প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি চট্টগ্রামের একটা ছোট উপজেলা সীতাকুন্ড। পাহাড় সমুদ্রের মিলন মেলা যেন এখানেই। প্রকৃতি প্রেমীদের আত্মার খোরাক মেটাতে কি নেই এখানে।
চট্টগ্রাম জেলা সদর থেকে প্রায় ৩৭ কিলোমিটার উত্তরে ২২°২২´ থেকে ২২°৪২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৩´ থেকে ৯১°৪৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে অবস্থিত সীতাকুণ্ড উপজেলার আয়তন ২৭৩.৪৭ বর্গ কিলোমিটার। এ উপজেলার উত্তরে মীরস্বরাই উপজেলা, দক্ষিণাংশে পাহাড়তলী (সিটি গেইট), পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল, পূর্বে হাটহাজারী উপজেলা।
সীতাকুণ্ড থানা গঠিত হয় ১৯৭৯ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে। সীতাকুন্ডের নামকরণ নিয়ে বেশ কিছু কিংবদন্তী রয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের অনুসারীরা মনে করেন রামায়ণে বর্ণিত সীতা এখানে আগমন করেন এবং একটি কুন্ডে স্নান করেন। এই কারণে সীতাকুন্ডে নামের উৎপত্তি হয়েছে। অন্য মতে রাম স্বয়ং তার স্ত্রী সীতার নামেই সীতাকুন্ড নামকরণ করেছিলেন।
অন্য আরেক তথ্যমতে, দক্ষ রাজার মহাযজ্ঞের সময় শিব তার স্ত্রী সতীর শবদেহ খন্ড বিখন্ড করেন এবং তার নামানুসারে সীতারকুন্ড কালের বির্বতনে বিকৃত হয়ে সীতাকুন্ড ধারণ করে।
প্রকৃতি প্রেমীদের আকর্ষনের জন্য সীতাকুন্ডে যেমন সমুদ্র সৈকত রয়েছে ঠিক তেমন রয়েছে অসংখ্য ট্রেইল ও ঝর্ণা।
সীতাকুন্ডের এই অসংখ্য ট্রেইলের মধ্যে অন্যতম সুন্দর একটি ট্রেইল হল বড় কমলদহ ট্রেইল। এই ট্রেইলে ঢুকলেই দেখা মেলে অনিন্দ সুন্দরী কমলদহ ঝর্ণার। অনেকে এটাকে রুপসী ঝর্নাও বলে।
কমলদহ ট্রেইলে বেশ কিছু ঝর্ণা ও ছোট বড় ক্যাসকেইড আছে। এই ট্রেইলের উপরের দিকে ডানে বায়ে ঝিরি পথ ভাগ হয়ে গেছে। ঝিরি পথগুলো ধরে সামনে আগালেই দেখা মিলবে ছোট বড় ঝর্ণা আর মনোমুগ্ধকর ক্যাসকেডের।
অনেকেই ক্যাসকেড কি জানে না। অনেকেই আবার একে জলপ্রপাতের সাথে গুলিয়ে ফেলে। পাহাড়ে জমে থাকা পানি পাহাড় থেকে বিশালাকার হয়ে এলে তাকে জলপ্রপাত বলে আর ছোট আকারে নেমে এলে তাকে ঝর্ণা বলে৷ এই ঝর্ণা ও জলপ্রপাত এগিয়ে যাবার পথে ছোট মাঝারি নিচু পাথরের গা বেয়ে আসা পানি হচ্ছে ক্যাসকেড।
বর্ষাকালে কমলদহ ঝর্ণার সৌন্দর্য পুরোপুরি উপভোগ করা যায়। ক্যাসকেড গুলোতেও পানি থাকে প্রচুর৷ বর্ষায় চারিদিকে সবুজ জঙ্গলে ঘেরা পাহাড় চিড়ে প্রায় ৫০ ফুট উপর থেকে আছড়ে পড়ে পানি এই ঝর্ণায়। ২-৩ দিন ক্রমাগত বৃষ্টি হবার পর এই ট্রেইলে গেলে কমলদহ ঝর্ণার যে অসাধারণ রূপ দেখা যায় তা অন্য সময়ে গেলে দেখা যায় না।
কমলদহের আপার স্ট্রীমে গেলেই ছাগলকান্দা, রূপসী, ছুরিকাটাসহ অসংখ্য ছোট বড় ক্যাসকেডের দেখা মিলবে।
প্রকৃতি রং ছড়ায় সুন্দরের। সেই সৌন্দর্য যে আমাদেরকে কতটা মোহাবিষ্ট করতে পারে তা অনুভব করতে হলে যেতে হবে প্রকৃতির কাছে। মিশে যেতে হবে প্রকৃতির সাথে কিছুটা সময়ের জন্য হলেও।
প্রকৃতি নানানভাবে কাছে টানে মানুষকে। কেউ ভালোবাসে পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে, কেউ ভালোবাসে সমুদ্র। কারও ভালো লাগে সবুজ প্রান্তর, আর কারও নেশা শুধু পথের পর পথ পেরিয়ে যাওয়া। যদি আপনি ভ্রমণ পাগল হয়ে থাকেন তাহলে নিঃসন্দেহে কমলদহ আপনার মনে প্রশান্তি এনে দিবে।
কিভাবে যাবেন
কমলদহে যেতে হলে দেশের যে কোন প্রান্ত হতে প্রথমে সীতাকুন্ডের বড়দারোগারহাট ওভার ব্রীজের সামনে এসে নামতে হবে।
নামার পর ঢাকামুখে কিছুদূর পায়ে হেঁটে গেলেই দেখবেন হাতের ডান পাশে একটা ব্রিকফিল্ড বা ইটাখোলা রয়েছে। সেই ইটাখোলার পাশ দিয়ে একটা ইটের রাস্তা গেছে। সেই রাস্তা ধররেই পাহাড়ের দিকে কিছু সময় হাঁটলেই রেললাইন দেখতে পাবেন।
রেললাইন ক্রস করে কিছুক্ষন হাঁটলে একটা ঝিরিপথ দেখা যাবে। সেই ঝিরিপথ দিয়ে ১০-১৫ মিনিট হাঁটলেই কমলদহ ঝর্ণায় পৌঁছে যাবেন।
প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হউন। ট্রেইল পথে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না, বাংলাদেশকে ভালোবাসুন, উপভোগ করুন এর অপার সৌন্দর্য।
লিখা ও ছবিঃ রবি চন্দ্রবিন্দু