তখন বিকেলের আলো মিইয়ে আসছে, স্থিমিত সুর্যের আলোতে ছবি তোলার আনন্দই আলাদা, কিন্তু বনের ভিতর আলো আঁধারী। জংগলে এখনো বৃষ্টি হয়নি, বৃষ্টি শুরু হলে জোঁকরা প্রাণবন্ত হয়ে যায়, সেই সাথে সাপ বৃষ্টির প্রথম বেঙ ধরার আনন্দে বেরিয়ে পরে। ভাগ্যিস এখনো বৃষ্টি হয় নি। ট্রেইল ধরে কিছুদূর হেঁটে গেলে বেতের ঝোঁপ সেই ঝোঁপের ভিতর ক্রলিং করে কোন মতে প্রবেশ করা যায়, এর পর চারদিকে বেতের কাঁটা দিয়ে ঘেরা কেমন যেন একটা রাজত্ব, এই কাঁটা ভেদ করে কোন পশু পাখি আক্রমণ করবে এমন ভাবাটা দুঃসাহসীকতা।
ভাবলাম আজকে এইখানে এম্বুস করে শুয়ে থাকি। নিজেকে ক্যামোফ্লেজ করে শুধু চোখ দুটো খোলা রেখে ক্রলিং করে ঝোঁপের ভিতর শুয়ে আছি,।
অনেকক্ষণ শুয়ে থেকে হতাশা ঘিরে ধরলো কয়েকটা পিন স্ট্রাইপ বাব্লার, আর কালোঘাড় রাজনের ছুটাছূটি ছাড়া কিছুই চোখে পরে নি। পরে ঝড়া পাতার মচমচের শব্দ পেলাম, এটা সাধারণত বন মোরগ, মথুরা, হোওয়াইট চিক পেট্রীজ, আর কাঠ ময়ুর ঝড়া পাতা সরিয়ে পোকা মাকড় খুজে, তেমনি পাতা সরানোর শব্দ কানে লাগছে কারণ চারিদিকে ঝোঁপ ঝাড় আর কাটা দিয়ে ঘেরা কিছুই নজরে আসছে না।
পাতা সরাতে সরাতে দেখালাম ধুসর কিছু আমার দিকে আসছে, নড়াচড়া না করে তার দিকে নিবিষ্ট মনে তাকিয়ে থাকলাম। কখনো ঝোঁপে চলে যায় আবার আসে। চারিদিকে কাঁটা বলে কোনভাবে ফোকাস ও ধরে রাখা যায় না। কিছু পর খুব কাছেই সর সর করে বিদ্ঘুটে আওয়াজ পেলাম তারপর চোখ মেলে দেখার পর পিঠের শিরদারা শীতল হয়ে গেলো, সারা শরীর কালো মুখটা শুধু বর্ণিল জাত সাপ। (পরে জেনেছি ওটা কিং কোবরা যার বিষের তীব্রতা অনেক অনেক বেশি।
সাপটা আমাকে দেখেছে কিনা জানিনা তবে কিছুটা দুরত্ব নিয়ে সে চলে গেছে। কিন্তু মন আমার এখন ভয়ার্ত পালাতে চাইলে ও পালাবার উপায় নাই, কারণ উপরে সব বেত কাটা দাঁড়ানো বা বসার উপায় নেই।
ভয় ভয় মনটাকে দমিয়ে রেখে আবার ধুসর পাখিটির দিকে মনোনিবেশ করলাম, সে ধীরে খুব ধীরে আমার দিকে আসছে কিছুটা দৃষ্টিগোচর হতেই দেখলাম এইটা সেই স্বপ্নের কাঠময়ুর। নিঃস্বাসটাকে বন্ধ করে নিলাম। সারা শরীর আমার নিস্তেজ হয়ে গেলো সেই শোয়া অবস্থাতেই চেষ্টা করলাম তাকে ফোকাসে রাখতে। অতি সাবধানী পাখি যদি আমার অস্থিত্ব টের পায় তবে সে পালিয়ে যেতে এক সেকেন্ডও নিবে না।
এর পরের কাহিনী ছবি বলবে।
লিখা ও ছবিঃ Sayed Abdu