বর্ষার সময় একটু জলা-জংলা জায়গার আশে-পাশে গম্ভীর একটা পাখির ডাক শুনতে পাবে। ঠিক যেন কোনো রাগী স্কুল টিচার, যিনি মোটেই বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি নন।
অনেকক্ষণ কিছু জিজ্ঞেস করার পর দায়সারা একটা জবাব দিতে চাচ্ছে। তাই ঠিক কোনো অর্থবোধক বাক্য না হয়ে ‘কোয়ক কোয়াক’ জাতীয় একটা শব্দ শোনা যাচ্ছে। যদি কাছে থেকে দেখেন, তবে দেখবেন পাখিটি মোটেও গম্ভীর না। বরং মনের সুখে পানির উপর তিড়িং বিড়িং করে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়াচ্ছে।
আমাদের গ্রাম বাংলার মানুষেরা এলাকাভেদে ডাহুককে কেউ ডাইক, কেউবা পানপায়রা আবার কেউ ধলাবুক ডাহুক বলেও ডাকে। কারণ, ডাহুকের শরীরটা কালচে হলেও এর বুক, গলা, পেট একদম ধবধবে সাদা। তার সঙ্গে মিল রাখতে ঠোটটা হলুদ রঙের, ঠোটের উপরে লাল রঙের একটি ছোট্ট দাগও আছে। সব মিলিয়ে ডাহুক খুব সুন্দর একটি পাখি।
আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে ডাহুকেরা একবারে ৬-৭টি করে ডিম পারে। ডিমগুলোও দেখতে তাদের মতোই সুন্দর, ফিকে হলুদ বা গোলাপি মেশানো সাদা। বাবা ডাহুক আর মা ডাহুক মিলে পালা করে ডিমে তা দেয়। ডিম ফুটে যখন ছোট্ট ডাহুকগুলো বের হয় তখন পূর্ণবয়স্ক ডাহুকের রঙের মতো না হয়ে শুধু কালো হয়ে থাকে।
ডাহুক আসলে চিরবিরহী একটি পাখি । সঙ্গিহীন হলে ওরা পাগল হয়ে যায় । বাংলাদেশে অনেক প্রতন্ত অঞ্চলে এটাও প্রচলিত আছে ডাহুক কিংবা ডাহুকীদের মধ্যে কেউ একজন শিকারের পরিনত হলে কিংবা মারা গেলে , অন্যজন সেই শোকে নিজেই আত্ম হনন করে । ওরা কখনোই নতুন সঙ্ঘিনীর সাথে সংসার করে না ।
সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অফ নেচার বা আই ইউ সি এন এই প্রজাতিটিকে বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে। যদিও বাংলাদেশের বন্য আইনে এ প্রজাতিটিকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। তবুও পাখি শিকারিরা নির্বিচারে এ পাখিকে হত্যা করেই যাচ্ছে। এছাড়াও আমাদের জলাশয়গুলো দূষিত হয়ে যাওয়ার কারণে ডাহুকের বাসভূমিগুলো দিনে দিনে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। দূষিত পরিবেশের সঙ্গে লড়াই করে টিকতে না পেরে একদিন হয়ত সত্যিই হারিয়ে যাবে সুন্দর এই পাখি।
স্থানঃ- নোয়াপাড়া, রাউজান, চট্টগ্রাম।