এক অদ্ভুত, অপূর্ব সুন্দর পাখি – হরিকল।
ভাল করে বলতে চঞ্চুমোটা হরিকল। ইংরেজি নাম Thick Billed Green Pigeon. বৈজ্ঞানিক নাম – Treron curvirostra. আরেকটি নাম…
এক অদ্ভুত, অপূর্ব সুন্দর পাখি – হরিকল।
ভাল করে বলতে চঞ্চুমোটা হরিকল। ইংরেজি নাম Thick Billed Green Pigeon. বৈজ্ঞানিক নাম – Treron curvirostra. আরেকটি নাম…
তুমি ছুঁয়ে দিলে রোজ হেসে উঠব আমি। সূর্যাস্তের রক্তিম আলোয় রোজ একবার করে প্রেমে পরব তোমার। মধ্যরাতে ক্লান্ত অন্ধকারে তোমার স্পর্শে রোজ বলব ভালোবাসি। আকাশে বিজলী চমকাতে দেখলে মুচকি হেসে দুজনে জন্ম দিব অসংখ্য বৃষ্টি ভেজার গল্প। রংচটা আধুনিকতার ভীরে কোন মানে হয় এসব পাগলামোর বল??। ভেবে দেখ আছে হয়ত……
হরমোনের বিষক্রিয়ায় প্রতিনিয়ত প্রেম হয়ে অপমানিত হয় ভালোবাসা; রক্তাক্ত হয় নরম বিছানায়। রোজ কেউ না কেউ মিথ্যে করে বলে ভালোবাসি। এসব মেকি ভালোবাসার ভীড়ে কি করে বুঝবে আমার চোখের চঞ্চলতায় কতটা আবেগ জমানো আছে তোমার জন্যে??।
কি করে বুঝবে আমার অসমাপ্ত স্বপ্নরা কতদিন অপেক্ষায় ছিল একসাথে পূর্ণ হব বলে। একসাথে দুজন বুড়ো হব বলে। শুধু এতটুকু স্পর্শ দাও আমায়। কথা দিলাম তোমায় পূর্ণতা দিব আমি। ভালোবাসার পূর্ণতা।
পাহাড়ের কৃষ্ণপক্ষ চেয়ে দেখেছেন কখনো? যারা পাহাড়ে যায় তারা জানে৷ পুর্ণিমার আকাশের চেয়েও যেন কোথাও একটু বেশি মোহনীয় পাহাড়ি আমবশ্যার রাতগুলো ৷ দূষণমুক্ত পরিবেশে তারায় ভরা রাতের আকাশ হয়ে উঠে ঝরা বকুলের উঠান৷
সেদিন সন্ধ্যার পর, এমনি এক আকাশের তলায় আমরা আড্ডায় গানে মেতে উঠেছিলাম। সারা দিনের ক্লান্তি কাটিয়ে নিজেদের রিচার্জ করে নেওয়ার আয়োজন।
বিলাইছড়ি বাজারে একেবারে শেষ দিকে অনেকখানি উচুতে আমাদের কটেজ। রিভার ভিউ ছিলো না। তবে কোলাহল মুক্ত সুনসান ছিলো। রাতের খাওয়ার আগে আমরা পুরো বাজারটাই ঘুরেফিরে দেখছিলাম। ৮/৯ টার মধ্যেই সব নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে।
পরদিন ধুপপানি ঝর্ণায় ছবি তোলার জন্য মনে মনে একটি রংধনু ছাতার খোঁজ করছিলাম আমি। পেয়েও গিয়েছিলাম। তবে দামে না হওয়াতে আর কেনা হয় নি।
কথামতো পরের দিন ভোর বেলাতেই ইঞ্জিন নৌকা এসে হাজির৷ সকালের নাস্তা খিচুড়ি আর ডিম প্যাকেট করে নৌকাতেই দিয়ে দেওয়া হয়। জলে বসেই সকালের জল খাবার খাওয়াটাও ধুপপানি ট্রেকের একটা বোনাস।
দুইটা চেকপোস্ট পেরিয়ে প্রায় ২ ঘন্টা পর উলুছড়িতে পৌঁছায়৷ সকালের বাকি ঘুমটুকু এই দুই ঘন্টাতেই সেরে ফেলা যায়।
উলুছড়ি থেকে গাইড নিয়ে ডিঙি নৌকায় পাড়ি দিতে হয় বাকি জল পথ। ৩০/৩৫ মিনিটের মতো ডিঙি নৌকায় থাকতে হয়৷
এই টুকু পথ সৌন্দর্যের আঁধার যেন। বর্ষায় ডুবে যাওয়া হাওরের মতো ভিউ পাওয়া যায় এখানে। গাছগাছালির মধ্য দিয়ে শান্ত সবুজ জলে মাঝির বৈঠা চলে।
দুপাশে পাহাড়ের সারি চোখে পড়ে। নিজেদের কোলাহল থেকে বার হয়ে একটু চুপচাপ চারপাশে তাকালেই মনে হবে আপনি মানুষের পৃথিবী ছেড়ে ঠিক ঠিক কোন অলকায় চলে এসেছেন৷
ধুপপানির পানে পথিক
পাখির মতো মন আমার
নৌকা যেখানে নামিয়ে দে সেখান থেকেই ট্র্যাকিং শুরু৷ আমাদের দের ঘন্টার মতো লেগেছিল ধুপপানি পৌঁছাতে। কঠিন কিছু না৷ তবে কড়া রোদে তিনটে বড় পাহাড় পেরিয়ে হাঁপিয়ে উঠার মতো।
পাহাড়ের ফাঁকে আকাশ
ঝিরিপথের সুষমা
পথিমধ্যে বিশ্রাম
ধুপপানির পানে
ট্র্যাকিং এর মাঝে
ধুপপানির সৌন্দর্য্য জগৎ বিদিত। এর সুবিশাল উচ্চতা দূর দূরান্ত থেকে সৌন্দর্য্য পিপাসুদের আকর্ষণ করে৷
তবে আমরা কিছুটা দমে গিয়েছিলাম পানির সল্পতা দেখে৷ তথাপি ঝর্ণার জল ম্যাজিকের মতো কাজ করে। কিছুক্ষণ জলে ভেজার পর ক্লান্তি ছেড়ে শুধু শুদ্ধতা আর উচ্ছলতা বাকি থাকে।
ফেরার পথে প্রথম যে পাড়াটা পড়ে সেখানে এসে কাপড় চোপড় ছেড়ে বিশ্রাম করে নিচ্ছিলাম যে যার মতো৷ এক দিদির ঘরে দেখলাম বাঁশ কোড়লের খোসা পড়ে আছে৷
বাঁশ কোড়ল চট্টগ্রামবাসীদের প্রিয় খাবার৷ যদিও খুব দুর্লব এখন৷ পাহাড়ি দিদিদের রান্না চেকে দেখার লোভ সামাল দিতে পারলাম না। রান্নাঘরে গিয়ে উনাকে বলতেই হাসি হাসি মুখে এক টুকরো দিয়ে দিলেন। নাপ্পি দিয়ে বাঁশকোড়ল রান্না৷ নাপ্পি আমি আগে কখনো খায়নি৷ এই ট্যুরে সেই অভিজ্ঞতাও পেয়ে গেলাম।
নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই আমরা বিলাইছড়ি পৌঁছে যাই। যাওয়ার সময় রোদ ছিলো। ফেরার সময় বৃষ্টি। দেখলাম সেই বৃষ্টিতে ভিজেই স্কুল ছাত্ররা নৌকা চালিয়ে বাড়ি ফিরছে।
কত ভিন্ন এই জলের মানুষের জীবন। ঝড় বৃষ্টি মাথায় করে এতোটা পথ নিজেরা নৌকা চালিয়ে স্কুলে যায়৷ আবার স্কুল থেকে ফিরে সেই নৌকাতেই চলে জীবিকার সন্ধান।
শরৎচন্দ্রের সেই পরিহাসের কথাটা মনে পড়ে যায়৷ দুইক্রোশ হেঁটে আসা ছাত্রদের মতো এদের দেখেও নিশ্চয় সরস্বতী লজ্জায় মুখ লুকাবেন। এরকম আরো কতো টুকরো টুকরো অভিজ্ঞতা আর উপলব্ধি নিয়ে আমরা কাপ্তাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি তার ইয়ত্তা নেই৷ প্রকৃতি সবসময় আমাদের দু হাত ভরে দিয়েই ফেরত পাঠায়।
গত বছরের জুলাই মাস। তখনো পর্যন্ত বিলাইছড়ির ধুপপানি ঝর্ণায় যাওয়া হয়ে উঠে নি৷ যদিও জ্যামিতিক হারে বেড়ে ওঠা অসংখ্য ট্রাভেল গ্রুপের কল্যাণে ধুপপানি গত কয়েকবছর ধরেই ট্যুরিস্টদের হটস্পট৷ দিনে কম করে হলেও ২০ থেকে ৩০ বার ধুপপানি ঝর্ণার ছবি ভিডিও চোখে পড়তো। যেমন করে গত কয়েকদিনে চায়নার একটা জল কটেজের ছবি এতোবার দেখেছি যে এখন দেখলে মনে হচ্ছে, ওহ আচ্ছা! এইটা! আমিতো অনেক বার গিয়েছি এখানে। সবই গ্রুপ গুলার কল্যাণ৷
তবে ফেইসবুকের ছবিতে বা ভিডিও তে যা পাওয়া যায় না, তা হলো যাত্রাপথ। দি জার্নি। আমার সাথে কেউ একমত হবে কিনা জানি না, তবে আমার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি যাত্রাপথে সবসময়ই মূল গন্তব্যের চেয়ে অনেক বেশি সৌন্দর্য্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে৷ ধুপপানি ট্রিপের ক্ষেত্রে এই কথা আরো একটু বেশি খাটে।
আমরা ট্রাভেলার হিসেবে একটু ছন্নছাড়া। নির্দিষ্ট কোন ভ্রমণসঙ্গীর দল অতীতে থাকলেও বর্তমানে তেমন কেউ নেই । আবার ইভেন্ট ব্যবসায়ীদের কাছে ধরা দিবো তেমন ও নই৷ কিছু দাদারা আছেন। সময় সুযোগ মিলে গেলে আমাদের সাথে জয়েন করেন।
আমরা দুজন ছাড়া সেবার আসিফ ভাই আকরাম ভাই আর জাকির ভাই ছিলো সাথে। আমরা তো বাজেট ট্রাভেলার। পাঁচজন নিয়ে ধুপপানি ট্রিপে যাওয়া মানে নৌকা ভাড়া অনেক বেশি পড়ে যাবে৷ তারপর আর কী? বাজেট ট্রাভেলারদের শেষ ভরসা টিওবি (ট্রাভেলার অব বাংলাদেশ)। টিওবি থেকে আমাদের সাথে যোগ দিলো তীর্থ দা আর সবার ছোট্টু ফারদিন। এই সাতজন মিলে সাতসমুদ্র পাড়ি দেওয়ার ট্রিপটা আমাদের মনে রাখার মতই ভালো ছিলো।
কাপ্তাই ঘাট থেকে ট্রলারে উঠার পর থেকে পুরো দুইটা দিন শুধু জল আর জল। ণ কাটা, মুপ্পেছড়া কিংবা ধুপপানি ঝর্ণায় পৌঁছাতে পাড়ি দিতে হয় দীর্ঘ জলপথ।
কী নেই এই পঁথে? কিছুদূর পর পরেই জলের রূপ ও পাল্টাতে থাকে। এই দুদিনে নৌকাপথের প্রতিটি মুহূর্তই উপভোগ করেছি আমি। এজন্যই বোধই বেদেনীদের আমার ছোটবেলা থেকেই হিংসে হয়৷ জলজ জগতের ঈশ্বরী ওরা।
কাপ্তাই লেকের সুবিস্তৃত্ব জলরাশির সাথে শরতী আকাশের মেলবন্ধন দেখতে দেখতে দুঘন্টার পঁথ পাড়ি দিয়ে আমরা বিলাইছড়ি পৌঁছাই।
রঙধনুর রূপ।
রঙধনুর ছায়া তলে।
আমরা অনেক দেরি করে রওনা দিয়েছিলাম কাপ্তাই থেকে যার জন্য বিলাইছড়ি পৌঁছাতেই দুপুর হয়ে গিয়েছিল।
যখন সবার ণকাটা, মুপ্পেছড়া দেখে ফেরার সময় হয়ে যাচ্ছিলো, আমরা সপ্তরথী স্লোকোচ তখন দুপুরের খাবার শেষ করে হেলে দুলে রওনা দেওয়ার আয়োজন করছিলাম।
অবশ্য এটা আমাদের প্ল্যানিং এর মধ্যেই ছিলো যাতে করে ঝর্ণায় গিয়ে বিভিন্ন গ্রুপের ইভেন্ট থেকে যাওয়া অন্তত শ-কয়েক লোকের সাথে ধাক্কাধাক্কি করতে না হয়৷ আমাদের পরিকল্পনা সফল ও হয়েছিলো। বিকাল হয়ে আসাতে ঝর্ণা মোটামুটি টুরিস্ট শূন্যই পেয়েছিলাম।
ন-কাটার দিকে যাওয়ার সময় হৃদের জলের রূপটা আবার অন্যরকম। ঝিলের পানির মতো শান্ত, পাতা রঙা সবুজ জল৷ নরম হাওয়ার সাথে যার সখ্য৷
কিছুক্ষণ পর পর দুপাশে আদিবাসীদের জনপদ চোখে পড়ে। শেওড়া গাছের ছায়ায় ডিঙি নৌকায় বসে কোন এক জেলে মাছ ধরায় রত।
কোন এক কুড়ে ঘরের পাশেই কজন বাচ্ছা ছেলে মেয়ে স্নানের ছলে জলখেলায় উন্মত্ত। হাজার বছরের পরিচিত এসব দৃশ্য বিমুগ্ধ চোখে দেখতে দেখতে আমাদের নৌ পথ শেষ হয়৷
নৌকা থেকে নেমে ৪০/৪৫ মিনিটের হাঁটা পথ পেরুলেই নকাটা। আমরা প্রথমে মুপ্পেছড়াতে চলে যাই৷ সহজ ট্রেইল। তবে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি আর অনেক মানুষের হাঁটাহাঁটির কারণে কিছু জায়গা খুব পিচ্ছিল ছিলো৷
আমাদের হাতে যথেষ্ট সময় ছিলো ঝর্ণায় কাটানোর জন্য৷ যে যার খায়েশ মতো ঝর্ণায় গড়াগড়ি খাওয়ার সুযোগ ছিলো৷
বিশেষ করে জাকির আর আরমান সেই যে মুপ্পেছড়ার উপরে গিয়ে বসেছিলো, একেবারে শেষদিকে অনেক ডাকাডাকির পর তবে নেমে আসে। ততক্ষণে আমরা ফিরতি পথে রওনা দিয়েছি৷
নৌকায় উঠার আগে আদিবাসীদের পাড়া আছে৷ পাড়ার চায়ের দোকানগুলো দেখলাম যথেষ্ট জমজমাট৷ আমাদের ছোট্ট গাইডের টাকা চুকিয়ে হালকা খাওয়া দাওয়া সেরে আমরা নৌকায় গিয়ে বসলাম।
গৌধুলির এই সময়টাতে ছাদবিহীন নৌকায় ভ্রমণ করা সবসময় লোভনীয়। যেন রাঙা আকাশে বিছিয়ে দেয়া জলপথ।
সেদিনের মতো সারাদিনের সারাংশে রাজ্যের প্রশান্তি নিয়ে আমরা ফিরছিলাম বিলাইছড়ির গন্তব্যে৷
সিটি কলেজের পাশ দিয়ে রাইফেলস স্কয়ার হয়ে সাত মসজিদ রোডে ধানমন্ডি লেকের পাশ ঘেষে খয়েরী রংয়ের ব্যতিক্রম ধরনের একটি ভবন চোখে পড়বে। আমাদের দেশের অন্যসব ভবনের গঠনের চেয়ে এই বাড়িটির গঠন একেবারেই আলাদা। চলতি পথে কারো চোখ এই বাড়িটির দিকে পড়া মাত্রই তার চোখ থমকে দাঁড়ায়।
অনেকটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের আদলে তৈরি করা বাড়িটিকে দেখে অনেকেই ভাবেন এটি কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। স্বয়ং যারা নিয়মিত এই স্থানে যাওয়া আসা করেন তারাও মনে করেন এটি একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। আসলে এটি কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নয়। এটি একটি বাসভবন।
কৌতুহলের কারণ:
ধানমন্ডি লেক ঘেষে গড়ে ওঠা এই বাড়িটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে কৌতুহলের কোনো শেষ নেই। কারো মতে এটি একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, কারো মতে এটি কোনো বিদেশী সংস্থার অফিস, কেউ মনে করে এটি একটি ভৌতিক বাড়ি। এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক। এটি এমন একটি বাড়ি যে বাড়ির সদস্যদের খুব একটা বাইরে দেখা যায় না। কোলাহল তো দূরের কথা, সামান্য টু শব্দটিও শোনা যায় না। বাড়ির প্রধান দরজাও সবসময় বন্ধ থাকে। বাইরের কেউ ভিতরে প্রবেশ করারও অনুমতি নেই। তাই বাইরের মানুষ আপন মনে বাড়িটি সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের ধারণা পোষণ করে আসছে।
নামকরণ:
সবার কাছে এই বাড়িটি ‘জাহাজ বাড়ি’ নামে পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে বাড়িটির নাম ‘জাহাজ বাড়ি’ নয়। জাহাজের আদলে তৈরি হওয়ায় মানুষ এটিকে ‘জাহাজ বাড়ি’ নাম দিয়েছে। বাড়িটির হোল্ডিং নাম্বার ৫/এ, ৬০, ধানমন্ডি, ঢাকা। বাড়ির গেটের নেমপ্লেটে বাড়িটির নাম লেখা রয়েছে “Chistia Palace”। উচ্চারণগত কারণে অনেকে এটিকে ‘খ্রিস্টিয়া প্যালেস’ বলেন। আসলে এর উচ্চারণ হবে ‘চিশতিয়া প্যালেস’।
নির্মাণকাল:
খুব বেশিদিন আগে এই বাড়িটি নির্মাণ করা হয় নি। ১৯৯৩ সালের কোনো এক সময় এই বাড়িটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। তার এক বছর পর ১৯৯৪ সালে বাড়িটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। তবে প্রথম দিকে বাড়িটির ডিজাইন জাহাজ আকৃতির ছিল না। নির্মাণের পর ঢাকা সিটি কর্পোরেশন বাড়িটির কিছু অংশ ভেঙে এর পাশ দিয়ে চলাচলের রাস্তা তৈরি করে। তখন বাড়ির মালিক বাড়িটির সীমানা প্রাচীর বর্তমান জাহাজ আদলে তৈরি করেন।
মালিকানা:
বাড়ির মালিকের নাম ‘শের এ খাজা’। স্থানীয়দের মতে তিনি একজন আধ্যাত্মিক ক্ষমতাবান মানুষ। সারা বিশ্বের বড় বড় সব নেতাদের সাথে তার সখ্য রয়েছে। আর এই সখ্যতার মূলে রয়েছে তার ভবিষ্যৎবাণীর ফলপ্রসূতা। তিনি যা ভবিষ্যৎবাণী করতেন ঠিক তেমনটিই হতো বলে জানা যায়। এজন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রথম সারির নেতাদের সাথে তার ওঠাবসা ছিল। এমনকি বিশ্বের অনেক বাঘা বাঘা নেতার পদচারণ ঘটেছে এই জাহাজ বাড়িতে।
তার ভবিষ্যৎ বাণী অনুসারে বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য শেরে খাজাকে বলা হতো ‘কিং অব কিং মেকার’। তবে তিনি ‘শের এ খাজা’ নামে পরিচিত হলেও তার আসল নাম একেএম আনোয়ারুল হক চৌধুরী। তার জন্মস্থান ও জন্ম তারিখ সম্পর্কে সঠিক কোনো ধারণা নেই।
যতদূর জানা যায় ১৯৫২ সালের কোনো একসময় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বর্তমানে চিশতিয়া প্যালেসে বসবাস করছেন শেরে খাজার মা, বোন ও তার পরিবার এবং শেরে খাজার স্ত্রী রেহানা চৌধুরী। তার ছেলে রুবেল চৌধুরী।
শের এ খাজার ব্যক্তিগত জীবন ও পরিবার:
বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি পড়ালেখা করেন। আধ্যাত্মিক ক্ষমতার অধিকারী হলেও তিনি এটিকে পুঁজি করে কোনো ব্যবসা করেন নি। তার এই আধ্যাত্মিক ক্ষমতার সেবা শুধুমাত্র বিশ্বের প্রথম সারির নেতারাই পেতেন। এসবের বাইরে তিনি গার্মেন্টস ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলেন।
চিশতিয়া গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজ নামে তার একটি কোম্পানি রয়েছে। তিনি নিজেই এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতেন। তার স্ত্রীর নাম রেহানা চৌধুরী। তাদের একমাত্র পুত্র রুবেল চৌধুরী ও একমাত্র কন্যা সাদিয়া চৌধুরী। তার ছেলে রুবেল চৌধুরী বিয়ে করেন নেপালের সাবেক উপ প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুজাদা কৈরালার মেয়েকে। তার স্ত্রী সম্পর্কে নেপালের প্রধানমন্ত্রী গিরিজা প্রসাদ কৈরালার নাতনী।
মৃত্যু:
২০১১ সালের ১৫ নভেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে এই ‘আধ্যাত্মিক’ পুরুষ
তিনাপ সাঁইতারকে বলা হয় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জলপ্রপাত। তবে তিনাপে যাওয়ার পথটি এককথায় অপূর্ব ও আজীবনে ভোলার নয়। আর অপরূপ পাইন্দু খাল।
তিনাপ সাইতার জলপ্রপাত আমাদের জনপ্রতি খরচ হয়েছিলো মাত্র ২৩০০ টাকা!
তিনাপ সাইতার এর একটি চমৎকার ভিডিও:
যেভাবে যাবেন
প্রথমে ঢাকা থেকে বান্দরবান আসতে হবে। ঢাকা থেকে বান্দরবানের বাস পাবেন অহরহ। আবার চট্রগ্রামে ট্রেনে এসে চট্টগ্রাম থেকে বাসে বান্দরবান আসতে পারেন।
যদি বাজেট কম থাকে তবে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রাতের চট্টগ্রাম মেইলে ১১৫ টাকায় চলে আসুন। চট্টগ্রাম বহদ্দারহাট থেকে বান্দরবানের বাস পাবেন।
বান্দরবান এসে বাস স্ট্যান্ড থেকে দশ টাকার টমটম ভাড়ায় চলে আসবেন রোয়াংছড়ি বাস স্ট্যান্ডে। এখান থেকে রোয়াংছড়ির ভাড়া ৬০ টাকা। সময় লাগবে দেড় ঘন্টা।
পাহাড়ী পথ আর পাহাড় ছোঁয়া মেঘ দেখতে দেখতে চলে আসবেন রোয়াংছড়ি। এবার ফ্রেশ হয়ে গাইডের খোঁজ নিন।
গাইড জোগাড় হলে খাওয়ার রেশন কিনে নিন। রামাধন নামে একটা হোটেল আছে। চাইলে জিরিয়ে নিতে পারেন এখানে। এবার এখান থেকে যেতে হবে রনিনপাড়া!
দল বড় হলে চাঁদের গাড়িতে চলে যান, নয়তো হাঁটতে থাকুন। হাঁটতে চাইলে চলুন পাহাড়ী ছড়া ধরতে হবে।
হাঁটার মজাই আলাদা। একদিকে পাহাড়, পাশে ঝিরিপথ, অপূর্ব অনিন্দ্য পথ! ক্লান্ত হলে বিশ্রাম নিয়ে আবার চলুন! সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা লাগবে রনিনপাড়া পৌঁছাতে। রনিনপাড়া পৌঁছে এবার জিরিয়ে নিন।
জানি এতোক্ষণ পথচলার হাঁপিয়ে গেছেন। চাইলে গাইডকে বলে গোসলের ব্যবস্থা করে নিন।
এখানের অধিবাসীদের প্রায় সবাই বম ও তঞ্চংগ্যাও জাতির। কাল যেহেতু যাবেন সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হবে। আড্ডা দিতে পারেন বমদের সাথে। বেশ ভালো লাগবে।
রাতে খেয়ে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ুন কারন আগামীকাল বেশ সকালে উঠতে হবে। হাঁটতে হবে ১৩ কিলোমিটার। অর্থাৎ রনিনপাড়া থেকে তিনাপ সাইতারের দুরত্ব ১৩ কিলোমিটার। সময় লাগে চার থেকে সাড়ে চার ঘন্টা।
হাঁটতে হাঁটতে দেড় ঘন্টা পর পৌঁছাবেন দেবছড়াপাড়ায়। এখানে একটু জিরিয়ে নিন। সূর্য ও তখন উঠে গেছে। দেবছড়াপাড়া থেকে এবার ঝিরিপথ।
পথের দৃশ্য অপূর্ব ও মোহনীয়। পাহাড়ের ঢাল, ঝিরিপথ, বনের পাশ দিয়ে হেঁটে চলা। সাবধানে হাঁটতে হবে। বেশ পিচ্ছিল পাথর। পাহাড় ও বাইরে হবে কিছুটা।
কিছুক্ষণ হাঁটার পর পাবেন পাইন্দু খাল। পাইন্দু খাল দিয়ে যেতে পারেন, আবার চাইলে পাহাড় হতেও যেতে পারেন। পাহাড়ী রাস্তার চেয়ে খাল দিয়ে যাওয়া সুন্দর অধিক তবে বিপজ্জনক।
চোখ খোলা রেখে চলতে হবে। পানির স্রোত ও বেশ। বেশ পিচ্ছিল ও। কিছুক্ষণ হাঁটলে পেয়ে যাবেন কাঙ্খিত তিনাপ! কানে আসবে তিনাপের জলের শব্দ।
এখানে বিশাল সব পাথর। একপাশে এসে শরীর ভিজিয়ে নিন। তারপর পাথরের উপর বসে পড়ে দেখতে থাকুন জলপতনের শব্দ! জানি মুহুর্তেই ঘুচবে যাবে সমস্তই ক্লান্তি।
বিঃ দ্রঃ প্রকৃতি আমাদের সম্পদ। দয়া করে প্রকৃতিতে যত্রতত্র ময়লা ফেলবেন না। আপনি যেমন সৌন্দর্য উপভোগ করছেন, আপনার পরবর্তী প্রজন্ম যেন অধিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে।
লঞ্চ থেকে নেমে এবার গাড়ি ঠিক করার পালা ৷ অনেক চেষ্টা করেও কম টাকায় কোন গাড়ি পেলাম না ৷ একটু সামনে এগিয়ে গিয়েও পেলাম না ৷ বেতুয়া লঞ্চ ঘাটটা বেশ সুন্দর ৷ চারপাশে সবুজের সমারোহ ৷ আমরা সবাই ছবি তুলতে লাগলাম যার যার মতন ৷
পরে একটা ব্যাটারিচালিত রিক্সা আমাদের সামনে এসে দাড়াল ৷ খেয়াল করে দেখলাম তার সাথে আগে কথা বলেছিলাম , তার দেয়া রেট আমাদের পছন্দ হচ্ছিল না , সে আবার এসেছে যদি যাই তার রেটে ৷ হাতে সময় বেশ কম বলে তার গাড়িতেই উঠে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা ৷
সে আমাদেরকে চরফ্যাশন পার করে সোজা চর কচ্ছপিয়া ঘাটে নিয়ে যাবে ৷ সবাই উঠে পড়লাম ৷ গাড়ি চলতে লাগল ৷ ড্রাইভার বেশ কচি বয়সের ৷ তবে ব্যাটা বেশ রশিক ৷ পথে বিভিন্ন জায়গায় আমরা গাড়ি থামিয়ে থামিয়ে ফটোসেশান করলাম ৷
সকাল সাতটায় বেতুয়া থেকে রওনা দিয়ে প্রায় দশটার দিকে আমরা চর কচ্ছপিয়া ঘাটে পৌঁছালাম ৷ সেখানে বাবুল মাঝি আমাদের স্বাগত জানাল ৷
ছিপছিপে গড়নের বৃদ্ধ একজন মানুষ ৷ ফোনে তো বাবুল ভাই বলে কথা বলেছিলাম ৷ এখন তাকে দেখে মুখ দিয়ে ভাই আর বাইর হয় না কারো ৷ সবাই মিলে তাকে নানা বানায়ে ফেললাম ৷ এতে করে আমরা তার নাতি হয়ে তার সাথে আরো ফ্রি হয়ে গেলাম ৷
নানার নৌকায় ব্যাগ রেখে সবাই গেলাম সকালের নাস্তা আর আগামী দুইদিনের জন্য বাজার করতে ৷ নানাকেও সাথে নিয়ে গেলাম নাস্তা করাতে ৷
ঘাট থেকে উপড়ে এসে ভাল খাবারের দোকান খুজতে লাগলাম ৷ তেমন ভাল হোটেল নেই এখানে ৷ তবে ফরহাদ ভাই মদিনা হোটেলের কথা বলেছিল ৷ সেটা খুজে বের করে সবাই ঢুকে বসে গেলাম নাস্তা করতে ৷ ডিম খিচুরী, পরটা, ভাজি, যার যা ভাল লাগল খেয়ে নিলাম ৷
খাওয়ার পর সুমি আপু বিশাল লিস্ট বানালেন বাজারের ৷ এবার সব কিনতে হবে ৷ নানাকে নৌকায় পাঠিয়ে দিয়ে সবাই মিলে বাজার করে নিলাম লিস্ট অনুযায়ী ৷ এবার যাত্রা শুরু করতে হবে ৷
প্রথমে আমরা চরকুকরিতে যাব ৷ নানা ইঞ্জিন চালু করে টান দিলেন নৌকা ৷ মাথার উপড় তীব্র রোদ ৷ ছুটে চলেছে আমাদের নৌকা কুকরিমুকরির দিকে ৷ আমি নৌকার বাঁশে জাতীয় পতাকা বেঁধে উড়িয়ে দিলাম ৷
সবাই মিলে নদীর দুপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে সামনে এগিয়ে চললাম ৷ যে যার যার মত ছবি তুললাম আশেপাশের প্রকৃতির ৷
চর কুকরি মুকরি যাবার পথে
চর কুকরি মুকরি যাবার পথে
চর কুকরি মুকরি যাবার পথে
চর কুকরি মুকরি
ঘন্টা দুয়েক পর আমারা চর কুকরিমুকরিতে এসে পৌঁছালাম ৷ বঙ্গোপসাগর ঘেঁষা একখণ্ড- সবুজ ভূমি চর কুকরিমুকরি। দীর্ঘ খাল আর এর দু’পাশের সবুজ বেষ্টনী এ দ্বীপকন্যার মূল সৌন্দর্য। সমুদ্র লাগোয়া খালগুলোতে নীল জলরাশি। পাশের ম্যানগ্রোভ বনে বৃক্ষের বৈচিত্র্য। এ জলরাশি আর বনভূমিই হরেক রকমের পাখি আর প্রাণীর অভয়ারণ্য। এখানে হরহামেশাই দেখা মেলে বিলুপ্তপ্রায় বেশ কিছু প্রাণীর ৷ এ যেন এক ছোট সুন্দরবন।
সবাই মিলে নেমে গেলেম নৌকা থেকে কুকরিমুকরির বুকে ৷ নানা সময় বেঁধে দিলেন একঘন্টা ৷ বেশি দেড়ী করা যাবে না, যেতে হবে বহুদূর সেই সোনার চরে ৷ বেলা থাকতেই পৌঁছাতে হবে আমাদের ৷
ফরেস্ট অফিসের অনুমতি নিতে হবে থাকার জন্য ৷ আমরা চরে নেমে নিজেদের মত ঘুরলাম সবাই মিলে ৷ চরের আশেপাশে ঘুরে ছবি তুলে নদীর পাড়ে দোকানে বসে চা নাস্তা করলাম ৷
এরপর আবার নানার নৌকায় চেপে বসলাম লম্বা যাত্রার উদ্দেশ্যে ৷ গন্তব্য সোনার চর ৷
সেবার দুলাল ভাইয়ের নেতৃত্বে থেগামুখ যাবার পরিকল্পনা ছিল ৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা সব প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলাম ৷
কিন্তু যাবার দুদিন আগে দুলাল ভাই হঠাৎ জানালেন আমাদের যাওয়া হচ্ছে না ৷ বিজিবি পার্মিশান না দেওয়ায় আমরা যেতে পারবনা থেগামুখ ৷ কি আর করার মন খারাপ। আমার আবার কোন ট্যুর পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করতে না পারলে ভাল লাগেনা ৷ প্লান যখন করেছি তখন ট্যুর দিবই দিব ৷
থেগামুখ না হলে অন্য কেথাও তাও যাবই ৷ আমরা যারা থেগামুখ যাবার পরিকল্পনা করেছিলাম সেখান থেকে কয়েকজন আলাদা একটা মেসেঞ্জার গ্রুপ বানালাম ৷ নাম দিলাম তার ছিঁড়া গ্রুপ ৷ এবার তার ছিঁড়াদের নিয়ে শুরু আলোচনা কেথায় যাওয়া যায় ৷ দুইদিনের মধ্যেই সব ফাইনাল করতে হবে আমাদের ৷ হাতে সময় কম ৷
সবাই মিলে ঠিক করলাম এবার কোন চরের দিকে চলে যাব ৷ সিদ্ধান্ত হল চর কুকরি মুকরি চলে যাব দুদিনের জন্য , সাথে সোনার চর, চর তাড়ুয়া , চর মোন্তাজ , আন্ডার চর সহ আরো যা যা দেখা যায় ৷
আমরা নিজেদের মতন সব খোঁজ নিতে লাগলাম, কিভাবে যাওয়া যায় ৷ ভ্রমণ পিয়াসু, সাথী বুবুর সাথে বেশ ভাল পরিচয়, অন্যদিকে ভ্রমণ ডায়েরীর ফরহাদ ভাইয়ের সাথেও ৷ দুইজনকেই নক দিলাম ৷ জেনেনিলাম সব খুঁটিনাটি বিষয় ৷ সাথী বু চরের মাঝির নাম্বার দিল ৷ কথা বলে সব ঠিক করলাম তার সাথে ৷ এবার যাবার পালা ৷
ফেব্রুয়ারীর ৫ তারিখ আমরা যাবার দিন ঠিক করলাম ৷ আমি , সিফাত ভাই , সুমী আপা, কামরুল ভাই , আর জাহাঙ্গীর ভাই আমরা পাঁচ জন যাব এই তার ছিঁড়া ট্রিপে সব কিছু ঠিকঠাক ৷
তিন জন ঢাকা থেকে রওনা দিলেও , আমাকে যেতে হবে চট্টগ্রাম থেকে আর সুমি আপাকে কুমিল্লা থেকে। সবাই একসাথে সদরঘাটে গিয়ে মিলিত হব ৷
ফেব্রুয়ারীর ৫ তারিখ সকালে আমি ব্যাকপ্যাক নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সুমি আপা দুপুরের দিকে কুমিল্লা থেকে রওনা দিলেন। আমি বিকালের একটু আগেই ঢাকা পৌঁছে যাই ৷ হাতে অনেক সময় কি করি তাই রিক্সা নিয়ে রওনা দিলাম সায়েদাবাদ থেকে সদরঘাটের দিকে। এতে কিছুটা সময় কাটবে ৷ আস্তে ধীরে পৌঁছাব ৷ রিক্সাওয়ালা ভাইকে বললাম যত আস্তে চালাতে পারেন চালান ৷ সে ও মাথা নাড়িয়ে চলতে শুরু করল ৷
চিপাচাপা অলিগলি ঘুরে সদরঘাট পৌঁছালাম ৷ তখনও কেউ আসেনি আমি ছাড়া ৷ এবার আমি লঞ্চের খোঁজ নিতে লাগলাম ৷ দুইটা লঞ্চ যাবে জানতে পারলাম রাত সাড়ে আটটায় তাশরিফ ৪ চার সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাবে ৷ আর আটটায় কির্তনখোলা ৷ দুইটা লঞ্চের কন্ডিশান দেখে তাশরিফ ৪ একটু খোলামেলা মনে হল ৷ তাই সিদ্ধান্ত নিলাম এটাতেই যাব ৷
তাশরিফ ৪ এ উঠে দেখি লঞ্চের ডেকের ভাল ভাল জায়গা সব দখল করা হয়ে গেছে ৷ যে যার মত চাদর, পাটি, মাদুরা বিছিয়ে জায়গা ধরে নিয়েছে নিজেদের জন্য ৷ মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল ৷ সন্ধার পরপর সিফাত ভাই কামরুল ভাই আর জাহাঙ্গীর ভাই এসে পৌঁছাল ৷ তারা লঞ্চের দ্বিতীয় তলায় উঠে বসে আছে ৷ ফোন দিয়ে লোকেশান বলতেই চলে গেলাম দ্বিতীয় তলায় ৷
প্রথমবার সবার সাথে দেখা ৷ সুমী আপা আরো একটু দেরীতে এসে পৌঁছাল ৷ দ্বিতীয় তলার সামনের দিকে নামাজ পড়ার খালি জায়গা ৷ ঠিক করলাম এখানেই বসব আমরা ৷ সামনে থেকে সব পরিষ্কার দেখাও যাবে সব ৷ রাতের খাবারের জন্য সিফাত ভাই আর কামরুল ভাই লঞ্চ থেকে নেমে জগন্নাথের দিকে গেলেন প্যাকেট বিরিয়ানি নিতে ৷ সাথে আরো কিছু হালকা খাবার, যাতেকরে রাতে যাত্রাপথে খাবারের সমস্যা না হয় আমাদের ৷ সুমি আপু বাসা থেকে চিকেন ফ্রাই করে নিয়ে এসেছিলেন সবার জন্য ৷ খুশিতে সবার কি অবস্থা ৷ এবার লঞ্চ ছাড়ার অপেক্ষা ৷
রাত সাড়ে আটটায় হুইসেল দিয়ে লঞ্চ যাত্রা শুরু করল ৷ এশারের নামাজ হয়ে যেতেই সামনের অংশটা পুরা ফাঁকা হয়ে গেল ৷ সবাই সবার দিকে একবার তাকালাম ৷ একসাথে চিৎকার দিয়ে উঠালাম ৷ পুরা খালি জায়গা আমাদের দখলে। এবার তাবু লাগাতে হবে জলদি ৷ লঞ্চের মেইন ডেকে এর আগে কেউ তাবু লাগিয়ে ক্যাম্পিং করেছে কিনা আমার জানা নাই ৷ সবাই মিলে তিনটা তাবু সেট করে ফেললাম জলদি ৷
লঞ্চের ডেকে ক্যাম্পিং
লঞ্চের ডেকে ক্যাম্পিং
লঞ্চের ম্যানেজার এসে স্বাগত জানালেন আমাদের ৷ এর আগে তাদের লঞ্চে এমন নাকি কেউ করেনি ৷ গ্রীন সিগনাল দিলেন নিজেদের মত ক্যাম্পিং করে যাবার জন্য ৷ এবার আর কোন টেনশান নাই ৷ মালপত্র সব তাবুর ভিতর রেখে সুমী আপুকে পাহাড়াদার নিযুক্ত করে , আমরা চার জন একসাথে ফুটে গেলাম লঞ্চ পরিদর্শনে। লঞ্চ ঘুরে এসে দেখি সুমী আপুর গাল ফুলা ৷ আমরা নাকি তাকে পাহাড়ায় রেখে ফুটে গেছি , উনি যেতে পারেননাই কেথাও ৷ মনে মনে ভাবলাম কাম সাড়ছে কপালে মনেহয় আর চিকেন ফ্রাই নাই আমাদের।
সিফাত ভাই নাটক শুরু করলেন আপুর মন ভাল করার জন্য ৷ আমি সুযোগে আবার ফুটে গেলাম কামরুল ভাইকে নিয়ে ৷ কিছুক্ষন পর এসে দেখি সিফাত ভাই আপুরে ফিটিং মেরে দিছে ৷ জাহাঙ্গীর ভাই আমাদের দুইজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন ৷ বুঝলাম চিকেন ফ্রাই এখনো হাতছাড়া হয় নাই ৷ আল্লাহ এই যাত্রায় বাঁচায়ে দিছে ৷ কিছুক্ষন পর সুমি আপু সবাইকে চিকেনফ্রাই খেতে দিলেন ৷ পেটুক সিফাত ভাই গপাগপ মেরে দিলেন কয়েক পিস, তা দেখে আমরাও হাত চালালাম জোড়ে, নাহলে সব সাবার হয়ে যাবে ৷ খাওয়া শেষে সবাই মিলে আড্ডা দেয়া শুরু করলাম ৷
মাঝে মাঝে উৎসুক দুই একজন এসে আমাদের ক্যাম্পিং দেখে যাচ্ছিল ৷ তাদের কাছে এটা একদম নতুন জিনিস ৷ অনেকেই জিজ্ঞাসা করছিল এটা কি জিনিস ৷ রাত এগারটার দিকে কামরুল ভাই সবাইকে বিরিয়ানির প্যাকেট ধরায়ে দিল ডিনার করার জন্য ৷ বিরিয়ানি খেয়ে চা খেতে ইচ্ছে করল ৷ সিফাত ভাই আর জাহাঙ্গীর ভাই নীচে গিয়ে ডিসপোজেবল কাপে করে সবার জন্য চা নিয়ে আসলেন ৷ চা খেয়ে সবাই একটু বিশ্রাম নিলাম ৷
রাত প্রায় দেড়টা মেঘনা নদীর বুক চিড়ে ছুটে চলেছে তাশরিফ। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি মেঘমুক্ত আকাশে পূর্ণ চাঁদ আলো বিলোচ্ছে। সবাইকে ডেকে তুললাম। এমন সুন্দর চাঁদ খুব কম দেখা যায় লঞ্চ জার্নিতে। সবাই তা উপভোগ করতে লাগলাম লঞ্চের রেলিং এ হেলান দিয়ে দাড়িয়ে। ক্যাম্পিং দেখার উৎসুক জনতার ভিড় একটু বাড়ল। বেশ কয়েকজন আমাদের তাবুর পাশে চাদর বিছিয়ে বসে পড়ল।
রাত দুইটার দিকে সুমি আপুকে তার তাবুতে ঢুকিয়ে দিয়ে আমরা চারজন এক তাবুতে বসে আড্ডা দিতে লাগলাম। ঘন্টা খানেক আড্ডা দেবার পর কামরুল ভাইকে সাথে নিয়ে আমার তাবুতে চলে এলাম।
একটু ঘুমাতে হবে এবার। সকালে ভোরে লঞ্চ থেকে বেতুয়া ঘাটে নেমে আবার দৌড়াতে হবে চর কচ্ছপিয়ার দিকে। সেখানে বাবুল মাঝি আমাদের অপেক্ষায় আছে। লঞ্চ ছাড়ার পর দুইবার ফোন করে খোঁজ নিয়েছে আমরা কতদূর এলাম তা জানতে।
বেতুয়ায় লঞ্চ থেকে নামার আগে তাবু ও মালপত্র গুছানা
স্বাগতম বেতুয়া
স্বাগতম বেতুয়া
চিৎকার চেচামেচিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। লঞ্চ বেতুয়া পৌঁছে গেছে। আমাদের নামতে হবে এবার। সবাই উঠে ফ্রেস হয়ে তাবু গুছিয়ে প্যাক করে নিলাম।
ম্যানেজার নিজে এসে আমাদের সাথে করে নীচে নিয়ে গেলেন বিদায় জানাতে । স্বাগতম বেতুয়া।
আলীকদম পার্বত্য বান্দরবানের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা ৷ এর আয়তন প্রায় ৮৮৫.৭৮ বর্গ কিলোমিটার ( ২,১৮৮৮০ একর ) ৷ আলোহক্যডং থেকে আলীকদম নামের উৎপত্তি। বোমাং সার্কেল চীফের নথি পত্র ও ১৯৬৩ সালের তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার কর্তৃক আঁকা মানচিত্রে আলোহক্যডং নামের সত্যতা পাওয়া যায়।
আলীকদমের বেশ কিছু পাহাড়ের মধ্যে কির্সতং, রুংরাং এবং মারায়ং তং অন্যতম ৷ কির্সতং ও রুংরাং যেতে কষ্টকর ও সময় সাপেক্ষ হলেও যোগোযোগের সুবিধার জন্য মারায়ং তং যাওয়া কিছুটা সহজ ও কম সময় সাপেক্ষ ৷
মারায়ং তং এর অবস্থান আলীকদমের মিরিঞ্জা রেঞ্জে ৷ অনেকে এই পাহাড়কে মারায়ন ডং ( Marayan Dong ) বলেও ডেকে থাকে। আবার মেরাই থং নামটাও শুনতে পাওয়া যায় ৷ মারায়ং তং এর উচ্চতা প্রায় ১৬৪০ ফুট।
এই পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় রয়েছে একটি বৌদ্ধ উপাসনালয়। চারদিকে খোলা ও ওপরের দিকে টিনের চালা দেয়া স্থাপনার মাঝখানে বিশাল এক বৌদ্ধ মূর্তি রাখা আছে ৷ প্রতিবছর মাঘ মাসে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বারা মেলা পরিচালিত হয় মারায়ং তং জাদীতে। এই জাদীই এই পাহাড়ের মূল সামিট পয়েন্ট ৷
১৬৪০ ফুট উঁচু মারায়ং তং এর পুরোটা রাস্তাই চড়াই পথ। অর্ধেক আবার আধপাকা রাস্তা। মানে ইট বাঁধানো রাস্তা। মূলত স্থানীয় আদিবাসীদের উপড়ের জাদীতে যাবার সুবিধার জন্যই এই রাস্তা বানানো।
গ্রামের রাস্তা ধরে পথ চলা
মুরং পাড়া পাড় হয়ে সামনে এগিয়ে চলা
আর থামা যাবে না , ঐ যে আর একটু…
পাহাড় তোমাকে স্বাগতম , তুমি আমাকে দুঃখ বিলাতে পারো ; কিন্ত আমার প্রেমের কাছে তোমার দুঃখ , সে তো কোন ছার !!
মারায়ং তং পাহাড়ের ওপরের অংশটুকু অনেকাংশেই সমতল। তাঁবু করে ক্যাম্পিং করার জন্য আদর্শ জায়গা ৷ এর চূড়া থেকে যত দূর দৃষ্টি যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড় চোখে পড়ে ৷ সেসব পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে দেখা যায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাহাড়ী জনবসতি।
পাহাড়ের নীচে সাপের মতো এঁকে-বেঁকে বয়ে চলেছে মাতামুহুরী নদী। তার দুই কূলে দেখা যায় অসংখ্য ফসলের ক্ষেত ৷ পাহাড়ীরাই মূলত এসব ক্ষেতে ফসল ফলায় ৷ যা দিয়ে স্থানীয় চাহিদা পুরণ হয় অনেকাংশে ৷
মারায়ং তং পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন আদিবাসীর বসবাস। এদের মধ্যে ত্রিপুরা, মারমা ও মুরং অন্যতম। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে মুরংদের তৈরি ছোট ছোট পাড়া।
মুরংরা পাহাড়ের ঢালে তাদের ঘর বানিয়ে বসবাস করে। মাটি থেকে সামান্য উপরে কাঠ দিয়ে মাচার মত উঁচু করে ঘর বানায় মুরংরা ৷
উপড়ের দিকে নিজেরা থাকে পরিবার পরিজন নিয়ে আর নিচের দিকে রাখে বিভিন্ন গবাদি পশু যেমন-গরু, ছাগল, শূকর, মুরগি ইত্যাদি ৷ গবাদি পশুর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় লাকড়ি ও তারা স্তূপ করে জমিয়ে রাখে নীচে ৷ এগুলো তারা জ্বালানী কাঠ হিসাবে ব্যবহার করে ৷
পাহাড়ের নীচের দিকে থাকে মারমারা ৷ পাহাড়ীদের পাশাপাশি পাহাড়ের নীচের দিকে সমতলে বাঙালীরাও থাকে ৷
মারায়ং তং এ রাতের আকাশ দেখার মত সুন্দর । একবার তাকালে সহজে দৃষ্টি ফেরানো কঠিন ৷ এতো সুন্দর, অপার্থিব রাতের আকাশ দেশের আর কোন জায়গা থেকে দেখা যায় বলে মনে হয় না ৷
পূর্ব থেকে পশ্চিমে ছড়ানো আকাশগঙ্গা বা মিল্কিওয়ে তথা আমাদের গ্যালাক্সী যেন তার সৌন্দর্য্যের সবটুকুর পসরা সাজিয়ে বসে থাকে এখানে আমাদের চোখের ক্ষুধা নিবারনের জন্য ৷ চিৎ হয়ে শুয়ে একবার তা দেখা শুরু করলে আর উঠতেই মন চাইবে না কারো ৷
কিছুক্ষন পরপর মাথার উপড় দিয়ে উড়ে যায় হাওয়াই জাহাজ৷ একটু খেয়াল করে ভালকরে তাকালেই বুঝা যায় ৷ রাতে মারায়ং তং এর চূড়ায় প্রচন্ড বাতাস থাকে ৷
যাবার উপায় :
মারায়ং তং যেতে হলে দেশের যে কোন জায়গা থেকে প্রথমে পৌঁছাতে হবে চকোরিয়া। চকোরিয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে আলিকদম যাবার সরাসরি বাস সার্ভিস রয়েছে ৷ সেইসাথে রয়েছে পাহাড়ের বিশ্বস্ত বন্ধু নামে পরিচিত চান্দের গাড়ি জীপ সার্ভিস ৷
চান্দের গাড়ী কিংবা বাসে করে আলিকদম যাবার পথে রেফার ফাঁড়ি বাজার নেমে যেতে হবে মারায়ং তং যাবার জন্য ৷
চকরিয়া থেকে রিজার্ভ চান্দের গাড়ি ১০০০/১২০০ টাকার মতন নেয় , একটু দরদাম করে নিতে হয় ৷ চাইলে লোকাল জীপেও যাওয়া যায় , নির্দিষ্ট সময় পর পর জীপ সার্ভিস আছে৷ ৭০-৮০ টাকার মত পড়বে ভাড়া জনপ্রতি ৷
বাসে করে গেলে এই রুটে মাতামুহুরী নামে বাস সার্ভিস আছে । বাসের ভাড়া ৬৫ টাকা জন প্রতি। রেফার ফাঁড়ি বাজারে নেমে ডানদিক বরাবর যে রাস্তা চলে গেছে সে রাস্তা ধরে আবাসিক বিদ্যালয় পাড় হয়ে গ্রামের পাড়ার সামনে পর্যন্ত যেতে হবে৷
তারপর সেখান থেকে শুরু হবে মূল ট্রেকিং পর্ব ৷ প্রায় ২ ঘন্টার ট্রেকিং মোটামুটি কষ্টের , পুরোটা পথই আপ ট্রেইল৷
মারায়ং তং এর চূড়ায় পানীয় জলের কোন উৎস নেই, যাবার সময় তাই সাথে করে অবশ্যই পানকরার জন্য ও রান্নার জন্য পর্যাপ্ত পানি নিজেদের বহন করে নিয়ে যেতে হবে, যদি চূড়ায় ক্যাম্পিং করে থাকার প্লান থাকে!
রেফার ফাঁড়ি বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই রয়েছে ৷ ট্রেকিং শুরু করার পূর্বে প্রয়োজনীয় বাজার সদাই এখান থেকেই কিনে নিতে পারবেন ৷ এমন কি এখান থেকে ক্যাম্পিংয়ের জন্য পাহাড়ী লাকড়িও কিনতে পারবেন।
আমার মতে যাবার সময় সাথে লাকড়ি কিনে নিয়ে যাওয়াই ভালো, কারন উপরে রান্নার করার জন্য তেমন লাকড়ি পাওয়া যায় না। বাজারে ২-৩ টা মাঝারি মানের খাবার হোটেল আছে ৷
চাইলে হালকা নাস্তা অথবা যেতে যেতে যদি দুপুর হয়ে যায় তাহলে এই হোটেল গুলোতে দুপুরের খাবার টা খেয়ে ট্রেকিং শুরু করতে পারবেন । খাবারের মান মোটামুটি ভাল ৷
থাকার জায়গা :
মূলত মারায়ং তং যারা ভ্রমণ করতে যায় তারা ক্যাম্পিং করে সেখানে থাকার জন্যে ভ্রমণে যায়। ক্যাম্পিং করে পরের দিন ফিরে আসে ৷
চলছে তাবু লাগানোর প্রস্তুতি
রাতের মারায়ং তং
রাতের মারায়ং তং
রাতের ক্যাম্পিং এর একমাত্র ছবি!
চলছে ক্যাম্পফায়ার ও আড্ডাবাজি
প্রভাত তোমায় স্বাগতম
তবে যদি কারো নিতান্তই এক্সট্রা কিছুদিন সেখানে থাকার প্রয়োজন হয় তাহলে আলীকদম উপজেলা রোডের “দ্যা দামতুয়া ইন” হোটেলে অথবা জেলা পরিষদের ডাক বাংলোতে থাকতে পারবেন। এছাড়াও পান বাজারে সাধারণ মানের একটা বোর্ডিং আছে।
প্রকৃতির প্রতি যত্নশীল হউন । ট্রেইল পথে ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না , বাংলাদেশকে ভালবাসুন , উপভোগ করুন এর অপার সৌন্দর্য ।
আমার মাথার ঠিক পিছনেই মুটামুটি বড়সড় একটা চারকোণা জানালা কাটা আছে!
একজনের স্লিপিং ব্যাগ সিংগেল লেয়ার বানিয়ে দুজন শেয়ার করার ফলে পা ঢাকতে গিয়ে মুখ ঢাকতে না পারা চোখে মিষ্টি রোদ আর কানে ঠান্ডা বাতাস ঢুকে জানান দিলো ‘মামণি, সকাল হয়ে গেছে এবার উঠে পড়ো!’
খুব কষ্টে আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে দেখি চারপাশে ঘন কুয়াশা!
তারপর বুঝে পেলাম না,আমরা আসলে মেঘের ভেতরে আছি। সবার ঘুম ভাঙ্গতে এখনো দেরী। ঘড়িতে প্রায় ৬ টা বাজে। দেখলাম আরিফ ভাই প্রাকৃতিক ডাকে সারা দিতে চলে যাচ্ছে বাহিরে!
এইখানে ঝোপঝাড় ই ভরসা।
কিন্তু আপনার প্রাকৃতিক কাজ সারার সময় যে আশেপাশের শুকর এসে আপনাকে বিরক্ত করবে না সে ভরসা দিতে পারছি না!!
একে একে উঠে পড়লাম সবাই!
ফ্রেশ হয়ে নাশতা করবো! ট্রেকিং জগৎ এ সবার প্রাণরক্ষাকারী সেই স্যুপি নুডুলস দিয়ে।
খেয়াল করলাম আমার পা দুটো দারুণ বিট্রে করে বসে আছে। যেন পা বলছে ঘুমা মা, তুই ঘুমা!
এতো শান্তির ওয়েদার ছেড়ে কোথাকার কি ক্রিসতং!
পা বিট্রে করলে তাও ঠিকাছে, কিন্তু জুতা!
জুতা বিট্রে করলে পাহাড়ি রাস্তা আরো বেশি কঠিন হয়ে যায়! আমার ট্রেকিং করতে হবে তাহমিদ ভাইয়ের জুতা দিয়ে যা কিনা আমার পা থেকে দু সাইজ বড়!
একবার তো দেবুদা কে বলেই বসলাম, দাদা সবাই ক্রিসতং ঘুরে আসুক, আমরা দুজন ল্যাটাই।
দেবুদা বললো সাইংপ্রা যেও না দরকার হলে, কিন্তু ক্রিসতং তো মাস্ট যেতে হবে।
সকল কল্পনা সল্পনার অবসান ঘটিয়ে আমরা রওনা দিলাম সকাল ৮ টায়।
গাইড দাদা বলেছে ২ ঘন্টা লাগে যেতে। আমরা আসা যাওয়াই ৫ ঘন্টা ধরে নিলাম।
ক্রিসতং থেকে পাড়ায় ফিরে তারপর ব্যাগ টা নিয়ে রওনা দিবো সাইংপ্রার উদ্দেশ্যে! রাতটা ওখানেই ক্যম্পিং করে থাকবো!!
এখন উদ্দেশ্য ক্রিসতং!
আপস এন্ড ডাউন হিল আছে কিছু, এ ব্যাতীত রাস্তা কঠিন মনে হলো না কারো! ৪৫-৫০ মিনিট হাঁটার পর রেইন ফরেস্টের মতো একটা জায়গাতে এসে পড়লাম।
গা ছমছম করা অনূভূতি পাচ্ছিলাম কেমন যেন, বাশঝাড়, বৃষ্টিস্নাত মাটি, পাথুরে খাড়া উঁচু জায়গা, জোঁক আর অন্ধকারচ্ছন্ন জায়গা!
সব মিলিয়ে বলা যায় সে এক দারুণ রোমাঞ্চকর অনুভূতি! আমরা কোনরকম না থেমেই হাঁটতে থাকলাম!
ক্রিসতং চূড়ায় পৌছে গাইড দাদা ও দুয়েকজন বসে পড়াতে আমরা বুঝলাম সামিট পয়েন্টে পা রেখেছি!
না, জার্নিটা যতটা বেশি কষ্টসাধ্য মনে হয়েছিলো ততটা কষ্টসাধ্য হয় নি। গাইড দাদা বললো এখনো অব্দি যেকটা টিম নিয়ে এসছি আপনারা সবচে বেচি তাড়াতাড়ি এসছেন।।
মূলত টিম বড় হলে স্লো হয়ে যায়। আমাদের দশজনের টিম স্লো না হয়ে সবাই যথাসাধ্য ফাস্ট ট্রেক করে ২ ঘন্টায় ক্রিসতং সামিট পয়েন্টে এসে পৌছেছি এটা সত্যিই আনন্দের ছিলো!
ক্রিসতং চূড়ায় ৩০ মিনিট মতো রেস্ট প্লাস ছবি তুলে আমরা পাড়ায় ব্যাক করার উদ্দেশ্যে পা দিলাম!
আমরা ১ টায় পাড়ায় ব্যাক করলাম।
পাড়ায় পৌছে টেন্ট ব্যাগ পানি সব গুছিয়ে হালকা বিস্কিট খেজুর খেয়ে রওনা দিলাম সাইংপ্রার উদ্দেশ্যে!
সত্যি বলতে তখন এনার্জি লেভেল কিছুটা ডাউন হয়েই ছিলো যেহেতু সকাল থেকে রেস্ট বাবদ ৪ ঘন্টা ট্রেক হয়ে গেছিলো আমাদের!
পাহাড়ি রাস্তা ধরে হাঁটতে শুরু করারর ৩০-৩৫ মিনিটের মাথায় দেখা মিললো জুমঘরের!
আহা সেই এক অন্যরকম শান্তি!
আমরা সেখানে জিরিয়েয়ে নিলাম মিনিট ১৫। আর ডিসিশন নিলাম সাইংপ্রা থেকে ফিরে যদি সম্ভব হয় এখানে একটা রাত কাটাবো!
আবারো হাঁটা শুরু, আরো ১৫-২০ মিনিট হাঁটার পর এবার খাড়া উঁচু পাহাড় বেয়ে নামার পালা!
একে তো খাড়া, তারউপর পাথুরে ঝুরা মাটি, রাস্তা যেন প্রতি মুহূর্তে জানান দিচ্ছে এক কদম এদিক ওদিক মানে বড় রকমের দুর্ঘটনা!
পাহাড় বেয়ে নামতে নামতে চলে এললাম সেই পাহাড় ধ্বসের জায়গাটা। সম্ভবত পুরো ট্রেইলের সবচেয়ে কঠিনতম অংশ!
অদ্রির রিভিউ পোষ্টে পড়ছি এই জায়গাটা তারা রোপ ব্যবহার করে র্যাপলিং করে নেমেছিলো।
আমাদের রোপ নেই, সম্পূর্ণ রিস্ক নিয়ে পাহাড় বেয়ে নামাটাই ভরসা! একপা ব্যালেন্স হারানো মানে হলো প্রায় খাড়া ২০০ ফিট নিচে তলিয়ে যাওয়া।
খুব সতর্কতার সহিত পার হয়ে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। বসে পড়লাম ওই জায়গায়!
গাইড দূর পাহাড়ে সাইংপ্রা দেখিয়ে দিলো!
ভেবেছিলাম লক্ষ্যের অনেক কাছে!
কিন্তু রাস্তা তখনো অনেক বাকি!
আবারো পাহাড়ের গা ঘেষে নামা শুরু। মিনিট ১৫-২০ এক নামার পর দেখা পেলাম ঘন বাশ ঝাড়ের!
এভাবে অনেক্ষন বাশঝাড়ের জঙ্গল দিয়ে নামতে নামতে একপর্যায়ে সত্যিকার অর্থে ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে গেছি সবাই!
এ রাস্তা যেন শেষ হয় না।
মনে হচ্ছিলো ঝিরিপথের দেখা পেলেই মনে শান্তি জাগবে। এক পর্যায়ে অপেক্ষার অবসান হয়ে ঝিরিপথে এসে নামলাম!
কিন্তু না! বিপত্তির তো সবে শুরু!
সে খবর তখনো আমাদের জানা ছিলো না…
শুনেছি ঝিরিতে বড় বড় কাঁকড়া পাওয়া যায়!
চিন্তা করলাম ডিনারটা কাঁকড়া দিয়েয়ে ই সারবো।
তাই গাইড দাদাকে বলে রাখলাম পথিমধ্যে পাওয়া কাঁকড়া ধরতে।
ঝিরিতে পৌছে কিছুক্ষন রেস্ট করে সম্ভবত ৫ টাই রওনা দিই। ঝিরপথে রওনা দেওয়ার পর প্রথম বড় বোল্ডারটার দেখা পেলাম। বোল্ডারটাতে না উঠা অব্দি বাকি ঝিরিপথের দৃশ্য দেখা যাচ্ছিলো না!
বোল্ডারে উঠার পর ঝিরিপথের যে দৃশ্য দেখলাম তাতেই আমার কলিজার পানি অর্ধেক শুকিয়ে গেছে!
মাত্র ২০ দিন আগে হেঁটে আসা পদ্মঝিরির দৃশ্যে চোখে ভেসে উঠলো কয়েক সেকেন্ডের জন্য। ঝিরিপথ মানেই এক অন্যরকম স্বস্তি! তাই আশা করছিলাম ঝিরিপথে নামলে এবার আরামসে পৌছে যাবো গন্তব্যে!
কিন্তু এই ঝিরিপথের চেহেরা দেখে ঝিরিপথ সম্পর্কে ধারণা ই পাল্টে গেলো। এই ঝিরিপথের যে দৃশ্য দেখলাম তাতে মনে হলো সম্ভবত ঐ পাহাড় বেয়ে উঠা নামাই ভালো ছিলো! এ দূর্গম্য ঝিরিপথ আর হাঁটতে চাই না!
আলো প্রায় কমে এসেছে!
পিচ্ছিল বড় বড় বোল্ডার। চারপাশে জঙ্গল যেন চিম্বুল ঝিরিকে আরো বেশি ওয়াইল্ড আর অতিপ্রাকৃতিক রুপ এনে দিয়েছে!
পুরোটা টাইম জুড়ে শঙ্কা ছিলো যে কোন মুহূর্তে বোল্ডার থেকে পা পিছলে বড় অঘটন ঘটবে! (শেষ পর্যন্ত ঘটেছিলো ও বটে!)
আস্তে আস্তে সন্ধ্যা ঘনালো।
বলা যায় আলো প্রায় ফুরিয়ে এসেছে।
ঝিরিপথে আমরা হাঁটা শুরু করেছি প্রায় ১.৫ ঘন্টা হয়ে গেলো, কিন্তু না! এই রাস্তা শেষ হওয়ার কোনো নামম নেইই।
উল্টা সময়ে সময়ে বোল্ডারের সাইজ ও পরিমান আরো দ্বিগুন হতে লাগলো।
এবার মনে সত্যি সত্যি অনেক ভয় চেপে আসলো। একটা ওয়াই জংশনে এসে বোল্ডারে বসে পড়লাম আমরা। না,আর কিঞ্চিত পরিমান ও দিনের আলো অবশিষ্ট নেই।গাইড দাদা বললো আরো আধাঘন্টা রাস্তা বাকি!
১০ জন টিম মেম্বার অন্ধকারে চিম্বুল ঝিরিতে ট্রেক করেছিলাম ওটা ভাবলে এখনো আমার শরীরের পশম দাড়িয়ে যায়!
মানসিক ভাবে দূর্বল হওয়া যাবে না এটাই ট্রেকিং এর প্রথম রুল। কিন্তু না,এইভাবে চলা সম্ভব না। আমরা সবাই সত্যিকার অর্থে মানসিক দৃঢ়তা হারাবো। ৪ জনের কাছে হেডলেম্প ছিলো বাকি ৬ জনের কাছে নেই।
চার হেডলেম্প দিয়ে পথ চলতে হবে দশ জনকে!
ওইটা জ্বালিয়ে আবার ট্রেক শুরু করলাম।
আমি এর আগে ও রাতে ট্রেক করেছি বেশ কয়েকবার।কিন্তু এ রাতের অনূভুতি আর রাস্তা,সেটা কোনো কিছুর সাথে তুলনা চলে না!
পিচ্ছিল বোল্ডার একে অন্যকে যতখানি সম্ভব সাপোর্ট দিয়ে চলতে লাগলাম, আমরা কজন সামনে গাইড দাদার সাথে, আরিফ ভাই মাঝখানে এবং আলী সবার শেষে এইভাবে পথ চলছিলাম, (আমাদের টিমের একজন অল্রেডি পথ চলা থামিয়ে দিয়েছিলো ক্লান্তি আর ভয়ে, তাকে পুরোপুরি সামাল দিচ্ছিলো আলী)..
এরমধ্যে ঘটে গেলো অঘটন!
এক বোল্ডার হয়ে আরেক বোল্ডার উঠার সময় ব্যালেন্স হারিয়ে আরিফ ভাই পড়ে গেলো খাড়া প্রায় ২০ ফুট নিচে।
আমরা সবাই একসাথে সজোরে চিৎকার! একবারের জন্য সবাই ভয় পেয়ে ভেবেছিলাম মানুষটাকে হারিয়ে ফেলেছি!
তবে সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় ছিলেন! মাথা ফাটা, শরীরে বিভিন্ন অংশে ছিড়ে যাওয়া আর গুমোট ব্যথা পেয়ে এ যাত্রায় বেঁচে গেলেন তিনি।
তাড়াতাড়ি করে ২-৩ জন গিয়ে তাকে নিচ থেকে নিয়ে আসলেন, আর সাথে থাকা ফার্স্ট এইড/মেডিসিন দিয়ে যতটা সম্ভব থাকে সাময়িক ভাবে সুস্থ করে, বেশ কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে আবারো পথ চলা শুরু।
এইভাবে আরো কতক্ষন বড় বড় পিচ্ছিল বোল্ডারে শরীরের ভারসাম্য বজায় রেখে ট্রেক করেছি জানিনা। একটা সময় পানির প্রবল শব্দ পেয়ে বুঝতে পারলাম সাইংপ্রার প্রথম ধাপ (ক্যাসকেডে) চলে এসেছি!
না শরীর আর মানতে চাইছে না! পারলে এখুনি টেন্ট গেড়ে এখানে শুয়ে পড়তে চাই!
কিন্তু না,সেটা সম্ভব না, সেই ওয়ে নাই।।
আমাদের আবার উঠতে হবে পাশের খাড়া পাহাড় বেয়ে!
যেতে হবে সাইংপ্রা আপার স্ট্রিমে। গাইড দাদা বললো বেশি না আরো ১৫ মিনিট!
সম্ভবত এই ১৫ মিনিট কথাটা গত ১ ঘন্টায় ১০ বার শুনেছি!
মনে মনে বললাম আপনার ১৫ মিনিটের গুষ্টিকিলাই!
এবার খাড়া উঁচু পাহাড় বেয়ে উঠতে থাকলাম সবাই!
অন্ধকার গহীন বুনো জঙ্গল! কোনো ট্রেইল নেই!
জোঁকে ভরপুর! মনে হচ্ছিলো আমাদের যেন বাই ওয়ান গেট ১০ টেনশন ফ্রি এর অফার দিয়েছিলো যেটা আমরা নির্বুদ্ধিতায় কিনে নিয়েছি।
প্রায় ৩৫-৪০ মিনিট খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠে আবার নিচে নামার পর সাইংপ্রা চতুর্থ র্স্টেপের দেখা পেলাম!
পৌছার সাথে সাথে বসে পড়লাম বোল্ডারে পা ভিজেয়ে…
আমরা ৪ জন আমি আরিফ ভাই, পলাশ ভাই আর আন্নি!
রাতের তারা ভরা আকাশ আর সাইংপ্রা!
যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি!
পুরো টিম এখনো এসে পৌছায়নি। আমরা অপেক্ষায় আছি। আর সম্ভবত বাকিরা ও আমার মতো করে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে নিচ্ছিলো মনে মনে!
হুট করে পলাশ ভাই আর আরিফ ভাই বলে উঠলো, ‘কংগ্রাচুলেশন! যদি ভুল করে না থাকি সম্ভবত বাংলাদশের প্রথম কোনো মেয়ে ট্রেকার হিসেবে তোমরা দুজন সাইংপ্রা স্পর্শ করেছো।
আহ্! এটা শুনেই সাইংপ্রা স্পর্শের আনন্দটা দ্বিগুন হয়ে গেছিলো আমার!
(অবশ্য পরে জানতে পারি আমাদের আগে আর একজন মেয়ে গেছিলেন)
আহ সা ইংপ্রা!
এখন শুধু সকাল হলেই তোমায় স্বচক্ষে গ্রাস করার অপেক্ষা!!
বাকি টিমমেটদের নিয়ে আলী একটু পর হাজির হলো! আসার সাথে সাথেকাজে নেমে পড়লো ও!
কি খেয়ে যে এতো এনার্জি পায় ছেলেটা খোদা জানে!
সবাই যখন রেস্ট নিতে ব্যস্ত তখন সে টেন্ট বিছাতে ব্যস্ত!
ওখানে টেন্ট ফেলার মতো খুব একটা সুবিধাজনক জায়গা ছিলো না, তবুও রাতটা কাটাতে হবে!
আমরা বসে বসে রাতের সৌন্দর্য্য উপভোগ করছিলাম!
আমার কাছে চাঁদনী রাতের চেয়ে ও এই লক্ষ কোটি তারাদের আকাশ ই বেশি পছন্দ!
টেন্ট টাঙ্গানো হয়ে গেলে আমরা মুটামুটি সবাই চেঞ্জ করে টেন্টের ভেতর ঢুকে পড়লাম!
আলী সাথে আরো দুজন সম্ভবত রান্না করায় ব্যস্ত।
আমি টেন্টে চোখ বুজার সাথে সাথে ঘুম নেমে এলো চোখে!
একটু পর খেয়াল হলো ওরা আমাকে খেতে ডাকছে, কিন্তু না!আমি সাফসাফ বলে দিয়েছি খাবো না, আমি ঘুমাই। তোমরা খাও!
ঠিকিই না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। চোখ বুজতে বুজতে এটাই ভাবছিলাম কাল সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গবে, না জানি আমার সকাল টা কতো স্বর্গীয় হবে!
টিক-টক-টিক-টক-টিক!
এখন অপেক্ষা এক স্বর্গীয় সকালের!