এক অদ্ভুত, অপূর্ব সুন্দর পাখি – হরিকল।
ভাল করে বলতে চঞ্চুমোটা হরিকল। ইংরেজি নাম Thick Billed Green Pigeon. বৈজ্ঞানিক নাম – Treron curvirostra. আরেকটি নাম…
এক অদ্ভুত, অপূর্ব সুন্দর পাখি – হরিকল।
ভাল করে বলতে চঞ্চুমোটা হরিকল। ইংরেজি নাম Thick Billed Green Pigeon. বৈজ্ঞানিক নাম – Treron curvirostra. আরেকটি নাম…
পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙ্গামাটি জেলার অন্তর্গত কাপ্তাই উপজেলার একটি ইউনিয়ন রাইখালী৷ কাপ্তাই উপজেলার দক্ষিণাংশে রাইখালী ইউনিয়নের অবস্থান। উপজেলা সদর থেকে এ ইউনিয়নের দূরত্ব প্রায় ৮ কিলোমিটার।
এ ইউনিয়নের পূর্বে চিৎমরম ইউনিয়ন, উত্তরে কর্ণফুলি নদী ও চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন, পশ্চিমে চট্টগ্রাম জেলার রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কোদালা ইউনিয়ন এবং দক্ষিণে রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন ও গাইন্দ্যা ইউনিয়ন অবস্থিত।
রাইখালী ইউনিয়নের আয়তন প্রায় ২০,৪৮০ একর (৮২.৮৮ বর্গ কিলোমিটার)৷ এই রাইখালি ইউনিয়নের পাহাড় ঘেরা ছোট্ট একটি গ্রাম নারানগিরি৷
চাকমা আর মারমা অধ্যুষিত গ্রামটিতে বিপুল সংখ্যক বাঙালি অধিবাসী রয়েছে৷ বলা যায় সবাই এখানে একত্রে মিলেমিশেই বসবাস করে৷ সাম্প্রদায়িক কোন হানাহানি নেই৷
এখানকার প্রায় বেশিরভাগ বাড়িতে চাকমা মহিলারা হাতে বোনা বস্ত্র তৈরি করে৷ তৈরিকৃত বস্ত্র তারা হাটবারে রাইখালি বাজারে নিয়ে বিক্রি করে৷ পন্যের গুনগত মান ও বেশ ভাল৷
গ্রামের পাশ দিয়েই পাহাড়ের বুক চিড়ে বয়ে চলেছে লুসাইয়ের স্রোতধারা খ্যাত অনিন্দসুন্দর কর্নফুলী নদী৷ নদীর ঠিক ওপাড়েই রয়েছে বাংলাদেশের একমাত্র হোয়াইট পেপার মিল ‘ কর্নফুলী পেপারমিল ‘৷
নারানগিরির পাড় থেকে কর্নফুলি পেপার মিল
নারানগিরির পাড় থেকে কর্নফুলি পেপার মিল
নারানগিরির পাড়ে বসেই দেখাযায় এই পেপার মিল আর তার ঠিক পূর্বদিকে তাকালেই দেখা মিলে সীতা পাহাড়ের৷ কর্নফুলি নদীর তীরে দাড়ানো সুউচ্চ সীতা পাহাড়টি খুবই দর্শণীয়।
কথিত আছে রাবণের সীতা-হরণের পর রাম ও লক্ষ্মণ এই পাহাড়ে ঘাঁটি গড়ে যুদ্ধে রাবণ বধ করেন এবং সীতাকে উদ্ধার করেন। নারানগিরির পাড়ে বসেই দূর থেকে উপভোগ করা যায় সীতা পাহাড়ের সৌন্দর্য্য৷
নারানগিরিতে একটি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে ৷ ভিতরের পরিবেশটা দেখার মত সাজানো গোছানো৷ নারানগিরিতে একটি সরকারি পশুসম্পদ কার্যালয় ও আছে৷
কৃষি গবেষনা কেন্দ্রের বাগানের ছাউনিতে
কৃষি গবেষনা কেন্দ্রে
কৃষি গবেষনা কেন্দ্রের আপেল গাছের নীচে দাড়িয়ে
আছে একটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়৷ দূর দুরান্ত থেকে এখানে পড়তে আসে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী৷ নদীর কুল ঘেসা এই বিদ্যালয়ের রয়েছে একটি খেলার মাঠ৷ এলাকার সকল উৎসবের মিলনমেলা এই খেলার মাঠ৷
প্রতিবছর নির্দিষ্ট দিনে এখানে আদিবাসীদের পানি খেলা অনুষ্ঠিত হয়৷ যা এলাকার সকলে মিলে উপভোগ করে আনন্দ চিত্তে৷ মাঠের মধ্যে নৌকা তুলে তাতে পানি ভর্তি করে তরুন তরুনীরা একে অপরকে পানি ছুড়ে মারে৷ সেই সময় সামনে পড়লে আপনিও রক্ষা পাবার চান্স কম৷
কর্নফুলীর তীর ঘেসা নারানগিরি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ ক্যাম্পিং করার জন্য চমৎকার একটা জায়গা৷ চাইলে ক্যাম্পিং করে এখান থেকে সহযেই নৌকাযোগে কর্নফুলির সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে করতে কাপ্তাই চলে যাওয়া যায়৷ যাবার পথে ডলুছড়ি নেমে সেখানের সৌন্দর্য্যও উপভোগ করা যায়৷
ডলুছড়ি
ডলুছড়ি
ডলুছড়িতে নদীতে মাছ শিকার
ডলুছড়ি পার হয়ে কাপ্তাইয়ের দিকে
যাবার উপায়:
দেশের যে কোন জায়গা থেকে প্রথমে চট্টগ্রামের বদ্দারহাট বাস টার্মিনাল আসতে হবে৷ তারপর টার্মিনাল হতে বাসযোগে রওনা হয়ে চন্দ্রঘোনার লিচুবাগান নামক স্থানে নামতে হবে। বাস হতে নেমে পায়ে হেঁটে অথবা রিক্সা নিয়ে যেতে হবে মিশট ঘাট৷ ঘাটে গিয়ে নৌকা দিয়ে নদী পার হলেই পৌঁছে যাবেন নারানগিরি৷
সকাল সাড়ে ছয়টায় কামরুল ভাইয়ের ডাকে ঘুম ভাঙল৷ শুভ সকাল আন্ডার চর৷ রাতে আমি ভালমত খেয়াল করিনি, আমাদের ক্যাম্প সাইট টা আসলেই জোশ একটা জায়গায় ছিল৷ একদম নদীর কিনারায় উঁচু জায়গায়৷
আমাদের ক্যাম্প সাইট আন্ডার চর
আমাদের ক্যাম্প সাইট
শুভ সকাল আন্ডার চর
কামরুল ভাই ফজরের নামাজ আন্ডার চর বাজারের মসজিদে আদায় করে এসে আমাকে ঘুম জাগালেন৷
স্থানীয় এক চাচা বলেছিল এই চরে আগে মানুষজন খুব কম ছিল, অনেকটা লোকচক্ষুর আড়ালেই ছিল এই চর৷ খুব কম মানুষ এটা সম্পর্কে জানত বলে এটাকে আন্ধার চর বলে ডাকত তারা৷ এটা দিয়ে বোঝাত অন্ধকারে থাকা চর যার সম্পর্কে মানুষজন তেমন জানে না৷
কালের পরিক্রমায় নির্জন আর অনুকুল পরিবেশ পেয়ে বিভিন্ন পাখি এই চরে ডিম পারা শুরু করে৷ সেই থেকে এই চরকে আন্ডার চর বলে মানুষ৷ দাপ্তরিক ভাষায় অবশ্য আন্ডার চরের পরিবর্তে তারা চর আন্ডা লেখে৷
জাহাঙ্গীর ভাই সবার আগে উঠে জগিং করে পুরা চর চক্কর দিয়ে আসলেন৷ আমাদের তিনজনের শোরগোলে সুমি আপু ও উঠে গেল ঘুম থেকে৷ এলাকার একজন মুরব্বী এসে দেখে গেল আমাদের, খোঁজ নিলেন রাতে কোন সমস্যা হইছে কিনা৷ বুঝলাম গত রাতে জাহাঙ্গীর ভাইকে পুলিশ বানায়ে দেওয়াতেই এই খাতির৷
হাত মুখ ধুয়ে সবাই ফ্রেস হয়ে তাবু আর ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে নিলাম৷ গত রাতের গরুর দুধের চায়ের স্বাদটা এখনো মুখে লেগে আছে৷ আবার খেতে মন চাইল কিন্তু ক্যাম্প সাইট থেকে বাজার একটু দূর হওয়ায় আর হাতে সময় কম থাকায় খাওয়া হল না৷
সকালে ভোরে আন্ডার চর বাজার
সকালে ভোরে আন্ডার চর বাজার
কোন সমস্যা নাই চর মোন্তাজে নিশ্চই একইরকম চা পাব৷ সে আশায় সবার ভারী ব্যাকপ্যাক আর সব জিনিসপত্র নৌকায় উঠায়ে বসতেই দেখি নানার মুখ কালো৷
ঘটনা কি জিজ্ঞাসা করতেই নানা বললেন, গাঙ্গের পানি অনেক নীচে নেমে গেছে, নৌকা ঠেলা দিয়া পানিতে নামানো লাগবে নাতি৷ কি আর করা জাহাঙ্গীর ভাই, সুমি আপু আর আমাদের সব মালপত্রগুলো নৌকায় উঠায়ে দিয়ে আমি, কামরুল ভাই আর সিফাত ভাই নানার সাথে নৌকা ঠেলা শুরু করলাম৷
কিন্তু নৌকা তো নামে না, ভাল মতন ফেঁসে গেছে চরে৷ প্রচুর বল প্রয়োগ করতে হবে আমাদের নামাতে গেলে৷ আমাদের অত বল নাই তাই শ্লোগান দিয়ে নানার বল বাড়ানোর চেষ্টা করলাম সবাই৷
” শউয়ার নানা হেইয়্যো ” বলে জোড়ে ধাক্কা দিলাম সবাই, শুনে নানা নিজেই হেসে উঠল৷ নানা লোংগী গোজ মেরে নিল শেষ চেষ্টা করার জন্য আমরাও সর্ব শক্তি দিয়ে নানার সাথে ঠেলা দিলাম ” শাউয়ার নানা হেইয়্যো ” বলে৷
শেষ পর্যন্ত সবার প্রচেষ্টায় নৌকা পানিতে ভাসল৷ নানা ইঞ্জিন চালু করে টান দিলেন৷ গন্তব্য চর মোন্তাজ৷ নৌকা আন্ডার চর ছেড়ে সামনে এগিয়ে চলল৷ আমি কিছুক্ষন অপলক নয়নে আন্ডার চরের দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ চরটা ভাল লেগেছে৷
নানাকে বললাম যদি সম্ভব হয় ফিরে যাবার সময় এই চরে দিনের আলোয় একবার নেমে ঘুরে দেখতে চাই৷ নানা বলল সময় কাভার করলে চেষ্টা করবেন আবার আসতে৷
দুইপাশে সবুজ চর আর মাঝখানে সরু খাল বেয়ে এগিলে চলল আমাদের নৌকা৷ দেখতে এত সুন্দর লাগছিল বলে বোঝাতে পারব না৷
বাজার করার সময় ইমারজেন্সী হিসাবে কিছু বিস্কিট, চিপস, চনাচুর আর মুড়ি নিয়েছিলাম সাথে কচ্ছপিয়া থেকে রওনা দেবার আগে৷ মুড়ি চনাচুর চিপস গতদিন খেয়ে ফেলেছিলাম৷ বিস্কিটের প্যাকেটগুলো রয়ে গেছিল ব্যাগে৷ সুমি আপা সেগুলো বের করে সবাইকে খেতে দিলেন৷ চর মোন্তাজে না পৌঁছানো পর্যন্ত নাস্তা হবে না আমাদের৷ প্রায় ঘন্টাখানেক চলার পর আমরা চর মোন্তাজে এসে পৌঁছালাম৷
চর মোন্তাজ বাংলাদেশের পটুয়াখালী জেলার অন্তর্গত রাঙ্গাবালী উপজেলার একটি ইউনিয়ন। চর মোন্তাজ ইউনিয়নের আয়তন ৫৬৬৪ হেক্টর ( ১৩,৯৯৭ একর )৷ ২০১১ সালের আদম শুমারির তথ্য মতে চর মোন্তাজ ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা ১৯,৫৬৯ জন আর সাক্ষরতার হার ৪৩.৩%৷
নানা ঘাটে নৌকা লাগিয়ে দিতেই আমরা নেমে পড়লাম আমরা৷
আসেপাশে যে চর গুলো আছে তার মধ্যে চর মোন্তাজ সবচেয়ে বেশি পরিচিত মানুষের কাছে৷ অন্যান্য চরের চাইতে এখানে সুযোগ সুবিধাও একটু বেশি৷ মানুষ এদিকে ঘুরতে আসলে চর মোন্তাজে না নেমে যায় না৷
চর মোন্তাজে বাবুল নানার সাথে
চর মোন্তাজ যাত্রা পথে বাবুল নানা
এই চরের পরিবেশটাও সুন্দর৷ আমরা যখন চরে পা রাখি তখন অনেক নতুন ট্রলার তৈরির কাজ চলছিল চর মোন্তাজে৷
মাছ ধরার মৌসুম তাই কেউ নতুন ট্রলার বানাচ্ছে কেউ বা পুরানোটা রিপেয়ার করে নিচ্ছে গভীর সমুদ্রে গিয়ে মাছ ধরার জন্য৷ এখানে সেলফোনের নেটওয়ার্ক ভাল পাওয়ায় সবাইকে সাথে নিয়ে ফেসবুক লাইভে গেলাম৷
নানা তাগাদা দিলেন সময় কম যেতে হবে বহুদূর সেই তারুয়া দ্বীপে৷ দেরী না করে আমরা সবাই নাস্তা করার জন্য দোকানের দিকে দৌড়ালাম৷ কলা বনরুটি দিয়ে নাস্তা করলাম সবাই৷
ভেবেছিলাম গরুর দুধের চা খাব৷ কিন্তু কপাল খারাপ এইখানে গরুর দুধের চা পেলাম না৷ তাই সাধারন কনডেন্স মিল্কের চা খেতে হল৷ নানা অবশ্য আসার সময় নৌকাতে আশা দিয়েছিল গরুর দুধের চা পাবার কিন্তু পেলাম না৷
নাস্তা করে চরে বেশ কিছু সময় ঘুরে বেড়ালাম আমরা৷ নানা ডাক দিলেন নৌকায় উঠে বসতে৷
লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে৷ তাই সময় নষ্ট না করে সবাই উঠে পড়লাম নৌকায় আবার৷ নানা ইঞ্জিন চালু করে টান দিলেন নৌকা৷ গন্তব্য তারুয়া দ্বীপ।
(সমুদ্র পথে- হরিনা ঘাটা, লালদিয়ার বন, বিহঙ্গ দ্বীপ, সুন্দরবন এর কচিখালী, শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত, টেংরাগিরি ফরেস্ট, আশার চর, চর বিজয় – Victory Island, গঙ্গামতির চর, কুয়াকাটা হয়ে আবার বরগুনায় ফিরে আসা, প্রায় ২০০ + কিমি এর মতো সমুদ্র ভ্রমন)
আমাদের মাছ ধরার ট্রলার চলা শুরু করলো বলেশ্বর নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা ধরে। এর মধ্যে ক্ষুধায় পেট চো চো করছিলো। তাই ইব্রাহিম ভাই এর বাসা থেকে রান্না করে আনা মোটা চালের ভাত, আলু ভর্তা, মুরগির মাংস আর ডাল দিয়ে সবাই খাওয়া আরম্ভ করলাম। সাগরের মাঝে আমাদের কাঠের নৌকা তে দুলুনি এর সাথে খাবার বেশ এনজয় করলাম।
ঘন্টা দেড়েক চলার পর সুন্দরবন এর ডিমের চর ও পক্ষীর চর কে হাতের বাম পাশে ফেলে আমরা চলে এলাম সুপতি খাল ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা কচিখালী তে। আমাদের ফরেস্ট পারমিট ছিলো না, তাই আমরা কচিখালী খাল এ ঢুকিনি।
আস্তে আস্তে বিকেল হচ্ছিলো। আমরা তখন ছুটে চললাম সাগর পার ধরে জামতলা সী বীচ এর দিকে যতটুকু যাওয়া যায়। এরই মধ্যে আমরা বেশ কয়েক টা হরিন, বন্য শুকর, বানর দেখতে পেলাম। বক, মদন টাক সহ অসংখ্য নাম না জানা পাখিও দেখতে পেলাম।
বানর
পাখির রাজ্য
মদন টাক পাখি সম্ভবত
কচিখালী ও সুপতি এলাকা
এভাবে বেশ কিছুক্ষন যাওয়ার পর জামতলা সী বীচ এর সামনে থেকে আমরা ট্রলার ঘুরিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম। যেহেতু আমাদের ১ম রাতের বেজ ক্যাম্প হবে বিহঙ্গ দ্বীপ এ। ভাটার টান ও আরম্ভ হলো। আমাদের ট্রলার বেশ স্পীড পেলো। এরই মাঝে ফোন এর নেটওয়ার্ক পেলে আরিফ ভাই এর কল। উনি ঘাটের ওই দিকে আছেন। তাই আমরা ঘাটের দিকে চললাম। পুরো সমুদ্র ধরে ফিরে যাওয়াতে নৌকা বেশ দুলছিলো। আমরাও উপভোগ করছিলাম।
এমন সময় দূরে একটি নৌকা দেখা গেলো ইলিশ ধরার নৌকা। তো আমরা ঐ নৌকা এর দিকে ট্রলার চালাতে বললাম। কাছাকাছি আসাতে ঐ নৌকার মাঝিকে ইশারা দিলাম যে মাছ কিনবো। সেও নৌকা নিয়ে আমাদের কাছে আসলো।
এই সময় আসলে ইলিশের সীজন ছিলো না। তারপর ও জেলেকে জিজ্ঞাসা করলে বলে যে, সে কিছুক্ষন আগে এসে জাল ফেলেছে, প্রথম বারে দুই টি ইলিশ পেয়েছে। আবার জাল তুলবে একটু দেরীতে। আমাদের দেরী হচ্ছিলো। তাই ২ টি ইলিশ ই দরদাম করে কিনে নিলাম। কিনে নিয়ে প্রসেসিং করতে দিয়ে দিলাম আমাদের ট্রলার এ। যদিও রাতের খাবারে আমাদের জন্য রান্না হচ্ছিলো খিচুড়ি আর হাঁসের মাংস।
আমরা সন্ধ্যার আগে গিয়ে ঘাটে পৌছুলাম এবং আরিফ ভাই সহ ট্রলার এর আরো ১ জন লোক কে উঠিয়ে নিয়ে বিহঙ্গ দ্বীপ এর দিকে ট্রলার চালালাম।
আমরা ক্যাম্প করবো উত্তর – পূর্ব কোনে যেখানে বালির বীচ আছে। কিন্তু ভাটা এর কারনে আমাদের বোট সেদিকে যেতে পারলো না। এদিকে সন্ধ্যা হয়ে অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।
আমরা ট্রলার নিয়ে নামলাম দক্ষিন – পশ্চিম সাইডের একটি খাল এর পাড়ে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত হলো আমরা তাবু সহ অনান্য জিনিষ নিয়ে পায়ে হেটে ক্যাম্প সাইডে যাবো। এতে রাতে জঙ্গলে হাইকিং অভিজ্ঞতা টাও হয়ে যাবে। আর আমাদের ট্রলারে রান্না চলতে থাকবে। রাতে জোয়ার এলে ট্রলার ঘুড়ে আমাদের ক্যাম্প প্লেস এ আসবে।
তো আমরা তাবু, টর্চ লাইট সহ আনুষাংগিক জিনিষ পত্র নিয়ে হেটে রওনা হলাম। যদিও অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। বিহঙ্গ দ্বীপ টা খুব বেশী পুরোনো না হলেও, গাছ গাছালি, লতা পাতায় ভরপুর। আরো আছে ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এর গাছ পালা থেকে বের হয়ে আসা শ্বাস মূল। বেশ সাবধানে আমাদের পা ফেলতে হচ্ছিলো।
এই বিহঙ্গ দ্বীপ টি আসলে মূল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ। যা বলেশ্বর নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা তে অবস্থিত। এর একপাশে সুন্দরবন এর শরণখোলা রেঞ্জ এর সুপতি ও কচি খালী। অপর পাশে পাথরঘাটা ও চর দুয়ানি উপজেলা। এক পাশে ডিমের চর, পক্ষীর চর ও বঙ্গোপসাগর। যদিও এই বনে হিংস্র কোন পশু পাখি থাকার কথা না। তবে আরিফ ভাই জানালো এই বনে বন্য শুকর, শেয়াল আছে কিছু। বিষাক্ত সাপ আছে। বেজী, গুই সাপ ও আছে। কিছু দিন আগে নাকি একটি বেশ বড় অজগর সাপ ও অবমুক্ত করা হয়েছে। প্রচুর পাখিও আছে।
যাই হোক আমরা অন্ধকারে বেশ সাবধানে পা ফেলে ক্যাম্প প্লেস এর দিকে যাচ্ছিলাম। যদিও দ্বীপ টা বেশী বড় না, তারপর ও ঘুর পথে প্রায় ২ কি.মি হেটে আমরা ক্যাম্প প্লেস এ পৌছুলাম। পৌছে সবাই বালিতে বসে কিছুক্ষন আলোচনা করলাম কিভাবে কি হবে । এরপর সবাই কাজে লেগে গেলাম।
প্রথমেই ওয়াইল্ড লাইফ ক্যাম্পিং এর প্রধান শর্ত আলো এর জন্য ও হিংস্র বন্য প্রানী থেকে রক্ষা পেতে ক্যাম্প ফায়ার জালানো। তো সবাই আশে পাশে থেকে জ্বালানি হিসেবে কাঠ, ছন, পাতা, শুকনো লতা এই সব সংগ্রহ করতে শুরু করলো। মোটামুটি সংগ্রহ করা হলে এক সাইডে আগুন জালানো হলো। এদিকে জ্বালানি সংগ্রহ চলতে থাকলো। এরপর আমাদের ক্যাম্প সাজানো।
একে একে সবার তাবু সেট করা হলো বালির উপর। যদিও এক তাবুতে ২/৩ জন করে থাকতে হবে। এরপর ক্যাম্প সাইডে কার্বলিক এসিড এর বোতল রাখা হলো সাপ থেকে প্রটেকশন পেতে।
এরপর শুরু হলো ক্যাম্প ফায়ার কে ঘিরে আড্ডা। এদিকে আকাশে চাঁদটাও আজ পরিপূর্ন হয়ে উঠেছে। এই জনমানব হীন জঙ্গলে, নির্জন পরিবেশ এ শেয়াল এর ডাক, ক্যাম্প ফায়ার, তাবু, আড্ডা, গান, আহ! কেউ এই পরিবেশ এ না থাকলে তাকে কোন ভাবেই বোঝানো সম্ভব না যে ফিল টা কেমন আসে।
আমাদের আড্ডা চলতে চলতে সাগরে জোয়ার শুরু হলো। জোয়ার এর পানি প্রায় আমাদের ক্যাম্প এর কাছে চলে আসলো। আর এর সাথে সাথেই আমাদের ট্রলার ও চলে আসলো। তো ট্রলার আসলে আমরা সবাই হাটু পানি অবধি ভিজে ট্রলার এ উঠলাম।
উঠে রাতের খাবার সারলাম, হাঁসের মাংস ও খিচুড়ি দিয়ে। অসাধারন ছিলো সেই টেস্ট।
এরপর ঘুমানোর পালা। বিহঙ্গ দ্বীপ এ অজগর, শেয়াল আর বন্য শুকর এর কাহিনী শুনে কেউ কেউ তাবুতে থাকার সাহস পেলো না। কয়েকজন ট্রলার এর কেবিন এ মাঝি দের সাথে ঘুমুলো। ট্রলার এর উপর একটি তাবু সেট করে ২ জন ঘুমালো। আর আমরা যারা ক্যাম্প এ তারা তাবুতে ফিরে আসলাম। তাবুর বাইরে শুরু হলো আবার আড্ডা।
মাথার উপর পূর্ণ পূর্ণিমার চাঁদ! সাগরে জোয়ার এর গর্জন! ক্যাম্প ফায়ার! বলতে গেলে আমার লাইফের সেরা কয়েক টি মুহূর্তের এক টি। মধ্যরাতে ক্যাম্প ফায়ার টা আরেক টু ভালো ভাবে জালিয়ে দিলাম, মরে যাওয়া দুটি গাছের গুড়ি দিয়ে। এরপর ক্লান্ত চোখে তাবুতে ঢুকলাম। তাবুর চেইন লাগিয়ে গায়ে মশা না কামড়ানো এর ক্রীম ” অডোমস ” গায়ে মেখে, স্লিপিং ব্যাগ খুলে লাইফ জ্যাকেট মাথার নিচে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম . . . । ।
নৌকা চলছে জল কেটে৷ সোনার চর পার হয়ে আমরা সাগরে এসে পরলাম আবার৷ নানা বললেন নাতি মোমাদের আন্ডার চর নিয়ে যাব, জায়গাটা নিরাপদ৷ আমরা বললাম চলেন যাই৷
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতের আঁধার নেমে এল৷ মাথার উপড় একরাশ তারকারাজি৷ চাঁদ মামা হেসে চলেছে, মাঝে মাঝে মাঝে মেঘের ভিতরে হারিয়ে গিয়ে আবার বের হয়ে জানান দিচ্ছে আমি হারায়নি চিন্তা করিওনা৷
আমি নৌকার সম্মুখ ভাগে বিছানো চাটাইয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লাম৷ এ যেন কোন স্বপ্ন৷ নৌকা চলছে তার সাথে সাথে যেন চাঁদ মামাও দৌড়াচ্ছে৷ মূহুর্তের জন্য আমি আনমনা হয়ে যাই৷
কিছুক্ষন পর কামরুল ভাইয়ের ডাকে বাস্তব জগতে ফিরে আসি৷ আমাদের নৌকা সাগরের বুক চিড়ে এগিয়ে চলেছে আন্ডার চরের দিকে৷
রাতের আধারে সাগরের বুকে ভেসে থাকা মাছ ধরার ট্রলারগুলোতে হারিকেনের আলো জ্বলছিল৷ দূর থেকে দেখতে অসাধারন লাগছিল৷
রাত সাড়ে সাতটার দিকে আমরা আন্ডার চরে এসে পৌঁছালাম৷ হাপ ছেড়ে বাঁচলাম৷ সোনার চরের কাছেই বঙ্গোপসাগরে জেঁগে ওঠা এক নির্জন দ্বীপ আন্ডার চর। পুটুয়াখালীর জেলা সদর থেকে ৮০-৯০ কি. মি. দক্ষিনে রাঙ্গাবালী থানার অন্তর্গত চর মোন্তাজ ইউনিয়নের একটি ছোট্ট দ্বীপ এই আন্ডার চর৷
আন্ডার চরে পা দিয়েই খুশিতে মনটা নেচে উঠল, বাজারের দোকানগুলোতে বিজলি বাতি জ্বলতে দেখে৷ মনে মনে ভাবলাম যাক মোবাইলগুলো অন্তত চার্জ দিতে পারব৷ যদিও সাথে পাওয়ার ব্যাংক ছিল৷
চরে নামতেই এক দোকানে দেখলাম চা বানাচ্ছে দোকানি, আর দেরী না করে সবাই সেখানে দৌড়৷ আমি সচরাচর তেমন চা খাইনা৷ খুব কাছের বন্ধুদের সাথে থাকলে খাওয়া হয়৷ কিন্তু ট্রিপে বের হলে এটা আমার লাইফ লাইনে পরিণত হয়৷ চা ছাড়া আমার চলেই না৷
আন্ডার চরের মানুষ খাঁটি গরুর দুধের চা খায়, মাত্র পাঁচ টাকা প্রতি কাপ৷ কিন্তু তারা কাপের পরিবর্তে কাঁচের গ্লাসে চা পরিবেশন করে৷ স্বর পড়া গরুর দুধের মালাই চা আমার খুব প্রিয় জিনিস৷ আমরা দুই দফা চা খেলাম৷ প্রানটা জুড়িয়ে গেল একদম।
দোকানিকে বললাম মোবাইলগুলো একটু চার্জ দিব৷ হেসে বললেন এই এলাকায় বিদ্যুৎ নেই৷ সোলার দিয়ে বাতি জ্বালায় তারা৷ তবে পাশের একটা দোকান দেখিয়ে দিয়ে বললেন ঐখানে যান, ওদের আই পি এস আছে৷ চার্জ দিতে পারবেন৷ মোবাইল চার্জ দিতে গিয়ে দেখি সে দোকানে কম্পিউটার চলছে৷ বাহহহ এই দূর্গম চরেও কেউ কম্পিউটার আর নেট চালাচ্ছে দেখে বেশ ভাল লাগল৷
তরুন ছেলেটা আর তার ভাই মিলে দোকানটা চালায়৷ এখানে যে সব মাছ ধরার ট্রলার ভিড় জমায়, পয়সার বিনিময়ে সেইসব ট্রলারের জেলেদের মোবাইল চার্জ দেয় সে৷ সেইসাথে তাদের মোবাইলে গান, নাটক, সিনেমা ইত্যাদি লোড করে দেয় পয়সার বিনিময়ে৷ বেশ ভালোই ইনকাম তার প্রতিদিন৷
আমাদের দেখেই বলল চার্জ দিবেন ভাইয়া? আমরা আমাদের মোবাইলগুলো চার্জে দিয়ে চরের বাজারটা ঘুরে দেখতে লাগলাম৷ একটা মুরগির দোকান দেখে সিফাত ভাই বলল আজকে মুরগীর বার্বিকিউ করব৷ সবাই সম্মতি দিলাম৷
কিন্তু দোকান তো বন্ধ৷ এলাকার একজন বাড়ি থেকে দোকানদারকে ধরে নিয়ে আসল৷ আমরা বড় দেখে দুইটা মুরগি নিলাম৷ কিন্তু বার্বিকিউ করার নেট তো নাই৷ সিফাত ভাইকে বললাম গুনার তার দিয়ে কাজ চালায়ে দেয়া যাবে যদি পাওয়া যায়৷
এক দোকান থেকে গুনার তার কিনে নিলাম৷ বাজারের সবাই বেশ কৌতুহলী দৃষ্টিতে আমাদের দেখছিল৷ মুরব্বীদের মনে হাজারটা প্রশ্ন সুমি আপুকে নিয়ে৷ একটা মেয়ে হয়ে এতগুলো ছেলের সাথে একা এসেছে৷ এটা তারা ভাল দৃষ্টিতে দেখছিলেন না৷ বিষয়টা দৃষ্টি এড়াল না৷ জাহাঙ্গীর ভাইকে বললাম৷ তিনিও একটু চিন্তায় পড়ে গেলেন৷
সিফাত ভাই সুমি আপু আর কামরুল ভাইকে নিয়ে বাবুল নানার পিছে পিছে গেল ক্যাম্পিং সাইট দেখতে৷ বাবুল নানা বললেন পশ্চিম দিকে নদীর পাড়ে বেশ সুন্দর একটা জায়গা আছে ক্যাম্পিং করার জন্য৷ সবাই নৌকায় উঠে সেদিকেই চলে গেল৷
আমি আর জাহাঙ্গীর ভাই বাজারে থেকে গেলাম৷ মোবাইলগুলো চার্জ হলে সেগুলো নিয়ে আমরা ফিরে যাব৷ বাজারে চক্কর দিতে লাগলাম আমরা৷ আমারা আবার গেলাম সেই চা দোকানে৷ স্থানীয় মানুষগুলোর সাথে ভাব জমানোর ঐটাই মোক্ষম জায়গা৷
দোকানে ঢুকে চা অর্ডার করলাম৷ স্থানীয় এক মুরব্বী এবার বলেই বসলেন, ঐ মেয়ে আপনাদের কি হয়? এতগুলো ছেলের সাথে একা চলে আসছে৷ মনে মনে এটাই শুনতে চেয়েছিলাম কারো আছে৷ বিষয়টা তাদের ক্লিয়ার করা দরকার৷ নাহলে সমস্যা হতে পারে৷
চাচাকে বললাম আমার চাচাতো বোন৷ আসতে চেয়েছে তাই সাথে নিয়ে আসলাম৷ জাহাঙ্গীর ভাই ও মাথা নাড়ালেন৷ চাচা বললেন একা একটা মেয়ে এভাবে আনা ঠিক হয় নাই, আপনারা কাজটা ভাল করেন নাই৷ বললাম ওর বাবা পুলিশের বড় অফিসার৷ উনি জানেন তার মেয়ে কোথায় কার সাথে যায় কি কি করে৷ এবার চাচা একটু নরম হয়ে গেল সেই সাথে পাশের উৎসুক জনতাও৷
জাহাঙ্গীর ভাই কানে কানে বললেন জায়গামতন মেরে দিছেন বদ্দা৷ দোকানি চা দিল৷ আড্ডা জমে গেল৷ একে একে সবার সাথে পরিচিত হলাম আমরা৷ নিজেকে হাইকোর্টের আইনজীবী বানিয়ে ফেললাম আর জাহাঙ্গীর ভাই বেশ লম্বা চওড়া মানুষ সেই সাথে সুদর্শনও বটে, তাকে পুলিশের এসআই বলে পরিচয় করায়ে দিলাম সবার সাথে৷ এবার খাতির যত্ন আরো বেড়ে গেল আমাদের৷
ঐ চাচাও বললেন কোন সমস্যা নাই, এলাকা ভাল নিজেদের মতন থাকেন৷ কিছু লাগলে জানাইয়েন৷ জাহাঙ্গীর ভাই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেন৷ মনে মনে বললাম ঠেলার নাম বাবাজি শুধু জায়গা মত দিতে পারলেই মমলা খতম৷
চায়ের চুমুকের সাথে আড্ডার সময় বেড়ে চলল৷ তাদের নানান ধরনের প্রশ্ন আর কৌতুহল আমাদের ঘুরেবেড়ানো নিয়ে৷ একে একে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে চললাম দুইজনে সমান তালে৷
চায়ের দোকান থেকে বের হয়ে চরের চারপাশটা একটু ঘুরে দেখলাম জাহাঙ্গীর ভাইকে নিয়ে৷ একটু পূর্বদিকে গিয়ে একটা মাদ্রাসাও দেখলাম৷ এরপর পশ্চিম দিকে একটু আগাতেই চর আন্ডা যুব ক্লাব দেখতে পেলাম৷ বাহ এই চরে ক্লাব ও আছে৷
দরজা খোলা দেখে ঢুকে পড়লাম৷ অল্প সময় কাটানো যাবে৷ ভিতরে কয়েকজন তরুন ক্যারাম খেলছিল৷ আমরা বাইরে থেকে এসেছি বুঝতে পেরে স্বাগতম জানাল৷ ছোট চর এখানের প্রত্যেকে প্রত্যেককে চিনে৷ বাইরে থেকে নতুন কেউ এলে তারা বুঝতে পারে৷ পরিচিত হয়ে তাদের সাথে সময় কাটাতে লাগলাম৷
জাহাঙ্গীর ভাই খুব ভাল ক্যারাম খেলে৷ এক তরুন তাকে খেলার অফার করল৷ ভাই রাজি হয়ে গেলেন৷ আমি নিরব দর্শকের মতন খেলা দেখতে লাগলাম৷ কিছুক্ষন পর বাবুল নানা এসে উপস্থিত৷ আমাদের নিয়ে যেতে এসেছেন ক্যাম্প সাইটে৷
খবর দিল সিফাত ভাই, কামরুল ভাই আর নানা মিলে সব তাবু সেট করে ফেলছে৷ আমাদের আর চিন্তা নাই বাহহহ৷ ক্লাবে উপস্থিত সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চার্জে দেয়া মোবাইল গুলো বুঝে নিয়ে রাতের আঁধারে নানার পিছে পিছে চরের পশ্চিম দিকে ক্যাম্প সাইটের দিকে আগাতে লাগলাম৷ কুয়াশায় কিছুই ভালমতো দেখা যাচ্ছিল না৷
আন্ডার চরে কুয়াশার চাদরে ঘেরা আমাদের ক্যাম্প সাইট
আন্ডার চরে কুয়াশার চাদরে ঘেরা আমাদের ক্যাম্প সাইট
ক্যাম্প সাইটে আমরা
একদম কাছে গিয়ে টের পেলাম ক্যাম্প ফায়ারে লাকড়ি জ্বলছে আর তাবু গুলো নিজের পায়ে দাড়িয়ে আছে৷ সিফাত ভাই বার্বিকিউর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সুমি আপু আর কামরুল ভাই তাকে সাহায্য করছেন৷ ভাগ্য ভাল সোনার চরের কিছু লাকড়ি সাথে করে নিয়ে এসেছিলাম৷ যে জায়গায় ক্যাম্প সাইট আশেপাশে লাকড়ির বালাই নেই৷
আমরা গুনা দিয়ে নেট বানাতে পারিনি তাই গুনায় বেঁধে ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে বার্বিকিউ করলাম৷ আমার গুনার আইডিয়া টা বৃথা যায় নাই শেষ পর্যন্ত৷ সেই রাতে খাবার তৈরি হতে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিল৷ নানা তার ছোট্ট নাতি ইকবালকে নিয়ে নৌকার সম্মুখে মাদুরা পেতে ঘুমিয়ে গিয়েছিল৷
খাবার রেডি হলে রাত একটার টার দিকে আমি আর কামরুল ভাই নানাকে আর ইকবালকে ডেকে নিয়ে আসলাম৷ আমাদের ইনস্যুলেশান ম্যাটগুলো লইন ধরে বিছিয়ে দিয়ে সবাই একসাথে খেতে বসলাম৷ খাবারটা বেশ ছিল৷ সিফাত ভাই, সুমি আপু অনেক কষ্ট করেছে, জাহাঙ্গীর ভাই আগুনের তাপে হাত পুড়িয়েছে বার্বিকিউ করার সময়৷ একটু দেড়ী হলেও নানা নাতি ভালমত পেট ভরে খেয়েছে৷
খাবার পর নানা আধোয়া হাড়ি পাতিল সব নৌকায় তুলে রেখে নাতিকে নিয়ে শুয়ে পড়লেন আবার৷ আমাদের তো চোখে ঘুম নাই৷ সিফাতভাই ব্যাগ থেকে ফানুস বের করে নিয়ে আসলেন৷ উড়ানের সময় দেখি একদিকে একটু ছেড়া৷ সিফাত ভাই সেটা রিপেয়ার করলেন৷ সবাই মিলে মনের আনন্দে ফানুস উড়ালাম আন্ডার চরে।
ফানুষ টা বেশ ভালোই উপড়ে উঠেছিল৷ শেষ পর্যন্ত বেশ কিছুক্ষন উড়ে তা নদীর ওপারে চরে গিয়ে পড়েছিল৷ আমরা সবাই যার যার তাবুতে গিয়ে শুয়ে পড়লাম৷ শোবার আগে নিরাপত্তার জন্য আমাদের সবার তাবু চারপাশে দিয়ে সুমি আপুর তাবু টা মাঝখানে দিলাম৷
সিফাত ভাইয়ের তাবু আর সুমি তাবুর দরজা মুখোমুখী করে দিলাম যাতে সমস্যা হলে সাথে সাথে রেসপন্স করতে পারে৷ রাত বাড়ছে সেই সাথে শিয়ালের হাক ডাক৷ তাবুর ভিতরে স্লীপিং ব্যাগের ভিতরে শুয়ে চোখটা বন্ধ করলেও সহসা ঘুম আসল না৷ একটু দেড়ী হয়েছিল ঘুম আসতে৷
ঘুম আসার আগ পর্যন্ত আমি আর সিফাত ভাই তাবুর দরজা হালকা খোলা রেখে গল্প করছিলাম৷ সুমি আপুকে নগদে পুলিশের মেয়ে আর জাহাঙ্গীর ভাইকে এস আই বানানোর গল্প শুনে সিফাত ভাইয়ের হাসি আর থামে না৷ আমাদের হাসাহাসিতে আরেক তাবুর ভিতর থেকে কামরুল ভাই আর জাহাঙ্গীর ভাইও হেসে উঠল ৷ কখন যে ঘুমিয়েছিলাম ঠিক মনে নাই৷
(সমুদ্র পথে- হরিনা ঘাটা, লালদিয়ার বন, বিহঙ্গ দ্বীপ , সুন্দরবন এর কচিখালী, শুভ সন্ধ্যা সমুদ্র সৈকত, টেংরাগিরি ফরেস্ট, আশার চর, চর বিজয় – Victory Island, গঙ্গামতির চর, কুয়াকাটা হয়ে আবার বরগুনায় ফিরে আসা, প্রায় ২০০ + কিমি এর মতো সমুদ্র ভ্রমন)
গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারী আমরা শুরু করেছিলাম আমাদের এই এ্যাডভেঞ্চার ট্রিপ টি । বেশ কিছুদিন আগেই গ্রুপ ইভেন্ট ক্রিয়েট করা হয়েছিলো । যেহেতু মিড লেভেল এ্যাডভেঞ্চার ট্রিপ ছিলো তাই গ্রুপ সাইজ ছোট ছিলো ।
সাকুল্যে ২৫ জন এর মতো আমরা রেজিঃস্ট্রেশন নিয়েছিলাম। বলা বাহুল্য আমাদের ইভেন্ট গুলোতে ইভেন্ট ঘোষণা করতে দেরী হয় , কিন্তু সিট ফিলাপ প্রায় সাথে সাথেই হয়ে যায় । কারন বছরে আমরা ২ থেকে ৩ টি ট্রিপ করি। আর আমাদের প্রায় প্রতিটি ট্রিপ ই হয় অনেকটা অচেনা ও ভিন্ন পথে । উপকূলীয় আন এক্সপ্লোর বিউটি গুলো আমরা উপভোগ করতে চেস্টা করি সব সময় । এই ট্রিপ গুলোতে যেহেতু রিমোর্ট এরিয়ায় বিভিন্ন প্রতিকুল পরিবেশ থাকে তাই সিট সংখ্যা লিমিটেড রাখতে হয়।
যাই হোক রাস্তায় জ্যাম জনিত জটিলতায় ও বিভিন্ন সীমাবদ্ধতায় শেষ মুহূর্তে আমাদের এই ট্রিপে ১৫/১৭ জন এর মতো ছিলাম বোধহয় । সেদিন ছিলো ৩ দিন এর বন্ধ শুরু। তাই আমি আগে ভাগেই অফিস থেকে বের হয়ে উবার এর বাইকে রওনা দিলাম সদরঘাট এর পথে । সন্ধ্যায় ৬ টায় আমাদের লঞ্চ ছাড়বে এম ভি পূবালী ১ । সদরঘাট পৌছেই দেখি মোটামুটি অনেকেই চলে এসেছে । এর মধ্যে আমাদের ট্রিপ এর ব্যানার আনা হলো , টি শার্ট দেয়া হলো সবাইকে (যারা এসে পৌছেছে আর কি) । এরপর পরিচয় পর্ব ও ফটোসেশন শেষ এ লঞ্চ ছাড়ার সময় হয়ে গেলো । আর আমাদের লঞ্চ ও ছেড়ে দিলো ।
বাই দ্যা ওয়ে এর মধ্যে আমাদের রমজান ভাই চলে আসলেও, তার বন্ধু আবিদ ভাই এখনো এসে পৌছে নি । তাই সে রয়ে গেলো , বরিশাল হয়ে আসবে বলে। ওয়েদার টা সেদিন বেশ ভালোই ছিলো । ঘাট ছেড়ে বের হয়েই পূবালী ১ তার স্বভাব সুলভ গতিতে ছুটে চললো ।
লঞ্চ ছেড়ে দেয়ার পরই নিচে চলে গেলাম চা খেয়ে উঠে গেলাম ছাদে । এক ধাপ আড্ডা চললো বেশ খানিক ক্ষন । চাঁদপুর এর কাছাকাছি আসার পর নিচে চলে এলাম । এরই মাঝে রমজান ভাই ফোন করে জানালো তারা দুই জন এম ভি পারাবত ১২ তে উঠেছে । আমরা ছিলাম ডেক শ্রেনীর যাত্রী , লঞ্চ এর ২য় তলার সামনের ডেক এ আমরা অবস্থান নিয়েছিলাম। তো এর পর খাওয়া দাওয়ার পালা। লঞ্চ এর ডেক এর রেস্টুরেন্ট এ প্রি সেট মেনু তে খাওয়া দাওয়া সম্পন্ন করে যারা ঘুমুবে তারা ঘুমুতে গেলো । আর আমরা আবার গেলাম ছাদ এ ।
চললো রাত ভর আড্ডা, আকাশে চাঁদ মোটামুটি বড় ছিলো। পূর্ণিমার আশে পাশে কোন এক তারিখ ছিলো সম্ভবত । আশে পাশে কোন নৌযান নেই, মেঘনার জলে চাঁদের আলোর রিফ্লেক্ট এর সাথে সাথে হালের পানি কাটার শব্দ , বেশ ভালোই লাগছিলো।
আমরা মাঝের চর পার হয়ে হিজলার কাছাকাছি , তখন দক্ষিন অঞ্চল থেকে ফিরতি লঞ্চ গুলোর লাইন ধরে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছুটে চলা বহর শুরু হলো। কিছু ক্ষন লঞ্চ ফ্যানিং চললো, এরপর লঞ্চ ঢুকে গেলো মিয়ার চর হয়ে কালাবদর নদীতে। দেখতে দেখতে চলে এলাম চরমোনাই এবং রাত আনুমানিক ২ টার দিকে বরিশাল এ ঘাট করলো লঞ্চ । এ সময় ভোলা থেকে আগত আজাদ ভাই ও স্বরূপকাঠি থেকে রিয়াদ ও রিয়াদের এক বন্ধু এই মধ্য রাতে আমাদের সাথে যোগ দিলো ।
তাদের রিসিভ করে আমাদের জায়গায় এনে ঘুমানোর ব্যাবস্থা করে দেয়া হলো । এরপর আমাদের শুরু হলো ঘাট গোনার পালা। অর্থাৎ স্বভাব সুলভ বরগুনার লঞ্চ এক টি একটি করে ঘাট প্লেস করা শুরু করলো, আমরাও লঞ্চ থেকে যাত্রী উঠা নামা ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতি দেখতে লাগলাম ।
নদীতে বেশ কুয়াশা ছিলো , তাই বেশ ধীর গতিতেই চলছিলো লঞ্চ । ভোর হওয়ার কিছু আগে পেছন থেকে লোকাল ট্রিপ এ ছেড়ে আসা এম ভি যুবরাজ ৪ লঞ্চ এর আগ্রাসন লক্ষ করা গেলো । কিছুক্ষন পাশাপাশি চালিয়ে পূবালী ১ ঘাট ধরার জন্য ডানে চেপে গেলেও, রাডার ও জিপিএস বিহীন যুবরাজ ৪ ঘাট খুজে পাচ্ছিলো না । সে ডানে বায়ে করতে করতেই পুবালীর সার্চ লাইট ধরে এগিয়ে এসে ঘাট করলো, আমরাও ঘাট ছেড়ে বেরিয়ে এগিয়ে চললাম ।
এভাবে সকাল ৭ টার কিছু আগে আমরা আমাদের গন্তব্য কাকচিড়া ঘাটে এসে পৌছুলাম। সবাই আগেই রেডী ছিলাম। তাই ঘাট ধরা মাত্রই আমরা সবাই লঞ্চ থেকে নেমে গেলাম। লঞ্চ থেকে নেমে সবাই এক জায়গায় দাঁড়ালো। আমি ২ টি মাহেন্দ্র (অটো) কথা বলে ঠিক করলাম আমাদের পরবর্তী ডেস্টিনেশন এর জন্য । কাকচিড়া থেকে আমাদের সাথে বেলাল ভাই সম্ভবত যোগ হয়েছিলেন ।
আমাদের অটো বা মাহেন্দ্র ছুটে চললো পাথরঘাটা এর উদ্দেশ্যে। পাথরঘাটা বাজারে আমরা নাস্তা করলাম । চা খেলাম । এরপর আমরা ছুটে চললাম হরিনা ঘাটা এর পানে। বলে রাখি হরিনাঘাটা একটা সংরক্ষিত বনাঞ্চল এরিয়া।
এখানে ওয়াচ টাওয়ার,ঘন বন, ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে প্রায় ২ কিমি লম্বা কাঠের ট্রেইল আছে । যা বিষখালী নদী ও বঙ্গোপসাগর এর বুকে গিয়ে শেষ হয়েছে ।
এখান থেকে নেমে কিছু দূর হাটলেই লালদিয়ার চর ও লালদিয়ার বন । এখান থেকেই সাগর শুরু । লালদিয়ার শেষ মাথার সৌন্দর্য আসলে না দেখে বিশ্বাস করানো যাবে না।
আমরা হরিনাঘাটা চলে আসলাম । এখানে ফরেস্ট অফিসে আরিফ ভাই কথা বলে রেখেছিলো , তাই আমরা সরাসরি ভেতরে ঢুকে গেলাম। আমাদের রিজার্ভ করা ট্রলার টি এখানেই অপেক্ষা করতেছিলো । আমাদের ব্যাগ /ব্যাগেজ সব ট্রলার এ রেখে , আমরা চলে গেলাম ওয়াচ টাওয়ার এর দিকে।
ওয়াচ টাওয়ার এ কিছুক্ষন থেকে আবার নেমে এলাম। এবার জাকারিয়া ভাই কে টিম এর দায়িত্ব দিয়ে , আমি আর টিটু ভাই চলে আসলাম পাথরঘাটা বাজারে । উদ্দেশ্য আমাদের ৩ দিন এর বাজার সদাই করতে ও ঢাকা থেকে আগত রমজান ভাই ও আবিদ ভাই কে রিসিভ করতে।
এদিকে জাকারিয়া ভাই তাদের নিয়ে লালদিয়ার বন সহ আশেপাশে এক্সপ্লোর করতে করতে , আমি, টিটু ভাই ও আমাদের একজন হেল্পিং হ্যান্ড ইব্রাহিম ভাই মিলে বাজার করলাম ৩ দিন এর । চাল, ডাল, মশলা, হাস, মুরগি, ডিম সবই কেনা হলো। এরই মধ্যে বহু পথ বাই রোডে পারি দিয়ে , অনেক কস্ট সহ্য করে রমজান ভাই ও আবিদ ভাই চলে আসলো পাথর ঘাটায়। আমরা ৫ জন বাই রোডে রওনা হলাম পাথরঘাটার অদূরে ইব্রাহিম ভাই এর বাড়িতে। সেখানে আমাদের দুপুরের খাবার রান্না হবে। আমরা সেই বাড়িতে পৌছুলাম এবং হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেস হলাম । রান্না শেষ হলো ।
এরই মাঝে জাকারিয়া ভাই কে ফোন দিচ্ছিলাম । যদিও ফোন এর নেটওয়ার্ক ছিলো না ওদের । তারপর একবার কানেকশন পেয়েই বলে দিলাম , সবাইকে সহ ট্রলার নিয়ে , ইব্রাহিম ভাই এর বাড়ির পেছনের ঘাটে আসতে । এর মধ্যে আমাদের বরগুনার সবার পরিচিত সাংবাদিক প্রিয় আরিফ ভাই কে বার বার ফোন দিচ্ছিলাম আমাদের সাথে জয়েন করার কথা উনার । কিন্তু কোন এক ঝামেলায় উনার দেরী হচ্ছিলো ।
আমাদের টিম এর মধ্যে আরো ২ টি নাম না জানা সুন্দর সৈকত ও ম্যানগ্রোভ বন এ নেমে, ট্রলার এ করে আমাদের কাছে চলে আসলো । আমরাও আর দেরী না করে রান্না খাবার দাবার, বাজার পত্র সহ দৌড়ে উঠে গেলাম ট্রলার এ ।
ট্রলার ছুটে চললো বলেশ্বর নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা ধরে সুন্দরবন এর কচিখালী এর উদ্দেশ্যে । আমাদের প্রায় ২০০ কিমি এর মতো মাছ ধরার নৌকায় সমুদ্র অভিযান ও শুরু হয়ে গেলো ।।
মারায়ন তং এ ক্যাম্পিং, আলীরগুহা, দামতুয়া ঝর্ণা, ডিম পাহাড় ভ্রমন
পর্ব: ০১
আমার বিশ্বাস, ইচ্ছেশক্তি থাকলে বহুদিনের লালিত স্বপ্ন একটা সময় এসে আসলেই সত্যি হয়ে যায়।
বলছিলাম আমার প্রথম পাহাড় ভ্রমণ মারায়ন তং ভ্রমণের কথা। সময়টা ছিলো গতবছর(২০১৯) রমজানের ঈদের ৩য় দিন। তারিখ ছিলো ০৭ জুন (শুক্রবার)।
সত্যি বলতে ছোটবেলা থেকেই অনেকটা রক্ষণশীল পরিবারে বড় হওয়ার কারণে ঘরের বাইরে তেমন করে বের হওয়া হয়নি বললেই চলে। এইসএসসির পর শহরে এসে টুকিটাকি ঘুরেছি কক্সবাজার, সেন্টমার্টিনে ও বান্দরবানের কমন প্লেস গুলোতে। সমুদ্র ভিষণ ভালো লাগে আমার, যদিও এখন পাহাড়ই প্রথম পছন্দ।
ক্যালেন্ডারের ছবিতে অথবা মুভির সিনে পাহাড় দেখতাম। তখনও সেভাবে পাহাড়ের প্রতি আগ্রহ ছিলো না। কিংবা, ভ্রমণও যে একটা মানুষের নেশা হতে পারে তা কল্পনাতেই ছিলোনা। কিন্তু, ধীরে ধীরে আমার পাহাড়ের প্রতি আগ্রহ বাড়তে লাগলো। আমার ফ্রেন্ড কামরুলের প্রোফাইলে প্রায়ই দেখতাম বিভিন্ন পাহাড় এবং ঝর্ণার ছবি।
আমি দেখে অনুপ্রাণিত হতাম আর মনে মনে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করতাম। তাকে (কামরুলকে) একদিন বললাম পরবর্তী ট্যুর প্লান করলে আমাকে যাতে জানায়। এর মধ্যেই বেশ কয়েকবার তারা ট্যুর প্লান করে ঘুরেও এসেছে। প্রতিবারই আমাকে জানালেও বিভিন্ন কারণে আমার আর যাওয়া হলো না।
অতঃপর গত রমজানের পর ঈদের ৩য় দিন আমরা বান্দরবানের মারায়ং তং এ যাবো বলে ঠিক হলো। রমজানের শেষের দিকে আমার ভিষণ জ্বর ছিলো, তাই একটু ভয়ে ছিলাম যেতে পারবো কিনা।
দিনটা ছিলো শুক্রবার। ট্যুরে যাওয়ার প্ল্যান থাকায় আমি সেদিন দুপুরের মধ্যেই মোটামুটি ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। রাতের গাড়ি, তাই খুব তাড়া নেই। আমি, কামরুল আর ভাগিনা হাবিব ছাড়া বাকি সবাই ঢাকা থেকে আসবে। ঈদের ছুটিতে কামরুলও গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুরে ছিলো। রাত ১০ টায় ঢাকা থেকে গাড়ি ছেড়েছে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে। ফেনী থেকে গাড়িতে উঠবো আমরা।
হাবিব খুবই ভালো ছেলে। শুধু প্রশ্ন একটু বেশি করে আর কি। আমরা ০৩ জন রাতের খাবার খেয়ে নিলাম, সাথে মোবাইল গুলোও চার্জ করে নিলাম খাবার হোটেল থেকে। রাত প্রায় ০২ টার পর আমাদের গাড়ি ফেনী পৌঁছালো। আমরা গাড়িতে উঠতেই আবার টান দিলো গাড়ি। সিটে বসে রিলাক্স লাগছিলো। রাত সাড়ে তিনটায় গাড়ি চকরিয়াতে এসে যাত্রা বিরতি দিলো। সবাই নেমে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম।
সেখানেই একে একে আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো কামরুল। আমরা মোট ১৩ জন ছিলাম। শাহিন ভাই, অনিক ভাই, এ্যানি , শারমিন আপু, রুহুল ভাই, আরমান ভাই, শাহেদ ভাই, হাবিব (শারমিন আপুর ভাগিনা লাগে সুতরাং আমাদেরও ভাগিনা), এফএম মাহবুব, প্রদীপ ভাই , আমি, কামরুল এবং আরও একজন ভাই ছিলো এখন নাম মনে পড়ছে না। খাওয়া শেষে সবাই গাড়িতে উঠলাম। গন্তব্য আলীকদম।
ভোর ০৫ টায় আমরা আলীকদমের প্রায় কাছাকাছি এলাম। সেখানে কিছু লোক নেমে গেলো। এবার পুরো বাসে আমরা ছাড়া আর কেউ নেই। রাত থাকার কারণে এতোক্ষন পর্যন্ত কিছুই দেখা যায় নি। কিন্তু, ভোরের সোনালী আলো ফুটতেই দেখতে পেলাম বান্দরবানের আসল সৌন্দর্য।
বিশাল সব আকাশচুম্বী পাহাড়ের সাথে শুভ্র মেঘের খেলা আমার রাতের সব ক্লান্তি ভুলিয়ে দিলো। বাস চলছে। আমি জানালা দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছি দূরের পাহাড়ের দিকে, যেখানে আকাশের সাথে পাহাড়ের মাথা লেগে আছে। মেঘ গুলো হাত দিয়ে ছোঁয়া যায়।
গাড়ি যতই সামনে এগুতে লাগলো ততই রাস্তা গুলো সরু থেকে আরও বেশি সরু হতে লাগলো। উঁচু-নিচু, আঁকা-বাঁকা পাহাড়ী রাস্তা। আমি এর আগেও বান্দরবান এসেছি, কিন্তু এতো সৌন্দর্য তখন মনে হয় খেয়াল করিনি।
আলীকদমের পথে, ছবি – ইসমাঈল হোসেন ফয়সাল
আলীকদমের পথে, ছবি – ইসমাঈল হোসেন ফয়সাল
আমি অবাক দৃষ্টিতে দেখছি এবং মনে মনে কিছুটা ভয় ও পাচ্ছি এমন উঁচু আর সরু রাস্তা দেখে। কিছুদূর যেতেই দেখলাম পাহাড়ের খুব গভীরে নিচুতে একটি বিশাল মালবাহী ট্রাক উল্টে পড়ে আছে। কিছুদিন আগেই নাকি এটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে পড়ে গিয়েছিল। আমার ভয় আরও বেড়ে গেলো। ভয় আর সৌন্দর্যের দেখার আনন্দের মাঝামাঝি তে কিছুক্ষণের জন্য আমি কেমন উদাস বনে গেলাম।
সকাল ০৬ টায় ইয়াংচা বাজারের আর্মি চেক পোস্টের সামনে এসে আমাদের বাস থামলো। ০৭ টার আগে কোনো গাড়ি সামনে যাওয়ার অনুমতি নেই। তাই আমরা সবাই কিছুসময়ের জন্য বাস থেকে বাজারে নেমেছিলাম।
এতো সকালে তখনও দুই/একটা ছোট খাবার হোটেল ছাড়া আর কিছুই খোলেনি। বাজারে মোটামুটি অনেক গুলো দোকান এবং ছোট একটি মসজিদ আছে। মসজিদের গাছে অনেক কাঁচা আম আর আমড়া ধরেছিলো।
শাহিন ভাই, আরমান ভাই, অনিক ভাই সহ আরও কয়েকজন সেখান থেকে কিছু কাঁচা আম আর আমড়া পেড়ে সবাইকে দিলো। ওখানের মানুষগুলো খুবই সহজ সরল, কেউ তেমন কিছু বললো না আমাদের।
আমি বেশ কয়েকবার বাজারের নামটা পড়ে মনে রাখার চেষ্টা করছিলাম। ইয়াংছা বাজার, ইয়াংছা বাজার। বারবার নাম পড়া দেখে কামরুল হাসছিলো। বাজারের মাথায় মোটামুটি মাঝারি একটা লোহার ব্রীজ।
ব্রীজের উপর দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। ততক্ষণে গাড়ি ছাড়ার অনুমতি পেলাম। প্রায় ০৯ টার দিকে আমরা আলীকদম বাস স্টেন্ডে পৌঁছালাম।
প্রতিশোধ নিতে গিয়ে নিজেকে আঘাত করোনা ,
কি লাভ !
ছেড়ে দাও , ঘুরতে দাও তাকে বর্তুলাকার কক্ষপথে !
কক্ষ্যচ্যূত দ্বাদশ উল্কা হয়ে ঝরে যেতে দাও ,
চিরতরে !
লাটিম কখোনো সরলপথে চলেছে ,
দেখেছো ?
আবারো মেলা বসবে ,
যে সওদা করার সে করবেই সওদা – বর্ণিল ফানুস !
তুমি বরং সাদাকালো হয়ে , মাটি কামড়ানো ঐ
ওলকচুর মতোই পড়ে থাকোনা !
নিজেকে ভালোবাসো ,
ভালোবাসার পাশে প্রতিশোধ শব্দটা বেমানান ।
নিজের অলিন্দে ঠাঁই দেয়া অবয়বটাকে
নি:শর্ত ক্ষমা করে দিতে শেখাটাও
একটা নিদারুণ প্রতিশোধ !
আমি শব্দচাষী। পরিত্যক্ত এক নিষিদ্ধ কবি। কবিতার ক্যানভাসে প্রেম পুজো করি। দিবে কিছু শব্দ ??। তোমার নষ্ট হয়ে যাওয়া পরিত্যক্ত আবেগগুলো থেকে। দিবে; অবিশ্বাসের গন্ধ লাগা নষ্ট শব্দগুলো??।
কাব্য লিখব একটা, গল্প বানাব নতুন ।সংসার পাতব বিশ্বাসের । দিবে তুমি ? দিবে কিছু পরিত্যক্ত শব্দ………
কুকরি মুকরি ছেড়ে আমরা এগিয়ে চলেছি৷ ঘন্টাখানেক চলার পর আমরা সাগরে এসে পড়লাম৷
এবার নানার বোট চালাতে একটু সমস্যা হচ্ছে, আজ বাতাস একটু বেশি, ঢেউ ও বেশ ভাল সাগরে৷ চলতে চলতে এমন জায়গায় এসে পৌঁছেছি যে দুইপাশে আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না মাছ ধরার কিছু নৌকা ছাড়া৷
প্রায় দুপুর হয়ে এল, এবার খাবারের আয়োজন শুরু করতে হবে৷ নানা হাঁড়ি পাতিল সব বের করে দিয়ে নৌকায় চুলা জ্বালিয়ে দিয়ে নৌকার হাল ধরলেন৷
সিফাত ভাই তার স্পেশাল খিচুরী রান্না শুরু করল৷ বাতাস বেশি হওয়াতে রান্না করতে বেশ অসুবিধা হচ্ছিল৷ আমরা সবাই মিলে কাটাকুটি করে হেল্প করলাম৷
চুলায় রান্না বসাতে বসাতে কামরুল ভাই আর জাহাঙ্গীর ভাই গামলায় মুড়ি আর চনাচুর মিশিয়ে রেডি করে ফেললেন৷ সিফাত ভাই সব গুছিয়ে চুলায় খিচুরীর হাঁড়ি বসিয়ে দেবার পর সবাই মিলে মুড়ি চনাচুর খেতে শুরু করলাম৷
যাত্রা পথে বেশ কয়েকটা জেলে নৌকায় ঢু মারলাম তাজা ইলিশ মাছ কেনার জন্য৷ শেষে ছোট একটা জেলে নৌকা থেকে পছন্দমত তাজা ইলিশ কিনে নিলাম৷ গরম খিচুরী দিয়ে টাটকা ইলিশ ভাজা খেতে বেশ ভাল লাগবে৷
মাছ কেনার পর সুমি আপু রান্নার কাজ শুরু করল, মাছ দুই আইটেমের বানাবেন আপু একটা ফ্রাই আইটেম, আরেকটা ঝোল দিয়ে করবেন৷
উত্তাল সাগরে লাফিয়ে লাফিয়ে চলছিল নৌকা৷ মাছ কাটতে আমাদের সমস্যা হচ্ছিল৷ নানা তার সঙ্গী ছোট্ট নাতিকে নৌকার হাল ধরিয়ে দিয়ে আমাদের মাছ কেটে ভালমত ধুয়ে রান্নার জন্য রেডি করে দিলেন৷ সুমি আপু এবার রান্না করা শুরু করলেন৷ তীব্র হাওয়ায় রান্না হতে অনেক সময় লাগছিল৷ কিছু করার নেই আমাদের৷
আরও ঘন্টা দুয়েকের মত চলার পর আমরা সাগর ছেড়ে তীরে ভিড়লাম৷ এবার সরু চ্যানেল ধরে আমাদের নৌকা সোনার চরের প্রবেশ দ্বারে ঢুকে পড়ল৷
সোনার চর যাবার পথে
সোনার চর যাবার পথে
সোনার চর যাবার পথে এমন দৃশ্য দেখবেন হরহামেশাই
দুইপাশে সবুজের আনাগোনা৷ নদীর দুই পাড়ে সুন্দরবনের মত বড় বড় শ্বাসমূলের ছড়াছড়ি৷ আমাদের নৌকা বনবিভাগের কার্যালয়ের সামনে এসে পৌঁছাল৷
বন বিভাগের নৌকা ঘাট
বন বিভাগের অফিস
সোনার চরে থাকতে হলে বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে৷ আমরা অনুমতি নিয়ে সোনার চরের দিকে যাত্রা শুরু করলাম৷ এর মধ্যে সুমি আপুর ইলিশ মাছ রান্না হয়ে গেছে৷ ইলিশের গন্ধে পুরো নৌকা ছেয়ে গেছে৷
নৌকা এগিয়ে চলেছে সোনার চরের দিকে৷ মিনিট বিশেক পর আমরা সোনার চরে পৌঁছে গেলাম৷ বাংলাদেশের অপার এক সৌন্দর্যের নাম সোনার চর।
সোনার চর এর ঘাটে
সোনার চর
সোনার চর
সোনার চর যাবার পথে এমন দৃশ্য দেখবেন হরহামেশাই
সোনার চর
বঙ্গোপসাগরের বুক চিরে জেগে ওঠা অপরূপ প্রাকৃতিক এক লীলাভূমি। প্রায় ১০ হাজার একর আয়তনের চরটি দুর্গম হলেও প্রকৃতিক সৌন্দর্যের কমতি নেই।
সোনার চরের নামের পেছনেও কারণ আছে। চরটি সোনা দিয়ে তৈরি না হলেও সূর্যের প্রখর রোদ যখন এর বালুর ওপর পড়ে তখন সোনার মতই চিক চিক করে৷ তাই লোকেরা একে সোনার চর বলে ডাকে৷
যদিও প্রথম কবে চরটি জেগে ওঠে সেই সঠিক তথ্য কারও জানা নেই তবে পটুয়াখালী প্রশাসনের ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, ২০০৪ সালের দিকে বঙ্গোপসাগরের কোল জুড়ে জেগে ওঠে চরটি।
আয়তনের দিক থেকে সুন্দরবনের পরেই এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বনাঞ্চল। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশাল সমুদ্র সৈকত।
নৌকা থেকে চরে নেমেই সবার আগে প্যান্ট বদলে লুঙ্গী পড়ে নিলাম৷ এই পরিবেশের সাথে আসলে লুঙ্গী ছাড়া যায় না৷ এরপর তাবু লাগানো শুরু করে দিলাম আমরা৷
ক্যাম্প সাইটে জাহাঙ্গীর ভাই ও কামরুল ভাইয়ের সাথে
সোনার চরে আমার তারছিঁড়া টিম নিয়ে
সোনার চরে আমার তারছিঁড়া টিম নিয়ে
চারপাশটা একদম নীরব৷ মাঝে মাঝে পাখির ডাক শোনা যাচ্ছে৷ চরের পাশেই নদীতে দুজন জেলে নৌকায় বসে মাছ ধরছিল৷ নদীর ঠিক এমন জায়গায় নৌকাটা রাখা ছিল বেশ চমৎকার লাগছিল দেখতে৷
তাবু লাগিয়ে পাশে দুই গাছের ফাঁকে আমার হ্যামকটা ঝুলিয়ে দিলাম৷ যে যার ইচ্ছামত ঝুলাঝুলি আর ফটোসেশান করল৷ আমি গিয়ে বাবুল নানাকে ধরে নিয়ে আসলাম নৌকা থেকে৷ আজকে নানাকে হ্যামকে ঝুলাবো৷
জাহাঙ্গীর ভাই অবশ্য অন্য প্লানে ছিল৷ পরে বলব সে কথা৷ নানাকে আমি আর জাহাঙ্গীরভাই মিলে ধরে হ্যামকে শোয়ায়ে দিলাম৷ প্রথমে ছিড়ে পড়ে যাবার ভয়ে কু কা পরলেও পরে আরাম পেয়ে নানা আর নামতে চায়না৷ নানাকে হ্যামকে রেখে আমরা একটু ভিতরের দিকে গেলাম, বনের ভেতরটা ঘুরে দেখতে৷
ক্যাম্প সাইটের পাশে ঝুলাঝুলি
বাবুল নানার প্রথম হ্যামকে দোলা
চারপাশটা এত সবুজ দেখতে অসাধারন, পাখিদের কিচির মিচিরে মনটা ভাল হয়ে গেল৷ বেশ অনেকটা দূর পর্যন্ত গেলাম ভিতরে৷ যত যাই তত আরো ভিতরে যেতে মন চাইছিল সবার৷
কামরুল ভাই বলল বনে রাস্তা হারালে বিপদে পড়ে যাব৷ নানাও আসেনাই সাথে৷ তাই ক্যাম্প সাইটে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নিলাম সবাই মিলে আর বেশি ভিতরে না গিয়ে৷ ঘুরে আসার পথে আমরা পর্যাপ্ত লাকড়ি জোগার করে নিয়ে আসলাম সাথে৷
সোনার চরে প্রচুর শুকনো কাঠ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে৷ আগুন জ্বালাতে আর কোন সমস্যা হবেনা আমাদের৷ আমরা সব লাকড়ি একপাশে স্তুপ করে সাজিয়ে রাখলাম৷
নানা এত লাকড়ি দেখে নৌকা থেকে চিল্লায়ে বলল কি নাতি সারাজীবন কি এইহানেই থাকার ইচ্ছা আছে নাকি৷ এত লাকড়ি জ্বলতে তো মেলাদিন লাগব৷ এখনো অনেক বেলা আছে দেখে আমরা মজা করছিলাম৷
এতদূর আসলাম , জাহাঙ্গীর ভাই বললেন রবি ভাই লাফ দেন একটা ৷ দিলাম লম্ফ
নানার সাথে নৌকায়
বাবুল নানার সাথে
সোনার চরে যাবার পথে জাহাঙ্গীর ভাই আর আমি
সোনার চরে যাবার পথে জাহাঙ্গীর ভাই আর আমি
সুমি আপার ইচ্ছাপুরন ৷ পাগল ভাইয়ের সাথে একটা স্মৃতি ফ্রেম বন্দি করে রাখার ৷
নানা এসে বলল ক্ষুধা লেগেছে৷ আমাদের খাওয়ার কথা মনেই ছিল না৷ পরিবেশটা এত সুন্দর যে সব ভুলে গিয়েছিলাম৷ সবাই সবকিছু তাবুর ভিতরে রেখে নৌকায় ফিরে গেলাম৷ দুপুরে কারো খাওয়া হয়নি৷
সবাই বসে একসাথে খাব এবার গরম গরম ইলিশ আর খিচুরী৷ আমরা হাত মুখ সব ধুয়ে ফ্রেস হয়ে খেতে বসে গেলাম সবাই৷ নানা আগেই খাবার প্লেইট গ্লাস সব ধুয়ে পরিষ্কার করে রেখেছিল আমরা বনের ভিতরে ঘুরতে ঘুরতে৷
সুমি আপু সবাইকে খাবার পরিবেশন করলেন৷ রান্নাটা জোশ ছিল৷ সবাই পেট ভরে খেলাম৷ এক কথায় সেদিন সবাই সুমি আপুর রান্নার ফ্যান হয়ে গিয়েছিলাম৷ সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম সামনের সব ট্রিপে সুমি আপাকে নেওয়াই লাগবে আমাদের৷ ট্রিপে এই রকম মজার খাবার খাওয়ার এ ছাড়া আর কোন বিকল্প নাই৷ নানা আর তার ছোট্ট নাতি ইকবালও বেশ প্রশংসা করল সুমি আপার রান্নার৷
দিনটা আসলেই বেশ চমৎকার কেটেছে আমাদের৷ প্রত্যাশার চাইতে অনেক ভাল৷ আসলে ট্যুরমেট মনের মত হলে, যে কোন ট্রিপই আনন্দময় হয়৷ হঠাৎ বনবিভাগের একটা টহল বোট পাশ দিয়ে গেল৷
আমাদের চারটা ছেলের সাথে একটা মেয়ে দেখে তারা পরামর্শ দিল রাতে এই জায়গাটা আমাদের জন্য নিরাপদ হবে না৷ তাদের জনবল কম৷ নিরাপত্তা দিতে পারবেনা৷ থাকলে নিজ দায়িত্বে থাকতে হবে৷ কিছু হলে তারা দ্বায় নিবেনা৷
অনিচ্ছা স্বত্বেও সুমি আপুর কথা চিন্তা করে আমরা সোনার চরে না থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম৷ জাস্ট রাতে থাকারই তো ব্যপার৷ আমরা তো ভালমত সব ঘুরেই নিয়েছি চরে৷ রাতটা নাহয় অন্য কোন চরে থাকব৷
সব গুছিয়ে নিয়ে নৌকায় চেপে বসলাম আবার৷ যে লাকড়িগুলো জড়ো করেছিলাম তার কিছু নৌকায় তুলে নিলাম, কারন জানিনা সামনে যে চরে গিয়ে উঠব সেখানে রাতের বেলা লাকড়ি পাব কিনা৷ তখন সমস্যায় পড়ব৷
নানা ইঞ্জিন চালু করে সন্ধার একটু আগে টান দিলেন নৌকা৷ এবার সিদ্ধান্ত নানার উপড় ছেড়ে দিলাম৷ দেখি নানা কোন চরে নিয়ে নৌকা ভিড়ায়৷