শালবনের সেতু-বন্ধন !
কোথাও কেও নেই, যতদুর চোখ যায় শুধু লম্বা শাল এর সারি , নানান পাখির কিচির মিচির ডাক। ঘন বনে আলো ছায়ার খেলা, হাটতে হাটতে হঠাৎ দেখা যায় কেও সাইকেল নিয়ে যাচ্ছে বনের সরু পথ ধরে, কেও বা শুকনো ডাল পালা কুড়িয়ে বাড়ি ফিরছে অনেক বার হেটেছি শাল এর সরু পথ ধরে । খুজে ফিরেছি শুমচা সহ নানান পাখি । মাঝেমধ্যে দু একটা শেয়াল এর সাথেও দেখা হয়েছে বনের রাস্তায় । কেও দাড়িয়েছে কেও পালিয়েছে । কাঠবিড়ালী আছে বেশ । এ গাছ ও গাছ লম্ফ-ঝম্ফ করতেই তাদের সময় যায় ।
এটি দিনাজপুরে অবস্থিত একটি জাতীয় উদ্যান । ২০১০ সালে এটি জাতীয় উদ্যান তকমা পায় । ১২৭৮.৪৯ একর জমি নিয়ে গঠিত এই শালবনটি । শালবনের পাশেই একে বেকে আশুরার বিল । এই শালবনে শাল ছাড়াও গামার, কড়ই, সেগুন,জাম , বেত, বাঁশ, সহ আরো অনেক প্রজাতির গাছ রয়েছে । রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রানী ।
এ শালবনের সৌন্দর্য্য দ্বিগুণ হয়েছে বনের পাশের আশুরার বিলের জন্য । বন ও বিলের এক অপরূপ সমন্বয় ঘটেছে এ জাতীয় উদ্যান এ । জল টলোমল বিলের পাশে সারি সারি শালের ছায়া , ফুটে আছে লাল শাপলা ,সাদা শাপলা ।পদ্ম ও বাদ যায়নি । জলময়ুর উড়ে বেড়াচ্ছে মনের আনন্দে । সাদা শুভ্র বকেরা মাছেদের সাথে বোঝাপড়ায় ব্যস্ত । এদিক সেদিক ভেসে যাচ্ছে নৌকা । কেও মাছ ধরছে কেও বা করছে পারাপার ।
সবকিছু ঠিক এমন সুন্দর ছিলনা , মানুষের লোভের আগ্রাসনে হারিয়ে যেতে বসেছিল বিলের সৌন্দর্য্য । হারিয়ে যাচ্ছিল লাল শাপলা সহ অনেক প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী । শীত মৌসুমে পানির অভাবে শুকিয়ে যেত বিল । কেও দেখেন নি এই অপরূপ বিলের দুর্দশা বা দেখেও দেখেন নি । দেখেছিলেন নবাবগঞ্জে সদ্য যোগদান করা ইউএনও মশিউর রহমান । দুবছরে পালটে দিয়েছেন বিল । নিজে নেমে পরিস্কার করেছেন বিল , দূর দুরান্ত থেকে এনেছেন লাল শাপলা। লড়েছেন দখলদার সাথে ।
বিলের মধ্যে তৈরী করেছেন দৃষ্টিনন্দন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কাঠের সেতু । তৈরী করেছেন ক্রস ড্যাম । এখন আর শুষ্ক মৌসুমে পানী শুকোয় না বিলের । পর্যটনের এক নতুন সম্ভাবনা খুলে গিয়েছে নবাবগঞ্জ জাতীয় উদ্যান ও আশুরার বিলে ।
লেখা: Md. Majadul Islam