পর পর বোট ছেড়ে যায়। লোকাল বোটে গেলে বিলাইছড়ি থেকে আবার বোট রিজার্ভ করে ওড়াছড়ি যেতে হবে ।

বিলাইছড়ি থেকে ওড়াছড়ি বোট ভাড়া পড়বে প্রায় ২০০০ টাকার মতো । দরদাম করে নিতে হয় ৷ সেখান থেকে লোকাল গাইড নিয়ে যেতে হয় ধূপপানি। গাইড ফি ৫০০-৬০০ টাকা। আর কাপ্তাই থেকে রিজার্ভ বোট নিলে ভাড়া গুনতে হবে প্রায় ৪০০০-৫০০০ টাকা কম বেশি ৷

থাকার ব্যবস্থা


বিলাইছড়িতেই থাকার ব্যবস্থা আছে। সেখানকার লোকালরা কটেজের মত কিছু স্থাপনা তৈরি করেছে ট্রাভেলারদের জন্য ৷ সেখানে থাকা যায় ৷ ভিতরে বাজারে বেশ কিছু খাবারের দোকান রয়েছে ৷ রুমের কোয়ালিটি এবং সাইজের উপড় ভাড়া নির্ভর করে। রুম ভেদে দুই থেকে পাঁচজন একসাথে থাকা যায় ৷
লেখা ও ভিডিও :

লেখা ও ভিডিও: Rabi Chandrabindu
সম্পাদনা : Asif shaikat
স্বত্ব : ব তে ব-দ্বীপ

Leave a Reply

সর্বশেষ

পান ব্যবসায়ীর বাড়িতে চাকুরী হতে যে রাজ্যপাটের ভিতঃ বালিয়াটির জমিদার বাড়ি

পান ব্যবসায়ীর বাড়িতে চাকুরী হতে যে রাজ্যপাটের ভিতঃ বালিয়াটির জমিদার বাড়ি আশপাশে সাভার, ধামরাইয়ের মতো প্রাচীন বনেদী সব জনপদ থাকতে...

এক অদ্ভুত, অপূর্ব সুন্দর পাখি – হরিকল

এক অদ্ভুত, অপূর্ব সুন্দর পাখি - হরিকল। ভাল করে বলতে চঞ্চুমোটা হরিকল। ইংরেজি নাম Thick Billed Green Pigeon. বৈজ্ঞানিক নাম...

পালং খিয়াং (Palong Khiyang) ঝর্ণা, বান্দরবন

পালং খিয়াং (Palong Khiyang) ঝর্ণা বান্দরবন জেলার আলীকদমে অবস্থিত। বেশ দূর্গম পথ , তবে মারাত্মক লেগেছে। ফ্লাশ ফ্লাডে পাহাড়...

আজিজ মাস্টারের বাড়ি

‘মুন্সী’ ‘খাঁ’ টাইটেল যে হিন্দুদেরও হয় তা জানতাম, তবে খুব একটা common  নয়। Afterall ‘মুন্সী’ শব্দটি ফার্সি। হিন্দু মুন্সী পদবীধারীর...

ঝরঝরি ট্রেইল

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড রেইঞ্জের সবচাইতে বুনো ট্রেইল বলা হয় এই ঝরঝরি ট্রেইলকে। এই ট্রেইলে মোটামুটি দেখবেন জোঁক, বানর, সাপসহ নানা...

পাঠক প্রিয়

চর কুকরী মুকরি, ঢাল চর, চর মনতাজ ভ্রমণ

চর কুকরী মুকরি, ঢাল চর, চর মনতাজ ভ্রমণ অল্প খরচেই আপনি ঘুরে আসতে পারেন বাংলাদেশের দক্ষিনের নদী ও সাগর বেষ্টিত ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়। হাতে ১...

এবার গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে দেখা মিললো তীব্র বিষধর ‘রাসেল ভাইপার‘ সাপ

গতকাল চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে রাসেল ভাইপারের দেখা মিলেছে।  পৃথিবীর ৫ম বিষধর সাপ এই রাসেল ভাইপার, আক্রমণে বিশ্বে ১ম ( মতান্তরে দ্বিতীয় )। অর্থাৎ...

মধুখাইয়া ট্রেইল ও ঝর্ণা, সীতাকুন্ড চট্টগ্রাম

২০১৭ সালের সেপ্টেমর মাস,কুরবানী ঈদের জাস্ট পরের দিন অপু নজরুল ভাইয়ের ফোন। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠলাম! ফোনে অপু ভাই বললো - ‘আসিফ ভাই! চলেন মধুখাইয়া...

কালচিতি / কালাচিতি / কালাচ / common krait

কালচিতি / কালাচিতি / কালাচ / common krait : একে বলা হয় রহস্যময় সাপ। ফনাহীন মারাত্মক বিষধর এই সাপে বাংলাদেশে এবং পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি মানুষ...

ভ্রমণ ডায়েরির পাতা থেকে, সাইংপ্রা: পর্ব – ২

সাইংপ্রা (২য় পর্ব) ভ্রমণ_ডায়েরির_পাতা_থেকে (৬ অক্টোবর,২০১৮) ভ্রমণ ডায়েরির পাতা থেকে, সাইংপ্রা (১ম পর্ব) আমার মাথার ঠিক পিছনেই মুটামুটি বড়সড় একটা চারকোণা জানালা কাটা আছে! একজনের স্লিপিং ব্যাগ সিংগেল...
error: Content is protected !!