সেইন্ট মার্টিন দ্বীপ
সেইন্ট মার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত একটি প্রবালদ্বীপ। এটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ হতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মায়ানমার-এর উপকূল হতে ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে নাফ নদীর মোহনায় অবস্থিত।
প্রচুর নারিকেল পাওয়া যায় বলে স্থানীয়ভাবে একে নারিকেল জিঞ্জিরাও বলা হয়ে থাকে। প্রায় ৫০০০ বছর আগে টেকনাফের মূল ভূমির অংশ ছিল জায়গাটি। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি সমুদ্রের নিচে চলে যায়। এরপর প্রায় ৪৫০ বছর আগে বর্তমান সেন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ পাড়া জেগে উঠে। এর ১০০ বছর উত্তর পাড়া এবং পরবর্তী ১০০ বছরের মধ্যে বাকি অংশ জেগে উঠে।
২৫০ বছর আগে আরব বণিকদের নজরে আসে এ দ্বীপটি। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাথে বাণিজ্যের সময় আরব বণিকরা এ দ্বীপটিতে বিশ্রাম নিতো বলে জানা যায় । তখন তারা এ দ্বীপের নামকরণ করেছিল ‘জাজিরা’। পরবর্তীতে যেটি নারিকেল জিঞ্জিরা নামে পরিচিত হয়।
দেশী উদ্ভিদ তত্ববিদদের মতে প্রায় ৩৩ হাজার বছর আগে সে এলাকায় প্রাণের অস্তিত্ব ছিল। বিভিন্ন কার্বন ডেটিং-এ এর প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে বলে তারা জানতে পেরেছেন ৷ ১৮৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে কিছু বাঙালি এবং রাখাইন সম্প্রদায়ের মানুষ এই দ্বীপের বসতি স্থাপনের জন্য আসে। এরা ছিল মূলত মৎস্যজীবি।
যতটুকু জানা যায়, প্রথম অধিবাসী হিসাবে বসতি স্থাপন করেছিল ১৩টি পরিবার। এরা বেছে নিয়েছিল এই দ্বীপের উত্তরাংশ। কালক্রমে এই দ্বীপটি বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় পরিণত হয়।
ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯০০ সালে ভূমি জরিপের সময় এ দ্বীপটিকে ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়। যদিও সে সময়টিতে বার্মা ব্রিটিশ শাসনের আওতায় ছিল। কিন্তু তারপরেও সেইন্ট মার্টিন দ্বীপকে বার্মার অন্তর্ভুক্ত না করে ব্রিটিশ-ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল ৷
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনে ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, খ্রিস্টান সাধু মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয়। কিন্তু আসলে দ্বীপটিকে যখন ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তখন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মার্টিনের নাম অনুসারে দ্বীপটির নামকরণ করা হয় বলে যে তথ্য আছে তা বেশি নির্ভরযোগ্য ৷
সেইন্ট মার্টিন দ্বীপটি বর্তমানে একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটন মৌসুমে এখানে প্রতিদিন ৫টি লঞ্চ বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড টেকনাফ হতে আসা যাওয়া করে। সম্রতি কক্সবাজারের ৬ নম্বর জেটি থেকে সরাসরি এম ভি কর্নফুলি নামে একটি জাহাজ চালু হয়েছে ৷ লোকাল ট্রলারে করেও সেইন্ট মার্টিন যাওয়া যায় ৷
সেইন্ট মার্টিন দ্বীপে বর্তমানে অনেক ভালো আবাসিক হোটেল রয়েছে। একটি সরকারি ডাকবাংলো আছে। জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক মরহুম হুমায়ূন আহমেদের ‘সমুদ্র বিলাস’ নামে একটি বাড়ি রয়েছে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপের দক্ষিণ বীচে ৷ আগে তেমন তা থাকলেও এখন সমুদ্রের তীর ঘেঁসে বহু ইকো কটেজ ও তৈরি হয়েছে পর্যটকদের থাকার জন্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে ৷ তারা সেখানে বিভিন্ন মেয়াদে স্থানীয় মানুষদের জমি লিজ নিয়ে এইসব তৈরি করেছে ৷
সেইন্ট মার্টিন দ্বীপের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল। পর্যটকদের ও স্থানীয় মানুষের নিরাপত্তার জন্য দ্বীপে পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা আছে ৷ তাদের নিজস্ব কার্যালয় আছে দ্বীপে ৷ রাতে বিজিবি টহল দেয় নিয়মিত ৷ আর সমুদ্রে নিরাপত্তার জন্য কোস্টগার্ডের পেট্রল ভেসেল সবসময় নিয়োজিত থাকে ৷ রাতে সেখানে বাড়তি নিরাপত্তা যোগ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দুটি বিশেষ জাহাজ ৷
লিখা: রবি চন্দ্র বিন্দু