নিকলী বেড়িবাঁধ, কিশোরগঞ্জ
অনেক দিন ধরে প্ন্যান করছিলাম নিকলী যাব নিকলী যাব! সময় আঁর সুযোগ যেন হয়ে উঠছিল না! এটা শুধু যেন হবে আমাদের ট্যুর! তো জামাই বাচ্চা ফেলে রওনা দিলাম!
একা যাবার সাহস করি নাই! তাই ভবঘুরের সাথে ব্যাগ বোচকা বেধে সকাল ৬ টায় রওনা! সাথে ছিল ছোট বেলার বন্ধু আর প্রান প্রিয় কিছু মানুষ!
তো এত সকালে তো কোন দিন উঠি না! নিজের কাছে ই কেমন চোর চোর লাগছিল কারন স্পটে ই সকাল ৬ টায় থাকতে বলেছে! তখন খুব রাগ লাগছিল!এত সকাল সকাল কেন!
পরে বুঝেছিলাম নিকলী যেতে ৪ টা বেজে গিয়েছিল! বেশ দুর! দিনে গিয়ে দিনে আসা মানে সকাল ৬ আর রাত ১২:৩০!
যাই হোক নিকলীর সৌন্দর্যের কাছে এসব সব হাঁর মানে! শাহবাগ থেকে ৬০০ ফিট দিয়ে রওনা দিলাম পথে ই নাস্তা করে নিলাম! কারন মাঝখানে ভাল খাবারের দোকান কম পরবে!
দুপুর ৩ টায় গিয়ে পৌঁছালাম! সবাই বললে লান্চ করে নিতে কিন্তু আমার মন নিকলী নিকলী করছে! পরে ভাবলাম খেয়ে ই নেই!
নাকে মুখে খেয়ে মাইক্রো যখন নিকলীর দু পাস ঘেসে যাচ্ছিল তখন মনে হচ্ছিল কখন নামবো!
ঘাঁটে এসে নামলাম আগে ই নৌকা ঠিক করা ছিল ! আল্লাহর নাম নিয়ে উঠে পরলাম।
দুপুর ৪ টার রোদেও পুড়ে যাচ্ছিলাম! কিন্তু চারদিকের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম!
চারদিকে ইলিশের রং এর মত চকচকে পানি! কোথাও বেশী কোথাও কম! মানুষ জন পায়ে হেটে ই পার হচ্ছে! আমার প্ন্যান হচ্ছে পানি তে নামা যাবে না!
যা ইনজয় করবো নৌকায় বসে! কিন্তু কিছু দুরে আসার পরে দেখলাম “গরিবের রাতারগুল”! আমি জানিনা এই নাম কোথা থেকে আসল! কিন্তু সবাই একি নাম বলছিল!
আমি নামে নয়, জায়গা দেখে রীতিমত অবাক! নামবো কি নামবো না ভাবতে ভাবতে দেখি আমার এক সঙ্গী আরেক সঙ্গী কে নামাতে গিয়ে ফেলে দিয়েছে! চার দিকে হই হই শুরু হল এর মধ্য আমি ও নেমে গিয়ে পানিতে ভিজার মজা নেওয়া শুরু করলাম!
উঠতে ইচ্ছা করেছিল না! কিন্তু সন্ধা ছুঁই ছুঁই! ঊঠতে তো হবে ই! উঠে চেন্জ করে রওনা দিলাম! অসম্ভব সুন্দর একটা দিন ছিল! এখনো চোখে ভাসে!
কিশোরগঞ্জ একদিনের ভ্রমনের জন্য নিকলী বেড়িবাঁধ ঘুরে আসতে পারেন।
বর্ষার সময় এই জায়গা ভ্রমনের জন্য বেশ উপযুক্ত। যারা মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।
এক সময়কার পাটের দেশ হিসেবে খ্যাত নিকলী উপজেলা। কিশোরগঞ্জের প্রাচীণতম উপজেলা নিকলী কে বর্ষা মৌসুমে মিনি পর্যটন কেন্দ্র বলা হয়ে থাকে।
নিকলীর নৌকা বাইচ দেশ ব্যাপী সমাদৃত। পাটের জন্য বিখ্যাত বলে বৃটিশ আমলে নিকলী দামপাড়া থেকে সূদুর লন্ডনে পাট পাঠানো হতো, এজন্য বৃটিশদের একটি সিল মোহর ছিল (N D P) মানে N = নিকলী, D= দাম, P = পাড়া।
নামকরন:
নিকলীর সাতার প্রতিযোগিতা দেশ বিদেশে ব্যাপক সুনাম রয়েছে। নিকলী নামকরণের জনশ্রুতি এমন যে, মোঘল বাহিনী খাজা ওসমানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে করতে এবং তাঁকে ধাবিত করতে এই এলাকায় পৌঁছায় এবং সেখানে ছাউনি ফেলে। তাদেঁর অস্থায়ী আবাস স্থলে স্থানীয় লোকজন জড়ো হলে দলের প্রধান সিপাহীদের বলেন, “উছলে নিকালো”। এই ফারসি শব্দ উচ্চারণ বিকৃতিতে পরবর্তিতে নিকলী হয়েছে।
অন্য একটি জনশ্রুতি অনুসারে, নিখিল চন্দ্র মানে এক জনপ্রিয় জমিদার এখানে বাস করতেন। এই জমিদারের নামানুসারে নিকলী নামের উদ্ভব।
নিকলী উপজেলার ঐতিহাসিক ও মনোরম জায়গা সমুহ:
১/ বেরিবাধ ২/ প্রাচীণ গুরাই মসজিদ ৩/ মোহরকোণা পুরণো বাড়ী ৪/ প্রাচীণ চন্দ্রনাথ আখড়া ৫/ ছাতিরচর হাওর ৬/ মোহরকোনা ব্রীজ ৭/ নিকলী – হিলচিয়া সাবমার্চ রোড ৮/ কুর্শা ব্রীজ।
নিকলীর জলাশয় ও প্রধান নদী:
সোয়াইজনী, বাউলাই, ধনু, সিঙ্গুয়া ও ঘোড়াউএা, তেগুলিয়া বিল, বড়বিল, বড়লিয়ারকন্দ বিল, নেওরা বিল উল্লেখযোগ্য।
নিকলী থানা গঠিত হয় ১৮৮১ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ২৪ মার্চ ১৯৮৩ ইং কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ২৭ কিঃ মিঃ দূরে নিকলী উপজেলার আয়তন ২১৪.৪০ বর্গ কিলোমিটার যার উত্তরে করিমগঞ্জ উপজেলা এবং মিটামইন উপজেলা, দক্ষিণে বাজিতপুর উপজেলা; পূর্বে অষ্টগ্রাম উপজেলা ও মিটামইন উপজেলা আর পশ্চিমে কটিয়াদি উপজেলা ও করিমগঞ্জ উপজেলা।
নিকলী উপজেলার মোট ইউনিয়ন ৭ টি। ১/ নিকলী সদর, ২/ দামপাড়া ৩/ কারপাশা, ৪/ শিংপুর ৫/ জারইতলা, ৬ / গুড়ই ৭ / ছাতিরচর।
নিকলীতে মোট হাওর ১৯ টি এবং সম্মিলিত জলাভূমির আয়তন ১৪৮৪৫ হেক্টর। সবচেয়ে ছোটটি ১ হেক্টর, সবচেয়ে বড়টি ১৮৭৬ হেক্টর। এই ১৯টি হাওরের কোনটির নামই “নিকলী হাওর” নয়।
নিকলী উপজেলা কিশোরগঞ্জের প্রাচিনতম জনপদগুলোর একটি, নিকলী থানার বয়স প্রায় ২০০ হতে চলল।
নিকলীর মানুষ ভাটির মানুষ, হাওর আর নদী ঘিরেই এদের জীবন, প্রতিটা গ্রাম কোননা কোন হাওরের কান্দায়, ১৯টা হাওর ঘিরে এই জনপদ, প্রত্যেকের ঠিকানা গ্রামের পাশের হাওরের নামেই হয় সাধারণত।
১৯ টি হাওরের নামের তালিকাঃ
ভাটিবরতিয়া হাওর, বারৈয়ার হাওর, ভূষাকান্দা বিল, বড় হাওর, বুল্লার হাওর, চানপুর হাওর, গোড়াদিঘা হাওর, গুরাই হাওর, জড়ইতলা হাওর, কালিয়াইন হাওর, কাইল্যার হাওর, খুনখুনি হাওর, মধ্যনগর হাওর, মহিতুলপা হাওর, মিঠামইন উত্তর হাওর, মিঠামইন দক্ষিণ হাওর, নোয়াপারা হাওর,পশ্চিম বাইদ হাওর, পশ্চিমবান্ধ হাওর৷
তথ্য সুত্র গুগল
ছবি ও মূল লেখা : রিনি রাজিউন তিশা