কুকরিমুকরি – সোনারচর – আন্ডার চর – চর মোন্তাজ – চর তারুয়া দ্বীপ ভ্রমণ।
পর্ব – ২:
লঞ্চ থেকে নেমে এবার গাড়ি ঠিক করার পালা ৷ অনেক চেষ্টা করেও কম টাকায় কোন গাড়ি পেলাম না ৷ একটু সামনে এগিয়ে গিয়েও পেলাম না ৷ বেতুয়া লঞ্চ ঘাটটা বেশ সুন্দর ৷ চারপাশে সবুজের সমারোহ ৷ আমরা সবাই ছবি তুলতে লাগলাম যার যার মতন ৷
পরে একটা ব্যাটারিচালিত রিক্সা আমাদের সামনে এসে দাড়াল ৷ খেয়াল করে দেখলাম তার সাথে আগে কথা বলেছিলাম , তার দেয়া রেট আমাদের পছন্দ হচ্ছিল না , সে আবার এসেছে যদি যাই তার রেটে ৷ হাতে সময় বেশ কম বলে তার গাড়িতেই উঠে পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা ৷
সে আমাদেরকে চরফ্যাশন পার করে সোজা চর কচ্ছপিয়া ঘাটে নিয়ে যাবে ৷ সবাই উঠে পড়লাম ৷ গাড়ি চলতে লাগল ৷ ড্রাইভার বেশ কচি বয়সের ৷ তবে ব্যাটা বেশ রশিক ৷ পথে বিভিন্ন জায়গায় আমরা গাড়ি থামিয়ে থামিয়ে ফটোসেশান করলাম ৷
সকাল সাতটায় বেতুয়া থেকে রওনা দিয়ে প্রায় দশটার দিকে আমরা চর কচ্ছপিয়া ঘাটে পৌঁছালাম ৷ সেখানে বাবুল মাঝি আমাদের স্বাগত জানাল ৷
ছিপছিপে গড়নের বৃদ্ধ একজন মানুষ ৷ ফোনে তো বাবুল ভাই বলে কথা বলেছিলাম ৷ এখন তাকে দেখে মুখ দিয়ে ভাই আর বাইর হয় না কারো ৷ সবাই মিলে তাকে নানা বানায়ে ফেললাম ৷ এতে করে আমরা তার নাতি হয়ে তার সাথে আরো ফ্রি হয়ে গেলাম ৷
নানার নৌকায় ব্যাগ রেখে সবাই গেলাম সকালের নাস্তা আর আগামী দুইদিনের জন্য বাজার করতে ৷ নানাকেও সাথে নিয়ে গেলাম নাস্তা করাতে ৷
ঘাট থেকে উপড়ে এসে ভাল খাবারের দোকান খুজতে লাগলাম ৷ তেমন ভাল হোটেল নেই এখানে ৷ তবে ফরহাদ ভাই মদিনা হোটেলের কথা বলেছিল ৷ সেটা খুজে বের করে সবাই ঢুকে বসে গেলাম নাস্তা করতে ৷ ডিম খিচুরী, পরটা, ভাজি, যার যা ভাল লাগল খেয়ে নিলাম ৷
খাওয়ার পর সুমি আপু বিশাল লিস্ট বানালেন বাজারের ৷ এবার সব কিনতে হবে ৷ নানাকে নৌকায় পাঠিয়ে দিয়ে সবাই মিলে বাজার করে নিলাম লিস্ট অনুযায়ী ৷ এবার যাত্রা শুরু করতে হবে ৷
প্রথমে আমরা চরকুকরিতে যাব ৷ নানা ইঞ্জিন চালু করে টান দিলেন নৌকা ৷ মাথার উপড় তীব্র রোদ ৷ ছুটে চলেছে আমাদের নৌকা কুকরিমুকরির দিকে ৷ আমি নৌকার বাঁশে জাতীয় পতাকা বেঁধে উড়িয়ে দিলাম ৷
সবাই মিলে নদীর দুপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে সামনে এগিয়ে চললাম ৷ যে যার যার মত ছবি তুললাম আশেপাশের প্রকৃতির ৷
ঘন্টা দুয়েক পর আমারা চর কুকরিমুকরিতে এসে পৌঁছালাম ৷ বঙ্গোপসাগর ঘেঁষা একখণ্ড- সবুজ ভূমি চর কুকরিমুকরি। দীর্ঘ খাল আর এর দু’পাশের সবুজ বেষ্টনী এ দ্বীপকন্যার মূল সৌন্দর্য। সমুদ্র লাগোয়া খালগুলোতে নীল জলরাশি। পাশের ম্যানগ্রোভ বনে বৃক্ষের বৈচিত্র্য। এ জলরাশি আর বনভূমিই হরেক রকমের পাখি আর প্রাণীর অভয়ারণ্য। এখানে হরহামেশাই দেখা মেলে বিলুপ্তপ্রায় বেশ কিছু প্রাণীর ৷ এ যেন এক ছোট সুন্দরবন।
সবাই মিলে নেমে গেলেম নৌকা থেকে কুকরিমুকরির বুকে ৷ নানা সময় বেঁধে দিলেন একঘন্টা ৷ বেশি দেড়ী করা যাবে না, যেতে হবে বহুদূর সেই সোনার চরে ৷ বেলা থাকতেই পৌঁছাতে হবে আমাদের ৷
ফরেস্ট অফিসের অনুমতি নিতে হবে থাকার জন্য ৷ আমরা চরে নেমে নিজেদের মত ঘুরলাম সবাই মিলে ৷ চরের আশেপাশে ঘুরে ছবি তুলে নদীর পাড়ে দোকানে বসে চা নাস্তা করলাম ৷
এরপর আবার নানার নৌকায় চেপে বসলাম লম্বা যাত্রার উদ্দেশ্যে ৷ গন্তব্য সোনার চর ৷
চলবে …
লিখা ও ছবি: রবি চন্দ্রবিন্দু