টাউন হল, রংপুর জেলা
রংপুর বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের অন্যতম প্রধান শহর এবং ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের প্রাচীনতম পৌর কর্পোরেশনের একটি। রংপুর শহর ১৭৬৯ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিভাগীয় সদর দপ্তর হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
১৮৮৫ সালে একটি রঙ্গ মঞ্চ বানানোর উদ্যোগ থেকেই গড়ে উঠেছিলো রংপুর টাউন হল। সেখানে নাট্যচর্চা ও সংস্কৃতি বিকাশের জন্য রঙ্গপুর নাট্য সমাজ (রংপুর ড্রামাটিক অ্যাসোসিয়েশন) এ উদ্যোগ নেয়। তাদের এ উদ্যোগে সাড়া দিয়ে এগিয়ে আসেন কাকিনার রাজা মহিমা রঞ্জন রায়।
দীর্ঘ ছয় বছর অপেক্ষা শেষে নাটক পাগলদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে বিকশিত করতে ১৮৯১ সালে রাজা মহিমা রঙ্গ মঞ্চ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রায় ৩শ ৪০ শতক (১০ বিঘা ৩ কাঠা) জমি ইংরেজ সরকারের কাছে লিখে দেন।
এর পাঁচ বছর পর ১৮৯৬ সালে সেক্রেটারি অফ স্টেট ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ও রঙ্গপুর নাট্য সমাজের মধ্যে একটি দলিল সম্পাদিত হয়। সেই দলিল অনুযায়ী নাট্য সমাজ ওই জমির মালিকানার অধিকারী হয়।
টাউন হলটি শুধু আনন্দ, চিত্ত বিনোদন বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সূতিকাগার নয়। অনেক বেদনা ও কষ্টের স্মৃতিও মিশে আছে এর সাথে । হলের ইট পাথরের রন্ধ রন্ধ্রে জড়িয়ে আছে ৭১’র স্মৃতিকথা। বীরাঙ্গনাদের আর্ত চিৎকার। গুমোট চাপা ধর্ষিতার কান্না। পাক হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এই টাউন হলকে বানিয়েছিল ‘নারী নির্যাতন’ কেন্দ্র। যুদ্ধের বিভীষিকায় অসংখ্য নারী এখানে সম্ভ্রম হারিয়েছে। এখানে হত্যা করা হয়েছে অনেক মুক্তিকামী নিরাপদ মানুষকে। আর সেই বিভীষিকাময় দিনের স্মৃতি ধারণ করে এখনও দাঁড়িয়ে আছে রংপুর টাউন হল।
বর্তমানে টাউন হল ক্যাম্পাস জুড়ে রয়েছে ভারতের অন্যতম প্রাচীন লাইব্রেরিগুলির একটি। যা রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি নামে পরিচিত। রংপুর টাউন হল প্রতিষ্ঠার প্রায় ৪২ বছর পূর্বে ১৮৫৪ সালে লাইব্রেরিটি স্থাপিত হয়েছিল।
রংপুর পাবলিক লাইব্রেরিকে কেন্দ্র করেই লাইব্রেরি ভবনের একাংশে প্রতিষ্ঠিত হয় রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ, যা কলকাতার বাইরে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রথম শাখা। পাশেই রয়েছে স্থপতি তাজউদ্দিন চৌধুরীর ডিজাইনে করা আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর অপূর্ব নিদর্শন রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।
এদিকে রংপুর টাউন হলের ফলকে এখনও কাকিনার রাজা মহিমা রঞ্জন রায়ের নাম লেখা রয়েছে। যিনি শিক্ষাগত যোগ্যতায় পিছিয়ে থাকলেও, ছিলো শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব। শিক্ষার প্রতি তার অগাধ ভালোবাসা থেকে অনগ্রসর বাঙালিকে সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, লাইব্রেরির জন্য জমি দান করেন তিনি। রংপুরের অনেক স্থাপনার সাথে মিশে আছে স্মৃতি। এ কারণে রংপুর টাউন হলসহ কৈলাশরঞ্জন স্কুল, রংপুর পাবলিক লাইব্রেরির নাম ফলকে তার মহিমার গৌরব গাঁথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
যারাই রংপুর আসবেন টাউন হল ঘুরে আসতে পারবেন।
লিখা ও ছবি: রবিন ফয়সাল