‘মুন্সী’ ‘খাঁ’ টাইটেল যে হিন্দুদেরও হয় তা জানতাম, তবে খুব একটা common নয়। Afterall ‘মুন্সী’ শব্দটি ফার্সি।
হিন্দু মুন্সী পদবীধারীর সংযোগ পেলাম এই বাড়িটিতে এসে। বাড়িটি শরীয়তপুর কলেজ রোডে। এখন এই বাড়িটি পরিচিত ‘আজিজ মাস্টারের বাড়ি’ বলে।
বাড়িটির পেছন দিক রাস্তার দিকে। আগে হয়তো এমন ছিলো না। রাস্তাটা বোধ হয় পরে হয়েছে। সমুখে বেশ ভালো ফাঁকা জায়গা, এরপর বসতবাড়ি।
সুন্দর, এখনো প্রায় অক্ষত, একটু ‘পালিশ‘ করলেই একটা ‘piece of art’ এ রূপ নেয়ার মতো। কিন্তু বাড়িটা পরে আছে পরিত্যক্তের মতো। এমন অনাদরে ফেলে রাখার কোন কারণ মাথায় আসছিলো না। কবেকার কার তৈরী করা, কোন ইঙ্গিতই পাই নি ‘আজিজ মাস্টার’ এরবাইরে। এজন্য চুপ ছিলাম এই বাড়ি নিয়ে।
পরে কিছুটা আদ্যোপান্ত পাওয়া যায় ‘Save The Heritage Of Bangladesh’ পেজ এর এডমিন জনাব সাজ্জাদুর রশিদের এক পোস্ট থেকে।
‘আজিজ মাস্টার‘ হচ্ছেন অধ্যাপক আজিজ। তিনি বা তাঁর পরিবার থাকেন ঢাকা। বাড়ির বড় ছেলে একজন স্থপতি। তাঁর কাছ থেকেই জানা গেছে বাড়িটির অতীত ইতিহাস।
বাড়িটির নির্মান দেশভাগের ঠিক আগে আগে ১৯৪৬ সালে। এটি নির্মান করেছিলেন যজ্ঞেশ্বর মুন্সী নামের জনৈক ব্যবসায়ী।
যজ্ঞেশ্বর মুন্সীর পূর্বপুরুষের কারো হয়তো পেশা ছিলো ‘মুন্সীগিরি’। সায়েবদের দোভাষী। তিনি নিশ্চয়ই টুক টাক ইংরেজী জানতেন আর মোটামুটি জানতেন ফার্সি। একটি যোগ্যতাই যথেষ্ঠ ছিলো মুন্সীগিরির।
হয়তো মুন্সীগিরি করেই ভাগ্য ফিরিয়েছিলেন বংশের। এর থেকে মূল পদবী ( ঘোষ, রায়, মন্ডল বা বসু – বামুন কায়েত যাই হোক) খসে যেয়ে নুতন টাইটেল লেগে যায় শুধু মুন্সী।
মুন্সীগিরি পেশার পশারও খুব বেশী দিন ছিলো না। তাই দু এক প্রজন্ম বসে বসে খেয়ে এক প্রজন্ম হয়তো ধরে ব্যবসা। তেমনই একজন ব্যবসায়ী, আমরা অনুমান করতে পারি, যজ্ঞেশ্বরমুন্সী।
ব্যবসা করে তারও আয় উন্নতি সম্ভবত খুব বেশী একটা আগের নয়, কারণ বাড়িটা তিনি করেছিলেন ১৯৪৬–এ। তবে ১৯৪৭–এ তিনি দেশ ত্যাগ করেননি। কারণ বাড়িটা তাঁর কাছ হতে হাত বদল হয় ১৯৫৮ সালে। এরপরই দেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান যজ্ঞেশ্বর মুন্সী।
বাড়িটি তিনি বিক্রি করে যান জনৈক আজিজ নক্তির কাছে। এই ‘নক্তি’ টাইটেলও আমি দেখলাম এই প্রথম।
পরবর্তীতে বেশ কবার হাত বদল হয় বাড়িটি – প্রথমে লতিফ ভূইয়া, এর পর হাশেম নক্তি, ফাইন্যালি ১৯৭৯ সালে বর্তমান মালিক অধ্যাপক আবদুল আজিজ মিয়া।
মূল নির্মাতা বিক্রি করে যাবার পর ২১ বছরের মাঝে ৩ বার হাত বদল! বুঝাই যাচ্ছে বাড়িটা কারোরই মনে ধরে নি। মনে ধরলে নিয়েই এভাবে পটাপট ছেড়ে দিতেন না। এর পর ৭৯ থেকে হয়ে গেছে ৪৩ বছর। এতোদিনেও এই ঘরে বসবাসের উদ্যোগ নেন নি অধ্যাপক আবদুল আজিজ মিয়া!
কিছুটা রং চং–এর চিহ্ন আছে।
হয়তো ভাড়া চলে না, তাই খরচ করে একটু ঠিকঠাক করতেও মনে ধরে নি। নিজেরা তো থাকেন ঢাকা। এটা বাসোপযোগী করে লাভ কি?
এই মানসিকতা থেকেই পড়ে আছে কিনা বাড়িটি কে জানে? এর পর কার হাতে পড়ে? নাকি এমনি এমনি পড়ে থাকবে শ্যাওলা ধরে; আর আমার মতো বাইরের তারা যেয়ে মাঝে মাঝে ছবি তুলে আসবে জানালা দিয়ে মাথা গলিয়ে!
এভাবেও থাকলেই হয়।
লিখা ও ছবিঃ তপন রায়
ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।