২০১৭ সালের সেপ্টেমর মাস,কুরবানী ঈদের জাস্ট পরের দিন অপু নজরুল ভাইয়ের ফোন। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠলাম! ফোনে অপু ভাই বললো – ‘আসিফ ভাই! চলেন মধুখাইয়া ট্রেইলে যাই! চটপট করে গুছিয়ে নিন।‘
ঝর্ণা এবং পাহাড়ি ট্রেইলের প্রতি আগ্রহ আমার বরাবরই বেশি। চটপট ব্যাগ, ক্যামেরা গুছিয়ে চলে গেলাম একে খান বাস স্টেশন, চট্টগ্রাম! সংখ্যায় আমরা ৭ জনের গ্রুপ। সীতাকুন্ডগামী লোকাল বাসের ছাদে চেপে পৌঁছে গেলাম বারইয়াঢালা, সীতাকুন্ড! এরপর পায়ে হেঁটে কিছুদূর এগুলোই পাবেন একটি ধর্মীয় উপাসনালয়। সেখানে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিতে পারেন।
বারইয়াঢালা ফরেস্ট অফিসের পথ ধরে কিছুদূর হাঁটার পরই নুনাছড়া ট্রেইল।
নুনাছড়া ট্রেইল ধরে হাঁটতে হবে ঘন্টা খানেক, প্রকৃতি এখানে শীতল, শুনশান নিরবতা। সুউচ্চ পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য আর ঝিরির ধার ধরে প্রায় ঘন্টা দুয়েক হাঁটলে শুনতে পাবেন ঝর্ণার শব্দ। উচ্চতায় আনুমানিক ৩০ ফুট! বেশ বড় ঝর্ণা! স্হানীয়রা অনেকে মধুখাইয়া ঝর্ণা বলে একে।
পাহাড়ি পথে চলতে চলতে হাতে পেলাম মর্টারের শেলের খন্ডাংশ, সম্ভবত মুক্তিযুদ্ধে পাক বাহিনী ব্যবহার করেছিলো। পেয়েছি বুনো হরিণের হাড়। সীতাকুন্ডের পাহাড়গুলো এখানে বেশ উঁচু, ফটিকছড়ির গহীন অরণ্যে গিয়ে এরা মিশেছে।
ছিমছাম এই ট্রেইল এতোটা জনপ্রিয় হয়নি এখোনো। পথে যেতে যেতে দেখা হবে আদিবাসী ত্রিপুরা গোষ্ঠীর মানুষদের সাথে। এরা প্রচন্ড পরিশ্রমী, পাহাড়ি বাঁশের আঁটি মাথায় বহন করে নিয়ে আসে বাজারে। একেকটা বাঁশ বিক্রী হয় ৬-৭ টাকায়। আনুমানিক ১০০ কেজি ওজনের বাঁশের ঝাঁপি তারা মাথায় বহন করে শতাধিক ফুট উচ্চতার পাহাড় বেয়ে ফটিকছড়ি থেকে এই ট্রেইল পথে নিয়ে আসে বারইয়াঢালা বাজারে।
এই পথে পাহাড়ি বাঙ্গালীরা চোলাই মদও বহন করে। আদিবাসীরা এই মদ বহন কে অসম্মানের কাজ বলে মনে করে।
তারা পরিশ্রম করে বাঁশ বহনেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। মধুখাইয়া ট্রেইল পার হয়ে টেরিআইলের পথে আনুমানিক আধা ঘন্টা হাঁটার পর দেখা মিলবে পাহাড়ি ছোটো দ্বিতীয় ঝর্ণার। এই ঝর্ণাটা বেশ গুছানো সিড়ির মতো। আলোর স্বল্পতার জন্য এর আপ স্ট্রিমে ওঠা সম্ভব হয়নি, সন্ধ্যা তখন ঘনিয়ে এসেছিলো। টেরিআইলের পথ ধরে আমরা বেরিয়ে এসেছিলাম সীতাকুন্ডের বাজারে।
সময় নিয়ে একদিনের ট্যুর দিতে পারেন – মধুখাইয়া ট্রেইলে। পাবেন নিরিবিলি পাহাড়ি পরিবেশ, ঝর্ণা দেখার প্রশান্তি।
বর্ষাকালে মধুখাইয়া ট্রেইল ফুলে ফেঁপে ওঠে। ঝর্ণাও হয়ে ওঠে জলে টইটম্বুর ।
লেখা ও ছবি : Asif Soikot (আসিফ শুভ্র)