পাহাড়ের চুড়ার ছবিই, কিন্তু এই চুড়াই শেষ চূড়া নয়। এতো সবে শুরু।
‘চান্দের গাড়ি’ থেকে ’২১ কিলোমিটার’- এ নেমে মাত্র মিনিট কুড়ি হাঁটার পর। এমন আরো কতো চূড়া পড়বে সামনে। উঠতে হবে আবার নামতে হবে। চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছার চিন্তা আসে না মাথায়।
মাথায় থাকে শুধু , চোখের সামনে যেটা, সেটাতেতো পৌঁছাই আগে। কয়টা উঠলেন আর নামলেন কয়টায়, তা গুণে রাখার সেন্সইতো থাকে না শেষতক!
তার পরও থমকে দাঁড়াতে হয় প্রতিটি চুড়ায়। কয়েক ফুট মাত্র দূর থেকেই নেমে যাওয়া ঘন সবুজের ঢাল। সামনে ভাঁজে ভাঁজে একের পর এক পাহাড়, ফাঁকে ফাঁকে ভেসে চলা মেঘের ভেলা। নয়তো দূর কোন গহীনে একাকী জুম ঘর। এতো দূর থেকেও নড়াচড়ার আভাষ পাওয়া যায় ক্যামেরা জুম করলে!
ক্লান্তি অবসাদে একসময় নিঃশেষ হয়ে পড়ে সব শক্তি। তখন শুধু একটাই জানার, আর কতো? আর কয়টায় উঠতে হবে এমন? লিডার যথারীতি আশ্বস্ত করবে, এইতো শেষ।
আর মাত্র দুইটা সামনে। এই ‘দুইটা’ আর শেষ হয় না। অঝোরে বৃষ্টি ঝরছে মাথায়। কিসের ছাতি আর কিসের গুমোট ভাপের সেসব ‘রেইন কোট’! এই ভিজতে পারাটাই মনে হয় শান্তির।
এর মাঝেই আহবান শুরু হবে গলা ছেড়ে, ‘আল্লাহ, তুমি রহম করো’। এমন চড়াই উৎরাই চলবে দীর্ঘ একটানা নয় ঘন্টা।
‘একটানা’ কেন? আপনি বিশ্রাম নেবেন কোথা? একটু দাঁড়ানোরও জায়গা নেই। অন্তরে সবার তখন শুধু ‘ইয়া নফসি’ ‘ইয়া নফসি’ ।
কখন মিলবে একটু বসে জিরোবার আশ্রয়! দূর থেকে শুধু গাছপালা জঙ্গলা দেখলে কি হবে হাঁটার পথে শুধু ছন জাতীয় বন। পাতায় পাতায় যার এঁকে বেঁকে নৃত্য করছে বৃষ্টিতে প্রাণ পাওয়া সব ‘চিনে’ জোঁক।
এই সফরে সবচাইতে যার উৎসাহ ডা: আসিফ , তিনিও সখ করে পিঠে করে বোঝা বয়ে নিয়ে গেছেন বহু মূল্যের অতি সখের ড্রোন, DSLR ক্যামেরা, মোবাইল।
পানিতে চুবিয়ে সবগুলোর বারোটা বাজিয়ে ফিরে এসে স্ট্যাটাস দেন, “ In between life and death ! ঝুপ বর্ষায় ভুলেও কেহ ক্রিসতং ট্রেইল দিয়া খ্যামচং / মেনিয়াং পাড়ায় যাইয়েন না । আর গেলেও বাবা মা থিকা অগ্রীম বিদায় নিয়া নিয়েন ।”
সেই তিনি আবার সব ভুলে এই ট্যুরের সূত্রে দুদিন পরেই স্ট্যাটাস দেন,
“আত্মারে পুষ্টি দেন , নিজে চাঙ্গা থাকেন। ব্যাগ আর চশমা লয়া শুধু চেম্বারে দৌঁড়ায়েন না।”
সখের সব ইন্সট্রুমেন্ট জলাঞ্জলি দিয়েও শুকুর গুজরান তিনি, অক্ষত ফিরতে পেরেছেন জান নিয়ে। পেরেশানি সব ভুলে বন্ধুদের আহবান জানান, “জীবন একটাই, দ্বিতীয় সুযোগ দেয়া হবেনা।
কাজেই সৌন্দর্য্য আহরণ আর আত্মার পুষ্টি নেবার সুযোগ হাতছাড়া করা বোকামী ……..”
ট্রেইল ডিটেইলস
ঢাকা- চকরিয়া- আলীকদম- ২১ কিলো-খেমচং পাড়া
খেমচং পাড়া- মেনিয়াং পাড়া
মেনিয়াং পাড়া- শামুক ঝিড়ি ট্রেইল- মেনকিউ পাড়া- দুসরী বাজার-আমতলী ঘাট- আলীকদম- চকরিয়া – ঢাকা ।
লেখা – Tapan Roy
ছবি – Tapan Roy, Asif soikot