সাতছড়িতে সকালে টাওয়ার থেকে প্রায় খালি হাতে ফিরেছি, তোলার মত একমাত্র ওই লালচেপিঠ ফুলঝুরি ছিল, সেও হাতছাড়া হল ক্যামেরার ফোকাস হান্টে। আমি আর Asif ভাই এবার বড়পুকুরে যাব। বিপদ হল, দুজনের কেউই বড়পুকুর চিনি না, দেরী হচ্ছে দেখে রানা – তানিম ভাই আমাদের ফেলেই আগে চলে গেছেন৷ দুজন একে ওকে বলি বড় পুকুর কই, কেউ চিনে না, হাসে, আমরাও ভুলে আরেক রাস্তায় ঢুকে পড়লাম। চারপাশে না আছে পুকুরের চিহ্ন, না পাখি, কি অবস্থা! এদিকে ফেরার রাস্তাও ভুলে বসে আছি।
এমন সময় বিদ্যুতের বেগে এক অপূর্ব প্রাণি ক্যামেরার ঠিক সামনে এসে দাড়াল, এ আর কেউ না, বহুল আরাধ্য মায়া হরিণ!
এর আগে রাতে এদের ডাক শুনেছি, এবার এদের সরাসরি দেখলাম মাত্র কিছু দূরত্বে, ওর পশম গোনা যায় যেন, কুঁচকানো ভ্রু নিয়ে ও আমার দিকে যতটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, আমিও ততটাই অবাক হয়ে ওর গুটিকয়েক ছবি তুলতেই ভোঁ দৌড়। মনে হচ্ছিল ঘোরের মধ্যে আছি, এই অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি যে আমার মত একজন নতুন বুনোচিত্রগ্রাহকের জন্য, কতটা আনন্দের, কল্পনার বাইরে!
ভারতের বনে জঙ্গলে মায়াহরিণ খুব সহজলভ্য হলেও বাংলাদেশে এ মহার্ঘ্য, বাংলাদেশে মায়া হরিণ সুন্দরবনের চিত্রা হরিনের চেয়ে অনেক অনেক বেশি রেয়ার, এদের আকার যতটা ছোট, এদের খুঁজে পাওয়াও ততটা দুষ্কর। সাতছড়িতে মাঝেমধ্যে পুকুরে পানি খেতে আসে এরা, এই অবস্থায় অনেকের ছবি আছে, এতটা কাছে, সরাসরি বনের মধ্যের পোর্ট্রেট – সে আমার কল্পনাতীত ছিল নিতান্তই। গতবার এদের ডাক শুনেছিলাম, এবার সাক্ষাৎ হল। কি অপূর্ব এক প্রাণী! পুকুর খুঁজতে ভুল পথে হারিয়ে যাওয়াটাও সম্ভবত ছিল ঈশ্বরের উপহার, নয়ত পথ হারালাম ই কেন, আর ঠিক ওই মুহূর্তে ও আমার সামনে এসেই পড়ল কেন!
বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, এইবার টাওয়ারে ফুলঝুরি, লটকন, লালবুক টিয়া, চিতিপাখ শালিক, সবকিছুই মিস হল, ক্ষতি কি, মায়া হরিণ ফ্রেমবন্দী করলাম, তাও সাতছড়ি যাওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে, এই আনন্দটুকুর জন্য ও বনে বনে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা হয়।
মায়া হরিণ, Barking Deer.
Device : Nikon D500, With 200-500mm
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, হবিগঞ্জ l March, 2023
লেখা ও ছবি: ড: নিসর্গ মহসিন
এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
ধন্যবাদ আপনাদের
Thank you so much.