এই নদীতেও নৌকা চলতো একসময়। তাও যে–সে নৌকা নয়, বড় বড় বজরা। না এটা আমার কল্পনা নয়, এর সাক্ষ্য রয়ে গেছে নদীতীরে। এই সাক্ষ্য এই ঘাট, ধাপে ধাপে তলেদেশে নেমে আসা শান বাঁধানো ঘাট। ভাগ্যিস ঘাটটি ছিলো, নইলে জানাও যেতো না ‘বসুবাড়ি’র কথা বা নাম।
নদীটিও ছিলো দেখার মতো নইলে ‘সিংহাসন’ করবে কেন ঘাটের দু পাশে? একপাশের ‘সিংহাসনে’র নীচে ঘাটের নাম, ‘বজরা ঘাট’, আরেক পাশেরটার নীচে বাড়ির নাম, ‘বসুবাড়ি’। শ্বেতপাথরে খোদাই করা। কত বছর আগের? এরও সাক্ষ্য আছে মন্দিরটিতে।
“স্বর্গীয় নীলকমল বসু মহাশয়ের স্মৃতিমন্দির, স্থাপিত বাংলা ১৩৩৭ বাংলা।“
তার মানে বসু মহাশয় মারা গিয়েছেন আরো আগে। বাড়িটি তা হলে তারও আগের। হয়তো বানিয়েছিলেন নীলকমল বসু মহাশয়ের পুত্র। নদীটি মরে যাওয়াতে ঘাটটির আর উপযোগিতা নাই।
আমি গেলাম দু দু বার। মিনিট দশ পনেরো থাকা হয়েছিলো। কিন্তু জনমনিষ্যির চিহ্ন দেখিনি। বাড়ি থেকে ঘাটে আসতে এক পাশে একটু ভেতরে এই স্মৃতি মন্দির।
নীচতলা বর্গাকার। এক এক দিকে ৩টি করে খিলান। সারা গায়ে, পিলারে, কার্নিশে লতা–পাতার পাথরের/চিনি টিকরির কাজ। এমন যার বাড়ির ঘাট আর পূর্বপুরুষের স্মৃতি মন্দির, বাড়িটা দেখা গেলো না।
না জানি কতো সুন্দর হবে বাড়িটি! ( বাস্তবে হয়তো হতাশ হতাম নুতন উঠা দালান দেখে!)
আর এ জন্যই রহস্য থেকে গেলো। দেখারতো উপায়ও ছিলো না। দুবার গেলাম, ডিঙ্গি–টিঙ্গিও নেই, সাঁকোও নেই। পুরো শুকোয়ও না যে জল কাদা মাড়িয়ে চলে যাবো ওপাড়ে। হয়তো যাওয়া যায় অনেক ঘুরিয়ে। এর জন্য দরকার স্থানীয় কারো সঙ্গ।
বসুদের জন্য বিখ্যাত মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের মালখানগর। বুদ্ধদেব বসু, সুনির্মল বসুর পৈত্রিক গ্রাম।
‘আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাইরে’র কবি সুনির্মল বসু। জন্ম ভারতের বিহারের গিরিডিতে, কিন্তু পৈত্রিক গ্রাম মালখা নগর। মালখানগরে এখনো দেখা যায় কয়েক গন্ডা বসু পরিবারদের বাড়ি।
বসুদের কেউ নেই। মালখানগরের বসুরা সম্ভবত জমিদার ছিলেন না। তবে শিক্ষাদীক্ষায় যে অগ্রসর ছিলো তা বহুজনবিদিত। স্বচ্ছল যে ছিলো এর চিহ্ন তো ভেঙ্গে পড়া বাড়িঘরের চিহ্নতেই বিদ্যমান।
জানার মাঝে মালখানগরের জমিদার বাড়ি আছে একটা। এরা বসু ছিলেন না। বুদ্ধদেব বসুর পত্নী প্রতিভা বসু অর্থ্যাৎ রানু সোমের মামার বাড়ি। তবে এই ঘাট এই বাড়ি এই নদী বসু পরিবার খ্যাত মালখানগরে নয়। মুন্সিগঞ্জ হলেও সিরাজদিখানে নয়, এটি টঙ্গিবাড়ি উপজেলা। গ্রামের নাম নাটেশ্বর। গরমটা একটু পরে আসলে বাড়িটা টার্গেট করে আবার যাওয়া যায় টঙ্গিবাড়ির নাটেশ্বর।
বাড়ি না থাক, ঘাটটাতে বসে আসা যাবে একটু সময়। আরেকটু খোঁজখবর নিয়ে জেনে আসা যাবে নদীটির নামও।
লিখাঃ তপন রায়