• উপকূল
  • সব পোস্ট
অন্যান্য অভিজ্ঞতা কুকরিমুকরি - সোনারচর - আন্ডার চর - চর মোন্তাজ...

কুকরিমুকরি – সোনারচর – আন্ডার চর – চর মোন্তাজ – চর তারুয়া দ্বীপ ভ্রমণ: পর্ব – ১

-

কুকরিমুকরি – সোনারচর- আন্ডার চর – চর মোন্তাজ – চর তারুয়া দ্বীপ ভ্রমণ।

পর্ব – ১:

সেবার দুলাল ভাইয়ের নেতৃত্বে থেগামুখ যাবার পরিকল্পনা ছিল ৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা সব প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলাম ৷

কিন্তু যাবার দুদিন আগে দুলাল ভাই হঠাৎ জানালেন আমাদের যাওয়া হচ্ছে না ৷ বিজিবি পার্মিশান না দেওয়ায় আমরা যেতে পারবনা থেগামুখ ৷ কি আর করার মন খারাপ। আমার আবার কোন ট্যুর পরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন করতে না পারলে ভাল লাগেনা ৷ প্লান যখন করেছি তখন ট্যুর দিবই দিব ৷

থেগামুখ না হলে অন্য কেথাও তাও যাবই ৷ আমরা যারা থেগামুখ যাবার পরিকল্পনা করেছিলাম সেখান থেকে কয়েকজন আলাদা একটা মেসেঞ্জার গ্রুপ বানালাম ৷ নাম দিলাম তার ছিঁড়া গ্রুপ ৷ এবার তার ছিঁড়াদের নিয়ে শুরু আলোচনা কেথায় যাওয়া যায় ৷ দুইদিনের মধ্যেই সব ফাইনাল করতে হবে আমাদের ৷ হাতে সময় কম ৷

সবাই মিলে ঠিক করলাম এবার কোন চরের দিকে চলে যাব ৷ সিদ্ধান্ত হল চর কুকরি মুকরি চলে যাব দুদিনের জন্য , সাথে সোনার চর, চর তাড়ুয়া , চর মোন্তাজ , আন্ডার চর সহ আরো যা যা দেখা যায় ৷

আমরা নিজেদের মতন সব খোঁজ নিতে লাগলাম, কিভাবে যাওয়া যায় ৷ ভ্রমণ পিয়াসু, সাথী বুবুর সাথে বেশ ভাল পরিচয়, অন্যদিকে ভ্রমণ ডায়েরীর ফরহাদ ভাইয়ের সাথেও ৷ দুইজনকেই নক দিলাম ৷ জেনেনিলাম সব খুঁটিনাটি বিষয় ৷ সাথী বু চরের মাঝির নাম্বার দিল ৷ কথা বলে সব ঠিক করলাম তার সাথে ৷ এবার যাবার পালা ৷

ফেব্রুয়ারীর ৫ তারিখ আমরা যাবার দিন ঠিক করলাম ৷ আমি , সিফাত ভাই , সুমী আপা, কামরুল ভাই , আর জাহাঙ্গীর ভাই আমরা পাঁচ জন যাব এই তার ছিঁড়া ট্রিপে সব কিছু ঠিকঠাক ৷

আমরা
আমাদের টিম

তিন জন ঢাকা থেকে রওনা দিলেও , আমাকে যেতে হবে চট্টগ্রাম থেকে আর সুমি আপাকে কুমিল্লা থেকে। সবাই একসাথে সদরঘাটে গিয়ে মিলিত হব ৷

ফেব্রুয়ারীর ৫ তারিখ সকালে আমি ব্যাকপ্যাক নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সুমি আপা দুপুরের দিকে কুমিল্লা থেকে রওনা দিলেন। আমি বিকালের একটু আগেই ঢাকা পৌঁছে যাই ৷ হাতে অনেক সময় কি করি তাই রিক্সা নিয়ে রওনা দিলাম সায়েদাবাদ থেকে সদরঘাটের দিকে। এতে কিছুটা সময় কাটবে ৷ আস্তে ধীরে পৌঁছাব ৷ রিক্সাওয়ালা ভাইকে বললাম যত আস্তে চালাতে পারেন চালান ৷ সে ও মাথা নাড়িয়ে চলতে শুরু করল ৷

চিপাচাপা অলিগলি ঘুরে সদরঘাট পৌঁছালাম ৷ তখনও কেউ আসেনি আমি ছাড়া ৷ এবার আমি লঞ্চের খোঁজ নিতে লাগলাম ৷ দুইটা লঞ্চ যাবে জানতে পারলাম রাত সাড়ে আটটায় তাশরিফ ৪ চার সদরঘাট থেকে ছেড়ে যাবে ৷ আর আটটায় কির্তনখোলা ৷ দুইটা লঞ্চের কন্ডিশান দেখে তাশরিফ ৪ একটু খোলামেলা মনে হল ৷ তাই সিদ্ধান্ত নিলাম এটাতেই যাব ৷

তাশরিফ ৪ এ উঠে দেখি লঞ্চের ডেকের ভাল ভাল জায়গা সব দখল করা হয়ে গেছে ৷ যে যার মত চাদর, পাটি, মাদুরা বিছিয়ে জায়গা ধরে নিয়েছে নিজেদের জন্য ৷ মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল ৷ সন্ধার পরপর সিফাত ভাই কামরুল ভাই আর জাহাঙ্গীর ভাই এসে পৌঁছাল ৷ তারা লঞ্চের দ্বিতীয় তলায় উঠে বসে আছে ৷ ফোন দিয়ে লোকেশান বলতেই চলে গেলাম দ্বিতীয় তলায় ৷

প্রথমবার সবার সাথে দেখা ৷ সুমী আপা আরো একটু দেরীতে এসে পৌঁছাল ৷ দ্বিতীয় তলার সামনের দিকে নামাজ পড়ার খালি জায়গা ৷ ঠিক করলাম এখানেই বসব আমরা ৷ সামনে থেকে সব পরিষ্কার দেখাও যাবে সব ৷ রাতের খাবারের জন্য সিফাত ভাই আর কামরুল ভাই লঞ্চ থেকে নেমে জগন্নাথের দিকে গেলেন প্যাকেট বিরিয়ানি নিতে ৷ সাথে আরো কিছু হালকা খাবার, যাতেকরে রাতে যাত্রাপথে খাবারের সমস্যা না হয় আমাদের ৷ সুমি আপু বাসা থেকে চিকেন ফ্রাই করে নিয়ে এসেছিলেন সবার জন্য ৷ খুশিতে সবার কি অবস্থা ৷ এবার লঞ্চ ছাড়ার অপেক্ষা ৷

যাবার সময় লঞ্চে রাতের খাবার খাওয়া
যাবার সময় লঞ্চে রাতের খাবার খাওয়া

রাত সাড়ে আটটায় হুইসেল দিয়ে লঞ্চ যাত্রা শুরু করল ৷ এশারের নামাজ হয়ে যেতেই সামনের অংশটা পুরা ফাঁকা হয়ে গেল ৷ সবাই সবার দিকে একবার তাকালাম ৷ একসাথে চিৎকার দিয়ে উঠালাম ৷ পুরা খালি জায়গা আমাদের দখলে। এবার তাবু লাগাতে হবে জলদি ৷ লঞ্চের মেইন ডেকে এর আগে কেউ তাবু লাগিয়ে ক্যাম্পিং করেছে কিনা আমার জানা নাই ৷ সবাই মিলে তিনটা তাবু সেট করে ফেললাম জলদি ৷

লঞ্চের ম্যানেজার এসে স্বাগত জানালেন আমাদের ৷ এর আগে তাদের লঞ্চে এমন নাকি কেউ করেনি ৷ গ্রীন সিগনাল দিলেন নিজেদের মত ক্যাম্পিং করে যাবার জন্য ৷ এবার আর কোন টেনশান নাই ৷ মালপত্র সব তাবুর ভিতর রেখে সুমী আপুকে পাহাড়াদার নিযুক্ত করে , আমরা চার জন একসাথে ফুটে গেলাম লঞ্চ পরিদর্শনে। লঞ্চ ঘুরে এসে দেখি সুমী আপুর গাল ফুলা ৷ আমরা নাকি তাকে পাহাড়ায় রেখে ফুটে গেছি , উনি যেতে পারেননাই কেথাও ৷ মনে মনে ভাবলাম কাম সাড়ছে কপালে মনেহয় আর চিকেন ফ্রাই নাই আমাদের।

সিফাত ভাই নাটক শুরু করলেন আপুর মন ভাল করার জন্য ৷ আমি সুযোগে আবার ফুটে গেলাম কামরুল ভাইকে নিয়ে ৷ কিছুক্ষন পর এসে দেখি সিফাত ভাই আপুরে ফিটিং মেরে দিছে ৷ জাহাঙ্গীর ভাই আমাদের দুইজনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন ৷ বুঝলাম চিকেন ফ্রাই এখনো হাতছাড়া হয় নাই ৷ আল্লাহ এই যাত্রায় বাঁচায়ে দিছে ৷ কিছুক্ষন পর সুমি আপু সবাইকে চিকেনফ্রাই খেতে দিলেন ৷ পেটুক সিফাত ভাই গপাগপ মেরে দিলেন কয়েক পিস, তা দেখে আমরাও হাত চালালাম জোড়ে, নাহলে সব সাবার হয়ে যাবে ৷ খাওয়া শেষে সবাই মিলে আড্ডা দেয়া শুরু করলাম ৷

মাঝে মাঝে উৎসুক দুই একজন এসে আমাদের ক্যাম্পিং দেখে যাচ্ছিল ৷ তাদের কাছে এটা একদম নতুন জিনিস ৷ অনেকেই জিজ্ঞাসা করছিল এটা কি জিনিস ৷ রাত এগারটার দিকে কামরুল ভাই সবাইকে বিরিয়ানির প্যাকেট ধরায়ে দিল ডিনার করার জন্য ৷ বিরিয়ানি খেয়ে চা খেতে ইচ্ছে করল ৷ সিফাত ভাই আর জাহাঙ্গীর ভাই নীচে গিয়ে ডিসপোজেবল কাপে করে সবার জন্য চা নিয়ে আসলেন ৷ চা খেয়ে সবাই একটু বিশ্রাম নিলাম ৷

রাত প্রায় দেড়টা মেঘনা নদীর বুক চিড়ে ছুটে চলেছে তাশরিফ। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি মেঘমুক্ত আকাশে পূর্ণ চাঁদ আলো বিলোচ্ছে। সবাইকে ডেকে তুললাম। এমন সুন্দর চাঁদ খুব কম দেখা যায় লঞ্চ জার্নিতে। সবাই তা উপভোগ করতে লাগলাম লঞ্চের রেলিং এ হেলান দিয়ে দাড়িয়ে। ক্যাম্পিং দেখার উৎসুক জনতার ভিড় একটু বাড়ল।  বেশ কয়েকজন আমাদের তাবুর পাশে চাদর বিছিয়ে বসে পড়ল।

তাবুর ভিতরে আমরা দুজন
তাবুর ভিতরে আমরা দুজন

রাত দুইটার দিকে সুমি আপুকে তার তাবুতে ঢুকিয়ে দিয়ে আমরা চারজন এক তাবুতে বসে আড্ডা দিতে লাগলাম। ঘন্টা খানেক আড্ডা দেবার পর কামরুল ভাইকে সাথে নিয়ে আমার তাবুতে চলে এলাম।

একটু ঘুমাতে হবে এবার। সকালে ভোরে লঞ্চ থেকে বেতুয়া ঘাটে নেমে আবার দৌড়াতে হবে চর কচ্ছপিয়ার দিকে। সেখানে বাবুল মাঝি আমাদের অপেক্ষায় আছে। লঞ্চ ছাড়ার পর দুইবার ফোন করে খোঁজ নিয়েছে আমরা কতদূর এলাম তা জানতে।

চিৎকার চেচামেচিতে ঘুম ভেঙ্গে গেল। লঞ্চ বেতুয়া পৌঁছে গেছে। আমাদের নামতে হবে এবার। সবাই উঠে ফ্রেস হয়ে তাবু গুছিয়ে প্যাক করে নিলাম।

যাবার সময় বেতুয়া লঞ্চ ঘাটে আমরা
যাবার সময় বেতুয়া লঞ্চ ঘাটে আমরা

ম্যানেজার নিজে এসে আমাদের সাথে করে নীচে নিয়ে গেলেন বিদায় জানাতে । স্বাগতম বেতুয়া।

চলবে ……….

সদর ঘাট লঞ্চ টার্মিনাল
সদর ঘাট লঞ্চ টার্মিনাল এ লেখক

লিখা ও ছবি: রবি চন্দ্রবিন্দু

পর্ব – ২

ব-দ্বীপ
শুধুমাত্র আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদশের জল, স্হল, জনপদ আর প্রকৃতিকে উপস্হাপন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।

Leave a Reply

সর্বশেষ

পান ব্যবসায়ীর বাড়িতে চাকুরী হতে যে রাজ্যপাটের ভিতঃ বালিয়াটির জমিদার বাড়ি

পান ব্যবসায়ীর বাড়িতে চাকুরী হতে যে রাজ্যপাটের ভিতঃ বালিয়াটির জমিদার বাড়ি আশপাশে সাভার, ধামরাইয়ের মতো প্রাচীন বনেদী সব জনপদ থাকতে...

এক অদ্ভুত, অপূর্ব সুন্দর পাখি – হরিকল

এক অদ্ভুত, অপূর্ব সুন্দর পাখি - হরিকল। ভাল করে বলতে চঞ্চুমোটা হরিকল। ইংরেজি নাম Thick Billed Green Pigeon. বৈজ্ঞানিক নাম...

পালং খিয়াং (Palong Khiyang) ঝর্ণা, বান্দরবন

পালং খিয়াং (Palong Khiyang) ঝর্ণা বান্দরবন জেলার আলীকদমে অবস্থিত। বেশ দূর্গম পথ , তবে মারাত্মক লেগেছে। ফ্লাশ ফ্লাডে পাহাড়...

আজিজ মাস্টারের বাড়ি

‘মুন্সী’ ‘খাঁ’ টাইটেল যে হিন্দুদেরও হয় তা জানতাম, তবে খুব একটা common  নয়। Afterall ‘মুন্সী’ শব্দটি ফার্সি। হিন্দু মুন্সী পদবীধারীর...

ঝরঝরি ট্রেইল

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড রেইঞ্জের সবচাইতে বুনো ট্রেইল বলা হয় এই ঝরঝরি ট্রেইলকে। এই ট্রেইলে মোটামুটি দেখবেন জোঁক, বানর, সাপসহ নানা...

পাঠক প্রিয়

চর কুকরী মুকরি, ঢাল চর, চর মনতাজ ভ্রমণ

চর কুকরী মুকরি, ঢাল চর, চর মনতাজ ভ্রমণ অল্প খরচেই আপনি ঘুরে আসতে পারেন বাংলাদেশের দক্ষিনের নদী ও সাগর বেষ্টিত ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়। হাতে ১...

এবার গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে দেখা মিললো তীব্র বিষধর ‘রাসেল ভাইপার‘ সাপ

গতকাল চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে রাসেল ভাইপারের দেখা মিলেছে।  পৃথিবীর ৫ম বিষধর সাপ এই রাসেল ভাইপার, আক্রমণে বিশ্বে ১ম ( মতান্তরে দ্বিতীয় )। অর্থাৎ...

মধুখাইয়া ট্রেইল ও ঝর্ণা, সীতাকুন্ড চট্টগ্রাম

২০১৭ সালের সেপ্টেমর মাস,কুরবানী ঈদের জাস্ট পরের দিন অপু নজরুল ভাইয়ের ফোন। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠলাম! ফোনে অপু ভাই বললো - ‘আসিফ ভাই! চলেন মধুখাইয়া...

কালচিতি / কালাচিতি / কালাচ / common krait

কালচিতি / কালাচিতি / কালাচ / common krait : একে বলা হয় রহস্যময় সাপ। ফনাহীন মারাত্মক বিষধর এই সাপে বাংলাদেশে এবং পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি মানুষ...

ভ্রমণ ডায়েরির পাতা থেকে, সাইংপ্রা: পর্ব – ২

সাইংপ্রা (২য় পর্ব) ভ্রমণ_ডায়েরির_পাতা_থেকে (৬ অক্টোবর,২০১৮) ভ্রমণ ডায়েরির পাতা থেকে, সাইংপ্রা (১ম পর্ব) আমার মাথার ঠিক পিছনেই মুটামুটি বড়সড় একটা চারকোণা জানালা কাটা আছে! একজনের স্লিপিং ব্যাগ সিংগেল...
error: Content is protected !!