Home Blog Page 9

কুকরিমুকরি – সোনারচর – আন্ডার চর – চর মোন্তাজ – চর তারুয়া দ্বীপ ভ্রমণ: পর্ব – ৩

কুকরিমুকরি – সোনারচর- আন্ডার চর – চর মোন্তাজ – চর তারুয়া দ্বীপ ভ্রমণ:

পর্ব – ৩:

১ম পর্ব

কুকরি মুকরি ছেড়ে আমরা এগিয়ে চলেছি৷ ঘন্টাখানেক চলার পর আমরা সাগরে এসে পড়লাম৷

এবার নানার বোট চালাতে একটু সমস্যা হচ্ছে, আজ বাতাস একটু বেশি, ঢেউ ও বেশ ভাল সাগরে৷ চলতে চলতে এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছি যে দুইপাশে আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না মাছ ধরার কিছু নৌকা ছাড়া৷

প্রায় দুপুর হয়ে এল, এবার খাবারের আয়োজন শুরু করতে হবে৷ নানা হাঁড়ি পাতিল সব বের করে দিয়ে নৌকায় চুলা জ্বালিয়ে দিয়ে নৌকার হাল ধরলেন৷

সিফাত ভাই তার স্পেশাল খিচুরী রান্না শুরু করল৷ বাতাস বেশি হওয়াতে রান্না করতে বেশ অসুবিধা হচ্ছিল৷ আমরা সবাই মিলে কাটাকুটি করে হেল্প করলাম৷

চুলায় রান্না বসাতে বসাতে কামরুল ভাই আর জাহাঙ্গীর ভাই গামলায় মুড়ি আর চনাচুর মিশিয়ে রেডি করে ফেললেন৷ সিফাত ভাই সব গুছিয়ে চুলায় খিচুরীর হাঁড়ি বসিয়ে দেবার পর সবাই মিলে মুড়ি চনাচুর খেতে শুরু করলাম৷

যাত্রাপথে আমরা
যাত্রাপথে আমরা

যাত্রা পথে বেশ কয়েকটা জেলে নৌকায় ঢু মারলাম তাজা ইলিশ মাছ কেনার জন্য৷ শেষে ছোট একটা জেলে নৌকা থেকে পছন্দমত তাজা ইলিশ কিনে নিলাম৷ গরম খিচুরী দিয়ে টাটকা ইলিশ ভাজা খেতে বেশ ভাল লাগবে৷

মাছ কেনার পর সুমি আপু রান্নার কাজ শুরু করল, মাছ দুই আইটেমের বানাবেন আপু একটা ফ্রাই আইটেম, আরেকটা ঝোল দিয়ে করবেন৷

উত্তাল সাগরে লাফিয়ে লাফিয়ে চলছিল নৌকা৷ মাছ কাটতে আমাদের সমস্যা হচ্ছিল৷ নানা তার সঙ্গী ছোট্ট নাতিকে নৌকার হাল ধরিয়ে দিয়ে আমাদের মাছ কেটে ভালমত ধুয়ে রান্নার জন্য রেডি করে দিলেন৷ সুমি আপু এবার রান্না করা শুরু করলেন৷ তীব্র হাওয়ায় রান্না হতে অনেক সময় লাগছিল৷ কিছু করার নেই আমাদের৷

ঐ যে সামনে সোনার চর
ঐ যে সামনে সোনার চর

আরও ঘন্টা দুয়েকের মত চলার পর আমরা সাগর ছেড়ে তীরে ভিড়লাম৷ এবার সরু চ্যানেল ধরে আমাদের নৌকা সোনার চরের প্রবেশ দ্বারে ঢুকে পড়ল৷

দুইপাশে সবুজের আনাগোনা৷ নদীর দুই পাড়ে সুন্দরবনের মত বড় বড় শ্বাসমূলের ছড়াছড়ি৷ আমাদের নৌকা বনবিভাগের কার্যালয়ের সামনে এসে পৌঁছাল৷

সোনার চরে থাকতে হলে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে৷ আমরা অনুমতি নিয়ে সোনার চরের দিকে যাত্রা শুরু করলাম৷ এর মধ্যে সুমি আপুর ইলিশ মাছ রান্না হয়ে গেছে৷ ইলিশের গন্ধে পুরো নৌকা ছেয়ে গেছে৷

নৌকা এগিয়ে চলেছে সোনার চরের দিকে৷ মিনিট বিশেক পর আমরা সোনার চরে পৌঁছে গেলাম৷ বাংলাদেশের অপার এক সৌন্দর্যের নাম সোনার চর।

বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা অপরূপ প্রাকৃতিক এক লীলাভূমি। প্রায় ১০ হাজার একর আয়তনের চরটি দুর্গম হলেও প্রকৃতিক সৌন্দর্যের কমতি নেই।

সোনার চরের নামের পেছনেও কারণ আছে। চরটি সোনা দিয়ে তৈরি না হলেও সূর্যের প্রখর রোদ যখন এর বালুর ওপর পড়ে তখন সোনার মতই চিক চিক করে৷ তাই লোকেরা একে সোনার চর বলে ডাকে৷

যদিও প্রথম কবে চরটি জেগে ওঠে সেই সঠিক তথ্য কারও জানা নেই তবে পটুয়াখালী প্রশাসনের ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, ২০০৪ সালের দিকে বঙ্গোপসাগরের কোল জুড়ে জেগে ওঠে চরটি।

আয়তনের দিক থেকে সুন্দরবনের পরেই এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশাল সমুদ্র সৈকত।

নৌকা থেকে চরে নেমেই সবার আগে প্যান্ট বদলে লুঙ্গী পড়ে নিলাম৷ এই পরিবেশের সাথে আসলে লুঙ্গী ছাড়া যায় না৷ এরপর তাবু লাগানো শুরু করে দিলাম আমরা৷

চারপাশটা একদম নীরব৷ মাঝে মাঝে পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে৷ চরের পাশেই নদীতে দুজন জেলে নৌকায় বসে মাছ ধরছিল৷ নদীর ঠিক এমন জায়গায় নৌকাটা রাখা ছিল বেশ চমৎকার লাগছিল দেখতে৷

জেলেরা মাছ ধরায় ব্যস্ত ৷ সোনার চর
জেলেরা মাছ ধরায় ব্যস্ত ৷ সোনার চর

তাবু লাগিয়ে পাশে দুই গাছের ফাঁকে আমার হ্যামকটা ঝুলিয়ে দিলাম৷ যে যার ইচ্ছামত ঝুলাঝুলি আর ফটোসেশান করল৷ আমি গিয়ে বাবুল নানাকে ধরে নিয়ে আসলাম নৌকা থেকে৷ আজকে নানাকে হ্যামকে ঝুলাবো৷

জাহাঙ্গীর ভাই অবশ্য অন্য প্লানে ছিল৷ পরে বলব সে কথা৷ নানাকে আমি আর জাহাঙ্গীরভাই মিলে ধরে হ্যামকে শোয়ায়ে দিলাম৷ প্রথমে ছিড়ে পড়ে যাবার ভয়ে কু কা পরলেও পরে আরাম পেয়ে নানা আর নামতে চায়না৷ নানাকে হ্যামকে রেখে আমরা একটু ভিতরের দিকে গেলাম, বনের ভেতরটা ঘুরে দেখতে৷

চারপাশটা এত সবুজ দেখতে অসাধারন, পাখিদের কিচির মিচিরে মনটা ভাল হয়ে গেল৷ বেশ অনেকটা দূর পর্যন্ত গেলাম ভিতরে৷ যত যাই তত আরো ভিতরে যেতে মন চাইছিল সবার৷

কামরুল ভাই বলল বনে রাস্তা হারালে বিপদে পড়ে যাব৷ নানাও আসেনাই সাথে৷ তাই ক্যাম্প সাইটে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম সবাই মিলে আর বেশি ভিতরে না গিয়ে৷ ঘুরে আসার পথে আমরা পর্যাপ্ত লাকড়ি জোগার করে নিয়ে আসলাম সাথে৷

সোনার চরে প্রচুর শুকনো কাঠ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে৷ আগুন জ্বালাতে আর কোন সমস্যা হবেনা আমাদের৷ আমরা সব লাকড়ি একপাশে স্তুপ করে সাজিয়ে রাখলাম৷

নানা এত লাকড়ি দেখে নৌকা থেকে চিল্লায়ে বলল কি নাতি সারাজীবন কি এইহানেই থাকার ইচ্ছা আছে নাকি৷ এত লাকড়ি জ্বলতে তো মেলাদিন লাগব৷ এখনো অনেক বেলা আছে দেখে আমরা মজা করছিলাম৷

নানা এসে বলল ক্ষুধা লেগেছে৷ আমাদের খাওয়ার কথা মনেই ছিল না৷ পরিবেশটা এত সুন্দর যে সব ভুলে গিয়েছিলাম৷ সবাই সবকিছু তাবুর ভিতরে রেখে নৌকায় ফিরে গেলাম৷ দুপুরে কারো খাওয়া হয়নি৷

সবাই বসে একসাথে খাব এবার গরম গরম ইলিশ আর খিচুরী৷ আমরা হাত মুখ সব ধুয়ে ফ্রেস হয়ে খেতে বসে গেলাম সবাই৷ নানা আগেই খাবার প্লেইট গ্লাস সব ধুয়ে পরিষ্কার করে রেখেছিল আমরা বনের ভিতরে ঘুরতে ঘুরতে৷

সুমি আপু সবাইকে খাবার পরিবেশন করলেন৷ রান্নাটা জোশ ছিল৷ সবাই পেট ভরে খেলাম৷ এক কথায় সেদিন সবাই সুমি আপুর রান্নার ফ্যান হয়ে গিয়েছিলাম৷ সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম সামনের সব ট্রিপে সুমি আপাকে নেওয়াই লাগবে আমাদের৷ ট্রিপে এই রকম মজার খাবার খাওয়ার এ ছাড়া আর কোন বিকল্প নাই৷ নানা আর তার ছোট্ট নাতি ইকবালও বেশ প্রশংসা করল সুমি আপার রান্নার৷

সোনার চরে দুপুরের খাবার খওয়া একসাথে ৷
সোনার চরে দুপুরের খাবার খওয়া একসাথে ৷

দিনটা আসলেই বেশ চমৎকার কেটেছে আমাদের৷ প্রত্যাশার চাইতে অনেক ভাল৷ আসলে ট্যুরমেট মনের মত হলে, যে কোন ট্রিপই আনন্দময় হয়৷ হঠাৎ বনবিভাগের একটা টহল বোট পাশ দিয়ে গেল৷

আমাদের চারটা ছেলের সাথে একটা মেয়ে দেখে তারা পরামর্শ দিল রাতে এই জায়গাটা আমাদের জন্য নিরাপদ হবে না৷ তাদের জনবল কম৷ নিরাপত্তা দিতে পারবেনা৷ থাকলে নিজ দায়িত্বে থাকতে হবে৷ কিছু হলে তারা দ্বায় নিবেনা৷

অনিচ্ছা স্বত্বেও সুমি আপুর কথা চিন্তা করে আমরা সোনার চরে না থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম৷ জাস্ট রাতে থাকারই তো ব্যপার৷ আমরা তো ভালমত সব ঘুরেই নিয়েছি চরে৷ রাতটা নাহয় অন্য কোন চরে থাকব৷

সব গুছিয়ে নিয়ে নৌকায় চেপে বসলাম আবার৷ যে লাকড়িগুলো জড়ো করেছিলাম তার কিছু নৌকায় তুলে নিলাম, কারন জানিনা সামনে যে চরে গিয়ে উঠব সেখানে রাতের বেলা লাকড়ি পাব কিনা৷ তখন সমস্যায় পড়ব৷

নানা ইঞ্জিন চালু করে সন্ধার একটু আগে টান দিলেন নৌকা৷ এবার সিদ্ধান্ত নানার উপড় ছেড়ে দিলাম৷ দেখি নানা কোন চরে নিয়ে নৌকা ভিড়ায়৷

চলবে …

লিখা ও ছবি: রবি চন্দ্রবিন্দু

তোমার অপেক্ষায় আজো – তাজরিনা সোহেলী

তোমার অপেক্ষায় আজো
(তাজরিনা সোহেলী)

সেই কবে থেকে বসে আছি,
তোমার আগমনের পদধ্বনি শুনবো বলে…!

তুমি বলেছিলে –
আমার জন্য এখানেই অপেক্ষা করো,
আমি আসবো,
সাথে করে নিয়ে আসবো হলুদ রঙের ভোর।

আর বলেছিলে,
তুমি যদি অপেক্ষা করতে পারো-
এনে দেবো রাঙা প্রভাত সাথে এমন এক সূর্যরশ্মি,
যে তোমায় আগলে রাখবে আমার ভালোবাসায়।

আমি আজো তোমার প্রতীক্ষায় বসে আছি,
যেখানে তুমি আসবে বলে প্রতীজ্ঞা করেছিলে।

তোমার পাঠানো সূর্যরশ্মি আজো আমায় আগলে রেখেছে!
মাঝে মাঝে হাল্কা বাতাস এসে যখন চুলগুলো নিয়ে খেলা করে,
আমি বুঝতে পারি তখন তুমি আমার চারপাশে ঘুরে বেড়াও।

তোমার কাছে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর এই আমি,
বসে থাকবো আজীবন…এইভাবে…এইখানে…!

পরিত্যাক্ত ডায়রির শেষ পাতা থেকে : পূর্ণতা

পূর্ণতা

লিখেছেন: রাজীব দাস
পায়ে হাঁটা পথে সূর্য নেমেছিল আজ। স্বপ্নবাজ যুগলদলের মিছিল নেমেছিল ওখানে। সূর্যের উত্তাপে স্বপ্নের পূর্ণতা চেয়েছিল ওরা। আমিও ছিলাম জীবিতদের দলে ; পূর্ণতা চাইনি। ওটা অসমাপ্তই থাক। শুধু স্পর্শ খুঁজেছিলাম। হাতের স্পর্শের লালসা নেই, মনের স্পর্শের সাধ চাই।শুধু একবার ছুঁয়ে দেখ মন দিয়ে। ভালোবাসার উষ্ণতা যেখানে যৌনতার সহজ সুখ নয়; বেহিসেবি পাগলামো এক।
তুমি ছুঁয়ে দিলে রোজ হেসে উঠব আমি। সূর্যাস্তের রক্তিম আলোয় রোজ একবার করে প্রেমে পরব তোমার। মধ্যরাতে ক্লান্ত অন্ধকারে তোমার স্পর্শে রোজ বলব ভালোবাসি। আকাশে বিজলী চমকাতে দেখলে মুচকি হেসে দুজনে জন্ম দিব অসংখ্য বৃষ্টি ভেজার গল্প। রংচটা আধুনিকতার ভীরে কোন মানে হয় এসব পাগলামোর বল??। ভেবে দেখ আছে হয়ত……
হরমোনের বিষক্রিয়ায় প্রতিনিয়ত প্রেম হয়ে অপমানিত হয় ভালোবাসা; রক্তাক্ত হয় নরম বিছানায়। রোজ কেউ না কেউ মিথ্যে করে বলে ভালোবাসি। এসব মেকি ভালোবাসার ভীড়ে কি করে বুঝবে আমার চোখের চঞ্চলতায় কতটা আবেগ জমানো আছে তোমার জন্যে??।
কি করে বুঝবে আমার অসমাপ্ত স্বপ্নরা কতদিন অপেক্ষায় ছিল একসাথে পূর্ণ হব বলে। একসাথে দুজন বুড়ো হব বলে। শুধু এতটুকু স্পর্শ দাও আমায়। কথা দিলাম তোমায় পূর্ণতা দিব আমি। ভালোবাসার পূর্ণতা।

ধুপপানির পথে: পর্ব – ২ (শেষ পর্ব)

ধুপপানির পথে

ধুপপানির পথে: পর্ব – ১

পাহাড়ের কৃষ্ণপক্ষ চেয়ে দেখেছেন কখনো? যারা পাহাড়ে যায় তারা জানে৷ পুর্ণিমার আকাশের চেয়েও যেন কোথাও একটু বেশি মোহনীয় পাহাড়ি আমবশ্যার রাতগুলো ৷ দূষণমুক্ত পরিবেশে তারায় ভরা রাতের আকাশ হয়ে উঠে ঝরা বকুলের উঠান৷

সেদিন সন্ধ্যার পর, এমনি এক আকাশের তলায় আমরা আড্ডায় গানে মেতে উঠেছিলাম। সারা দিনের ক্লান্তি কাটিয়ে নিজেদের রিচার্জ করে নেওয়ার আয়োজন।

বিলাইছড়ি বাজারে একেবারে শেষ দিকে অনেকখানি উচুতে আমাদের কটেজ। রিভার ভিউ ছিলো না। তবে কোলাহল মুক্ত সুনসান ছিলো। রাতের খাওয়ার আগে আমরা পুরো বাজারটাই ঘুরেফিরে দেখছিলাম। ৮/৯ টার মধ্যেই সব নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে।

পরদিন ধুপপানি ঝর্ণায় ছবি তোলার জন্য মনে মনে একটি রংধনু ছাতার খোঁজ করছিলাম আমি। পেয়েও গিয়েছিলাম। তবে দামে না হওয়াতে আর কেনা হয় নি।

কথামতো পরের দিন ভোর বেলাতেই ইঞ্জিন নৌকা এসে হাজির৷ সকালের নাস্তা খিচুড়ি আর ডিম প্যাকেট করে নৌকাতেই দিয়ে দেওয়া হয়। জলে বসেই সকালের জল খাবার খাওয়াটাও ধুপপানি ট্রেকের একটা বোনাস।

দুইটা চেকপোস্ট পেরিয়ে প্রায় ২ ঘন্টা পর উলুছড়িতে পৌঁছায়৷ সকালের বাকি ঘুমটুকু এই দুই ঘন্টাতেই সেরে ফেলা যায়।

সুযোগ পেয়ে উলুছড়িতে ডিঙি নৌকা চালানোর অনুশীলন
সুযোগ পেয়ে উলুছড়িতে ডিঙি নৌকা চালানোর অনুশীলন

উলুছড়ি থেকে গাইড নিয়ে ডিঙি নৌকায় পাড়ি দিতে হয় বাকি জল পথ। ৩০/৩৫ মিনিটের মতো ডিঙি নৌকায় থাকতে হয়৷

উলুছড়ির রূপ
উলুছড়ির রূপ

এই টুকু পথ সৌন্দর্যের আঁধার যেন। বর্ষায় ডুবে যাওয়া হাওরের মতো ভিউ পাওয়া যায় এখানে। গাছগাছালির মধ্য দিয়ে শান্ত সবুজ জলে মাঝির বৈঠা চলে।

উলুছড়ির হাওড়ের মতো রূপ
উলুছড়ির হাওড়ের মতো রূপ

দুপাশে পাহাড়ের সারি চোখে পড়ে। নিজেদের কোলাহল থেকে বার হয়ে একটু চুপচাপ চারপাশে তাকালেই মনে হবে আপনি মানুষের পৃথিবী ছেড়ে ঠিক ঠিক কোন অলকায় চলে এসেছেন৷

নৌকা যেখানে নামিয়ে দে সেখান থেকেই ট্র‍্যাকিং শুরু৷ আমাদের দের ঘন্টার মতো লেগেছিল ধুপপানি পৌঁছাতে। কঠিন কিছু না৷ তবে কড়া রোদে তিনটে বড় পাহাড় পেরিয়ে হাঁপিয়ে উঠার মতো।

ধুপপানির সৌন্দর্য্য জগৎ বিদিত। এর সুবিশাল উচ্চতা দূর দূরান্ত থেকে সৌন্দর্য্য পিপাসুদের আকর্ষণ করে৷

ঝর্ণার ধ্যানমগ্ন আমরা
ঝর্ণার ধ্যানমগ্ন আমরা

তবে আমরা কিছুটা দমে গিয়েছিলাম পানির সল্পতা দেখে৷ তথাপি ঝর্ণার জল ম্যাজিকের মতো কাজ করে। কিছুক্ষণ জলে ভেজার পর ক্লান্তি ছেড়ে শুধু শুদ্ধতা আর উচ্ছলতা বাকি থাকে।

ঝর্ণার ধ্যানমগ্ন আমরা
ঝর্ণার ধ্যানমগ্ন আমরা

ফেরার পথে প্রথম যে পাড়াটা পড়ে সেখানে এসে কাপড় চোপড় ছেড়ে বিশ্রাম করে নিচ্ছিলাম যে যার মতো৷ এক দিদির ঘরে দেখলাম বাঁশ কোড়লের খোসা পড়ে আছে৷

বাঁশ কোড়ল চট্টগ্রামবাসীদের প্রিয় খাবার৷ যদিও খুব দুর্লব এখন৷ পাহাড়ি দিদিদের রান্না চেকে দেখার লোভ সামাল দিতে পারলাম না। রান্নাঘরে গিয়ে উনাকে বলতেই হাসি হাসি মুখে এক টুকরো দিয়ে দিলেন। নাপ্পি দিয়ে বাঁশকোড়ল রান্না৷ নাপ্পি আমি আগে কখনো খায়নি৷ এই ট্যুরে সেই অভিজ্ঞতাও পেয়ে গেলাম।

নাপ্পি দিয়ে রান্না করা বাঁশকোড়ল
নাপ্পি দিয়ে রান্না করা বাঁশকোড়ল

নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই আমরা বিলাইছড়ি পৌঁছে যাই। যাওয়ার সময় রোদ ছিলো। ফেরার সময় বৃষ্টি। দেখলাম সেই বৃষ্টিতে ভিজেই স্কুল ছাত্ররা নৌকা চালিয়ে বাড়ি ফিরছে।

সহোদরা
সহোদরা

কত ভিন্ন এই জলের মানুষের জীবন। ঝড় বৃষ্টি মাথায় করে এতোটা পথ নিজেরা নৌকা চালিয়ে স্কুলে যায়৷ আবার স্কুল থেকে ফিরে সেই নৌকাতেই চলে জীবিকার সন্ধান।

ব্র‍্যাক পরিচালিত ধুপপানি পাড়ার বিদ্যালয়
ব্র‍্যাক পরিচালিত ধুপপানি পাড়ার বিদ্যালয়

শরৎচন্দ্রের সেই পরিহাসের কথাটা মনে পড়ে যায়৷ দুইক্রোশ হেঁটে আসা ছাত্রদের মতো এদের দেখেও নিশ্চয় সরস্বতী লজ্জায় মুখ লুকাবেন। এরকম আরো কতো টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধি নিয়ে আমরা কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই৷ প্রকৃতি সবসময় আমাদের দু হাত ভরে দিয়েই ফেরত পাঠায়।

লিখা ও ছবি: প্রিয়াংকা পিউ

১ম পর্ব

ধুপপানির পথে: পর্ব – ১

ধুপপানির পথে

পর্ব ১

গত বছরের জুলাই মাস। তখনো পর্যন্ত বিলাইছড়ির ধুপপানি ঝর্ণায় যাওয়া হয়ে উঠে নি৷ যদিও জ্যামিতিক হারে বেড়ে ওঠা অসংখ্য ট্রাভেল গ্রুপের কল্যাণে ধুপপানি গত কয়েকবছর ধরেই ট্যুরিস্টদের হটস্পট৷ দিনে কম করে হলেও ২০ থেকে ৩০ বার ধুপপানি ঝর্ণার ছবি ভিডিও চোখে পড়তো। যেমন করে গত কয়েকদিনে চায়নার একটা জল কটেজের ছবি এতোবার দেখেছি যে এখন দেখলে মনে হচ্ছে, ওহ আচ্ছা! এইটা! আমিতো অনেক বার গিয়েছি এখানে। সবই গ্রুপ গুলার কল্যাণ৷

তবে ফেইসবুকের ছবিতে বা ভিডিও তে যা পাওয়া যায় না, তা হলো যাত্রাপথ। দি জার্নি। আমার সাথে কেউ একমত হবে কিনা জানি না, তবে আমার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি যাত্রাপথে সবসময়ই মূল গন্তব্যের চেয়ে অনেক বেশি সৌন্দর্য্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে৷ ধুপপানি ট্রিপের ক্ষেত্রে এই কথা আরো একটু বেশি খাটে।

আমরা ট্রাভেলার হিসেবে একটু ছন্নছাড়া। নির্দিষ্ট কোন ভ্রমণসঙ্গীর দল অতীতে থাকলেও বর্তমানে তেমন কেউ নেই । আবার ইভেন্ট ব্যবসায়ীদের কাছে ধরা দিবো তেমন ও নই৷ কিছু দাদারা আছেন। সময় সুযোগ মিলে গেলে আমাদের সাথে জয়েন করেন।

আমরা দুজন ছাড়া সেবার আসিফ ভাই আকরাম ভাই আর জাকির ভাই ছিলো সাথে। আমরা তো বাজেট ট্রাভেলার। পাঁচজন নিয়ে ধুপপানি ট্রিপে যাওয়া মানে নৌকা ভাড়া অনেক বেশি পড়ে যাবে৷ তারপর আর কী? বাজেট ট্রাভেলারদের শেষ ভরসা টিওবি (ট্রাভেলার অব বাংলাদেশ)। টিওবি থেকে আমাদের সাথে যোগ দিলো তীর্থ দা আর সবার ছোট্টু ফারদিন। এই সাতজন মিলে সাতসমুদ্র পাড়ি দেওয়ার ট্রিপটা আমাদের মনে রাখার মতই ভালো ছিলো।

কাপ্তাই ঘাট থেকে ট্রলারে উঠার পর থেকে পুরো দুইটা দিন শুধু জল আর জল। ণ কাটা, মুপ্পেছড়া কিংবা ধুপপানি ঝর্ণায় পৌঁছাতে পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ জলপথ।

মুপ্পেছড়া যাওয়ার পথে চোখে পড়ে এমন দৃশ্য।
মুপ্পেছড়া যাওয়ার পথে চোখে পড়ে এমন দৃশ্য।

কী নেই এই পঁথে? কিছুদূর পর পরেই জলের রূপ ও পাল্টাতে থাকে। এই দুদিনে নৌকাপথের প্রতিটি মুহূর্তই উপভোগ করেছি আমি। এজন্যই বোধই বেদেনীদের আমার ছোটবেলা থেকেই হিংসে হয়৷ জলজ জগতের ঈশ্বরী ওরা।

মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝড়তে দেখেছেন এভাবে?
মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝড়তে দেখেছেন এভাবে?

কাপ্তাই লেকের সুবিস্তৃত্ব জলরাশির সাথে শরতী আকাশের মেলবন্ধন দেখতে দেখতে দুঘন্টার পঁথ পাড়ি দিয়ে আমরা বিলাইছড়ি পৌঁছাই।

আমরা অনেক দেরি করে রওনা দিয়েছিলাম কাপ্তাই থেকে যার জন্য বিলাইছড়ি পৌঁছাতেই দুপুর হয়ে গিয়েছিল।

যখন সবার ণকাটামুপ্পেছড়া দেখে ফেরার সময় হয়ে যাচ্ছিলো, আমরা সপ্তরথী স্লোকোচ তখন দুপুরের খাবার শেষ করে হেলে দুলে রওনা দেওয়ার আয়োজন করছিলাম।

অবশ্য এটা আমাদের প্ল্যানিং এর মধ্যেই ছিলো যাতে করে ঝর্ণায় গিয়ে বিভিন্ন গ্রুপের ইভেন্ট থেকে যাওয়া অন্তত শ-কয়েক লোকের সাথে ধাক্কাধাক্কি করতে না হয়৷ আমাদের পরিকল্পনা সফল ও হয়েছিলো। বিকাল হয়ে আসাতে ঝর্ণা মোটামুটি টুরিস্ট শূন্যই পেয়েছিলাম।

ন-কাটার দিকে যাওয়ার সময় হৃদের জলের রূপটা আবার অন্যরকম। ঝিলের পানির মতো শান্ত, পাতা রঙা সবুজ জল৷ নরম হাওয়ার সাথে যার সখ্য৷

মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মাছ ধরা।
মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে মাছ ধরা।

কিছুক্ষণ পর পর দুপাশে আদিবাসীদের জনপদ চোখে পড়ে। শেওড়া গাছের ছায়ায় ডিঙি নৌকায় বসে কোন এক জেলে মাছ ধরায় রত।

প্রাসাদ সম কুড়েঘর।
প্রাসাদ সম কুড়েঘর।

কোন এক কুড়ে ঘরের পাশেই কজন বাচ্ছা ছেলে মেয়ে স্নানের ছলে জলখেলায় উন্মত্ত। হাজার বছরের পরিচিত এসব দৃশ্য বিমুগ্ধ চোখে দেখতে দেখতে আমাদের নৌ পথ শেষ হয়৷

ণ কাটা ঝর্ণায় ধ্যানমগ্ন আমি।
ণ কাটা ঝর্ণায় ধ্যানমগ্ন আমি।

নৌকা থেকে নেমে ৪০/৪৫ মিনিটের হাঁটা পথ পেরুলেই নকাটা। আমরা প্রথমে মুপ্পেছড়াতে চলে যাই৷ সহজ ট্রেইল। তবে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর অনেক মানুষের হাঁটাহাঁটির কারণে কিছু জায়গা খুব পিচ্ছিল ছিলো৷

ঝিরিপথের পথিক।
ঝিরিপথের পথিক।

আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় ছিলো ঝর্ণায় কাটানোর জন্য৷ যে যার খায়েশ মতো ঝর্ণায় গড়াগড়ি খাওয়ার সুযোগ ছিলো৷

মুপ্পেছড়ায় আমি৷
মুপ্পেছড়ায় আমি৷

বিশেষ করে জাকির আর আরমান সেই যে মুপ্পেছড়ার উপরে গিয়ে বসেছিলো, একেবারে শেষদিকে অনেক ডাকাডাকির পর তবে নেমে আসে। ততক্ষণে আমরা ফিরতি পথে রওনা দিয়েছি৷

সাঁজের বেলার মায়া মাঝি।
সাঁজের বেলার মায়া মাঝি।

নৌকায় উঠার আগে আদিবাসীদের পাড়া আছে৷ পাড়ার চায়ের দোকানগুলো দেখলাম যথেষ্ট জমজমাট৷ আমাদের ছোট্ট গাইডের টাকা চুকিয়ে হালকা খাওয়া দাওয়া সেরে আমরা নৌকায় গিয়ে বসলাম।

বোটের ছাদে চিল মুডে আমরা।
বোটের ছাদে চিল মুডে আমরা।

গৌধুলির এই সময়টাতে ছাদবিহীন নৌকায় ভ্রমণ করা সবসময় লোভনীয়। যেন রাঙা আকাশে বিছিয়ে দেয়া জলপথ।

ট্রেইল থেকে ফিরতি পথে এমন দৃশ্য মোহিত করে রাখে৷
ট্রেইল থেকে ফিরতি পথে এমন দৃশ্য মোহিত করে রাখে৷

সেদিনের মতো সারাদিনের সারাংশে রাজ্যের প্রশান্তি নিয়ে আমরা ফিরছিলাম বিলাইছড়ির গন্তব্যে৷

চলবে…

লিখা ও ছবি: প্রিয়াংকা পিউ

পর্ব – ২

 

ধানমন্ডি লেকে হারিয়ে যাওয়া সেই রহস্যময় জাহাজ বাড়ি, এবং তার ইতিহাস!

সিটি কলেজের পাশ দিয়ে রাইফেলস স্কয়ার হয়ে সাত মসজিদ রোডে ধানমন্ডি লেকের পাশ ঘেষে খয়েরী রংয়ের ব্যতিক্রম ধরনের একটি ভবন চোখে পড়বে। আমাদের দেশের অন্যসব ভবনের গঠনের চেয়ে এই বাড়িটির গঠন একেবারেই আলাদা। চলতি পথে কারো চোখ এই বাড়িটির দিকে পড়া মাত্রই তার চোখ থমকে দাঁড়ায়।

সিটি কলেজের পাশ দিয়ে রাইফেলস স্কয়ার হয়ে সাত মসজিদ রোডে ধানমন্ডি লেকের পাশ ঘেষে খয়েরী রংয়ের ব্যতিক্রম ধরনের একটি ভবন চোখে পড়বে। আমাদের দেশের অন্যসব ভবনের গঠনের চেয়ে এই বাড়িটির গঠন একেবারেই আলাদা।
জাহাজ বাড়ি

অনেকটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আদলে তৈরি করা বাড়িটিকে দেখে অনেকেই ভাবেন এটি কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। স্বয়ং যারা নিয়মিত এই স্থানে যাওয়া আসা করেন তারাও মনে করেন এটি একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। আসলে এটি কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি বাসভবন।

কৌতুহলের কারণ:

ধানমন্ডি লেক ঘেষে গড়ে ওঠা এই বাড়িটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে কৌতুহলের কোনো শেষ নেই। কারো মতে এটি একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কারো মতে এটি কোনো বিদেশী সংস্থার অফিস, কেউ মনে করে এটি একটি ভৌতিক বাড়ি। এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। এটি এমন একটি বাড়ি যে বাড়ির সদস্যদের খুব একটা বাইরে দেখা যায় না। কোলাহল তো দূরের কথা, সামান্য টু শব্দটিও শোনা যায় না। বাড়ির প্রধান দরজাও সবসময় বন্ধ থাকে। বাইরের কেউ ভিতরে প্রবেশ করারও অনুমতি নেই। তাই বাইরের মানুষ আপন মনে বাড়িটি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের ধারণা পোষণ করে আসছে।

নামকরণ:

সবার কাছে এই বাড়িটি ‘জাহাজ বাড়ি’ নামে পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে বাড়িটির নাম ‘জাহাজ বাড়ি’ নয়। জাহাজের আদলে তৈরি হওয়ায় মানুষ এটিকে ‘জাহাজ বাড়ি’ নাম দিয়েছে। বাড়িটির হোল্ডিং নাম্বার ৫/এ, ৬০, ধানমন্ডি, ঢাকা। বাড়ির গেটের নেমপ্লেটে বাড়িটির নাম লেখা রয়েছে “Chistia Palace”। উচ্চারণগত কারণে অনেকে এটিকে ‘খ্রিস্টিয়া প্যালেস’ বলেন। আসলে এর উচ্চারণ হবে ‘চিশতিয়া প্যালেস’।

নির্মাণকাল:

খুব বেশিদিন আগে এই বাড়িটি নির্মাণ করা হয় নি। ১৯৯৩ সালের কোনো এক সময় এই বাড়িটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। তার এক বছর পর ১৯৯৪ সালে বাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। তবে প্রথম দিকে বাড়িটির ডিজাইন জাহাজ আকৃতির ছিল না। নির্মাণের পর ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বাড়িটির কিছু অংশ ভেঙে এর পাশ দিয়ে চলাচলের রাস্তা তৈরি করে। তখন বাড়ির মালিক বাড়িটির সীমানা প্রাচীর বর্তমান জাহাজ আদলে তৈরি করেন।

মালিকানা:

বাড়ির মালিকের নাম ‘শের এ খাজা’। স্থানীয়দের মতে তিনি একজন আধ্যাত্মিক ক্ষমতাবান মানুষ। সারা বিশ্বের বড় বড় সব নেতাদের সাথে তার সখ্য রয়েছে। আর এই সখ্যতার মূলে রয়েছে তার ভবিষ্যৎবাণীর ফলপ্রসূতা। তিনি যা ভবিষ্যৎবাণী করতেন ঠিক তেমনটিই হতো বলে জানা যায়। এজন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রথম সারির নেতাদের সাথে তার ওঠাবসা ছিল। এমনকি বিশ্বের অনেক বাঘা বাঘা নেতার পদচারণ ঘটেছে এই জাহাজ বাড়িতে।

তার ভবিষ্যৎ বাণী অনুসারে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য শেরে খাজাকে বলা হতো ‘কিং অব কিং মেকার’। তবে তিনি ‘শের এ খাজা’ নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম একেএম আনোয়ারুল হক চৌধুরী। তার জন্মস্থান ও জন্ম তারিখ সম্পর্কে সঠিক কোনো ধারণা নেই।

যতদূর জানা যায় ১৯৫২ সালের কোনো একসময় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বর্তমানে চিশতিয়া প্যালেসে বসবাস করছেন শেরে খাজার মা, বোন ও তার পরিবার এবং শেরে খাজার স্ত্রী রেহানা চৌধুরী। তার ছেলে রুবেল চৌধুরী।

শের এ খাজার ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবার:

বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পড়ালেখা করেন। আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী হলেও তিনি এটিকে পুঁজি করে কোনো ব্যবসা করেন নি। তার এই আধ্যাত্মিক ক্ষমতার সেবা শুধুমাত্র বিশ্বের প্রথম সারির নেতারাই পেতেন। এসবের বাইরে তিনি গার্মেন্টস ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন।

চিশতিয়া গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজ নামে তার একটি কোম্পানি রয়েছে। তিনি নিজেই এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। তার স্ত্রীর নাম রেহানা চৌধুরী। তাদের একমাত্র পুত্র রুবেল চৌধুরী ও একমাত্র কন্যা সাদিয়া চৌধুরী। তার ছেলে রুবেল চৌধুরী বিয়ে করেন নেপালের সাবেক উপ প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুজাদা কৈরালার মেয়েকে। তার স্ত্রী সম্পর্কে নেপালের প্রধানমন্ত্রী গিরিজা প্রসাদ কৈরালার নাতনী।

মৃত্যু:

২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে এই ‘আধ্যাত্মিক’ পুরুষ

ইন্তেকাল করেন। তখন তার বয়স ছিলো ৫৯ বছর।

তথ্যসূত্র: ইন্টারনেট

তিনাপ সাঁইতার – বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত

তিনাপ সাঁইতারকে বলা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত। তবে তিনাপে যাওয়ার পথটি এককথায় অপূর্ব ও আজীবনে ভোলার নয়। আর অপরূপ পাইন্দু খাল

তিনাপ সাঁইতার - বাংলাদেশের অন্যতম জলপ্রপাত
তিনাপ সাঁইতার – বাংলাদেশের অন্যতম জলপ্রপাত, ছবি – মুশফিক জিলান

তিনাপ সাইতার জলপ্রপাত আমাদের জনপ্রতি খরচ হয়েছিলো মাত্র ২৩০০ টাকা!

তিনাপ সাইতার এর একটি চমৎকার ভিডিও:

যেভাবে যাবেন

প্রথমে ঢাকা থেকে বান্দরবান আসতে হবে। ঢাকা থেকে বান্দরবানের বাস পাবেন অহরহ। আবার চট্রগ্রামে ট্রেনে এসে চট্টগ্রাম থেকে বাসে বান্দরবান আসতে পারেন।

যদি বাজেট কম থাকে তবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রাতের চট্টগ্রাম মেইলে ১১৫ টাকায় চলে আসুন। চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট থেকে বান্দরবানের বাস পাবেন।

বান্দরবান এসে বাস স্ট্যান্ড থেকে দশ টাকার টমটম ভাড়ায় চলে আসবেন রোয়াংছড়ি বাস স্ট্যান্ডে। এখান থেকে রোয়াংছড়ির ভাড়া ৬০ টাকা। সময় লাগবে দেড় ঘন্টা।

পাহাড়ী পথ আর পাহাড় ছোঁয়া মেঘ দেখতে দেখতে চলে আসবেন রোয়াংছড়ি। এবার ফ্রেশ হয়ে গাইডের খোঁজ নিন।

যাত্রাপথের মেঘ, ছবি – মাহবুব মুন্না

গাইড জোগাড় হলে খাওয়ার রেশন কিনে নিন। রামাধন নামে একটা হোটেল আছে। চাইলে জিরিয়ে নিতে পারেন এখানে। এবার এখান থেকে যেতে হবে রনিনপাড়া!

দল বড় হলে চাঁদের গাড়িতে চলে যান, নয়তো হাঁটতে থাকুন। হাঁটতে চাইলে চলুন পাহাড়ী ছড়া ধরতে হবে।

হাঁটার মজাই আলাদা। একদিকে পাহাড়, পাশে ঝিরিপথ, অপূর্ব অনিন্দ্য পথ! ক্লান্ত হলে বিশ্রাম নিয়ে আবার চলুন! সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা লাগবে রনিনপাড়া পৌঁছাতে। রনিনপাড়া পৌঁছে এবার জিরিয়ে নিন।

জানি এতোক্ষণ পথচলার হাঁপিয়ে গেছেন। চাইলে গাইডকে বলে গোসলের ব্যবস্থা করে নিন।

এখানের অধিবাসীদের প্রায় সবাই বম ও তঞ্চংগ্যাও জাতির। কাল যেহেতু যাবেন সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হবে। আড্ডা দিতে পারেন বমদের সাথে। বেশ ভালো লাগবে।

রাতে খেয়ে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ুন কারন আগামীকাল বেশ সকালে উঠতে হবে। হাঁটতে হবে ১৩ কিলোমিটার। অর্থাৎ রনিনপাড়া থেকে তিনাপ সাইতারের দুরত্ব ১৩ কিলোমিটার। সময় লাগে চার থেকে সাড়ে চার ঘন্টা।

হাঁটতে হাঁটতে দেড় ঘন্টা পর পৌঁছাবেন দেবছড়াপাড়ায়। এখানে একটু জিরিয়ে নিন। সূর্য ও তখন উঠে গেছে। দেবছড়াপাড়া থেকে এবার ঝিরিপথ।

তিনাপ এর পথে
ছবি – মাহবুব মুন্না

পথের দৃশ্য অপূর্ব ও মোহনীয়। পাহাড়ের ঢাল, ঝিরিপথ, বনের পাশ দিয়ে হেঁটে চলা। সাবধানে হাঁটতে হবে। বেশ পিচ্ছিল পাথর। পাহাড় ও বাইরে হবে কিছুটা।

কিছুক্ষণ হাঁটার পর পাবেন পাইন্দু খাল। পাইন্দু খাল দিয়ে যেতে পারেন, আবার চাইলে পাহাড় হতেও যেতে পারেন। পাহাড়ী রাস্তার চেয়ে খাল দিয়ে যাওয়া সুন্দর অধিক তবে বিপজ্জনক।

চোখ খোলা রেখে চলতে হবে। পানির স্রোত ও বেশ। বেশ পিচ্ছিল ও। কিছুক্ষণ হাঁটলে পেয়ে যাবেন কাঙ্খিত তিনাপ! কানে আসবে তিনাপের জলের শব্দ।

এখানে বিশাল সব পাথর। একপাশে এসে শরীর ভিজিয়ে নিন। তারপর পাথরের উপর বসে পড়ে দেখতে থাকুন জলপতনের শব্দ! জানি মুহুর্তেই ঘুচবে যাবে সমস্তই ক্লান্তি।

ছবি – মাহবুব মুন্না

বিঃ দ্রঃ প্রকৃতি আমাদের সম্পদ। দয়া করে প্রকৃতিতে যত্রতত্র ময়লা ফেলবেন না। আপনি যেমন সৌন্দর্য উপভোগ করছেন, আপনার পরবর্তী প্রজন্ম যেন অধিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।

লেখকঃ আহমাদ ইশতিয়াক

কুকরিমুকরি – সোনারচর – আন্ডার চর – চর মোন্তাজ – চর তারুয়া দ্বীপ ভ্রমণ: পর্ব – ২

কুকরিমুকরি – সোনারচর – আন্ডার চর – চর মোন্তাজ – চর তারুয়া দ্বীপ ভ্রমণ।

পর্ব – ২:

লঞ্চ থেকে নেমে এবার গাড়ি ঠিক করার পালা ৷ অনেক চেষ্টা করেও কম টাকায় কোন গাড়ি পেলাম না ৷ একটু সামনে এগিয়ে গিয়েও পেলাম না ৷ বেতুয়া লঞ্চ ঘাটটা বেশ সুন্দর ৷ চারপাশে সবুজের সমারোহ ৷ আমরা সবাই ছবি তুলতে লাগলাম যার যার মতন ৷

পরে একটা ব্যাটারিচালিত রিক্সা আমাদের সামনে এসে দাড়াল ৷ খেয়াল করে দেখলাম তার সাথে আগে কথা বলেছিলাম , তার দেয়া রেট আমাদের পছন্দ হচ্ছিল না , সে আবার এসেছে যদি যাই তার রেটে ৷ হাতে সময় বেশ কম বলে তার গাড়িতেই উঠে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা ৷

সে আমাদেরকে চরফ্যাশন পার করে সোজা চর কচ্ছপিয়া ঘাটে নিয়ে যাবে ৷ সবাই উঠে পড়লাম ৷ গাড়ি চলতে লাগল ৷ ড্রাইভার বেশ কচি বয়সের ৷ তবে ব্যাটা বেশ রশিক ৷ পথে বিভিন্ন জায়গায় আমরা গাড়ি থামিয়ে থামিয়ে ফটোসেশান করলাম ৷

সকাল সাতটায় বেতুয়া থেকে রওনা দিয়ে প্রায় দশটার দিকে আমরা চর কচ্ছপিয়া ঘাটে পৌঁছালাম ৷ সেখানে বাবুল মাঝি আমাদের স্বাগত জানাল ৷

চর কুকরি মুকরিতে বাবুল নানার সাথে
চর কুকরি মুকরিতে বাবুল নানার সাথে

ছিপছিপে গড়নের বৃদ্ধ একজন মানুষ ৷ ফোনে তো বাবুল ভাই বলে কথা বলেছিলাম ৷ এখন তাকে দেখে মুখ দিয়ে ভাই আর বাইর হয় না কারো ৷ সবাই মিলে তাকে নানা বানায়ে ফেললাম ৷ এতে করে আমরা তার নাতি হয়ে তার সাথে আরো ফ্রি হয়ে গেলাম ৷

বাবুল নানার সাথে আমি সিফাত ভাই আর সুমি আপু
বাবুল নানার সাথে আমি সিফাত ভাই আর সুমি আপু

নানার নৌকায় ব্যাগ রেখে সবাই গেলাম সকালের নাস্তা আর আগামী দুইদিনের জন্য বাজার করতে ৷ নানাকেও সাথে নিয়ে গেলাম নাস্তা করাতে ৷

ঘাট থেকে উপড়ে এসে ভাল খাবারের দোকান খুজতে লাগলাম ৷ তেমন ভাল হোটেল নেই এখানে ৷ তবে ফরহাদ ভাই মদিনা হোটেলের কথা বলেছিল ৷ সেটা খুজে বের করে সবাই ঢুকে বসে গেলাম নাস্তা করতে ৷ ডিম খিচুরী, পরটা, ভাজি, যার যা ভাল লাগল খেয়ে নিলাম ৷

খাওয়ার পর সুমি আপু বিশাল লিস্ট বানালেন বাজারের ৷ এবার সব কিনতে হবে ৷ নানাকে নৌকায় পাঠিয়ে দিয়ে সবাই মিলে বাজার করে নিলাম লিস্ট অনুযায়ী ৷ এবার যাত্রা শুরু করতে হবে ৷

প্রথমে আমরা চরকুকরিতে যাব ৷ নানা ইঞ্জিন চালু করে টান দিলেন নৌকা ৷ মাথার উপড় তীব্র রোদ ৷ ছুটে চলেছে আমাদের নৌকা কুকরিমুকরির দিকে ৷ আমি নৌকার বাঁশে জাতীয় পতাকা বেঁধে উড়িয়ে দিলাম ৷

হৃদয়ে বাংলাদেশ
হৃদয়ে বাংলাদেশ

সবাই মিলে নদীর দুপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে সামনে এগিয়ে চললাম ৷ যে যার যার মত ছবি তুললাম আশেপাশের প্রকৃতির ৷

ঘন্টা দুয়েক পর আমারা চর কুকরিমুকরিতে এসে পৌঁছালাম ৷ বঙ্গোপসাগর ঘেঁষা একখণ্ড- সবুজ ভূমি চর কুকরিমুকরি। দীর্ঘ খাল আর এর দু’পাশের সবুজ বেষ্টনী এ দ্বীপকন্যার মূল সৌন্দর্য। সমুদ্র লাগোয়া খালগুলোতে নীল জলরাশি। পাশের ম্যানগ্রোভ বনে বৃক্ষের বৈচিত্র্য। এ জলরাশি আর বনভূমিই হরেক রকমের পাখি আর প্রাণীর অভয়ারণ্য। এখানে হরহামেশাই দেখা মেলে বিলুপ্তপ্রায় বেশ কিছু প্রাণীর ৷ এ যেন এক ছোট সুন্দরবন।

সবাই মিলে নেমে গেলেম নৌকা থেকে কুকরিমুকরির বুকে ৷ নানা সময় বেঁধে দিলেন একঘন্টা ৷ বেশি দেড়ী করা যাবে না, যেতে হবে বহুদূর সেই সোনার চরে ৷ বেলা থাকতেই পৌঁছাতে হবে আমাদের ৷

চর কুকরিমুকরি
চর কুকরিমুকরি

ফরেস্ট অফিসের অনুমতি নিতে হবে থাকার জন্য ৷ আমরা চরে নেমে নিজেদের মত ঘুরলাম সবাই মিলে ৷ চরের আশেপাশে ঘুরে ছবি তুলে নদীর পাড়ে দোকানে বসে চা নাস্তা করলাম ৷

জেলে ভাইদের আস্তানায়
জেলে ভাইদের আস্তানায়

এরপর আবার নানার নৌকায় চেপে বসলাম লম্বা যাত্রার উদ্দেশ্যে ৷ গন্তব্য সোনার চর ৷

চলবে …

লিখা ও ছবি: রবি চন্দ্রবিন্দু

কুকরিমুকরি – সোনারচর – আন্ডার চর – চর মোন্তাজ – চর তারুয়া দ্বীপ ভ্রমণ: পর্ব – ১

কুকরিমুকরি – সোনারচর- আন্ডার চর – চর মোন্তাজ – চর তারুয়া দ্বীপ ভ্রমণ।

পর্ব – ১:

সেবার দুলাল ভাইয়ের নেতৃত্বে থেগামুখ যাবার পরিকল্পনা ছিল ৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা সব প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলাম ৷

কিন্তু যাবার দুদিন আগে দুলাল ভাই হঠাৎ জানালেন আমাদের যাওয়া হচ্ছে না ৷ বিজিবি পার্মিশান না দেওয়ায় আমরা যেতে পারবনা থেগামুখ ৷ কি আর করার মন খারাপ। আমার আবার কোন ট্যুর পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করতে না পারলে ভাল লাগেনা ৷ প্লান যখন করেছি তখন ট্যুর দিবই দিব ৷

থেগামুখ না হলে অন্য কেথাও তাও যাবই ৷ আমরা যারা থেগামুখ যাবার পরিকল্পনা করেছিলাম সেখান থেকে কয়েকজন আলাদা একটা মেসেঞ্জার গ্রুপ বানালাম ৷ নাম দিলাম তার ছিঁড়া গ্রুপ ৷ এবার তার ছিঁড়াদের নিয়ে শুরু আলোচনা কেথায় যাওয়া যায় ৷ দুইদিনের মধ্যেই সব ফাইনাল করতে হবে আমাদের ৷ হাতে সময় কম ৷

সবাই মিলে ঠিক করলাম এবার কোন চরের দিকে চলে যাব ৷ সিদ্ধান্ত হল চর কুকরি মুকরি চলে যাব দুদিনের জন্য , সাথে সোনার চর, চর তাড়ুয়া , চর মোন্তাজ , আন্ডার চর সহ আরো যা যা দেখা যায় ৷

আমরা নিজেদের মতন সব খোঁজ নিতে লাগলাম, কিভাবে যাওয়া যায় ৷ ভ্রমণ পিয়াসু, সাথী বুবুর সাথে বেশ ভাল পরিচয়, অন্যদিকে ভ্রমণ ডায়েরীর ফরহাদ ভাইয়ের সাথেও ৷ দুইজনকেই নক দিলাম ৷ জেনেনিলাম সব খুঁটিনাটি বিষয় ৷ সাথী বু চরের মাঝির নাম্বার দিল ৷ কথা বলে সব ঠিক করলাম তার সাথে ৷ এবার যাবার পালা ৷

ফেব্রুয়ারীর ৫ তারিখ আমরা যাবার দিন ঠিক করলাম ৷ আমি , সিফাত ভাই , সুমী আপা, কামরুল ভাই , আর জাহাঙ্গীর ভাই আমরা পাঁচ জন যাব এই তার ছিঁড়া ট্রিপে সব কিছু ঠিকঠাক ৷

আমরা
আমাদের টিম

তিন জন ঢাকা থেকে রওনা দিলেও , আমাকে যেতে হবে চট্টগ্রাম থেকে আর সুমি আপাকে কুমিল্লা থেকে। সবাই একসাথে সদরঘাটে গিয়ে মিলিত হব ৷

ফেব্রুয়ারীর ৫ তারিখ সকালে আমি ব্যাকপ্যাক নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সুমি আপা দুপুরের দিকে কুমিল্লা থেকে রওনা দিলেন। আমি বিকালের একটু আগেই ঢাকা পৌঁছে যাই ৷ হাতে অনেক সময় কি করি তাই রিক্সা নিয়ে রওনা দিলাম সায়েদাবাদ থেকে সদরঘাটের দিকে। এতে কিছুটা সময় কাটবে ৷ আস্তে ধীরে পৌঁছাব ৷ রিক্সাওয়ালা ভাইকে বললাম যত আস্তে চালাতে পারেন চালান ৷ সে ও মাথা নাড়িয়ে চলতে শুরু করল ৷

চিপাচাপা অলিগলি ঘুরে সদরঘাট পৌঁছালাম ৷ তখনও কেউ আসেনি আমি ছাড়া ৷ এবার আমি লঞ্চের খোঁজ নিতে লাগলাম ৷ দুইটা লঞ্চ যাবে জানতে পারলাম রাত সাড়ে আটটায় তাশরিফ ৪ চার সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাবে ৷ আর আটটায় কির্তনখোলা ৷ দুইটা লঞ্চের কন্ডিশান দেখে তাশরিফ ৪ একটু খোলামেলা মনে হল ৷ তাই সিদ্ধান্ত নিলাম এটাতেই যাব ৷

তাশরিফ ৪ এ উঠে দেখি লঞ্চের ডেকের ভাল ভাল জায়গা সব দখল করা হয়ে গেছে ৷ যে যার মত চাদর, পাটি, মাদুরা বিছিয়ে জায়গা ধরে নিয়েছে নিজেদের জন্য ৷ মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল ৷ সন্ধার পরপর সিফাত ভাই কামরুল ভাই আর জাহাঙ্গীর ভাই এসে পৌঁছাল ৷ তারা লঞ্চের দ্বিতীয় তলায় উঠে বসে আছে ৷ ফোন দিয়ে লোকেশান বলতেই চলে গেলাম দ্বিতীয় তলায় ৷

প্রথমবার সবার সাথে দেখা ৷ সুমী আপা আরো একটু দেরীতে এসে পৌঁছাল ৷ দ্বিতীয় তলার সামনের দিকে নামাজ পড়ার খালি জায়গা ৷ ঠিক করলাম এখানেই বসব আমরা ৷ সামনে থেকে সব পরিষ্কার দেখাও যাবে সব ৷ রাতের খাবারের জন্য সিফাত ভাই আর কামরুল ভাই লঞ্চ থেকে নেমে জগন্নাথের দিকে গেলেন প্যাকেট বিরিয়ানি নিতে ৷ সাথে আরো কিছু হালকা খাবার, যাতেকরে রাতে যাত্রাপথে খাবারের সমস্যা না হয় আমাদের ৷ সুমি আপু বাসা থেকে চিকেন ফ্রাই করে নিয়ে এসেছিলেন সবার জন্য ৷ খুশিতে সবার কি অবস্থা ৷ এবার লঞ্চ ছাড়ার অপেক্ষা ৷

যাবার সময় লঞ্চে রাতের খাবার খাওয়া
যাবার সময় লঞ্চে রাতের খাবার খাওয়া

রাত সাড়ে আটটায় হুইসেল দিয়ে লঞ্চ যাত্রা শুরু করল ৷ এশারের নামাজ হয়ে যেতেই সামনের অংশটা পুরা ফাঁকা হয়ে গেল ৷ সবাই সবার দিকে একবার তাকালাম ৷ একসাথে চিৎকার দিয়ে উঠালাম ৷ পুরা খালি জায়গা আমাদের দখলে। এবার তাবু লাগাতে হবে জলদি ৷ লঞ্চের মেইন ডেকে এর আগে কেউ তাবু লাগিয়ে ক্যাম্পিং করেছে কিনা আমার জানা নাই ৷ সবাই মিলে তিনটা তাবু সেট করে ফেললাম জলদি ৷

লঞ্চের ম্যানেজার এসে স্বাগত জানালেন আমাদের ৷ এর আগে তাদের লঞ্চে এমন নাকি কেউ করেনি ৷ গ্রীন সিগনাল দিলেন নিজেদের মত ক্যাম্পিং করে যাবার জন্য ৷ এবার আর কোন টেনশান নাই ৷ মালপত্র সব তাবুর ভিতর রেখে সুমী আপুকে পাহাড়াদার নিযুক্ত করে , আমরা চার জন একসাথে ফুটে গেলাম লঞ্চ পরিদর্শনে। লঞ্চ ঘুরে এসে দেখি সুমী আপুর গাল ফুলা ৷ আমরা নাকি তাকে পাহাড়ায় রেখে ফুটে গেছি , উনি যেতে পারেননাই কেথাও ৷ মনে মনে ভাবলাম কাম সাড়ছে কপালে মনেহয় আর চিকেন ফ্রাই নাই আমাদের।

সিফাত ভাই নাটক শুরু করলেন আপুর মন ভাল করার জন্য ৷ আমি সুযোগে আবার ফুটে গেলাম কামরুল ভাইকে নিয়ে ৷ কিছুক্ষন পর এসে দেখি সিফাত ভাই আপুরে ফিটিং মেরে দিছে ৷ জাহাঙ্গীর ভাই আমাদের দুইজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন ৷ বুঝলাম চিকেন ফ্রাই এখনো হাতছাড়া হয় নাই ৷ আল্লাহ এই যাত্রায় বাঁচায়ে দিছে ৷ কিছুক্ষন পর সুমি আপু সবাইকে চিকেনফ্রাই খেতে দিলেন ৷ পেটুক সিফাত ভাই গপাগপ মেরে দিলেন কয়েক পিস, তা দেখে আমরাও হাত চালালাম জোড়ে, নাহলে সব সাবার হয়ে যাবে ৷ খাওয়া শেষে সবাই মিলে আড্ডা দেয়া শুরু করলাম ৷

মাঝে মাঝে উৎসুক দুই একজন এসে আমাদের ক্যাম্পিং দেখে যাচ্ছিল ৷ তাদের কাছে এটা একদম নতুন জিনিস ৷ অনেকেই জিজ্ঞাসা করছিল এটা কি জিনিস ৷ রাত এগারটার দিকে কামরুল ভাই সবাইকে বিরিয়ানির প্যাকেট ধরায়ে দিল ডিনার করার জন্য ৷ বিরিয়ানি খেয়ে চা খেতে ইচ্ছে করল ৷ সিফাত ভাই আর জাহাঙ্গীর ভাই নীচে গিয়ে ডিসপোজেবল কাপে করে সবার জন্য চা নিয়ে আসলেন ৷ চা খেয়ে সবাই একটু বিশ্রাম নিলাম ৷

রাত প্রায় দেড়টা মেঘনা নদীর বুক চিড়ে ছুটে চলেছে তাশরিফ। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি মেঘমুক্ত আকাশে পূর্ণ চাঁদ আলো বিলোচ্ছে। সবাইকে ডেকে তুললাম। এমন সুন্দর চাঁদ খুব কম দেখা যায় লঞ্চ জার্নিতে। সবাই তা উপভোগ করতে লাগলাম লঞ্চের রেলিং এ হেলান দিয়ে দাড়িয়ে। ক্যাম্পিং দেখার উৎসুক জনতার ভিড় একটু বাড়ল।  বেশ কয়েকজন আমাদের তাবুর পাশে চাদর বিছিয়ে বসে পড়ল।

তাবুর ভিতরে আমরা দুজন
তাবুর ভিতরে আমরা দুজন

রাত দুইটার দিকে সুমি আপুকে তার তাবুতে ঢুকিয়ে দিয়ে আমরা চারজন এক তাবুতে বসে আড্ডা দিতে লাগলাম। ঘন্টা খানেক আড্ডা দেবার পর কামরুল ভাইকে সাথে নিয়ে আমার তাবুতে চলে এলাম।

একটু ঘুমাতে হবে এবার। সকালে ভোরে লঞ্চ থেকে বেতুয়া ঘাটে নেমে আবার দৌড়াতে হবে চর কচ্ছপিয়ার দিকে। সেখানে বাবুল মাঝি আমাদের অপেক্ষায় আছে। লঞ্চ ছাড়ার পর দুইবার ফোন করে খোঁজ নিয়েছে আমরা কতদূর এলাম তা জানতে।

চিৎকার চেচামেচিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। লঞ্চ বেতুয়া পৌঁছে গেছে। আমাদের নামতে হবে এবার। সবাই উঠে ফ্রেস হয়ে তাবু গুছিয়ে প্যাক করে নিলাম।

যাবার সময় বেতুয়া লঞ্চ ঘাটে আমরা
যাবার সময় বেতুয়া লঞ্চ ঘাটে আমরা

ম্যানেজার নিজে এসে আমাদের সাথে করে নীচে নিয়ে গেলেন বিদায় জানাতে । স্বাগতম বেতুয়া।

চলবে ……….

সদর ঘাট লঞ্চ টার্মিনাল
সদর ঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এ লেখক

লিখা ও ছবি: রবি চন্দ্রবিন্দু

পর্ব – ২

ম্যাজিকাল মারায়ং তং

ম্যাজিকাল মারায়ং তং :

আলীকদম পার্বত্য বান্দরবানের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা ৷ এর আয়তন প্রায় ৮৮৫.৭৮ বর্গ কিলোমিটার ( ২,১৮৮৮০ একর ) ৷ আলোহক্যডং থেকে আলীকদম নামের উৎপত্তি। বোমাং সার্কেল চীফের নথি পত্র ও ১৯৬৩ সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার কর্তৃক আঁকা মানচিত্রে আলোহক্যডং নামের সত্যতা পাওয়া যায়।

আলীকদমের বেশ কিছু পাহাড়ের মধ্যে কির্সতং, রুংরাং এবং মারায়ং তং অন্যতম ৷ কির্সতং ও রুংরাং যেতে কষ্টকর ও সময় সাপেক্ষ হলেও যোগোযোগের সুবিধার জন্য মারায়ং তং যাওয়া কিছুটা সহজ ও কম সময় সাপেক্ষ ৷

মারায়ং তং এর অবস্থান আলীকদমের মিরিঞ্জা রেঞ্জে ৷ অনেকে এই পাহাড়কে মারায়ন ডং ( Marayan Dong ) বলেও ডেকে থাকে। আবার মেরাই থং নামটাও শুনতে পাওয়া যায় ৷ মারায়ং তং এর উচ্চতা প্রায় ১৬৪০ ফুট।

এই পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় রয়েছে একটি বৌদ্ধ উপাসনালয়। চারদিকে খোলা ও ওপরের দিকে টিনের চালা দেয়া স্থাপনার মাঝখানে বিশাল এক বৌদ্ধ মূর্তি রাখা আছে ৷ প্রতিবছর মাঘ মাসে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা মেলা পরিচালিত হয় মারায়ং তং জাদীতে। এই জাদীই এই পাহাড়ের মূল সামিট পয়েন্ট ৷

মারায়ং তং জাদী
মারায়ং তং জাদী

১৬৪০ ফুট উঁচু মারায়ং তং এর পুরোটা রাস্তাই চড়াই পথ। অর্ধেক আবার আধপাকা রাস্তা। মানে ইট বাঁধানো রাস্তা। মূলত স্থানীয় আদিবাসীদের উপড়ের জাদীতে যাবার সুবিধার জন্যই এই রাস্তা বানানো।

মারায়ং তং পাহাড়ের ওপরের অংশটুকু অনেকাংশেই সমতল। তাঁবু করে ক্যাম্পিং করার জন্য আদর্শ জায়গা ৷ এর চূড়া থেকে যত দূর দৃষ্টি যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড় চোখে পড়ে ৷ সেসব পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে দেখা যায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাহাড়ী জনবসতি।

পাহাড়ের নীচে সাপের মতো এঁকে-বেঁকে বয়ে চলেছে মাতামুহুরী নদী। তার দুই কূলে দেখা যায় অসংখ্য ফসলের ক্ষেত ৷ পাহাড়ীরাই মূলত এসব ক্ষেতে ফসল ফলায় ৷ যা দিয়ে স্থানীয় চাহিদা পুরণ হয় অনেকাংশে ৷

ঐ যে নীচে মাতামূহুরী নদী
ঐ যে নীচে মাতামূহুরী নদী

মারায়ং তং পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন আদিবাসীর বসবাস। এদের মধ্যে ত্রিপুরা, মারমা ও মুরং অন্যতম। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে মুরংদের তৈরি ছোট ছোট পাড়া।

মুরংরা পাহাড়ের ঢালে তাদের ঘর বানিয়ে বসবাস করে। মাটি থেকে সামান্য উপরে কাঠ দিয়ে মাচার মত উঁচু করে ঘর বানায় মুরংরা ৷

মুরং পাড়া
মুরং পাড়া

উপড়ের দিকে নিজেরা থাকে পরিবার পরিজন নিয়ে আর নিচের দিকে রাখে বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন-গরু, ছাগল, শূকর, মুরগি ইত্যাদি ৷ গবাদি পশুর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় লাকড়ি ও তারা স্তূপ করে জমিয়ে রাখে নীচে ৷ এগুলো তারা জ্বালানী কাঠ হিসাবে ব্যবহার করে ৷

মুরং পাড়া
মুরং পাড়া

পাহাড়ের নীচের দিকে থাকে মারমারা ৷ পাহাড়ীদের পাশাপাশি পাহাড়ের নীচের দিকে সমতলে বাঙালীরাও থাকে ৷

গোধুলী লগন
গোধুলী লগন

মারায়ং তং এ রাতের আকাশ দেখার মত সুন্দর । একবার তাকালে সহজে দৃষ্টি ফেরানো কঠিন ৷ এতো সুন্দর, অপার্থিব রাতের আকাশ দেশের আর কোন জায়গা থেকে দেখা যায় বলে মনে হয় না ৷

পূর্ব থেকে পশ্চিমে ছড়ানো আকাশগঙ্গা বা মিল্কিওয়ে তথা আমাদের গ্যালাক্সী যেন তার সৌন্দর্য্যের সবটুকুর পসরা সাজিয়ে বসে থাকে এখানে আমাদের চোখের ক্ষুধা নিবারনের জন্য ৷ চিৎ হয়ে শুয়ে একবার তা দেখা শুরু করলে আর উঠতেই মন চাইবে না কারো ৷

কিছুক্ষন পরপর মাথার উপড় দিয়ে উড়ে যায় হাওয়াই জাহাজ৷ একটু খেয়াল করে ভালকরে তাকালেই বুঝা যায় ৷ রাতে মারায়ং তং এর চূড়ায় প্রচন্ড বাতাস থাকে ৷

যাবার উপায় :

মারায়ং তং যেতে হলে দেশের যে কোন জায়গা থেকে প্রথমে পৌঁছাতে হবে চকোরিয়া। চকোরিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে আলিকদম যাবার সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে ৷ সেইসাথে রয়েছে পাহাড়ের বিশ্বস্ত বন্ধু নামে পরিচিত চান্দের গাড়ি জীপ সার্ভিস ৷

চান্দের গাড়ী কিংবা বাসে করে আলিকদম যাবার পথে রেফার ফাঁড়ি বাজার নেমে যেতে হবে মারায়ং তং যাবার জন্য ৷

চকরিয়া থেকে রিজার্ভ চান্দের গাড়ি ১০০০/১২০০ টাকার মতন নেয় , একটু দরদাম করে নিতে হয় ৷ চাইলে লোকাল জীপেও যাওয়া যায় , নির্দিষ্ট সময় পর পর জীপ সার্ভিস আছে৷ ৭০-৮০ টাকার মত পড়বে ভাড়া জনপ্রতি ৷

বাসে করে গেলে এই রুটে মাতামুহুরী নামে বাস সার্ভিস আছে । বাসের ভাড়া ৬৫ টাকা জন প্রতি। রেফার ফাঁড়ি বাজারে নেমে ডানদিক বরাবর যে রাস্তা চলে গেছে সে রাস্তা ধরে আবাসিক বিদ্যালয় পাড় হয়ে গ্রামের পাড়ার সামনে পর্যন্ত যেতে হবে৷

তারপর সেখান থেকে শুরু হবে মূল ট্রেকিং পর্ব ৷ প্রায় ২ ঘন্টার ট্রেকিং মোটামুটি কষ্টের , পুরোটা পথই আপ ট্রেইল৷

মারায়ং তং এর চূড়ায় পানীয় জলের কোন উৎস নেই, যাবার সময় তাই সাথে করে অবশ্যই পানকরার জন্য ও রান্নার জন্য পর্যাপ্ত পানি নিজেদের বহন করে নিয়ে যেতে হবে, যদি চূড়ায় ক্যাম্পিং করে থাকার প্লান থাকে!

রেফার ফাঁড়ি বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই রয়েছে ৷ ট্রেকিং শুরু করার পূর্বে প্রয়োজনীয় বাজার সদাই এখান থেকেই কিনে নিতে পারবেন ৷ এমন কি এখান থেকে ক্যাম্পিংয়ের জন্য পাহাড়ী লাকড়িও কিনতে পারবেন।

আমার মতে যাবার সময় সাথে লাকড়ি কিনে নিয়ে যাওয়াই ভালো, কারন উপরে রান্নার করার জন্য তেমন লাকড়ি পাওয়া যায় না। বাজারে ২-৩ টা মাঝারি মানের খাবার হোটেল আছে ৷

চাইলে হালকা নাস্তা অথবা যেতে যেতে যদি দুপুর হয়ে যায় তাহলে এই হোটেল গুলোতে দুপুরের খাবার টা খেয়ে ট্রেকিং শুরু করতে পারবেন । খাবারের মান মোটামুটি ভাল ৷

থাকার জায়গা :

মূলত মারায়ং তং যারা ভ্রমণ করতে যায় তারা ক্যাম্পিং করে সেখানে থাকার জন্যে ভ্রমণে যায়। ক্যাম্পিং করে পরের দিন ফিরে আসে ৷

তবে যদি কারো নিতান্তই এক্সট্রা কিছুদিন সেখানে থাকার প্রয়োজন হয় তাহলে আলীকদম উপজেলা রোডের “দ্যা দামতুয়া ইন” হোটেলে অথবা জেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে থাকতে পারবেন। এছাড়াও পান বাজারে সাধারণ মানের একটা বোর্ডিং আছে।

প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হউন । ট্রেইল পথে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না , বাংলাদেশকে ভালবাসুন , উপভোগ করুন এর অপার সৌন্দর্য ।

ভালবাসার মারায়ং তং
ভালবাসার মারায়ং তং

লিখা ও ছবি: রবি চন্দ্রবিন্দু

error: Content is protected !!