দুঃসাহসী-লড়াকু ও বদমেজাজি এই জলাজমির পাখিটির নাম কালিম। ফকিরহাট-বাগেরহাট তথা বৃহত্তর খুলনায় এটি ‘বুরি’ নামে ব্যাপকভাবে পরিচিত। ইংরেজি নাম purple swamphen। বৈজ্ঞানিক নাম porphyrio porphyrio। দৈর্ঘ্য ৪৫ সেন্টিমিটার। ওজন ৬৫০ গ্রাম। মারকুটে এই পাখিরা একনজরে চকচকে নীলচে-বেগুনি। রোমান যোদ্ধাদের মতো কপাল-মাথা জোড়া আলতা রঙের দর্শনীয় বর্ম। লালচে রঙের পা ও পায়ের লম্বাটে আঙুল। লেজের তলা কার্পাস তুলোর মতো সাদা। চোখের পাশে বৃত্তাকারে সাদাটে ছোপ। গ্রীষ্ম-শরতে ভাসমান জলজ উদ্ভিদ-গুল্ম-কচুরিপানা ও ঝোপঝাড়ের তলায় ডাল-লতা দিয়ে বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। একেকটি কালিম তিন (০৩) থেকে সাত (০৭) টি ডিম পাড়ে। ছানা ফোটে ১৮ থেকে ২৩ দিনে। ছানারা হয় শ্লেটি-কালো। তাতে ধূসরের আভা ছড়ানো থাকে৷
বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ওশেনিয়া, আফ্রিকা আর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দেখা যায় পাখিটা । সারা পৃথিবীতে এক বিশাল এলাকা জুড়ে এদের আবাস, প্রায় ১ কোটি ৮৪ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এদের আবাস। বাংলাদেশের সর্বত্র এখন আর দেখতে পাওয়া যায় না। এরা সাধারণত হাওর, বিল, নলবন ও তৃণপূর্ণ স্রোতহীন জলাভূমিতে বিচরণ করে। যেসব জায়গায় ভাসমান বা অর্ধভাসমান পানা, গুল্ম, লতা, শাপলা ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে রয়েছে সেসব জলাশয় এদের পছন্দের বিচরণস্থল।
দেশে চলমান লকডাউনের কারনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে মানুষের আনাগোনা কমে গেছে। সেই সুযোগে প্রকৃতি আস্তে আস্তে ফিরে পাচ্ছে তার বুনো রুপ ৷ সাগরপাড়ে ফিরে এসেছে সবুজ সাগরলতা , প্রকৃতি তার বিস্তার ঘিটিয়েছে সৈকতের পাড় জুড়ে। উদ্ভিদ আর প্রাণিতে ভরপুর সৈকতে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য।
যে সাগরলতা সৈকতে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে চলে এসেছিল তা আজ সর্বত্র। এই সুযোগে সাগরলতার বেষ্টনীতে ঘর বানিয়েছে লারকোয়া পাখি (স্থানীয় নাম)। পাখিটার ভাল নাম কালিম পাখি ৷ শুধু বাসা নয় এর মধ্যে ডিমও পেড়েছে পাখিটি।
প্রকৃতির নিজস্ব ধারা বজায় থাকলে এমন জিনিস দেখতে পাব আরো বহু ৷ এখনই সময় এগুলো নিয়ে ভাবার ৷ যে প্রাকৃতিক পরিবেশ ফিরে এসেছে সাগড় পাড়ে এত বছর পর তা আর নষ্ট হতে দেয়া যাবেনা ৷ করতে হবে উপযুক্ত রক্ষনাবেক্ষন ৷ তাহলেই বাঁচবে প্রকৃতি৷