পালং খিয়াং (Palong Khiyang) ঝর্ণা বান্দরবন জেলার আলীকদমে অবস্থিত। বেশ দূর্গম পথ , তবে মারাত্মক লেগেছে। ফ্লাশ ফ্লাডে পাহাড় ধ্বসে দুসরি ছড়ার একটা পথ ব্লক হয়ে যাওয়ায় আমাদের বিকল্প পাহাড়ি রাস্তা বেছে নিতে হয়েছে যা বর্ষায় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো ।
সাধারণ তৈনখালের পাথুরে রাস্তা দিয়ে, কখনো-বা উঁচু পাহাড় ডিঙ্গিয়ে পালং খিয়াং ঝর্ণায় যেতে হয়। পথে তৈন / টোয়াইন খালের যে নৈসর্গিক রূপ আপনাকে সম্মোহিত করবেই ।
আমরা যাত্রা শুরু করলাম ০৮/০৬/২০২৩ এ, প্রচন্ড তাপদাহের পর মৌসুমের প্রথম বৃষ্টি ।
আলীকদম বাদে বান্দরবানের বেশিরভাগ উপজেলা নিরাপত্তাজনিত কারণে ভ্রমণ নিষিদ্ধ এখন। আমরা মোট ৬ জন ট্যুরমেট । তাঁবু , বড়শি সব রেডি আমাদের ।
এর মধ্যে বড়ভাই Anowarul Azim বড়শির পোকা মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন, পাহাড়ে মাছ মারার অভিজ্ঞতা আমার তেমন একটা নেই । এই ট্যুরে সেটাও হয়ে গেলো !
তৈনখালের বাঁকেই আলিকদমের পাহাড় চূঁড়ায় মুরুং, ত্রিপুরা, মার্মাদের খড় ছাওয়া ঘর, পাহাড়র উপর মারাত্নক সুন্দর ছোটো ছোটো জুম ঘর , প্রচুর ঝিরি-ঝর্ণা , নেটওয়ার্কহীন কয়েকটা দিন – প্রকৃতি আপনার জন্য উন্মুক্ত করে দেবে তার অপার সৌন্দর্য । পালং খিয়াং এর রূপ দেখতে যাওয়ার আগে আপনাকে পাড়ি দিতে হবে তৈনখালের পাথুরে চমৎকার পথ , তৈনখাল খরস্রোতা মাতামুহুরীর একটি উপনদী।
এ খালের দু’পাশজুড়ে ঘন পাহাড়ি বনে সারা বছরজুড়েই থাকে বন্যপুষ্পের সাম্রাজ্য।
কয়েক প্রজাতির প্রজাপতি , কিছুদুর পরপর ছোটখাট ঝর্ণাধারা , শোনা যাবে গাছের ডালে ডালে নানা রঙের কয়েকশত প্রজাতির পাখির কিচির মিছির শব্দ।
কিন্তু সব শব্দকে ছাড়িয়ে নিজের অস্তিত্বকে তিনটি পানি স্রোতের কুলুকুল ধ্বনিতে জানান দেয় পালং খিয়াং ঝর্ণা। এ বুনো ঝর্ণার প্রকৃতিক রূপে যেকোন পর্যটক মুগ্ধ হন।
থানকোয়াইন , পালং খিয়াং দুটি চমৎকার ঝর্ণা দেখে , একবুক ভালোলাগা নিয়ে ঢাকায় ফিরে এলাম ১২/০৬/২০২৩ সকালে ।
যাওয়ার উপায় –
রুট-১ : আলীকদম>পানবাজার>আমতলী নদী ঘাট। নৌকাযোগে তৈনখাল দিয়ে সরাসরি দোছরি বাজার। এরপর তৈনখাল দিয়ে হেঁটে থাঙ্কুয়াইন ঝর্ণা>হাজরাম পাড়া>পালংখিয়াং ঝর্ণা।
রুট-২ : এরপর আলীকদম-থানচি সড়কের ১৩ কিঃ মিঃ। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে দোছরি বাজার>থাঙ্কুয়াইন ঝর্ণা>হাজরাম পাড়া>পালংখিয়াং ঝর্ণা। হাজিরাম পাড়া থেকে এ ঝর্ণায় যেতে ৩-৪ ঘন্টা হাঁটতে হবে আপনাকে ।
লিখা ও ছবি: Asif Shaikat