চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড ও মীরসরাইয়ের বারৈয়াঢালা জাতীয় উদ্যান একটি পরিবেশবান্ধব পর্যটন স্পট। ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল থেকে এটিকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
এই বনের আয়তন ২৯৩৩.৬১ হেক্টর। বন ছাগল, বন কুকুর, মেটে কাঠমৌর, কালাপিঠ চেরালেজ, সবুজ তাউরা এই বনের গুরুত্বপূর্ণ প্রাণী ও পাখি। এছাড়াও এই বনে ২৫০ প্রজাতির গাছ ও ১৫০ প্রজাতির পাখি রয়েছে।
জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ জানায়, এখানকার বনাঞ্চলে হরিণ, ভাল্লুক, খরগোশ, অজগর সাপ, বনমোরগ, বন ছাগল, শুকর ও বিলুপ্ত প্রজাতির অসংখ্য পাখি রয়েছে।
এছাড়া এখানকার সৃজিত বাগানে চাপালিশ, জাম, সেগুন, কদম, চিকরাশি, গামারিসহ বিভিন্ন প্রকার কাঠ-ঔষধি বৃক্ষ, বাঁশ ও সাইকাস উদ্ভিদ রয়েছে। শুধু তাই নয় এই বনের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক প্রাকৃতিক ঝর্ণা।
এই বারৈয়্যাঢালা জাতীয় উদ্যানের মিরসসরাইয় অংশের ছোট কমলদহের ওয়াহেদপুর গ্রামে রয়েছে বাউয়্যাছরা পানি সেচ প্রকল্প ও লেক। এটা একটা কিত্রিম লেক। শুষ্ক মৌসুমে এলাকার কৃষকদের সেচের পানির যোগান দেয় এই লেক।
স্থানীয়ভাবে একে ‘বাউয়্যাছরা লেক’ বললেও পর্যটকদের জন্য এটা ‘নীলাম্বরী লেক’ নাম ধারন করে সবুজের মাঝে লীল জলরাশির সৌন্দর্য্য বিলায় ৷
বাউয়াছরা লেক লেক থেকে একটু ভিতরের দিকে গেলেই খুব সুন্দর কয়েকটা ঝর্না দেখতে পাওয়া যায়। এগুলা হল হাঁটু ভাঙ্গা, হরিনমারা ও সর্প প্রপাত।
ছোট কমলদহের বিখ্যাত ড্রাইভার হোটেলের সামনে নেমে, মহাসড়ক পার হয়ে বারৈয়্যাঢালা জাতীয় উদ্যান লেখা ফলকের লাগোয়া সরু রাস্তা ধরে ৫ মিনিটের মতো হাটলে রেল লাইন দেখতে পাওয়া যায়, তার আগে হাতের ডানপাশে একটা ঈদ্গাহ পরবে।
রেল লাইন পার হয়ে ক্ষেতের মাঝ এর রাস্তা ধরে গিয়ে বাম দিকে পাহাড়ি পথে ১০ থেকে ১৫ মিনিট হেঁটে গেলেই বাউয়াছরা লেক পরবে।
লেকের বাম দিকে হাটা শুরু করলে বাউয়াছড়া ঝিরি পাবেন, (চাইলে নৌকা দিয়েও লেক পার হওয়া যায়, ভাড়া জন প্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকা) এ ঝিরি দিয়ে কিছুদূর হেঁটে গেলে ওয়াই (Y) জংশন পরবে। জংশনের বাম দিকে ৫/৭ মিনিটের মত সামনে এগিয়ে গেলে পাবেন হাটুভাঙ্গা ঝর্ণা।
হাটুভাঙ্গা থেকে আবার ওয়াই (Y) জংশনে ফিরে এসে ডানের ঝিরিতে ১০ মিনিটে মতো হাটলে আরেকটা ওয়াই (Y) জংশন দেখতে পাওয়া। এবার বামের ঝিরি ধরে ৬/৭ মিনিট হেঁটে গেলেই পৌঁছে যাবেন হরিণমারা ঝর্ণায়।
হরিনমারা ঝর্না দেখে এসে আবার সেই ওয়াই (Y) জংশনে ফিরে আসতে হবে, যেখান থেকে বাম দিকের ঝিরির রাস্তা ধরেছিলেন। এবার ওয়াই (Y) জংশনের ডান দিকের ঝিরি ধরে কিছু দূর গেলে সর্প প্রপাত দেখতে পাবেন।
ঝর্না দেখে ফিরে এসে বিখ্যাত ড্রাইভার হোটেলে খাবার খেতে ভুলবেন না। খাবার বেশ সস্তা আর মুখরোচক।
ভরা বর্ষায় এই ট্রেইলে না ঢুকলে হরিনমার ঝর্নায় পানি পাওয়া মুশকিল, আর বর্ষায় রাস্তা বেশ পিচ্ছিল থাকে জোঁকের আনাগোনাও বেড়ে যায়।
যদি নিজের উপড় কনফিডেন্স না থাকে তাহলে লোকাল গাইড নিয়ে নিবেন। নাহলে রাস্তা হরাবার সম্ভাবনা বেশি।
যেখানেই যান দয়াকরে প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হউন। ট্রেইলের পথে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না, বাংলাদেশকে ভালবাসুন, উপভোগ করুন এর অপার সৌন্দর্য।
লিখা ও ছবি: রবি চন্দ্রবিন্দু