• ভ্রমণ
  • সব পোস্ট
ভ্রমণ বাগেরহাট-পিরোজপুর ভ্রমণ

বাগেরহাট-পিরোজপুর ভ্রমণ

-

খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে তাবুর ফ্লাপ খুলে বসে বসে ভোর দেখা আমার অন্যতম নেশা। ক্যাম্পিংয়ের প্রতিটি ভোরে আমি এই কাজ করে থাকি, যত রাতেই ঘুমাই না কেন ভোর দেখতে উঠব এটা মাস্ট।

আজও তার ব্যাতিক্রম হলো না। পিরোজপুরের সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের মাঠে গত রাতে অনেক ঝামেলা সামলে ক্যাম্প সাইট ফিট করে, রাতে নুডলস দিয়ে ডিনার করে ঘুমিয়েছিলাম।

আজ খুব ভোরে উঠে পড়লাম। হালকা শীতে এখনো চারপাশে কুয়াশাচ্ছন্ন। ভোরের শিশিরে চারপাশের বাহারি ফুলগুলো অসাধারণ লাগছিল। ইয়াশ তখনো ঘুমিয়ে। আমি একা একা কলেজের ভেতরে হেটে বেড়াতে লাগলাম। সাধারণত ক্যাম্প সাইট এর আশেপাশে আমি কমপক্ষে দুইবার হাটি। ১. রাতে নিরাপত্তা কেমন সেটা দেখার জন্য, ২. ভোরে প্রকৃতি দেখার জন্য। আজও হাটতে বেরিয়েছি।

কলেজের মাঠ, হল, বিভিন্ন একাডেমিক ভবনগুলোর চারপাশে হেটে বেড়াতে লাগলাম। স্নিগ্ধ সকালে চারপাশ অসাধারন লাগছিলো। এত ভোরেও বেশ কিছু ছেলেমেয়ে কলেজে এসেছে বিএনসিসি প্যারেড করতে। তাদের সাথেও কথা হল। ২/৪ জন প্রাতভ্রমণকারী এসেছে, তাদের সাথে আলাপ হল। ৩০ মিনিট মত ঘোরাঘুরি করে কেটলিতে চা এর পানি গরম দিয়ে আমি ইয়াশকে ডেকে তুললাম। চা হতে হতেই ইয়াশ আড়ামোড়া ভেঙ্গে উঠে পড়ল। দুইজনে ফ্রেশ হয়ে চা খেয়ে ক্যাম্প সাইট গুছাতে বসে গেলাম। রবিদা ততক্ষনে মুখ দেখিয়ে দিয়েছেন।

ক্যাম্প গুছিয়ে প্যাক করতে করতে কলেজের অধ্যাক্ষ স্যার কলেজে চলে এসেছেন। সময়ানুবর্তী বলে এই শিক্ষক ভদ্রলোকের সুনাম গতকাল রাতেই শুনেছি। উনার সাথে সকালে আমাদের নাস্তার দাওয়াত আছে। ব্যাকপ্যাক নিয়েই উনার সাথে গল্প করতে করতে আমরা উনার অফিসে গেলাম। উনার অফিসে গল্প করতে করতে নাস্তা করলাম। এই সকালেও অল্প সময়েই উনি বেশ নাস্তার আয়োজন করেছেন। উনি ভ্রমণ নিয়ে আমাদের সাথে অনেক গল্প করলেন। চা খেতে খেতে আমাদের ভ্রমণ গল্প শুনলেন। ১০ টার দিকে আমরা উনার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। আমাদের একটু তাড়া ছিল, ৩ টার লঞ্চ ধরে হুলারহাট থেকে আমাদের ঢাকায় ফেরার প্লান।

কলেজ থেকে বের হয়ে আমরা গেলাম দুলাল মিষ্টান্ন ভান্ডারে। এখানকার রসগোল্লা বিখ্যাত, না চেখে দেখলেই নয়। আমরাও রসগোল্লা চেখে দেখলাম। রসগোল্লা খাইতে গিয়ে মুজতবা আলীর “রসগোল্লা” গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। এই যেন সেই রসগোল্লাই। ব্যাটা খাইবি না মানে, তুই খাবি তোর ১৪ গোষ্টী খাবে। যাইহোক রসগোল্লা খেয়ে আমরা রিকসা নিয়ে গেলাম রায়েরকাঠি জমিদার বাড়িতে।

 

শতাব্দী প্রাচীন জমিদার বাড়ীর অধিকাংশ ভবন ধংশ প্রায়। মোটামুটি টিকে আছে এমন একটা ভবনে জমিদারদের কিছু আত্নীয় বসবাস করে। জমিদারদের শশ্নান, পুকুর এসবও আমরা ঘুরে দেখলাম। পুকুর সংলগ্ন বাগানটি যেন ভুতুড়ে বাগান। গল্পে আমরা ছোটবেলায় যেমন গা হিম করা ছমছমে রহস্যময় বাগানের গল্প পড়েছি এটাও তেমনই। ইয়াশ এখানে ফটোগ্রাফি করতে লাগল। আমি একা একা বাগানের এদিক সেদিক হেটে বেড়াতে লাগলাম। প্রায় ঘন্টা খানেক ধরে জমিদার বাড়ি, বাগান পুকুর এসব দেখে আমরা পাশের শতাব্দী প্রাচীন মঠে উপস্থিত হলাম।

এখানে ইয়াশের পূর্ব পরিচিত এক বন্ধু এসে যোগ দিল। ৩ জনে অনেকক্ষন মঠে ঘুরে ফিরে আবার পিরোজপুর শহরে ফিরে আসলাম। এখানে ইয়াশের বন্ধুকে বিদায় জানিয়ে একটা রিকশা নিয়ে আমরা হুলারহাট লঞ্চ টার্মিনালে এসে বিআইডব্লিউটিসির এমভি মধুমতি লঞ্চে চড়লাম। এভাবেই শেষ হয়ে যায় আমাদের বাগেরহাট – পিরোজপুর ক্যাম্পিং ট্রিপ। শেষ বিকালের আলোয় হ্যামকে দোল খেতে খেতে লঞ্চেই সুর্যাস্ত দেখে রাতে লঞ্চের ডেকেই খিচুড়ি রান্না করে খেয়ে তাবু লাগায়া ঘুম দিলাম। পরদিন ঘুম ভাঙ্গল সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে।

কিভাবে যাবেনঃ

ঢাকা থেকে পিরোজপুর লঞ্চ চলাচল আছে। ঢাকা থেকে প্যাডেল স্টিমার সহ ঝালকাঠির লঞ্চগুলো হুলারহাট হয়ে চলাচল করে। এছাড়া ঢাকা থেকে বাসও চলাচল করে। বাগেরহাট থেকে পিরোজপুর ৩০ কিলোমিটার মত। বাসে যাইতে সময় লাগে ৪০/৫০ মিনিট।

কি কি দেখবেনঃ রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি ও পার্শ্ববর্তী মঠ।

মাস্ট খাবেন দুলালের রসগোল্লা।

পিরোজপুর ভ্রমণ সংক্রান্ত কোন তথ্য প্রয়োজন হলে নিচের কমেন্ট এ প্রশ্ন করতে পারেন। ভ্রমণ করুন বিশেষ করে একাকী নির্জনে ঘুরে নিজের দেশকে নিজের মত জানুন। দেশটা আপনার, প্রকৃতি আপনার, পৃথিবী আপনার। আপনার দেশ আপনার সম্পদ। আপনার সম্পদ কে নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর করে রেখে দিন।

লিখা ও ছবি: নাজমুস সাকিব

ব-দ্বীপ
শুধুমাত্র আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদশের জল, স্হল, জনপদ আর প্রকৃতিকে উপস্হাপন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।

Leave a Reply

সর্বশেষ

পান ব্যবসায়ীর বাড়িতে চাকুরী হতে যে রাজ্যপাটের ভিতঃ বালিয়াটির জমিদার বাড়ি

পান ব্যবসায়ীর বাড়িতে চাকুরী হতে যে রাজ্যপাটের ভিতঃ বালিয়াটির জমিদার বাড়ি আশপাশে সাভার, ধামরাইয়ের মতো প্রাচীন বনেদী সব জনপদ থাকতে...

এক অদ্ভুত, অপূর্ব সুন্দর পাখি – হরিকল

এক অদ্ভুত, অপূর্ব সুন্দর পাখি - হরিকল। ভাল করে বলতে চঞ্চুমোটা হরিকল। ইংরেজি নাম Thick Billed Green Pigeon. বৈজ্ঞানিক নাম...

পালং খিয়াং (Palong Khiyang) ঝর্ণা, বান্দরবন

পালং খিয়াং (Palong Khiyang) ঝর্ণা বান্দরবন জেলার আলীকদমে অবস্থিত। বেশ দূর্গম পথ , তবে মারাত্মক লেগেছে। ফ্লাশ ফ্লাডে পাহাড়...

আজিজ মাস্টারের বাড়ি

‘মুন্সী’ ‘খাঁ’ টাইটেল যে হিন্দুদেরও হয় তা জানতাম, তবে খুব একটা common  নয়। Afterall ‘মুন্সী’ শব্দটি ফার্সি। হিন্দু মুন্সী পদবীধারীর...

ঝরঝরি ট্রেইল

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড রেইঞ্জের সবচাইতে বুনো ট্রেইল বলা হয় এই ঝরঝরি ট্রেইলকে। এই ট্রেইলে মোটামুটি দেখবেন জোঁক, বানর, সাপসহ নানা...

পাঠক প্রিয়

চর কুকরী মুকরি, ঢাল চর, চর মনতাজ ভ্রমণ

চর কুকরী মুকরি, ঢাল চর, চর মনতাজ ভ্রমণ অল্প খরচেই আপনি ঘুরে আসতে পারেন বাংলাদেশের দক্ষিনের নদী ও সাগর বেষ্টিত ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়। হাতে ১...

এবার গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে দেখা মিললো তীব্র বিষধর ‘রাসেল ভাইপার‘ সাপ

গতকাল চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে রাসেল ভাইপারের দেখা মিলেছে।  পৃথিবীর ৫ম বিষধর সাপ এই রাসেল ভাইপার, আক্রমণে বিশ্বে ১ম ( মতান্তরে দ্বিতীয় )। অর্থাৎ...

মধুখাইয়া ট্রেইল ও ঝর্ণা, সীতাকুন্ড চট্টগ্রাম

২০১৭ সালের সেপ্টেমর মাস,কুরবানী ঈদের জাস্ট পরের দিন অপু নজরুল ভাইয়ের ফোন। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠলাম! ফোনে অপু ভাই বললো - ‘আসিফ ভাই! চলেন মধুখাইয়া...

কালচিতি / কালাচিতি / কালাচ / common krait

কালচিতি / কালাচিতি / কালাচ / common krait : একে বলা হয় রহস্যময় সাপ। ফনাহীন মারাত্মক বিষধর এই সাপে বাংলাদেশে এবং পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি মানুষ...

ভ্রমণ ডায়েরির পাতা থেকে, সাইংপ্রা: পর্ব – ২

সাইংপ্রা (২য় পর্ব) ভ্রমণ_ডায়েরির_পাতা_থেকে (৬ অক্টোবর,২০১৮) ভ্রমণ ডায়েরির পাতা থেকে, সাইংপ্রা (১ম পর্ব) আমার মাথার ঠিক পিছনেই মুটামুটি বড়সড় একটা চারকোণা জানালা কাটা আছে! একজনের স্লিপিং ব্যাগ সিংগেল...
error: Content is protected !!