বাসায় রীতিমতো ঝগড়া করে সাতছড়ি গেছি। রাত তিনটায় পৌছে কি এক হোটেলে ঠান্ডায় বরফ হয়ে বসে আছি। হবিগঞ্জ যে এত ঠান্ডা কে জানত? সিএঞ্জি করে যখন রওনা দিলাম।,ঠান্ডা বাতাসে মনে হচ্ছে আমার হাইপোথার্মিয়া হয়েই গেল। সাতছড়ি পৌছলাম, টাওয়ার মানুষে গিজগিজ করছে, গাছের দিকে তাকায় মুখ শুকিয়ে গেল আরো, ফুলগুলো শুকিয়ে গেছে। গাছভর্তি কাঠশালিক আর কাঠশালিক, অন্য কিছুর চিহ্ন ও নাই। কি বিপদ হল বলতো?
ক্ষরা কেটে গেল, কিছুক্ষণ পর বিশাল চার ধনেশকে উড়ে উড়ে যেতে দেখলাম যখন। এ কি রূপকথা, এ কি ইন্দ্রজাল! বিদ্যুতগতিতে শাটারস্পিড বাড়িয়ে, এক্সপোজার প্লাস থ্রি করে মন্ত্রমুগ্ধের মত তুলেই গেছি ছবি। প্রায় নিশ্চিত ছিলাম, ছবি ওঠেনি ভাল, উঠলেও ফোকাসে নেই, ক্যামেরার স্ক্রিনে ছবিগুলো দেখে অবশ্য আশ্বস্ত হলাম, এক্সপোজার ভুল, কিন্ত ছবিগুলো একবারেই ফেলনা আসেনাই। স্বপ্ন পূরণের এক মাহেন্দ্রক্ষণ, যে পাখিকে এতদিন শুধু ছবিতে দেখেছি, তার দর্শন হল প্রকাশ্য দিবালোকে!
এর পরে আরেকবার সুযোগ হল, সবাই যখন ফুলঝুরি নিয়ে ব্যস্ত তখন একজোড়া এসে বসেছে কাছের গাছটায়, আমি এদের আরো কিছু ছবি নিলাম।
বলাবাহুল্য, রোদের মধ্যে ছবিগুলা ভাল হল না একবারেই। হিট ডিস্টরশন না কি একটা জিনিস যেন, এত কঠিন টার্ম আবার মনে থাকেনা আমার।
এইটা আমাদের অপেক্ষাকৃত সহজলভ্য ধনেশ যার বাংলা কাও ধনেশ, কিংবা পাকড়া ধনেশ। ইংরেজিতে Oriental Pied Hornbills. বৈজ্ঞানিক নাম Anthracoceros albirostris. কোন ধনেশ ই সহজ না দেখা, এসব অত্যন্ত বিরল, খুব ভাগ্যবানরাই এর দর্শন পায়। আমি নিজেকে ভাগ্যবান ভাবি। আপনি দেখলে আপনিও। কেউ যদি কখনো সরাসরি উড়ন্ত ধনেশ দেখেন, তিনি পাখিপ্রেমী না হলেও মুগ্ধ হতে বাধ্য, এই উড়ন্ত ধনেশের রাজকীয়তা, এই ঐশ্বর্য দেখে বিস্মিত না হয়ে থাকা মুশকিল।
ধনেশরা ভাল নেই। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এদের শিকার করে করে সংখ্যা এতটাই কমিয়ে এনেছে, এরপরে বন ধ্বংসের আয়োজন, হ্যাবিট্যাট লস, একদিন হয়ত আসবে, এদের শুধুমাত্র বার্ডস বাংলাদেশের পুরনো ছবিগুলোতেই দেখা যাবে, নয়ত ওল্ড এডিশন বইয়ের ভেতরে, বাবারা বাচ্চাকে পড়াবেন, জানো, আমাদের দেশে একদিন এই পাখিটা ছিল।
লেখা ও ছবি : ডা:নিসর্গ মহসিন