আমলটা ছিলো মোগল নির্মান আমলের স্বর্ণযুগ। এর আগে নির্মান হয়েছে তাজমহল, Akbar Tomb, Humayun Tomb, দিল্লী জামে মসজিদের মতো স্থাপনা।
সেই আমলে বুড়িগঙ্গার তীরের নির্মিত ঢাকার বড়কাটরা-‘র গায়ে সাহস করে উৎকীর্ণ করা হয়েছিলো –
“এর রূপের কাছে বেহেশতের সৌন্দর্যও ম্লান হয়ে যায়। এবং বেহেশতি সুখের পুর্ণ সুখ এখানে আস্বাদন করা যায়।”
এটির নির্মান হয়েছিলো শাহজাহান তনয় শাহ সুজার নির্দেশে তাঁর প্রাসাদ হিসাবে ।
Akbar Tomb, Humayun Tomb দেখার জন্য কবে থেকেই আমি হিসাব করছি মনে মনে! হয়ে উঠছে না। সেই সময়েই ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হলো শাহ সুজার সখের সেই ‘স্বর্গ’ বড়কাটরা।
শাহ সুজা ছিলেন বাংলার সুবেদার (১৬৩৯-১৬৬০)। বড়কাটরার স্থপতি ছিলেন শাহ সুজার মীর-ই-ইমারত (Chief Architect) মীর মোহাম্মদ আবুল হাশেম সামদানী। শাহ সুজার থাকা হয়নি এই প্রাসাদে। তিনি থাকতেন নীমতলি কুঠিতে।
বড়কাটরা-কে পরে করা হয় মুসাফিরখানা। তবে পরে মীরজুমলার বাসস্থান ছিলো এটি। শায়েস্তা খাঁ, মীর জুমলার দরবারও বসেছে এই সৌধে। পলাশীর পতনের পর সুবেদার জেসারত খাঁও ছিলেন কিছুদিন বড়কাটরাতে।
অবশ্য এর জৌলুস শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই, যখন রাজধানী সরে যায় ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী দেওয়ানী শাসনভার গ্রহন করলে জেসারত খাঁ ১৭৬৫ সালে উঠে আসেন নীমতলি কুঠিতে।
এর পর পুরোই পরিত্যক্ত হয় বড়কাটরা। নীমতলি কুঠির অবস্থান পড়ে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পড়ে এশিয়াটিক সোসাইটি চত্বরে। তাই সাহস করে নি ভেঙ্গে শপিং মল করতে। নইলে সেটিও থাকতো না। সেটিকে রিস্টোর করা হয়েছে তিন-চার বছর আগে।
কিন্তু বড় কাটরা সেই পুরোনো ঢাকায়। তেমন কারো যাওয়াও পড়ে না নুতন ঢাকা হতে। ইংরেজ আমলেও চোখে পড়তো বুড়ি গঙ্গা থেকে। গাছগাছালিতে ঢাকা পড়েছিলো, তবে আকৃতি বুঝা যেতো।
ক্রমে এর চতুর্দিক ঘিরে একে একে নির্মান হয় কুৎসিত কদাকার সব দালান। ভাঙ্গার বছর দুই আগে আমি যখন শেষ দেখলাম, তখনতো একাংশও দেখা যেতো না। ছবি তোলার জন্য ফোকাস করতে হয়েছে আশপাশের সব দালানের ‘চিপা-চাপা’ দিয়ে।
মাদ্রাসা একটি আছে শাহ সুজার সখের সেই প্রাসাদে। সেও দেশভাগের আগে থেকে, ১৯৩১ সাল থেকে। কওমী মাদ্রাসা, জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদ্রাসা। অতীত স্বর্গের নাম নিশানার কিছুই অবশিষ্ট নেই! বরং রীতিমতো কুৎসিত সব মিলিয়ে।
তারপরও একসময়তো স্বর্গ ছিলো। কল্পনায় ভেবে নিতে অসুবিধা কি ? Lucky আমি। যেটুক ছিলো, সেটুকুতো দেখেছি।
আজ গেলেতো তাও দেখতে পাবো না। অগত্যা দিল্লী আগ্রাই যেতে হবে, নান্দনিক সব মোগল স্থাপনা দেখতে, এদিকে শাহ সুজার সেই বেহেশত যখন ভাঙ্গা হচ্ছে, দেশপ্রেমীরা সব বুক চাপড়াচ্ছে প্রয়াত বৃটিশ রাণীর জীবদ্দশায় করা ‘লুটপাট’ নিয়ে।
তারা অপেক্ষায় আছে সেখানে শপিং মল হবে, মোগলাই খানার রেস্তোরাঁ হবে, টেবিলে মোগলাই খানার ছবি নিয়ে পোস্ট দিবে ফেস বুকে।
লেখা ও ছবি : Tapan Roy