• দর্শনীয় স্থান
  • পরিচিতি
  • সব পোস্ট
দর্শনীয় স্থান সেইন্ট মার্টিন দ্বীপ

সেইন্ট মার্টিন দ্বীপ

-

সেইন্ট মার্টিন দ্বীপ

সেইন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবালদ্বীপ। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার-এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত।

ছেঁড়া দ্বীপ, দারুচিনি দ্বীপ - সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ, ফটোক্রেডিট : Shahin Rahman Noyon
ছেঁড়া দ্বীপ, দারুচিনি দ্বীপ – সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ, ফটোক্রেডিট : Shahin Rahman Noyon

প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে। প্রায় ৫০০০ বছর আগে টেকনাফের মূল ভূমির অংশ ছিল জায়গাটি। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি সমুদ্রের নিচে চলে যায়। এরপর প্রায় ৪৫০ বছর আগে বর্তমান সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পাড়া জেগে উঠে। এর ১০০ বছর উত্তর পাড়া এবং পরবর্তী ১০০ বছরের মধ্যে বাকি অংশ জেগে উঠে।

২৫০ বছর আগে আরব বণিকদের নজরে আসে এ দ্বীপটি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে বাণিজ্যের সময় আরব বণিকরা এ দ্বীপটিতে বিশ্রাম নিতো বলে জানা যায় । তখন তারা এ দ্বীপের নামকরণ করেছিল ‘জাজিরা’। পরবর্তীতে যেটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত হয়।

সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ, প্রবাল, ফটোক্রেডিট - রবি চন্দ্রবিন্দু
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ, প্রবাল, ফটোক্রেডিট – লেখকের বন্ধু সাদেক বাচ্চু

দেশী উদ্ভিদ তত্ববিদদের মতে প্রায় ৩৩ হাজার বছর আগে সে এলাকায় প্রাণের অস্তিত্ব ছিল। বিভিন্ন কার্বন ডেটিং-এ এর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন ৷ ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে কিছু বাঙালি এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ এই দ্বীপের বসতি স্থাপনের জন্য আসে। এরা ছিল মূলত মৎস্যজীবি।

সাম্পান, সেইন্ট মার্টিন দ্বীপ - ছবি হাদি মুন
সাম্পান, সেইন্ট মার্টিন দ্বীপ – ছবি হাদি মুন

যতটুকু জানা যায়, প্রথম অধিবাসী হিসাবে বসতি স্থাপন করেছিল ১৩টি পরিবার। এরা বেছে নিয়েছিল এই দ্বীপের উত্তরাংশ। কালক্রমে এই দ্বীপটি বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় পরিণত হয়।

সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ, ফটোক্রেডিট - Mohiuddin Sikder
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ, ফটোক্রেডিট – Mohiuddin Sikder

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০০ সালে ভূমি জরিপের সময় এ দ্বীপটিকে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়। যদিও সে সময়টিতে বার্মা ব্রিটিশ শাসনের আওতায় ছিল। কিন্তু তারপরেও সেইন্ট মার্টিন দ্বীপকে বার্মার অন্তর্ভুক্ত না করে ব্রিটিশ-ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ৷

সাম্পান, সেইন্ট মার্টিন দ্বীপ - ছবি হাদি মুন
সাম্পান, সেইন্ট মার্টিন দ্বীপ – ছবি হাদি মুন

বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, খ্রিস্টান সাধু মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয়। কিন্তু আসলে দ্বীপটিকে যখন ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয় বলে যে তথ্য আছে তা বেশি নির্ভরযোগ্য ৷

সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ, ছবি - রবি চন্দ্রবিন্দু
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ, ছবি – লেখকের বন্ধু সাদেক বাচ্চু

সেইন্ট মার্টিন দ্বীপটি বর্তমানে একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটন মৌসুমে এখানে প্রতিদিন ৫টি লঞ্চ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড টেকনাফ হতে আসা যাওয়া করে। সম্রতি কক্সবাজারের ৬ নম্বর জেটি থেকে সরাসরি এম ভি কর্নফুলি নামে একটি জাহাজ চালু হয়েছে ৷ লোকাল ট্রলারে করেও সেইন্ট মার্টিন যাওয়া যায় ৷

গাঙচিল এর ঝাঁক - রাজীব দাশ
গাঙচিল এর ঝাঁক, ছবি – রাজীব দাশ

সেইন্ট মার্টিন দ্বীপে বর্তমানে অনেক ভালো আবাসিক হোটেল রয়েছে। একটি সরকারি ডাকবাংলো আছে। জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক মরহুম হুমায়ূন আহমেদের ‘সমুদ্র বিলাস’ নামে একটি বাড়ি রয়েছে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ বীচে ৷ আগে তেমন তা থাকলেও এখন সমুদ্রের তীর ঘেঁসে বহু ইকো কটেজ ও তৈরি হয়েছে পর্যটকদের থাকার জন্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে ৷ তারা সেখানে বিভিন্ন মেয়াদে স্থানীয় মানুষদের জমি লিজ নিয়ে এইসব তৈরি করেছে ৷

সেইন্ট মার্টিন দ্বীপের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল। পর্যটকদের ও স্থানীয় মানুষের নিরাপত্তার জন্য দ্বীপে পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা আছে ৷ তাদের নিজস্ব কার্যালয় আছে দ্বীপে ৷ রাতে বিজিবি টহল দেয় নিয়মিত ৷ আর সমুদ্রে নিরাপত্তার জন্য কোস্টগার্ডের পেট্রল ভেসেল সবসময় নিয়োজিত থাকে ৷ রাতে সেখানে বাড়তি নিরাপত্তা যোগ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দুটি বিশেষ জাহাজ ৷

সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ এ লেখক - রবি চন্দ্রবিন্দু
সেন্ট মার্টিন্স দ্বীপ এ লেখক – রবি চন্দ্রবিন্দু

লিখা: রবি চন্দ্র বিন্দু

ব-দ্বীপ
শুধুমাত্র আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদশের জল, স্হল, জনপদ আর প্রকৃতিকে উপস্হাপন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য।

Leave a Reply

সর্বশেষ

পান ব্যবসায়ীর বাড়িতে চাকুরী হতে যে রাজ্যপাটের ভিতঃ বালিয়াটির জমিদার বাড়ি

পান ব্যবসায়ীর বাড়িতে চাকুরী হতে যে রাজ্যপাটের ভিতঃ বালিয়াটির জমিদার বাড়ি আশপাশে সাভার, ধামরাইয়ের মতো প্রাচীন বনেদী সব জনপদ থাকতে...

এক অদ্ভুত, অপূর্ব সুন্দর পাখি – হরিকল

এক অদ্ভুত, অপূর্ব সুন্দর পাখি - হরিকল। ভাল করে বলতে চঞ্চুমোটা হরিকল। ইংরেজি নাম Thick Billed Green Pigeon. বৈজ্ঞানিক নাম...

পালং খিয়াং (Palong Khiyang) ঝর্ণা, বান্দরবন

পালং খিয়াং (Palong Khiyang) ঝর্ণা বান্দরবন জেলার আলীকদমে অবস্থিত। বেশ দূর্গম পথ , তবে মারাত্মক লেগেছে। ফ্লাশ ফ্লাডে পাহাড়...

আজিজ মাস্টারের বাড়ি

‘মুন্সী’ ‘খাঁ’ টাইটেল যে হিন্দুদেরও হয় তা জানতাম, তবে খুব একটা common  নয়। Afterall ‘মুন্সী’ শব্দটি ফার্সি। হিন্দু মুন্সী পদবীধারীর...

ঝরঝরি ট্রেইল

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড রেইঞ্জের সবচাইতে বুনো ট্রেইল বলা হয় এই ঝরঝরি ট্রেইলকে। এই ট্রেইলে মোটামুটি দেখবেন জোঁক, বানর, সাপসহ নানা...

পাঠক প্রিয়

চর কুকরী মুকরি, ঢাল চর, চর মনতাজ ভ্রমণ

চর কুকরী মুকরি, ঢাল চর, চর মনতাজ ভ্রমণ অল্প খরচেই আপনি ঘুরে আসতে পারেন বাংলাদেশের দক্ষিনের নদী ও সাগর বেষ্টিত ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়। হাতে ১...

এবার গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে দেখা মিললো তীব্র বিষধর ‘রাসেল ভাইপার‘ সাপ

গতকাল চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের গুলিয়াখালী সমুদ্র সৈকতে রাসেল ভাইপারের দেখা মিলেছে।  পৃথিবীর ৫ম বিষধর সাপ এই রাসেল ভাইপার, আক্রমণে বিশ্বে ১ম ( মতান্তরে দ্বিতীয় )। অর্থাৎ...

মধুখাইয়া ট্রেইল ও ঝর্ণা, সীতাকুন্ড চট্টগ্রাম

২০১৭ সালের সেপ্টেমর মাস,কুরবানী ঈদের জাস্ট পরের দিন অপু নজরুল ভাইয়ের ফোন। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠলাম! ফোনে অপু ভাই বললো - ‘আসিফ ভাই! চলেন মধুখাইয়া...

কালচিতি / কালাচিতি / কালাচ / common krait

কালচিতি / কালাচিতি / কালাচ / common krait : একে বলা হয় রহস্যময় সাপ। ফনাহীন মারাত্মক বিষধর এই সাপে বাংলাদেশে এবং পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি মানুষ...

কুকরিমুকরি – সোনারচর – আন্ডার চর – চর মোন্তাজ – চর তারুয়া দ্বীপ ভ্রমণ: পর্ব – ২

কুকরিমুকরি - সোনারচর - আন্ডার চর - চর মোন্তাজ - চর তারুয়া দ্বীপ ভ্রমণ। পর্ব - ২: ১ম পর্ব লঞ্চ থেকে নেমে এবার গাড়ি ঠিক করার পালা...
error: Content is protected !!