জল সবুজের বেরাইন্না লেক
কাপ্তাই লেক (Kaptai Lake) বাংলাদেশে, এমন কি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম মনুষ্যসৃষ্ট স্বাদুপানির হ্রদ। প্রধানত জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এর সৃষ্টি হলেও, এ জলাধারে প্রচুর পরিমাণে মিঠাপানির মাছ চাষ হয়। নৌবিহার, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও কৃষি আবাদ ইত্যাদিতেও এর অবদান উল্লেখযোগ্য।
পার্বত্য চট্টগ্রামের কাপ্তাইয়ে (২২°০৯´ উত্তর অক্ষাংশ ও ৯২°১৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ) কর্ণফুলি নদীতে বাঁধ দেওয়ার কারণে জলাধারটি গড়ে ওঠে। মূল লেকের আয়তন প্রায় ১,৭২২ বর্গ কিমি, তবে আশপাশের আরও প্রায় ৭৭৭ বর্গ কিমি এলাকাও প্লাবিত হয়েছে। মূলত রাঙ্গামাটি জেলাতেই জলাধারটি সীমিত যার অন্তর্ভুক্ত উপজেলাসমূহ হচ্ছে রাঙ্গামাটি সদর, কাপ্তাই, নানিয়ারচর, লংগদু, বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি। এছাড়াও খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার কিছু অংশও লেকের অন্তর্গত ৷
ছবির মত সুন্দর কাপ্তাই লেকে বেশ কিছু পর্যটন স্পট রয়েছে , এর মধ্যে রয়েছে বেরাইন্না লেক৷
কাপ্তাই বাস স্টেশন থেকে জীপতলী হয়ে গাড়িতে চড়ে পাহাড়ের উঁচু নিচু রাস্তা দিয়ে বেরাইন্যা লেক যেতে যেতে মনে হবে যেন হাওয়ায় ভেসে ভেসে আকাশ থেকে লেক দেখছেন। যার বিশালতা ছুঁয়ে যাবে আপনাকে। একপাশে পাহাড় আর আরেক পাশে লেক, এর মাঝখানে দিয়ে যখন এগিয়ে যেতে থাকবেন তখন যে কারো মনে শিহরণ জাগবে এটা নিশ্চিত।
সরু পাহাড়ী রাস্তায় গাড়িঘোড়া বলতে দেখা যায় সিএনজি আর কিছু ব্যক্তিগত মোটর বাইক আর গাড়ি। আর উচুঁ পাহাড়ি রাস্তা বলে প্রতিটা বাঁকে বাঁকে শিহরন জাগায় মনে৷
পাহাড়ী এলাকা বলে তেমন বেশি মানুষজনও নেই এখানে। তারপরও কিছু সংখ্যক আদিবাসীর দেখা মিলে যাবে সময়ে সময়ে পথে যেতে যেতে, যারা মূলত কৃষি কাজ করে নিজেদের পেট চালায়।
রাস্তা দিয়ে যাবার সময় কিছুক্ষণ পরপর চোখে পড়বে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাহাড়ী বাজার। সেখানে কাঁচা আনাজী কলা, পাহাড়ী মূলা, শাক সবজী, কাঁচা পাকা পেঁপে, পেয়ারা, বড়ই সহ নানা রকম পণ্য নিয়ে বিক্রির পসরা বসিয়ে ক্রেতার অপেক্ষা করছে আদিবাসী মানুষরা৷
বেরাইন্না ব্রিজ পার হয়ে আসামবস্তি পর্যন্ত মুগ্ধতার পাশাপাশি সবাইকে ছুঁয়ে যাবে ছন্নছাড়া মেঘেদের দল। গোধূলির লালচে আলোয় দিগন্ত বিস্তৃত কাপ্তাই হ্রদ যেন পরিণত হয় ঝিলমিলিয়ে ওঠা এক সোনালী নদীতে। হ্রদের পানিতে তখন শেষবেলার আলো-আধারির খুনসুটি। প্রাণভরে উপভোগ করা যায় প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য।
এই লেকের পাড়েই হিল্লোল চাকমা ও তার তিন বন্ধু মিলে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে এ বেরাইন্না লেক শোর ক্যাফে চালু করেছিলেন। তখন থেকে সেবার মান ধরে রেখেই বর্তমান পর্যন্ত তারা ভালোভাবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন পর্যটকদের ৷ হিল্লোল দাদার যোগাযোগ নাম্বার : ০১৭৩২৩৩২৮১৯ , ০১৮৫৬৯৫৭০০২
এখানে আসলেই যে কারো মন ভাল হয়ে যাবে গ্যারান্টি ৷ রয়েছে কায়াকিং করার ব্যবস্থা ৷ দুইজনের কায়াকে ঘন্টা প্রতি ৩০০ টাকা আর তিন জনের কায়াকে ঘন্টাপ্রতি ৪০০ টাকা নেয় ৷
বেরাইন্না লেক যাওয়ার উপায়:
বেরাইন্যা লেকে দু’ভাবে যাওয়া যায়। রাঙ্গামাটি দিয়ে অথবা কাপ্তাই দিয়ে ৷
রাঙ্গামাটি থেকে: ঢাকা থেকে সরাসরি বাস আছে রাঙ্গামাটির। আর চট্টগ্রাম হয়ে যদি যায় তাহলে অক্সিজেন থেকে রাঙামাটির জন্য পাহাড়িকা বাস রয়েছে, প্রতি ৩০ মিনিট পরপর। জনপ্রতি ভাড়া- ১২০ টাকা। রাঙ্গামাটি থেকে রিজার্ভ সিএনজিতে সরাসরি বেরাইন্যা লেক চলে যাওয়া যায় ভাড়া কম বেশী ৬০০-৮০০ টাকা। দরদাম করে নিতে হয়৷
কাপ্তাই থেকে: এই দিকে যেতে হলে প্রথমে চট্টগ্রামের বদ্দারহাট বাস টার্মিনাল আসতে হবে। সেখান থেকে কিছুক্ষণ পর পর কাপ্তাইয়ের বিরতিহীন গেট লক বাস ছাড়ে। ভাড়া জনপ্রতি ৬৫ টাকা। তারপর কাপ্তাই বাস স্টেশন থেকে সিএনজিতে করে বেরাইন্যা লেক চলে আসা যায়৷ ভাড়া ৩০০ থেকে ৩২০ শুধু যাওয়া। কেউ চাইলে সিএনজি রিজার্ভ নিয়েও যেতে পারে। এতে ড্রাইভারের সাথে কথা বলে নিতে হবে। তবে বেরাইন্যাতে সিএনজি থাকে। লোকাল গাড়ি পেতে তেমন কষ্ট হয় না৷ আবার কেউ চাইলে চট্টগ্রাম শহর থেকেই মাইক্রোবাস রিজার্ভ ভাড়া করে নিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারেন ৷ ভাড়া কম বেশি ৭০০০ – ৭৫০০ টাকা নিতে পারে৷
*** আমাদের সকলের পরিবেশের দিকে যত্নবান হওয়া উচিত ৷ ঘুরতে গেলে যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে ৷ নিজেদের জিনিস নিজেদেরই রক্ষনাবেক্ষন করতে হবে নিজ দায়িত্বে ৷