এক অদ্ভুত, অপূর্ব সুন্দর পাখি – হরিকল।
ভাল করে বলতে চঞ্চুমোটা হরিকল। ইংরেজি নাম Thick Billed Green Pigeon. বৈজ্ঞানিক নাম – Treron curvirostra. আরেকটি নাম…
এক অদ্ভুত, অপূর্ব সুন্দর পাখি – হরিকল।
ভাল করে বলতে চঞ্চুমোটা হরিকল। ইংরেজি নাম Thick Billed Green Pigeon. বৈজ্ঞানিক নাম – Treron curvirostra. আরেকটি নাম…
পান ব্যবসায়ীর বাড়িতে চাকুরী হতে যে রাজ্যপাটের ভিতঃ বালিয়াটির জমিদার বাড়ি
আশপাশে সাভার, ধামরাইয়ের মতো প্রাচীন বনেদী সব জনপদ থাকতে গাজীখালির চরে বসে জমিদারী করতে গেলো কেন? অবশ্য জমিদারীর যখন শুরু, তখন আর চর ছিলো না। আর শুধু তখন কেন, এর চার পুরুষ আগেও মোকাম ছিলো, বালিয়াটি না হোক, অন্তত সাটুরিয়াতে।
এর অনেক আগেই নদীর বালি জমে জমে চর হয়ে জেগে উঠেছে বিস্তীর্ন ভূমি। আর এই ভূমির মাটি কেটে কেটে ভিটে করে বসতি করেছে লোকজন। এজন্যই নাম ‘বালিয়াটি’ আর এতো এতো পুকুর বালিয়াটিতে। এটাও অনেকটা বালিয়াটি নিয়ে লেখা লেখকের অনুমান।
মোকাম ছিলো বলছি কেন? বাড়িতে কর্মচারী রাখতে পারেন যে ব্যবসায়ী, তাও পানের ব্যবসা, ব্যবসা বড়ই ছিলো বলতে হবে। আর বড় ব্যবসা থাকতো মোকামেই।
বালিয়াটির কপালেই লেখা ছিলো এত্তো এত্তো দালান কোঠা ( শুধু পুকুর পাড়ের চারটি নয়, অনেকগুলো আছে), এতো আগে ছোট্ট এতোটুকুন এই জনপদে ইস্কুল, ডিসপেনসারি, মন্দির, মসজিদ।
আর এটা লেখা হয়ে যায় ভাগ্যান্বেষণে বালিয়াটিতে আসা কিশোরটি যেদিন পা রাখে বালিয়াটিতে। মাণিকগঞ্জের ঘিওরের বিনোদপুর থেকে আসা কিশোরটি চাকুরী নেয় পান ব্যবসায়ীর বাড়িতে। সেদিনই উপরওয়ালা বালিয়াটির বুকে লিখে রেখে দেন বালিয়াটির বুকে ‘জমিদারী’ নামে ছোটখাটো এক ‘সাম্রাজ্যের’ নাম।
এই কিশোরটির নাম মহেশরাম, মহেশরাম সাহা। এখানে তাঁর আগমন হয়তো ১৭০০ খৃষ্টাব্দের এদিক ওদিক, কারণ এই জমিদার বাড়ির গোড়া পত্তন হয় ১৭৯০ খৃষ্টাব্দে। চার পুরুষের মাথায় এই গোড়াপত্তন করেন পানের ব্যবসায়ীর বাড়িতে চাকুরে নেয়া এই ঘনশ্যামের চার প্রপৌত্র *১।
এটাও এক ভালো লাগার ব্যাপার যে পশ্চিমে কান্যকুব্জ অযোধ্যা বা বাঁকুড়া পর্যন্ত যেতে হয় নি এই বাড়ির শেকড়ের খোঁজে। পারস্য আফগানিস্তান তো আরো পশ্চিমে।
প্রায়শই দেখা যায় জমিদার বা রাজাদের আদিপুরুষ এসেছেন পশ্চিম থেকে। বৃহত্তর সিলেটের আমার জানা তিনটে বাড়ির কথাই বলি।
বানিয়াচং এর রাজবাড়ির আদিপুরুষ কেশব মিশ্র এসেছিলেন কান্যকুব্জ হতে। হাসন রাজার আদিপুরুষ বিজয় সিংহ দেব অযোধ্যা থেকে আর আমদের বাড়ির পাশের সুনামগঞ্জের বেহেলীর করুণা সিন্ধু রায়ের পূর্বপুরুষ এসেছিলেন বাঁকুড়া থেকে।
এই বাড়ির পূর্বপুরুষ এসেছিলেন মানিকগঞ্জেরই ঘিওর থেকে। একেবারেই মাটির কাছাকাছির লোক, উচ্চাশা থেকে নয়, পেটের দায়ে বাড়ি ছেড়ে চাকুরী নিয়েছিলেন এক পান ব্যবসায়ীর বাড়িতে।
পেশা হিসাবে পান ব্যবসা করে অহংকার করার কিছু নেই। তাই নিজ কন্যাটিতে এই পান ব্যবসায়ী পাত্রস্থ করেন নিজ বাড়ির এই কর্মচারীর কাছে। এর পর শ্বশুরের সাথে ব্যবসায় হাত লাগান গোবিন্দপুর থেকে আসা ঘনশ্যাম।
পানের ব্যবসা থেকেই ঘনশয়াম উন্নীত হন প্রথম শ্রেণীর ব্যবসায়ীতে।
ব্যবসা সাধারণত দুই পুরুষের বেশী টিকে থাকে কমই। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিলো এই পরিবারটির প্রতি। পর পর চার প্রজন্ম – ছেলে, নাতি, ‘পুতি’, শনৈ শনৈ উন্নতি করতে থাকে ব্যবসায় – পান থেকে লবণ, সুপারী, চাল, নানান সব দ্রব্যে।
এই পরিবারের ভাইয়েদের ব্যবসা কেন্দ্র বিস্তৃত হয় সিরাজগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ঝালকাঠি।
ঘনেশরামের তৃতীয় প্রজন্মের চার পৌত্র ( Grandson) আনন্দরাম, দধিরাম, পন্ডিতরাম ও গোলাপরাম প্রথমে ব্যবসা শুরু করেন একত্রে, পরে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। পরে এই চারজনের হাতেই পত্তন হয় গোলাবাড়ি, পূর্ব বাড়ি, পশ্চিম বাড়ি, মধ্যবাড়ি ও উত্তর বাড়ি নামে পাঁচটি জমিদার বাড়ির।
শুরু করেছিলাম, গাজীখালী নদীর চরের মাঝের পল্লীতে জমিদারীর পত্তন করতে গেলো কেন।
বালিয়াটির দক্ষিণ পূর্ব পাশে চর পাড়া, পশ্চিম উত্তর পাশে চর ভাটারা, উত্তর পূর্ব পাশে জোয়ার আমতা, চর আর নদীর জোয়ার ভাটা সংশ্লিষ্ট সব নাম। বালিয়াটিও যে গাজীখালীর বুকে জেগে উঠা বালিতে ভরা চর, তাতে আর সন্দেহ কি।
বালিয়াটিতে স্থায়ী যা কিছু, সবইতো জমিদারদের কারো না কারো নয়তো তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় করা।
বালিয়াটি পুরান বাজারের কালীমন্দিরটি ভেবেছিলাম আগেকার। কিতু এটিও দেখছি জমিদার পরিবারের পশ্চিম বাড়ির হীরালাল রায়ের দত্তক পুত্র চুণীলাল রায়ের দেয়া। এটির প্রতিষ্ঠা কাল ১৩৪৩ বঙ্গাব্দের ৮ ই ফাল্গুন।
বালিয়াটির প্রথম মসজিদটিও (১৯৬৬ সালে) বালিয়াটির জমিদারদের দেয়া ঈশ্বর চন্দ্র স্কুলের জায়গায়। তাহলে আগে ছিলো কি?
হীরালাল রায় ছিলেন জগন্নাথ হল, জগন্নাথ কলেজ যাঁর নামে, সেই জগন্নাথ রায় চৌধুরীর পৌত্র, জগন্নাথ কলেজের প্রতিষ্ঠাতা কিশোরী লাল চৌধুরীর ভাতুষ্পুত্র।
বলতে গেলে অতি সাধারণ কিছু কৃষক জেলে কামার কুমার-দের বসতি নিয়ে ক্ষুদ্র এক পল্লী, হয়তো বাজার বা মোকাম ছিলো একটা। আর ‘জমিদারী’ নামে ছোটখাটো এক ‘সাম্রাজ্যের’’ যে কথা বললাম?
জমিদারির শুরুর পর প্রসার, বিভাজন হয়ে জমিদারি হয় গোটা চার পাঁচটি। এই বাড়ির জমিদারীর বিস্তৃতি ছিলো ঢাকা, ময়মনসিংহ , বরিশাল, ফরিদপুর ও তৎকালীন ত্রিপুরা জেলায়।
তবে এঁদের ব্যবসাপাতির যে নেটওয়ার্ক, অনুমান হয় জমিদারি শুরুর পরও এদের আয়-ইনকামের উৎস ছিলো মূলত ব্যবসা। শুধু নিজেদের জন্য প্রাসাদ, একাধিক বিদ্যালয় ও মন্দিরই নয়, দুর্ভিক্ষকালে আর্তের সহায়তার রেকর্ডও আছে এই বাড়ির।
*১ মহেশরামের ছেলে ঘনেশরাম, ঘনেশরামের চার ছেলের বড় ছেলে গোবিন্দরাম, গোবিন্দরামের চার ছেলে আনন্দরাম, দধিরাম, পন্ডিতরাম ও গোলাপরাম।
তথ্যসূত্রঃ বালিয়াটির যত কথা, প্রকাশক রনি সাহা, প্রথম প্রকাশ নভেম্বর ২০১০ সাল ( Save the Heritage Of Bangladesh গ্রুপ ও পেজের এডমিন অধ্যাপক জনাব সাজ্জাদুর রশিদ বইটির অনেকগুলো পৃষ্ঠার ছবি সরবরাহ করায় লেখাটি গুছানো সম্ভব হলো)
ভাল করে বলতে চঞ্চুমোটা হরিকল। ইংরেজি নাম Thick Billed Green Pigeon. বৈজ্ঞানিক নাম – Treron curvirostra. আরেকটি নাম দেখলাম ঠোটমোটা হরিয়াল, খুব সম্ভবত পশ্চিম বাংলার নাম।
হরিকলেরা চিরকাল ই লাজুক প্রকৃতির পাখি। কোন এক ভুলে মানুষের খুব কাছে বাসা বেঁধে ফেলেছিল এই পাখিদের এক জোড়া, আর যায় কোথায়? ঢিল ছুড়ে আর চিৎকার করে ওকে বাসা ছেড়ে দেওয়ার সব রকম আয়োজন করে ফেলল একদল মানুষ। কিন্ত মায়ের কি মমতা, এত কিছুর পরেও বাসা ডিম ছেড়ে যায় নি।
প্রাণিদের প্রতি মানুষের আচরন সংক্রান্ত লিফলেট বিতরণ খুব জরূরী৷ অনেকে জানেন ই না, পাতার ফাঁকে লুকিয়ে থাকা ডিমে তা দিতে থাকা মা পাখিকে বিরক্ত করা অত্যন্ত অনুচিত, আমি এক গ্রুপ ঘুরতে আসা মেয়েদের বোঝাতে সক্ষম হই অবশ্য, খুব সম্ভবত প্রচারণা আর সচেতনতা বাড়ালে অনেকেই এই অন্যায়গুলো আর করবেন না
চঞ্চুমোটা হরিকল কিংবা শুধুই হরিকল পাখি আকারে ২৫-৩০ সেমি, ওজন ১৭০-১৯০ গ্রাম। মার্চ থেকে আগস্ট এরা প্রজনন করে। সাদা রঙের দুইটা ডিম দেয়, পুরুষ এবং মেয়ে পাখি দুজনেই ডিমে তা দেয় ( সম্ভবত পালা করে)। এদের পুরুষ এবং স্ত্রী পাখি দেখতে আলাদা কিন্ত। পুরুষের পিঠে মেরুন রঙ, যা স্ত্রী পাখির থাকে না। এদের বেশ বড় বড় অনেকগুলি ঝাঁক দেখেছি, কিন্ত এতটাই দূরে সেসবের কোন ভাল ছবি তোলা সম্ভব হয়নি।
এই ছবিটি অবশ্য ওর বাসায় তোলা না। অন্য ডালে উড়ে এসে বসেছিল তখন তুলেছি। কেবল বৃষ্টি নামবে, আকাশ মেঘে মেঘে ছেয়ে গেছে, এরকম সময়েই ওর একটা ছবি তুলতে পেরেছি। ও উড়ে এসে বসেছিল এক ডালে, কৌতুহলি চোখে দেখছিল, আমি ক্যামেরা না ছুয়ে প্রাণভরে ওকে দেখলাম, সব মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দী করতে নেই, অনেক মুহূর্ত সুখের মত মনে গেঁথে নিতে হয়।
পালং খিয়াং (Palong Khiyang) ঝর্ণা বান্দরবন জেলার আলীকদমে অবস্থিত। বেশ দূর্গম পথ , তবে মারাত্মক লেগেছে। ফ্লাশ ফ্লাডে পাহাড় ধ্বসে দুসরি ছড়ার একটা পথ ব্লক হয়ে যাওয়ায় আমাদের বিকল্প পাহাড়ি রাস্তা বেছে নিতে হয়েছে যা বর্ষায় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো ।
সাধারণ তৈনখালের পাথুরে রাস্তা দিয়ে, কখনো-বা উঁচু পাহাড় ডিঙ্গিয়ে পালং খিয়াং ঝর্ণায় যেতে হয়। পথে তৈন / টোয়াইন খালের যে নৈসর্গিক রূপ আপনাকে সম্মোহিত করবেই ।
আমরা যাত্রা শুরু করলাম ০৮/০৬/২০২৩ এ, প্রচন্ড তাপদাহের পর মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি ।
আলীকদম বাদে বান্দরবানের বেশিরভাগ উপজেলা নিরাপত্তাজনিত কারণে ভ্রমণ নিষিদ্ধ এখন। আমরা মোট ৬ জন ট্যুরমেট । তাঁবু , বড়শি সব রেডি আমাদের ।
এর মধ্যে বড়ভাই Anowarul Azim বড়শির পোকা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন, পাহাড়ে মাছ মারার অভিজ্ঞতা আমার তেমন একটা নেই । এই ট্যুরে সেটাও হয়ে গেলো !
রাতের পালং খিয়ং, চলছে মাছ ধরা
Anowarul Azim ভাই এর সাথে মাছ ধরলাম
মহাশোলের ছানা , এই পালং খিয়ং ঝর্ণা বেশ গভীর
তৈনখালের বাঁকেই আলিকদমের পাহাড় চূঁড়ায় মুরুং, ত্রিপুরা, মার্মাদের খড় ছাওয়া ঘর, পাহাড়র উপর মারাত্নক সুন্দর ছোটো ছোটো জুম ঘর , প্রচুর ঝিরি-ঝর্ণা , নেটওয়ার্কহীন কয়েকটা দিন – প্রকৃতি আপনার জন্য উন্মুক্ত করে দেবে তার অপার সৌন্দর্য । পালং খিয়াং এর রূপ দেখতে যাওয়ার আগে আপনাকে পাড়ি দিতে হবে তৈনখালের পাথুরে চমৎকার পথ , তৈনখাল খরস্রোতা মাতামুহুরীর একটি উপনদী।
পালং খিয়াং ডাউনস্ট্রীম
বার্ডস আই ভিউ – জুম ঘরের
পালং খিয়াং এর উপরের ঐ জুম ঘরেই কাটাতে হবে রাত , এর পাশেই পালং খিয়াং ঝর্ণার আপার স্ট্রীম
এই জুম ঘর থেকে পালং খিয়াং এর তিনটা স্ট্রীমই দেখা যায়, জায়গাটা বেশ উঁচুতে , পিচ্ছিল এবং বিপদজনক
দুসরি ছড়ার চারপাশের পাহাড়ি আদিবাসী জীবন
আমতলিঘাট , আলী কদম । এখান থেকেই যাত্রা তৈন খাল ধরে
পাহাড়ি জীবন , দেশি গরু চরে বেড়াচ্ছে
হাজরাম পাড়া খ্রীস্টান অধ্যুষিত
পাহাড়ি জুম ঘর
হাজরাম পাড়ায় ছোট্ট দোকান
পালং খিয়ং , ঐ যে উপরে জুম ঘর আমাদের
জুম ঘর থেকে আকাশ
সূর্য্যের খেলা
Rupok Anis Ahmed দা আর Arif Ahmed Mamun – আদিবাসী ছোট্ট শিশুর সাথে
Muztafa D Zakwan Arif Ahmed Mamun এর সাথে
এ খালের দু’পাশজুড়ে ঘন পাহাড়ি বনে সারা বছরজুড়েই থাকে বন্যপুষ্পের সাম্রাজ্য।
কয়েক প্রজাতির প্রজাপতি , কিছুদুর পরপর ছোটখাট ঝর্ণাধারা , শোনা যাবে গাছের ডালে ডালে নানা রঙের কয়েকশত প্রজাতির পাখির কিচির মিছির শব্দ।
কিন্তু সব শব্দকে ছাড়িয়ে নিজের অস্তিত্বকে তিনটি পানি স্রোতের কুলুকুল ধ্বনিতে জানান দেয় পালং খিয়াং ঝর্ণা। এ বুনো ঝর্ণার প্রকৃতিক রূপে যেকোন পর্যটক মুগ্ধ হন।
থানকোয়াইন , পালং খিয়াং দুটি চমৎকার ঝর্ণা দেখে , একবুক ভালোলাগা নিয়ে ঢাকায় ফিরে এলাম ১২/০৬/২০২৩ সকালে ।
যাওয়ার উপায় –
রুট-১ : আলীকদম>পানবাজার>আমতলী নদী ঘাট। নৌকাযোগে তৈনখাল দিয়ে সরাসরি দোছরি বাজার। এরপর তৈনখাল দিয়ে হেঁটে থাঙ্কুয়াইন ঝর্ণা>হাজরাম পাড়া>পালংখিয়াং ঝর্ণা।
রুট-২ : এরপর আলীকদম-থানচি সড়কের ১৩ কিঃ মিঃ। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে দোছরি বাজার>থাঙ্কুয়াইন ঝর্ণা>হাজরাম পাড়া>পালংখিয়াং ঝর্ণা। হাজিরাম পাড়া থেকে এ ঝর্ণায় যেতে ৩-৪ ঘন্টা হাঁটতে হবে আপনাকে ।
‘মুন্সী’ ‘খাঁ’ টাইটেল যে হিন্দুদেরও হয় তা জানতাম, তবে খুব একটা commonনয়। Afterall ‘মুন্সী’ শব্দটি ফার্সি।
হিন্দু মুন্সী পদবীধারীর সংযোগ পেলাম এই বাড়িটিতে এসে। বাড়িটি শরীয়তপুর কলেজ রোডে। এখন এই বাড়িটি পরিচিত ‘আজিজ মাস্টারের বাড়ি’ বলে।
বাড়িটির পেছন দিক রাস্তার দিকে। আগে হয়তো এমন ছিলো না। রাস্তাটা বোধ হয় পরে হয়েছে। সমুখে বেশ ভালো ফাঁকা জায়গা, এরপর বসতবাড়ি।
সুন্দর, এখনো প্রায় অক্ষত, একটু ‘পালিশ‘ করলেই একটা ‘piece of art’ এ রূপ নেয়ার মতো। কিন্তু বাড়িটা পরে আছে পরিত্যক্তের মতো। এমন অনাদরে ফেলে রাখার কোন কারণ মাথায় আসছিলো না। কবেকার কার তৈরী করা, কোন ইঙ্গিতই পাই নি ‘আজিজ মাস্টার’ এরবাইরে। এজন্য চুপ ছিলাম এই বাড়ি নিয়ে।
পরে কিছুটা আদ্যোপান্ত পাওয়া যায়‘Save The Heritage Of Bangladesh’ পেজ এর এডমিন জনাব সাজ্জাদুর রশিদের এক পোস্ট থেকে।
‘আজিজ মাস্টার‘ হচ্ছেন অধ্যাপক আজিজ। তিনি বা তাঁর পরিবার থাকেন ঢাকা। বাড়ির বড় ছেলে একজন স্থপতি। তাঁর কাছ থেকেই জানা গেছে বাড়িটির অতীত ইতিহাস।
বাড়িটির নির্মান দেশভাগের ঠিক আগে আগে ১৯৪৬ সালে। এটি নির্মান করেছিলেন যজ্ঞেশ্বর মুন্সী নামের জনৈক ব্যবসায়ী।
যজ্ঞেশ্বর মুন্সীর পূর্বপুরুষের কারো হয়তো পেশা ছিলো ‘মুন্সীগিরি’। সায়েবদের দোভাষী। তিনি নিশ্চয়ই টুক টাক ইংরেজী জানতেন আর মোটামুটি জানতেন ফার্সি। একটি যোগ্যতাই যথেষ্ঠ ছিলো মুন্সীগিরির।
হয়তো মুন্সীগিরি করেই ভাগ্য ফিরিয়েছিলেন বংশের। এর থেকে মূল পদবী ( ঘোষ, রায়, মন্ডল বা বসু – বামুন কায়েত যাই হোক) খসে যেয়ে নুতন টাইটেল লেগে যায় শুধু মুন্সী।
মুন্সীগিরি পেশার পশারও খুব বেশী দিন ছিলো না। তাই দু এক প্রজন্ম বসে বসে খেয়ে এক প্রজন্ম হয়তো ধরে ব্যবসা। তেমনই একজন ব্যবসায়ী, আমরা অনুমান করতে পারি, যজ্ঞেশ্বরমুন্সী।
ব্যবসা করে তারও আয় উন্নতি সম্ভবত খুব বেশী একটা আগের নয়, কারণ বাড়িটা তিনি করেছিলেন ১৯৪৬–এ। তবে ১৯৪৭–এ তিনি দেশ ত্যাগ করেননি। কারণ বাড়িটা তাঁর কাছ হতে হাত বদল হয় ১৯৫৮ সালে। এরপরই দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান যজ্ঞেশ্বর মুন্সী।
বাড়িটি তিনি বিক্রি করে যান জনৈক আজিজ নক্তির কাছে। এই ‘নক্তি’ টাইটেলও আমি দেখলাম এই প্রথম।
পরবর্তীতে বেশ কবার হাত বদল হয় বাড়িটি – প্রথমে লতিফ ভূইয়া, এর পর হাশেম নক্তি, ফাইন্যালি ১৯৭৯ সালে বর্তমান মালিক অধ্যাপক আবদুল আজিজ মিয়া।
মূল নির্মাতা বিক্রি করে যাবার পর ২১ বছরের মাঝে ৩ বার হাত বদল! বুঝাই যাচ্ছে বাড়িটা কারোরই মনে ধরে নি। মনে ধরলে নিয়েই এভাবে পটাপট ছেড়ে দিতেন না। এর পর ৭৯ থেকে হয়ে গেছে ৪৩ বছর। এতোদিনেও এই ঘরে বসবাসের উদ্যোগ নেন নি অধ্যাপক আবদুল আজিজ মিয়া!
কিছুটা রং চং–এর চিহ্ন আছে।
হয়তো ভাড়া চলে না, তাই খরচ করে একটু ঠিকঠাক করতেও মনে ধরে নি। নিজেরা তো থাকেন ঢাকা। এটা বাসোপযোগী করে লাভ কি?
এই মানসিকতা থেকেই পড়ে আছে কিনা বাড়িটি কে জানে? এর পর কার হাতে পড়ে? নাকি এমনি এমনি পড়ে থাকবে শ্যাওলা ধরে; আর আমার মতো বাইরের তারা যেয়ে মাঝে মাঝে ছবি তুলে আসবে জানালা দিয়ে মাথা গলিয়ে!
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড রেইঞ্জের সবচাইতে বুনো ট্রেইল বলা হয় এই ঝরঝরি ট্রেইলকে। এই ট্রেইলে মোটামুটি দেখবেন জোঁক, বানর, সাপসহ নানা প্রাণী। এছাড়া ফলের মৌসুমে এই ট্রেইলে পাবেন আম, কাঁঠাল, জামসহ আরও নানাকিছু।
সীতাকুন্ড এর নিকটবর্তী পন্থিছিলায় এর অবস্থান। এই ঝর্ণাটায় বলা যায় প্রায় সারা বছরই কমবেশি পানি থাকে। তাই একেবারে কাঠফাটা রোদের সিজন বাদ দিয়ে যে কোনো সময় ঘুরে আসতে পারেন। যারা ঝর্নায় ঘুরে আসতে চান তারা এই ঝর্ণাটায় যেতে পারেন। বৃষ্টি কম হলেও পানি পাবেন।
ঝরঝরি ট্রেইল
ঝরঝরি ট্রেইল
ঝরঝরি ট্রেইল
ঝরঝরি ট্রেইল
যাওয়ার উপায়ঃ
সীতাকুণ্ড পন্থিছিলা বাজারে নেমে উত্তরপাশে সোজা রোড ধরে হেটে ঝিরি ধরে ১/১.৩০ ঘন্টা হাঁটলেই এই ঝর্ণার দেখা পাবেন। ঝর্ণার উপরে সুন্দর একটা ক্যাসকেট এবং একটা খুম দেখবেন। তার থেকে আরও ঘন্টাখানেক হেঁটে ভেতরে গেলে দেখবেন মূর্তিঝর্ণা এবং মাইনের মার খুম।
যারা চেনেন না তারা স্থানীয় একজন গাইড ২০০/৩০০ টাকা দিয়ে নিয়ে যাওয়া ভাল।
গতকাল রাত থেকেই মাথায় শুধু এই নামটাই ঘুরছে। ঘুরবেনাই বা কেনো ? এমন চাঁদ রাতেই ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছিলাম এই নামের এক পাহাড়ের খোঁজে।
তারিখটা সঠিক মনে নেই
সাল ২০২১ ৷ নাইট শিফট থাকায় রাতেই ব্যাগ নিয়ে অফিসে চলে যাই ৷
সে এক মহা বিপদ ৷৷আমার এত বড় ব্যাগ দেখে গেইট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে সব সিকিউরিটি গার্ড বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। স্ক্যানিং মেশিনে ব্যাগ দিলাম কিন্তু ব্যাগ ঢুকে না ৷আমার ব্যাগের তুলনায় কোম্পানির স্ক্যানিং মেশিন ছোট ৷
কোম্পানি মেশিন ক্রয় করার সময় হয়তো ভাবেইনি আমার মতো কেও কোনদিন এখানেজয়েন করতে পারে ৷
মহা বিপদ, ব্যাগের সাইজ আর ওজন দেখে তারা রীতিমত ভয়ে ভয়ে তাকাচ্ছে আমার দিকে ৷ব্যাগ যেহেতু স্ক্যানিং মেশিনে ঢুকছে না তাই সব খুলেই চেক করা লাগবে ৷আমিও এখন টেনশনে পড়লাম, এই ব্যাগ প্যাক করতে আমার ২ দিন লাগছে ৷
ব্যাগ আমি খুলে দিলাম ৷একটা একটা করে জিনিস দেখছে,
আমি পাশে বসে তাদের রিয়েকশন দেখছি ৷বেশ কিছু জিনিস বুঝতে অসমর্থ রয়েছিলতারা, আমার কাছে জিজ্ঞেস করে নিলেন।
ইতি মধ্যে সিকিউরিটি গার্ড অফিসার এসে হাজির ৷ বুঝলাম ভয়ে ব্যাপার টা তারা কোথায় অব্দি পৌঁছাইছে । উনি এসেই বলে দিলো আমি ব্যাগ নিয়ে ভিতরে যেতে পারবো না ৷জমা দিয়ে ভিতরে যেতে হবে ৷ আমি রাজি না, আমি ব্যাগ রেখে যাব এটা হয়না ।
ফোন দিলাম আমার ডিপার্টমেন্টের ডিজিএম স্যারকে ।উনি ব্যাপারটা শুনেই এক গাল হাসি দিয়ে আমার কল কেটে সিকিউরিটি ম্যানেজারকে কল দেন ৷ পরে ম্যানেজার সিকিউরিটি অফিসারকে কল দিতেই বেচারার চোখ মুখ দেখার মতো অবস্থা ছিলো ৷
অবশেষে আমি আমার ব্যাগ নিয়ে ঢুকে পড়লাম ৷
ভোর সকালে বের হওয়ার সময় ভেবেছিলাম আবার প্যারা খাইতে হবে, ব্যাগ খুলে চেকিং এর ৷
কিন্তু না, আমি এসে কাঁধ থেকে ব্যাগ নামাচ্ছি এমন সময় সিকিউরিটি অফিসার পিছন থেকে ডাক দিয়ে বললেন দাদা ব্যাগ খোলা লাগবে না, আপনি যান ৷আর রাতের জন্যে দুঃখিত ।
আমিও মাথা নাড়িয়ে বেড়িয়ে গেলাম।
গাড়ি ধরে সোজা জি ই সি নামলাম ৷ রাস্তা পুরাই ফাঁকা, বিমান চালাইছে নাকি বুঝলাম না । এদিকে আমি ২নম্বর গেইট এসে বসে আছি , আর আমার শহরের ট্যুর পার্টনাররা তখনো বিছানায় শোয়া ৷
নয়নকে কল দিয়ে বাকিদের খোঁজ নিলাম ৷প্রায় এক ঘন্টা অপেক্ষা করার পর সবাই একত্রিত হলাম।
ঈদের নামাজ চলছে তখন, আমরা আমাদের যাত্রা শুরু করলাম ৷ অক্সিজেন পৌঁছে হালকা নাস্তা করে বাসে করে চলে গেলাম রাঙামাটি ৷ তখন দুপুর ১২টা।
রাঙামাটি পৌঁছেই বাজার থেকেআমাদের প্রয়োজনীয়খাদ্য সামগ্রী কিনে নিলাম ৷ সাথে একটা লিজেন্ডারি মুরগি ৷ লিজেন্ড কেনো বললাম পুরো গল্পটা পড়লে বুঝতে পারবেন ৷
বাজার করে বোট ঠিক করলাম, গন্তব্য জুরাইছড়ি । আকাশ হঠাৎ মেঘলা হয়ে গেছে , একদম কালো মেঘে ঢেকে গেছে ৷ সামনে যে খারাপ কিছু অপেক্ষা করছে প্রকৃতি তার আগাম বার্তা জানাচ্ছে আমাদের। কিন্তু আমরা ঐসব এত না ভেবে বোটে উঠে পড়লাম।
১০মিনিট পরেই শুরু হলো মুষল ধারায় বৃষ্টি ৷কর্ণফুলী নদীকে তখন বঙ্গোপসাগরের রূপে দেখছি ৷ ভয়ঙ্কর সুন্দর, ভয়ঙ্কর অ্যাডভেঞ্চার । কিছুদূর গিয়ে আর সামনে আগানো সম্ভব হচ্ছিলো না,তাই মাঝি ভাই বোটটা কোন একটা পাড়েরকিনারায় লাগিয়ে দিলেন ৷ বাতাস আর বৃষ্টি একটু কমার অপেক্ষা করছি আমরা ।
বৃষ্টি থামার পড় আবার যাত্রা শুরু হলো আবার ৷ শুভলং ঝর্নার ঐ জায়গা গিয়ে বোটেরমাঝি আর্মিদের আমাদের দেখায়, কিন্তু আর্মি ভালো ভাবে খেয়াল না করে আমাদের পাহাড়ী ভেবে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দেন ৷ মূলত বাঙালি এই ক্যাম্পের পরে আর যেতে পারেনা, বাঙালি যাওয়া নিষিদ্ধ। আমাদের গায়ের উপর একটা সাদা তিরপল দেয়া থাকায় আমাদের হয়ত ভালো ভাবে খেয়াল করেনি। তার পরে আরো একটি ক্যাম্প আসে ৷ বৃষ্টির কারণে তারাও ভালো ভাবে চেক না করে অনুমতি দেন যাওয়ার ৷ তারপর জুরাইছড়ি ক্যাম্প আসে, ওটাও পাড় করে যাই আমরা।
জুরাইছড়ি বাজারে নামার পর ঐখানের মানুষগুলো আমাদের দিকে কেমন করে যেনো দেখছিলো বার বার ৷ আমরা আমাদের গন্তব্যে হাঁটা শুরু করলাম। ৩ ঘণ্টা ট্রেক করে বিকেল ৫ টার দিকে আমরা পাংখু পাড়া পৌঁছাই। পাড়ায় ঢুকতে একটা বিশাল বড় আম গাছ, দারুন সুন্দর দেখতে । স্কুল আছে একটা ৷ সুন্দর গোছানো পাড়া ।
পাড়ার লোকগুলো আমাদের দিকে দেখছে, ছোট ছোট বাচ্চারা ঘিরে ধরেছে ৷আমরা জানতে চাইলাম এই পাড়ার কারবারি কে?
বাচ্চাগুলো আমাদের কারবারির বাসায় নিয়ে গেলো। আমরা জানালাম আমরা কোথা থেকে এসেছি, আর কেনো এসেছি।
দুপুরে খাওয়া দাওয়া হয়নি আমাদের, বেশ ক্ষুধার্ত ছিলাম আমরা সবাই ৷ কারবারি কে বলায় উনি আমাদের অর্ধেক কাঁঠাল দিলেন খাওয়ার জন্য, যা আমরা ৪ জনে খেয়েও আরো বেচেঁ গেছে ৷ এমনিতে কাঁঠাল তেমন খাইনা আমি, কিন্তু ঐদিন কাঁঠাল যেন সবচেয়ে প্রিয় ফল আমার সেভাবে খাচ্ছিলাম।
কারবারি দাদাকে বললাম আমরা কোন ঘরে থাকব না, কোনো একটা জুম ঘরে থাকতে চাই আমরা ৷ আমরা সাথে করে তাবু নিয়ে গেছিলাম।
উনি আমাদের প্রথমে বললেন স্কুলের পাশে আম গাছের নিচে ক্যাম্প করার জন্য, বৃষ্টি আসলে স্কুলে ঢুকে যেতে পারবো ৷ কিন্তু পাড়ার মানুষদের হাব ভাব দেখে পাড়ায় থাকার ইচ্ছে হয়নি৷আমাদের পাড়া থেকে একটু দূরে একটা জুম ঘর দেখা যাচ্ছিলো ৷ আমরা ওটাতে থাকার ইচ্ছা পোষণ করলে, অনুমতি দেন কারবারি দাদা ৷
পাড়া থেকে আরো ৩০মিনিট ট্রেক করে আমরা জুম ঘরে পৌঁছাই ৷ কিন্তু সমস্যা এখানে অন্য কিছু, জুম ঘরের একটু উপরে, মানে আমরা যে পাহাড়ের খোঁজে এসেছি, হুগীমন পাহাড়, ঠিক সেই পাহাড়ের উপরেই পাংখু পাড়া আর্মি ক্যাম্প ৷ যেহেতু আমরা এতটুক এসেছি, পাহাড়ের চূড়ায় না গিয়ে তো ফিরে যাব না ।
সিদ্ধান্ত নিলাম ক্যাম্পে গিয়ে আমরা অনুমতি নেব এখানে রাতে থাকার আর চূড়ায় যাওয়ার ৷ ক্যাম্প থেকে আরো প্রায় ১কি:মি উপরে মেইন পয়েন্ট ।
জুম ঘরে ব্যাগ আর বাকি জিনিসপত্র গুলো রেখে আমরা রওনা দিলাম ক্যাম্পের দিকে ৷ মেঘলা আকাশ, সূর্য্য ডুবে গেছে, একটু একটু অন্ধকার আকাশে বাসা বাঁধছে।
হালকা আলোয় আমরা ক্যাম্পে পৌঁছাই ৷ আমাদের দেখে সৈনিক ৩জন হাতে রাইফেলনিয়ে আমাদের দিকে এগিয়ে আসলো ৷আমরা জানলাম তাদের সব কিছু।
তারা রীতিমতো অবাক, এতগুলো ক্যাম্প পারি দিয়ে কি ভাবে বাঙালি এখানে চলে এলো ?
আমরাও অবাক এটা শুনে, যে এখানে বাঙালি আসা পুরোপুরি নিষিদ্ধ।
বাঙালি এখানের মানুষ গুলোর চোখের বিষ ৷ আর্মির পার্মিশান ছাড়া পরিচিত বা আত্মীয় স্বজন মানুষ ছাড়া এখানে আগে কোনো বাঙালি আসতে পারে নাই ৷
এগুলো শুনে আমরা সবাই চুপ ।
তাদের মেইন ইন চার্জকে খবর দিয়া হলে উনি নামাজ শেষ করে আসবেন বলে জানা গেল ৷ তখন অন্ধকার হয়ে গেছে আবছা আলোয় আমরা আশপাশটা দেখছি, কি সুন্দর পাহাড়, নদী।
ইতি মধ্যে সব ক্যাম্পে খবর হয়ে গেছে, এখানে বাঙালি কি ভাবে আসলো? এতগুলো চেক পোষ্ট পার হয়ে কি ভাবে সম্ভব হল এটা ৷
নামাজ শেষে অফিসার আসলো, উনার ফোনে একের পর এক ফোন ঢুকছে, বাঙালি ৪জন কি ভাবে পাংখু পাড়া আর্মি ক্যাম্প অব্দি পৌঁছে গেলো,তারা সবাই ঠিক আছে কিনা? এই ক্যাম্পটাই এদিকের শেষ আর্মি ক্যাম্প।
আর্মিরা কথা বলে সিদ্বান্ত নিল আমাদের জুরাইছড়ি আর্মি ক্যাম্পে পাঠিয়ে দিবে ৷ জুম ঘর বা পাড়ায় কোথাও থাকতে দিবে না ।
পাড়ায় ঢুকেই আমাদের কেমন যেনো সন্দেহ হয়েছিলো তাদের কথা বার্তায় । কারবারি আমাদের পাড়ায় রেখে দিতে চেয়েছিলেন ৷আমরা রাজি না হয়ে বার বার জুম ঘরটা দেখিয়ে দিচ্ছিলাম ৷ পড়ে বললো ঠিক আছে আপনাদের ইচ্ছে, আর বলেছিল ক্যাম্পে না যাওয়ার জন্যে ৷ আর্মি যেনজানতে না পারে। সব কিছু মিলিয়ে কেমন যেন ঘোলাটে লাগছিলো সব। আর্মিদের কাছে অনুরোধ করলাম, আমরা এতো দূর যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছি সেটা আমাদের পূরণ করতে দেওয়ার জন্য ।
আর্মি ক্যাম্প থেকে রওনা দিলাম, তখন রাত ৮টা ৷ অন্ধকার পথ হালকা ঠান্ডা বাতাস, মাঝে মাঝে জোনাকি পোকার আগমন এসব দেখে দেখে ১০টার দিকে আমরা জুরাইছড়ি পাড়ায় এসে পৌঁছাই ৷ পাংখু পাড়া ক্যাম্প থেকে পাড়ার মেম্বারকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল ৪জন বাঙ্গালী যাচ্ছে, তাদের কে জুরাইছড়ি ক্যাম্পে দিয়ে আসার জন্যে ।
আমরা মেম্বারকে খুঁজে নিই, মেম্বার আমাদের নিয়ে ক্যাম্পে যায়। ক্যাম্পে গিয়ে আমাদের সাথে সৈনিক রা গল্পে মেতে উঠলেন ৷ এই অসম্ভব কাজ কি ভাবে সম্ভব করলাম আমরা, কি ভাবে শেষ ক্যাম্প অব্দি চলে গেলাম?
আমাদের একটা চেকপোষ্টে বসানো হলো, একটু পর একজন সাদা পাঞ্জাবি পড়া লোক ফোনে কথা বলতে বলতে আমদের দিকে এলো, বুঝলাম উনি এখানের বড় অফিসার। আমাদের সবার নাম টিকানা কি করি,সব জিজ্ঞেস করেন। আমরা সব বলি, জিজ্ঞেস করলেন কিছু খাওয়া হলো কিনা ৷ আমরা বললাম, আমরা দুপুরেও খাইনি ৷
আমাদের জন্য খাবার এনে দিলো, ভাত মাংস সবজি। খেতে খেতে আমাদের জন্য রাতে থাকার জায়গা বানিয়ে ফেললেন সৈনিকরা । একটা স্টোর রুমকে ৩০ মিনিটের মধ্যে বেড বালিশ মশারী সব দিয়ে বিছানা তৈরি করে দিল তারা । আমরা খেয়ে দেয়ে গল্প করতে করতে কখন যে ঘুমায়ে গেছিলাম মনে নেই ।
কি অদ্ভুত একটা দিন কাটলো ৷
পরের দিন সকালে উঠে পুকুরে গিয়ে মুখ ধুয়ে এসে দেখি আমাদের জন্যে খিচুড়ি বানিয়ে এনেছে ৷
খেয়ে রওনা দিলাম, আর্মি বোট ঠিক করে আমাদের বোটে তুলে দিল ৷
শুবলং এসে নেমে, বাজারে যাই ।
বাজারে একটা হোটেলে গিয়ে আমাদের সেই লিজেন্ড মুরগিকে জবাই করে বিরিয়ানি বানিয়ে খাই ৷তারপর বোট ধরেরাঙামাটি ফিরি।
ঈদমোবারক
লিখা ও ছবি : আর. ডি রোহিত ৷
বিশেষ দ্রষ্টব্য: আমরা অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় কিন্তু কর্তৃপক্ষের যথার্থ অনুমতি নিয়ে ভ্রমণ করাকেই আমরা উৎসাহিত করি। লিখা ও অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ লেখকের। এডমিন প্যানেলের অনুমতি নিয়ে প্রকাশিত।
পাহাড়ে সকাল হয় একদম ভোরে। পাহাড়ের মানুষজন মোরগ ডাকা ভোরেই ঘুম থেকে উঠে কাজে লেগে যান।
গতদিন রাতে আমরা যখন খ্যামচং পাড়ায় প্রবেশ করি তখন পাড়ার বেশীরভাগ লোকেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো। পাহাড়ের লোকজনের সুস্বাস্থ্যের অন্যতম মূল কারণ সময়মত ঘুম, এটা আমার ধারণা।
খ্যামচং পাড়ার লোকজন মুরং জাতি। এদের মেয়েরা সব কাজ করে। জুমে কাজে করা থেকে শুরু করে ঘরের যাবতীয় কাজ মেয়েরাই করে। পুরুষেরা বসে শুধু ঝিমায়!
সকাল ৬ টায় ঘুম ভেঙ্গে গেছে আমার। আগের দিনের বেশ খানিকটা শারীরিক ধকল যাওয়াতে ঘুমটা খুব ভালো হয়েছে। একদম ফ্রেশ ঘুম যাকে বলে।
অপু ভাই, শাকিল ভাইরা রাতে বারান্দায় খোলা আকাশের নীচে রাতে ঘুমাতে গিয়েছিলো কিন্তু ঠান্ডার জন্য মাঝরাতে ঘরের ভিতরে চলে আসতে বাধ্য হয়! আমার স্লিপিং ব্যাগটাকে খুব মিস করেছি এই ট্যুরে।
পাহাড়ে দিনে অনেক গরম লাগে কিন্তু রাতে আবার ঠান্ডা অনেক। কম্বল ছাড়া ঘুমানো যায় না। ঘরগুলোর মেঝে বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরী তাই ফাঁক থাকাতে নীচ দিয়ে ঠান্ডা লাগে বেশ। গত বছর থুইসা পাড়ায় প্যাডেড জ্যাকেট গায়ে দিয়ে তার উপর ৪ টা কম্বল গায়ে দিয়েছে ঘুমিয়েছিলাম। অনেক ঠান্ডা ছিলো তখন।
রাসেল তো রাতে জ্যাকেট পড়েই ঘুমাইছে। অর নাকি ঠান্ডার ফোবিয়া আছে। আমারো হালকা শীত লেগেছিলো কিন্তু আমি আবার একবার ঘুম দিলে দুনিয়ার কোনো খবর আমার থাকে না!
পড়ে পড়ে ঘুমানো আমার আদতে নেই। তাছাড়া পাহাড়ের সকাল অনেক সুন্দর লাগে তাই সেটা মিস করতে চাই না।
ঘুম থেকে উঠার পরেই প্রাকৃতিক ডাকের আওয়াজ পেলাম। এই তো পরলাম এক মহা ঝামেলায়। গতবার এইটা নিয়ে একবার খুবই বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছিলো ভাগ্যিস তখন তপন দা’র কাছে ওয়েট ইস্যু ছিলো কোনো রকমে বাঁচছিলাম। পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে তাই এবার ওয়েট টিস্যু নিয়ে আসছি।
খ্যামচং পাড়ায় টয়লেট আছে কিন্তু খুব একটা পদের না। হাতে বদনা নিয়ে নীচে নামার সময় কয়েকটা শুকর পিছু নিলো। শুরুতে তাদের এই পিছু নেয়াটা বুঝতে না পারলেও পরে বুঝলাম কেনো তারা পিছু হাঁটছে।
নাহ! এভাবে যাওয়া পসিবল না। তার উপর তিনদিকেই খোলা। কী যে বাজে অবস্থা! তাই ফেরত চলে আসলাম।
এসে অপু ভাইকে বলার পর উনি বললো লাঠি নিয়ে যান একটা। অপু ভাইয়ের বুদ্ধিতে কাজ হলো এবার। তবে শুঁচিবায়ু স্বভাবের কেউ থাকলে অবস্থা দেখলে তার নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে!
পাড়াটা একটু ঘুরে দেখলাম। খ্যামচং পাড়ায় পানির বেশ সংকট। নীচের ঝিরি থেকে পানি আনতে হয়৷ সত্যি বলতে পাহাড়ের জীবন আমাদের জন্য যতোটা এডভেঞ্জারাস লাগে পাহাড়িদের জন্য তা অনেক কষ্টকর।
বিগত কয়েক বছর ধরে ঝিরি থেকে নির্বিচারে পাথর উঠানোর কারণে ঝিরিগুলো এখন শুকনো মৌসুমে পানি থাকে না তেমন। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে বান্দরবানের ইকো সিস্টেম শেষ হয়ে যাবে।
পেটে ক্ষুধা লাগছে বেশ। অপু ভাই আগের রাতের খিচুড়ি গরম করতে বসালো। সাথে ডিম মামলেট।
আমরা আজকে ক্রিসতং এর বনে ঘুরবো। সামিট করার কোন প্ল্যান নেই আমাদের। আমাদের পাশের রুমে ১২ জনের একটা দল ছিলো। তারা ক্রিসতং সামিট করতে যাবে। তারপরও অপু ভাই সবাইকেই বললো কেউ যদি ক্রিসতং সামিট করতে চায় তারা যেনো ঐ দলের সাথে যায়।
কেউই তেমন রেস্পন্স করলো না। তবে রাসেল যেতে চায় কিন্তু সে আমাকে ছাড়া ওদের সাথে যাবে না। আমি সামিট করবো না!
আমার এসব সামিট টামিট করা নিয়ে মাথাব্যাথা নেই। এসব সামিট আমার কাছে অহেতুক একটা মানসিক যন্ত্রণার মতো লাগে। আমার কাছে নিজের মানসিক শান্তি খুব জরূরী ইস্যু।
আমাকে এটা করতেই হবে, ঐটা করতেই হবে এমন বিলাসী মানুষ আমি কখনোই ছিলাম না। সাথের অনেকেই যখন দেখছি আরেকজনের সাথে কম্পিটিশান করে এগিয়ে যাচ্ছে, নিজেকে অমুক জায়গায় নেয়ার প্রতিযোগিতা করছে আমি তখন এসব থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতাম সব সময়েই।
আমার কাছে সাকসেসফুল জীবনের চেয়ে সুখী জীবন বেশী গুরুত্বপূর্ণ। আর আমি মনে করি সুখী হতে গেলে খুব বেশী টাকার প্রয়োজন নেই, এতো প্রতিযোগিতারও কিছু নাই। বেশীরভাগ মানুষেই আরেকজনেরটা দেখে সুখে সুখী হতে চায়।
সুখ স্বতন্ত্র বস্তু। আমি যেটায় খুশি হবো অন্যজনের সেটা ভালো নাই লাগতে পারে। বেশীরভাগ মানুষের অসুখী হবার অন্যতম প্রধান কারণ অন্যের সুখ দেখে তার মতো করে সুখী হতে চাওয়া!
বান্দরবানে অনেকেই আসে পাহাড় সামিট করার জন্য। এই ক্রিসতং এ যারা আসে তাদের ৯০ ভাগেই আসে এজন্য। আমার ভাই ক্রিসতং এর বনেই ভালো লাগে। বিশাল গাছ আর এর বৈচিত্র্য দেখেই আমার সুখ।
আসিফ ভাই আর পাপ্পু দিদি পাড়াতেই থাকবে। তারা ক্রিসতং এর বনে যাবে না বললো। যেহেতু আমরা ক্রিসতং সামিট করবো না তাই আস্তে ধীরেই বের হলাম।
নাস্তা করে ডনের দোকানে বসে কিছুক্ষণ আড্ডা দিলাম। এক কাপ বার্মিজ কফি খেলাম। ডন আসলেই ডন। তা পরের দিন ম্যানিয়াং পাড়ার এক ঘটনায় টের পেলাম!
পাড়া থেকে বের হতে ৫ জনের একটা দলের সাথে দেখা। তারা নাকি রাত ১২ টায় পাড়ায় পৌঁছাইছে!!! এরাও ক্রিসতং সামিট করতে বের হইছে।
হেলেদুলে পথ চলা শুরু হলো। গতদিনের এতোটা পথ হাঁটার পরেও শরীরে তেমন একটা ব্যাথা নেই বলে আল্লাহর কাছে শুকুরিয়া আদায় করলাম।
ক্রিসতং মানেই আমার কাছে বিশাল সব মাদার ট্রি’র ছবি চোখে ভাসে। কত যে ভিডিও ব্লগ দেখেছি, লেখা পড়েছি ক্রিসতং নিয়ে তার হিসাব নেই।
অপু ভাই বললো ক্রিসতং এ এখন তেমন বড় গাছেই নেই। ২/৩ ভাগেই গাছেই কেটে ফেলছে গাছ খেকোরা। যা আছে তাই দেখবো এটাই মনের সাত্ত্বণা।
যত ভিতরে ঢুকছে তত জঙ্গল ঘন হচ্ছে। একটা বিশাল উঁচু মাদার ট্রির সামনে সবাই ছবি তুললাম। গাছটা এতো উঁচু যে বেশীক্ষণ ঘাড় বাঁকা করে দেখা যায় না, ঘাড় ব্যাথা হয়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর একটা ভিউ পয়েন্ট এর কাছে আসলাম। এখানে প্রায় ৩০ মিনিট বসে বিশ্রাম নিলাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে এখানে ৪ জি নেটওয়ার্ক পাওয়া যাচ্ছিলো। ভিউ পয়েন্টের নীচে হাজার ফুট খাঁড়া খাদ। দূরে বুসিং পাড়া দেখা যাচ্ছে। এক জোড়া জুম ঘর দেখতে পেলাম। বেশ সুন্দর। সচারাচর জোড়া জুমঘর দেখা যায় না।
বড় গাছ দেখতে হলে আরো ভিতরে যেতে হবে। তাই করলাম আমরা।
আমি ঠিক করে রাখছি জান্নাতে আল্লাহর কাছে একটা বিশাল বড় গাছ চাইবো যেই গাছের ডাল ছড়ানো থাকবে। সে গাছের কান্ডে একটা উড হাউজ বানাবো। উড হাউজে বসে বসে বই পরবো আর দূরের ঝরনার দিকে চশমার ফাঁক গলে মাঝে মাঝে তাকিয়ে পানির পড়ার শব্দ শুনবো।
এদিকে রাসেলের মন খারাপ! বেচারা ক্রিসতং সামিট করতে পারছে না। বাসায় নাকি বউয়ের কাছে ইজ্জত থাকবে না সামিট করতে না পারলে!!!
রাসেলের দিকে তাকিয়ে অপু ভাইকে উনার খুব অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি করালাম ক্রিসতং যাওয়ার জন্য। অপু ভাইয়ের প্ল্যান ছিলো আমরা শুধু বনে ঘুরবো! আমারও তাই প্ল্যান ছিলো।
জুমের পথ ধরে ক্রিসতং সামিট করতে হাঁটা শুরু করলাম। রাসেলকে শর্ত দিলাম আমি তার সাথে যাবো ঠিক আছে তবে দ্রুত হাঁটতে হবে।
পথে আরেকটা চমৎকার ভিউ পয়েন্ট পরলো। মন চাইছিলো ওখানেই বসে সময় পার করে দেই। কিন্তু তা সম্ভব না। ক্রিসতং সামিট করে আবার ম্যানিয়ং পাড়ায় যেতে হবে। সময় কম।
যাবার সময় প্রথম দলের সাথে দেখা হলো। তারা মাত্র সামিট পয়েন্ট থেকে ফিরছে। অপু ভাই আর শাকিল ভাই সামিট করবে না। আমরা বাকী ৪ জন দ্রুত পা চালালাম।
শুকনো পাতার পা মাড়ানো খসখসে আওয়াজকে উপেক্ষা করে দ্রুত হাঁটছি। ক্রিসতং সামিট থেকে অল্প কিছু দূরেই একটা বিশাল মাদার ট্রি পরলো। ক্রিসতং এর এসব মাদার ট্রি’র বয়স ১০০/২০০ বছর ভাবা যায়। এটাই এই বনে আমার দেখা সবচেয়ে উঁচু গাছ।
অবশেষে ক্রিসতং চূড়ায় উঠলাম। ২৯০০ ফুট উঁচু প্রায়। কিছুক্ষন থেকে ছবি তুলে নামা শুরু করলাম।
অপু ভাইদের রেখে ওই ভিউ পয়েন্ট থেকে ক্রিসতং এর চূড়ায় আসতে ৪৫ মিনিট লেগেছিলো। আসতে লাগছে মাত্র ২০ মিনিট।
এবার সবাই মিলে খ্যামচং পাড়ার পথ ধরলাম। ক্রিসতং কে ছেড়ে আসতে খুব খারাপ লাগছিলো। এখনো অনেক সুন্দর সে। জানি না আর কতদিন সে এমন থাকতে পারবে।
পাড়ায় এসে বাকীরা দুপুরে খিচুড়ী খেলেও আমি খেলাম না। খিচুড়ি খেয়ে ট্রেকিং করা কষ্টের।
এবার উদ্দেশ্য ম্যানিয়ং পাড়া। রওনা দিতে দিতে বিকাল ৫ টা বেজে গেছে। দুই পাড়ার মাঝের পথ অনেএএক সুন্দর। অনেক!
রুংরং পাহাড়কে হাতের বামে রেখে লাইন ধরে ট্রেকিং করছি আমরা। ইতিমধ্যে সূর্য ডুবে গেছে। হালকা আলো আছে।
রাসেল, হিমন দা, অমিক তারা রুংরাং সামিট করবে। আমাকে বলছিলো যাবো কিনা? আমি মানা করে দিয়েছি।
তাদের তিন জনকে তাই আগে পাঠিয়ে দিলাম। ম্যানিয়ং পাড়ার পথে রুংরাং চূড়া পরবে।
ওদের পিছনে আমরাও হাঁটতে লাগলাম। কিছুদূর হাঁটার পর ম্যানিয়ং পাড়ার গেটেই রাসেলদের সাথে দেখা হয়ে গেলো। অপু ভাই বললো এখান থেকে নাকি ৫ মিনিট লাগবে রুংরাং এর চূড়ায় উঠতে। একথা শুনে শাকিল ভাই আর আমিও গেলাম অপু ভাইদের রেখে। কিন্তু কিছুদূর যাবার পর অন্ধকার হয়ে গেছে প্লাস হেডল্যাম্পের চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় আমি ব্যাক করে চলে আসি। চূড়ায় উঠে যদি কোন ভিউই না পাই সে চূড়ায় উঠার দরকার নাই!
রাত নেমে গেছে। ওয়াই জংশনে বসে আমরা যারা রুংরাং সামিটে যাই নি তারা মিলে গল্প জুড়ে দিলাম। ব্যাগের উপর ক্লান্ত শরীরটাকে ছেড়ে দিয়ে ঘোর অন্ধকারে দূর আকাশের মিটমিটি তারাগুলোকে দেখতে লাগলাম। মাঝে মাঝে মনে হয় কিছু সময়কে বেঁধে রাখতে পারতাম!
প্রায় ৩০ মিনিট পর রাসেলরা ব্যাক করলো। এদিকে ব্যস ঠান্ডা বাতাস গা ছুঁয়ে যাচ্ছিলো। গায়ের পাতলা টিশার্ট তা ঠেকানোর ক্ষমতা নাই। আর ব্যাগ থেকেও জ্যাকেট বের করতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না।
খুব দ্রুত পা চালালাম। আমি আর অপু ভাই সবার আগে। এখন শুধু নীচে নামা। মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালিয়ে খুব দ্রুত দুজনে নামছি। প্রায় ২০/২৫ মিনিট নামার পর পাড়ার ঘরের আলো দেখতে পেলাম।
আগে থেকেই অপু ভাই রাতে থাকার জায়গায় ঠিক করে রেখেছিলেন। আমরা ম্যানিয়ং পাড়ার কারবারী ছেলে “খনরুই” এর ঘরে রাতে থাকবো।
আগেই বলেছিলাম পাপ্পু দি’র হাতে ঝাড়ি খায় নি এমন কেউই নাই। যথারীতি রান্না করতে গিয়ে অপু ভাই একদফা উনার ঝাড়ি হজম করলেন! বেচারা! আসিফ ভাই পুরো ট্যুরে পাপ্পু দি’কে এটা সেটা বলে খোঁচাখুঁচি করছেন! রান্না করতে যেয়েও এর ব্যাতিক্রম হয় নি!
রান্না ঘরের পরিবেশ বেগাতিক দেখে হাতমুখ ধুয়ে পাড়ার দোকানে আড্ডা দিতে চলে গেলাম। পাড়ার দোকানগুলো আমার ভীষণ পছন্দের জায়গা। কত আলাপ, কত গল্প যে হয়! এসব দোকানের কাস্টমার সাধারণত ট্রাভেলাররাই।
ঐদিকে পাপ্পু দি হাঁকডাক শুরু করে দিলেন চুলার আগুন নিভে গেছে। উনি কাঠের চুলার আগুন ধরাতে পারছেন না! ধোঁয়া দিয়ে পুরো ঘর ভরিয়ে ফেলেছেন। অপু ভাইকে ডাকছেন কিন্তু উনাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
ঐদিকে হিমন দাদা এ অবস্থার মধ্যেও সমানে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন! মানুষ বড়ই বিচিত্র!
তখন বিকেলের আলো মিইয়ে আসছে, স্থিমিত সুর্যের আলোতে ছবি তোলার আনন্দই আলাদা, কিন্তু বনের ভিতর আলো আঁধারী। জংগলে এখনো বৃষ্টি হয়নি, বৃষ্টি শুরু হলে জোঁকরা প্রাণবন্ত হয়ে যায়, সেই সাথে সাপ বৃষ্টির প্রথম বেঙ ধরার আনন্দে বেরিয়ে পরে। ভাগ্যিস এখনো বৃষ্টি হয় নি। ট্রেইল ধরে কিছুদূর হেঁটে গেলে বেতের ঝোঁপ সেই ঝোঁপের ভিতর ক্রলিং করে কোন মতে প্রবেশ করা যায়, এর পর চারদিকে বেতের কাঁটা দিয়ে ঘেরা কেমন যেন একটা রাজত্ব, এই কাঁটা ভেদ করে কোন পশু পাখি আক্রমণ করবে এমন ভাবাটা দুঃসাহসীকতা।
ভাবলাম আজকে এইখানে এম্বুস করে শুয়ে থাকি। নিজেকে ক্যামোফ্লেজ করে শুধু চোখ দুটো খোলা রেখে ক্রলিং করে ঝোঁপের ভিতর শুয়ে আছি,।
অনেকক্ষণ শুয়ে থেকে হতাশা ঘিরে ধরলো কয়েকটা পিন স্ট্রাইপ বাব্লার, আর কালোঘাড় রাজনের ছুটাছূটি ছাড়া কিছুই চোখে পরে নি। পরে ঝড়া পাতার মচমচের শব্দ পেলাম, এটা সাধারণত বন মোরগ, মথুরা, হোওয়াইট চিক পেট্রীজ, আর কাঠ ময়ুর ঝড়া পাতা সরিয়ে পোকা মাকড় খুজে, তেমনি পাতা সরানোর শব্দ কানে লাগছে কারণ চারিদিকে ঝোঁপ ঝাড় আর কাটা দিয়ে ঘেরা কিছুই নজরে আসছে না।
পাতা সরাতে সরাতে দেখালাম ধুসর কিছু আমার দিকে আসছে, নড়াচড়া না করে তার দিকে নিবিষ্ট মনে তাকিয়ে থাকলাম। কখনো ঝোঁপে চলে যায় আবার আসে। চারিদিকে কাঁটা বলে কোনভাবে ফোকাস ও ধরে রাখা যায় না। কিছু পর খুব কাছেই সর সর করে বিদ্ঘুটে আওয়াজ পেলাম তারপর চোখ মেলে দেখার পর পিঠের শিরদারা শীতল হয়ে গেলো, সারা শরীর কালো মুখটা শুধু বর্ণিল জাত সাপ। (পরে জেনেছি ওটা কিং কোবরা যার বিষের তীব্রতা অনেক অনেক বেশি।
সাপটা আমাকে দেখেছে কিনা জানিনা তবে কিছুটা দুরত্ব নিয়ে সে চলে গেছে। কিন্তু মন আমার এখন ভয়ার্ত পালাতে চাইলে ও পালাবার উপায় নাই, কারণ উপরে সব বেত কাটা দাঁড়ানো বা বসার উপায় নেই।
ভয় ভয় মনটাকে দমিয়ে রেখে আবার ধুসর পাখিটির দিকে মনোনিবেশ করলাম, সে ধীরে খুব ধীরে আমার দিকে আসছে কিছুটা দৃষ্টিগোচর হতেই দেখলাম এইটা সেই স্বপ্নের কাঠময়ুর। নিঃস্বাসটাকে বন্ধ করে নিলাম। সারা শরীর আমার নিস্তেজ হয়ে গেলো সেই শোয়া অবস্থাতেই চেষ্টা করলাম তাকে ফোকাসে রাখতে। অতি সাবধানী পাখি যদি আমার অস্থিত্ব টের পায় তবে সে পালিয়ে যেতে এক সেকেন্ডও নিবে না।
ছোট্ট পুকুর, অনেকটা পথ মাড়িয়ে আসা, খুব আলো নেই, খুব গম্ভীর হয়ে বার্ডাররা বসে আছেন, ওইখানে পাখিরা গোসল করতে আসে, নীলমনি থেকে শুরু করে বিচিত্র সব বুলবুল আর ফ্লাইক্যাচার, ভাল ছবি তোলা অবশ্য প্রায় অসম্ভব ই, রেকর্ড শট নিতেই ওইখানে যাওয়া। ঘড়ির কাঁটায় সময় গড়ায়, কারো দেখা নেই, মাঝেমধ্যে অবশ্য হোয়াইট টেইল রবিনের মেয়েপাখিটা আমাদের সামনে লেজ নাচিয়ে ফুড়ুৎ করে উড়ে যাচ্ছে। ঘুমে ঢলে ঢলে পড়ছি। খুব সতর্ক, একটু অসাবধান হলেই ওই পুকুরের পানির স্বাদ পেয়ে যাব।
সন্ধ্যার দিকে হুট করে শাটারের মুহুর্মুহু আওয়াজে ঝিমুনি চলে গেল, গাছের উপর একজোড়া সবুজ রঙা সুন্দর পাখি বসে আছে, এই সৌন্দর্য অবিশ্বাস্য, অন্য রকম, অপার্থিব! কেউ যেন নিজের হাতে এঁকেছে এদের, নিয়ন সবুজ, আকাশি আর রক্তরঙা লালে! আমি শাটার প্রেস করতে ভুলে গেলাম। ততক্ষনে ওরা নেমে এসেছে নীচে, গোসল করছে, আমি মন্তমুগ্ধের মত ক্লিক ক্লিক করেই যাচ্ছি, যদিও সেখানে কোন ভাল ছবির সম্ভাবনা খুব অল্প। ক্যামেরা স্ক্রিনে দেখি একটা ছবিও ভাল না, তাতে কি, ফ্রেমবন্দী করেছি। এর মধ্যে সবার অগোচরে আবার যে কখন ও আমার খুব কাছে এসে বসেছে, সেদিকে কারো খেয়াল নেই৷ এইবার মিস হল না আর।
এই অপূর্ব সুন্দর পাখির নাম সবুজ হাঁড়িচাচা, কিংবা সবুজ তাউড়া। মনটাই খারাপ হয়ে যায় নামটা শুনলে! নামটা যদি হত শ্যামসুন্দর, কেমন হত? ইংরেজিতে এদের নাম Common Green Magpie. নামে কমন হলেও বাংলাদেশে কোথাও ই খুব কমন না।
বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর পাখি কি জিজ্ঞেস করায় প্রিয় চিকিৎসক বড়ভাই Shawn Dev দাদা বলেছিলেন, সবুজ তাউড়া। আমার অবশ্য এই লিপ্সটিক দেওয়া পাখি খুব ভাল লাগত, কোন পর্যায়ে, আমার অপছন্দের কেউ এদের ছবি আপলোড দিলেও লাভ রিয়াক্ট দিতাম। এই প্রথম এদের দর্শন পেলাম সাতছড়িতে। এই এক অবিশ্বাস্য অভিজ্ঞতা! শুধু এদের জন্য ই আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার জন্য দিন গুনছিলাম, সে মাহেন্দ্রক্ষণ চলেই আসবে এত দ্রুত, জানতাম না।
ইদানীং পাখিদের ডাক আয়ত্ব করার চেষ্টা করছি। এদের ডাক শুনে বুঝলাম, এই ডাক আগে শুনেছি, আর কোথাও না, সাতছড়িতেই৷ গতবর্ষায় প্রজাপতি খোঁজার সময়ে। সেবার বেগুনী কোকিলসহ অসংখ্য পাখি মিস করেছিলাম, এইবার হাতছাড়া হওয়া পাখি বেশ অল্প।
আমি নিজেকে কখনোই বার্ড ফটোগ্রাফার ভাবি না, বার্ডার ভাবি, প্রকৃতিপ্রেমী মাত্র। এইবার উদ্দেশ্য ছিল বার্ডিং ই, স্পেসিজ বাড়ানো, কিন্ত ভাগ্যের কি মজা, এর মধ্যেও এত ভাল ভাল ছবি পেয়ে গেলাম!
খুব খারাপ লেগেছে এক জিনিস, সাতছড়িতে অনেকেই ময়লা আবর্জনা ফেলেছেন, ন্যাশনাল পার্কে যাওয়ার আমি নিষেধ করার অধিকার রাখি না কাউকে, কিন্ত একজন ভালমানুষ, প্রকৃতিপ্রেমিক কখনই এই ধরনের কাজ করতে পারেন না। এই বোধশক্তিটা খুব জরূরী আমাদের সবার জন্য। নয়ত এই সবুজ হাড়িচাঁচাদের শুধু বিদেশী পেইজের ছবি দেখেই মন ভরতে হবে। প্রকৃতি আমাদের সতর্ক করছে, আমরা কি শুনছি?