কর্ণফুলীর তীরে জেলে জীবন
২৭ টা দিন সমুদ্রের অথৈই জলে। না বড় কোন জাহাজে নয় ওরা নাকি ভেসে থাকে ছোট মাছধরা ট্রলারে। জল, জাল, সমুদ্র আর মাছ এই কটা শব্দের বৃত্তের কেটে যায় ওদের নিশ্বাস দীর্ঘশ্বাসের গল্পটা।
চট্টগ্রামের অভয়মিত্র ঘাট, কর্ণফুলীর তীড়ে ওদের জমজমাট ক্যানভাস। চারদিকে মাছের আশঁটে গন্ধ এখানে।
কর্ণফুলীর তীরটা এখানে যেন এক বিশ্রামাগার। শতশত মাছ ধরা ট্রলার থেকে শুরু সাহসী ইসমাইল সবাই ক্লান্ত। তৈলাক্ত স্তর পরা শরীরগুলোর কদিনের ছুটি মিলেছে। সমুদ্রের নোনাজলের সহচর্য্যে যাওয়ার আগে এই কটা দিনই স্পর্শ মিলবে প্রিয়জনদের। সন্তানের মুখে বাবা ডাকটা কদিন পরেই হারিয়ে যাবে সমুদ্রের গর্জনে। এরই মাঝে পরিত্যত্ত জালে নতুন সুতোর প্রলেপ দিছে কেউ, সাথে চলছে ট্রলারগুলো সংষ্কার পরিচর্যা।
”পদ্মা নদীর মাঝির ”- কুবের গনেশের কথা মনে আছে ?। ইসমাইলের সাথে কথা বলতে বলতে ভাছিলাম, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় একটা উপন্যাস শুধু নয়। শত শত কবিতা, গল্প, গান, দেয়াল চিত্র থেকে শুরু করে শিল্পীর তুলতে আঁকা ছবি কিংবা ফটোগ্রাফারদের আলোক বন্ধী ফ্রেম বাদ পড়েনি কিছুই। বার বার ওরা শিল্প হয়েছে শিল্পীর। তবু মুক্তি মেলেনি। বদলায় নি ওদের দীর্ঘশ্বাসের সেই চিরচেনা মাঝি- মহাজন দৌড়াত্ব।
ওদের বুক পকেটে সুখের প্রচুর্য্য নেই। বুকে কান পাতলে আবেক পোড়ানোর শব্দ শুনা যায়। শব্দরা গল্প হয় আর গল্পের গহীনে কবিতা জন্মে; আক্ষেপের কবিতা…
রাজপথের পরিত্যক্ত দেয়ালচিত্র ওরা,
কিংবা গল্প উপন্যাসের উপেক্ষিত রাজপুত্র।
চারুকলায় তৈল চিত্রেও দেখলাম সেদিন
কবিগুরুর পদ্যের লাইনও বাদ পড়েনি।
বারবার শুধু শিল্প হয়েছে ওরা;
তবু মুক্তি মেলেনি।
ওরা ক্ষুধার্ত মানুষ।
ওদের মুখে ভাষা দেননি ঈশ্বর।
ওরা রোজ স্বপ্ন বুনে বেঁচে থাকার গল্পে
-রাজীব দাস