নয়নাভিরাম নারানগিরি
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত কাপ্তাই উপজেলার একটি ইউনিয়ন রাইখালী৷ কাপ্তাই উপজেলার দক্ষিণাংশে রাইখালী ইউনিয়নের অবস্থান। উপজেলা সদর থেকে এ ইউনিয়নের দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার।
এ ইউনিয়নের পূর্বে চিৎমরম ইউনিয়ন, উত্তরে কর্ণফুলি নদী ও চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন, পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা ইউনিয়ন এবং দক্ষিণে রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন ও গাইন্দ্যা ইউনিয়ন অবস্থিত।
রাইখালী ইউনিয়নের আয়তন প্রায় ২০,৪৮০ একর (৮২.৮৮ বর্গ কিলোমিটার)৷ এই রাইখালি ইউনিয়নের পাহাড় ঘেরা ছোট্ট একটি গ্রাম নারানগিরি৷
চাকমা আর মারমা অধ্যুষিত গ্রামটিতে বিপুল সংখ্যক বাঙালি অধিবাসী রয়েছে৷ বলা যায় সবাই এখানে একত্রে মিলেমিশেই বসবাস করে৷ সাম্প্রদায়িক কোন হানাহানি নেই৷
এখানকার প্রায় বেশিরভাগ বাড়িতে চাকমা মহিলারা হাতে বোনা বস্ত্র তৈরি করে৷ তৈরিকৃত বস্ত্র তারা হাটবারে রাইখালি বাজারে নিয়ে বিক্রি করে৷ পন্যের গুনগত মান ও বেশ ভাল৷
গ্রামের পাশ দিয়েই পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে চলেছে লুসাইয়ের স্রোতধারা খ্যাত অনিন্দসুন্দর কর্নফুলী নদী৷ নদীর ঠিক ওপাড়েই রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র হোয়াইট পেপার মিল ‘ কর্নফুলী পেপারমিল ‘৷
নারানগিরির পাড়ে বসেই দেখাযায় এই পেপার মিল আর তার ঠিক পূর্বদিকে তাকালেই দেখা মিলে সীতা পাহাড়ের৷ কর্নফুলি নদীর তীরে দাড়ানো সুউচ্চ সীতা পাহাড়টি খুবই দর্শণীয়।
কথিত আছে রাবণের সীতা-হরণের পর রাম ও লক্ষ্মণ এই পাহাড়ে ঘাঁটি গড়ে যুদ্ধে রাবণ বধ করেন এবং সীতাকে উদ্ধার করেন। নারানগিরির পাড়ে বসেই দূর থেকে উপভোগ করা যায় সীতা পাহাড়ের সৌন্দর্য্য৷
নারানগিরিতে একটি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে ৷ ভিতরের পরিবেশটা দেখার মত সাজানো গোছানো৷ নারানগিরিতে একটি সরকারি পশুসম্পদ কার্যালয় ও আছে৷
আছে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়৷ দূর দুরান্ত থেকে এখানে পড়তে আসে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী৷ নদীর কুল ঘেসা এই বিদ্যালয়ের রয়েছে একটি খেলার মাঠ৷ এলাকার সকল উৎসবের মিলনমেলা এই খেলার মাঠ৷
প্রতিবছর নির্দিষ্ট দিনে এখানে আদিবাসীদের পানি খেলা অনুষ্ঠিত হয়৷ যা এলাকার সকলে মিলে উপভোগ করে আনন্দ চিত্তে৷ মাঠের মধ্যে নৌকা তুলে তাতে পানি ভর্তি করে তরুন তরুনীরা একে অপরকে পানি ছুড়ে মারে৷ সেই সময় সামনে পড়লে আপনিও রক্ষা পাবার চান্স কম৷
কর্নফুলীর তীর ঘেসা নারানগিরি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ক্যাম্পিং করার জন্য চমৎকার একটা জায়গা৷ চাইলে ক্যাম্পিং করে এখান থেকে সহযেই নৌকাযোগে কর্নফুলির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে করতে কাপ্তাই চলে যাওয়া যায়৷ যাবার পথে ডলুছড়ি নেমে সেখানের সৌন্দর্য্যও উপভোগ করা যায়৷
যাবার উপায়:
দেশের যে কোন জায়গা থেকে প্রথমে চট্টগ্রামের বদ্দারহাট বাস টার্মিনাল আসতে হবে৷ তারপর টার্মিনাল হতে বাসযোগে রওনা হয়ে চন্দ্রঘোনার লিচুবাগান নামক স্থানে নামতে হবে। বাস হতে নেমে পায়ে হেঁটে অথবা রিক্সা নিয়ে যেতে হবে মিশট ঘাট৷ ঘাটে গিয়ে নৌকা দিয়ে নদী পার হলেই পৌঁছে যাবেন নারানগিরি৷
লিখা ও ছবি: রবি চন্দ্রবিন্দু।