সোনাদিয়া কক্সবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ একটি দ্বীপ৷ এই দ্বীপটির আয়তন প্রায় ৯ বর্গ কিলোমিটার। অপরুপ সৌন্দর্যের আধার এই দ্বীপটি কক্সবাজার জেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নে অবস্থিত৷
এটি ২১˙২৮˝- ২১˙৩৩˝উত্তর অক্ষাংশ ও ৯১˙৫০˝- ৯১˙৫৬˝পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। একটি খাল দ্বারা সোনাদিয়া মহেশখালীর মূল দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েছে৷ সোনাদিয়া অনেকের কাছে জীববৈচিত্রের দ্বীপ নামেও পরিচিতি এবং এ দ্বীপ সৌন্দর্য পিপাসুদের জন্য অন্যতম পর্যটন স্থান। চারদিকে গভীর সমুদ্রের সাগরের ঢেউ সমৃদ্ধ সোনাদিয়া মূলত একটি প্যারাদ্বীপ৷
বাংলাদেশের দক্ষিন-পূর্ব উপকূলীয় প্যারাবনের অবশিষ্টাংশ এখন মূলত শুধু সোনাদিয়া দ্বীপেই দেখা যায়। সোনাদিয়ার প্যারাবন বাইন বৃক্ষ সমৃদ্ধ। এছাড়া প্যারাবনে কেওড়া, গেওয়া, হারগোজা, নুনিয়া ইত্যাদি ম্যনগ্রোভ প্রজাতির উদ্ভিদ পাওয়া যায়। প্যারাবনের ভিতরে সুন্দর বনের মত ছোট ছোট নদীর দু’পাশে নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখা যায়। সোনাদিয়ার প্যারাবন, চর, খাল ও মোহনা নানা প্রজাতির মাছ ও অমেরুদন্ডী প্রাণীর গুরুত্বপূর্ন আবাসস্থল।
দ্বীপটির প্যারাবন সংলগ্ন খালে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় যেমন-বাটা, কোরাল, তাইল্যা, দাতিনা, কাউন, পোয়া ইত্যাদি।
সোনাদিয়া দেশের প্রধান শুটকি মাছ উৎপাদন কেন্দ্র। এখানকার ম্যানগ্রোভ বন এবং উপকূলীয় বনভূমি, সাগরে গাঢ় নীল পানি, কেয়া বন, লাল কাঁকড়া, শামুক, বিভিন্ন প্রকারের সামুদ্রিক পাখি পর্যটকদের মনে দোলা দেয়।
এই দ্বীপটি বাংলাদেশের গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির জন্য নির্বাচিত হয়েছিল পরে তা মাতারবাড়ি তে স্থানান্তর করা হয়েছে বৃহত্তর স্বার্থে৷
প্রায় ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রশস্থ সৈকত, সৈকত ঘেষে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে থাকা সূউচ্চ বালিয়াড়ি, জালের মতো ছোট-বড় অসংখ্য খাল বেষ্টিত ম্যানগ্রোভ বন, বিস্তির্ণ ল্যাগুন্যাল ম্যাডফ্ল্যাট, কেয়া-নিশিন্দার ঝোপ, বিচিত্র প্রজাতির জলচর পাখি সোনাদিয়া দ্বীপের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
সমুদ্র সৈকতের পাশ ঘেষে অবস্থিত সোনাদিয়ার সূ-উচ্চু বালিয়াড়ির তুলনা বাংলাদেশে নেই। সমুদ্র এবং সৈকত থেকে বালিয়াড়ির দৃশ্য অপূর্ব মনে হয়। সোনাদিয়ার সৈকত এবং বালিয়াড়ি বিপন্ন জলপাই বর্ণের সামুদ্রিক কাছিমের ডিম পাড়ার উপযোগী স্থান। এখানে সামুদ্রিক সবুজ কাছিমও ডিম পাড়তে আসে। সমুদ্র সৈকতের বেলাভূমিতে পানির কিনারা ঘেষে বিচরন করে লাল কাঁকড়া এবং প্যারাবন এলাকায় শীলা কাঁকড়া দেখতে পাওয়া যায়৷
এই দ্বীপে ২টি মসজিদ, ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১টি সাইক্লোন সেন্টার, আনুমানিক ১২টি গভীর নলকূপ রয়েছে। স্থানীয় অধিবাসীদের মতে সোনাদিয়া দ্বীপে মানব বসতির ইতিহাস আনুমানিক দেড়শত বছরের।
দ্বীপের মানুষেরা মূলত দুইটি গ্রামে বসবাস করে: সোনাদিয়া পূর্বপাড়া এবং সোনাদিয়া পশ্চিমপাড়া। দ্বীপটির বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় এক হাজার সাত শত। মাছ ধরা, মাছ শুকানো এবং কৃষিকাজ এই দ্বীপবাসীর মূল পেশা। অনেকেই আবার তাদের জীবিকার জন্য চিংড়ির পোনা ও শামুক-ঝিনুক সংগ্রহের মতো পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর কাজে নিয়োজিত থাকতে দেখা যায়।
কিভাবে যাবেন:
কক্সবাজার ৬ নং ঘাট থেকে রিজার্ভ বোটে করে সরাসরি সোনাদিয়া চলে যাওয়া যায়৷ ৬০০০ টাকার মত লাগে৷ একটু দরদাম করে নিতে হয় বোট৷ আবার লোকাল স্পীড বোটে করে মহেশখালী গিয়ে সেখান থেকে সিএনজি বা টমটমে করে ঘটি ভাঙ্গা ঘাটে গিয়ে লোকাল গামবোটে করেও সোনাদিয়া যাওয়া যায়৷
কক্সবাজার থেকে স্পীড বোটে বর্তমানে জনপ্রতি ১০০ টাকা করে নেয়৷ আর রিজার্ভ টমটম ২৫০-৩০০ টাকা নেয় ঘটি ভাঙ্গা পর্যন্ত৷ একটা টমটমে ৭ জন বসতে পারে৷ পিছনে ৬ জন আর সামনে ড্রাইভারের পাশে ১ জন ৷ ঘটি ভাঙ্গা ঘাট থেকে লোকাল গামবোটে সোনাদিয়া পর্যন্ত জনপ্রতি ৩৫-৪০ টাকার মত নেয় ৷
বিঃ দ্রঃ : যেখানেই ঘুরতে যান , পরিবেশের প্রতি সচেতন থাকুন ৷ যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ নোংরা করবেন না ৷ আপনার আমার প্রচেষ্টাই পারে দেশটাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে৷