সেই ২০১৫ সালের কোনো এক সকালে…
সোনালী সূর্যদয় …
এমনিতেই গতকাল রাতে ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও ট্রেকিং করেছি অনেকটা পথ। তাও আবার ভরা পেটে! শুতে শুতে অনেক রাত্রি হয়েছিল। পূর্বের প্ল্যান অনুযায়ী ভোর ৪.৩০ মিনিটেই উঠে পড়েছি আমি। সবাইকে ঘুম থেকে ডেকে তোলাটা একটা মহাযজ্ঞের কাজ!
যাইহোক আমরা প্রায় ৫.৪৫ মিনিটে আবার হাঁটা শুরু করলাম। একটু হাঁটতেই কেমন যেন হাপিয়ে উঠলাম। একেতো খালি পেট তার উপর রাতের ঘুমটাও ভালো হয়নি, সকালে পানি খেয়েছি শুধু! এইবারের দলে সদস্য সংখ্যা বেশী, যে যার মতো হেঁটে চলেছে। রাস্তা মোটামুটি সহজই বলা চলে। ইট বসানো সলিং রাস্তা শুধু উপরের দিকে উঠে যাওয়া এইযা! সূর্য মামা এখনো উঠেনাই, গরম সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও কাঁধের ব্যাগ ক্রমশ ভারী লাগছিলো বেশ।
দল বড় হওয়াতে বার বার থামতে হচ্ছে কারো না কারো ক্লান্তির জন্য, হাঁটার গতি অনেক মন্থর। মেজাজটা চটে যাচ্ছে! এইভাবে এগোতে থাকলে আজ সারাদিনেও টার্গেট এর আশেপাশে যাওয়া যাবেনা!
হটাৎ করেই পূর্ব আকাশে পাতা শূন্য গাছ আর পাহাড়ের ফাঁকে চোখ আটকে গেল। একি দেখছি আমি!!! এতো সুন্দর সকাল হতে পারে!!! সত্যিই কি সকালের সূর্যদয় এতো মনোমুগ্ধকর? এমনতো নয় যে আমি আগে কখনোই পূর্ব আকাশে সূর্যদয় দেখিনি!
আমি সাগরে উত্তাল ঢেউয়ের মাঝে সূর্যদয় দেখেছি, নদীতেও দেখেছি, শহুরে সূর্যদয়ও দেখেছি। আমি গহীন বনেও সূর্যদয় দেখেছি, এমনকি এই পাহাড়েও সূর্যদয় দেখেছি বেশ কয়েক বার। তবে আজকের পরিবেশটা সত্যিই ভিন্ন লাগছে। কেন এতো সুন্দর লাগছে এই সূর্যদয়? মনে হচ্ছে যেন কোন চিত্রকর তার নিপুণ হাতে হরেকরকম রং এর বাহার নিয়ে আপন মনে এঁকে চলেছে এই ছবি…., মন্ত্রমুগ্ধের মতো চেয়ে আছি।
পূর্ব আকাশে পাহাড়ের মাঝে মেঘের ফাঁক গলে একটু একটু করে সূর্য জানান দিচ্ছে নিজের উপস্থিতি। তার আলোয় আলোকিত হবে চারিদিক। সূর্যস্নানে পবিত্র হবে এই জগৎ। একটি নতুন দিনের সূচনা, একটি নতুন সূর্য, আর একটি নতুন আশা! বাস্তবতার সৌন্দর্য্য যে কল্পনার সৌন্দর্য্য কেও হার মানায় তা আমি আজ উপলব্ধি করতে পারলাম।
জানি আমি চাইলে এই সময় টাকে আমার ক্যামেরায় বন্দী করে রাখতে পারবো, তবে আমার খুবই মন চাইছে এই সময়টাতে যদি আমি নিজেই বন্দী হয়ে যেতে পারতাম!! তখন কতই না ভালো হতো! এটা ঠিক একেকজনের দেখার ভঙ্গী একেক রকম হতেই পারে! তবে আমার কাছে মনে হয়েছে এটাই লেখকের ভাষায় সেই “সোনালী সকাল”
(Golden Morning)…
লিখেছেনঃ হাদি মুন