• সব পোস্ট
Home Blog Page 2

সাতছড়ির বিরল ধনেশ

RemasterDirector_22abe5b5f

বাসায় রীতিমতো ঝগড়া করে সাতছড়ি গেছি। রাত তিনটায় পৌছে কি এক হোটেলে ঠান্ডায় বরফ হয়ে বসে আছি। হবিগঞ্জ যে এত ঠান্ডা কে জানত? সিএঞ্জি করে যখন রওনা দিলাম।,ঠান্ডা বাতাসে মনে হচ্ছে আমার হাইপোথার্মিয়া হয়েই গেল। সাতছড়ি পৌছলাম, টাওয়ার মানুষে গিজগিজ করছে, গাছের দিকে তাকায় মুখ শুকিয়ে গেল আরো, ফুলগুলো শুকিয়ে গেছে। গাছভর্তি কাঠশালিক আর কাঠশালিক, অন্য কিছুর চিহ্ন ও নাই। কি বিপদ হল বলতো?

ক্ষরা কেটে গেল, কিছুক্ষণ পর বিশাল চার ধনেশকে উড়ে উড়ে যেতে দেখলাম যখন। এ কি রূপকথা, এ কি ইন্দ্রজাল! বিদ্যুতগতিতে শাটারস্পিড বাড়িয়ে, এক্সপোজার প্লাস থ্রি করে মন্ত্রমুগ্ধের মত তুলেই গেছি ছবি। প্রায় নিশ্চিত ছিলাম, ছবি ওঠেনি ভাল, উঠলেও ফোকাসে নেই, ক্যামেরার স্ক্রিনে ছবিগুলো দেখে অবশ্য আশ্বস্ত হলাম, এক্সপোজার ভুল, কিন্ত ছবিগুলো একবারেই ফেলনা আসেনাই। স্বপ্ন পূরণের এক মাহেন্দ্রক্ষণ, যে পাখিকে এতদিন শুধু ছবিতে দেখেছি, তার দর্শন হল প্রকাশ্য দিবালোকে!

এর পরে আরেকবার সুযোগ হল, সবাই যখন ফুলঝুরি নিয়ে ব্যস্ত তখন একজোড়া এসে বসেছে কাছের গাছটায়, আমি এদের আরো কিছু ছবি নিলাম।

ধনেশ, ছবি : ডা:নিসর্গ মহসিন
ধনেশ, ছবি : ডা:নিসর্গ মহসিন

বলাবাহুল্য, রোদের মধ্যে ছবিগুলা ভাল হল না একবারেই। হিট ডিস্টরশন না কি একটা জিনিস যেন, এত কঠিন টার্ম আবার মনে থাকেনা আমার।

এইটা আমাদের অপেক্ষাকৃত সহজলভ্য ধনেশ যার বাংলা কাও ধনেশ, কিংবা পাকড়া ধনেশ। ইংরেজিতে Oriental Pied Hornbills. বৈজ্ঞানিক নাম Anthracoceros albirostris. কোন ধনেশ ই সহজ না দেখা, এসব অত্যন্ত বিরল, খুব ভাগ্যবানরাই এর দর্শন পায়। আমি নিজেকে ভাগ্যবান ভাবি। আপনি দেখলে আপনিও। কেউ যদি কখনো সরাসরি উড়ন্ত ধনেশ দেখেন, তিনি পাখিপ্রেমী না হলেও মুগ্ধ হতে বাধ্য, এই উড়ন্ত ধনেশের রাজকীয়তা, এই ঐশ্বর্য দেখে বিস্মিত না হয়ে থাকা মুশকিল।

ধনেশ, ছবি : ডা:নিসর্গ মহসিন
ধনেশ, ছবি : ডা:নিসর্গ মহসিন

ধনেশরা ভাল নেই। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী এদের শিকার করে করে সংখ্যা এতটাই কমিয়ে এনেছে, এরপরে বন ধ্বংসের আয়োজন, হ্যাবিট্যাট লস, একদিন হয়ত আসবে, এদের শুধুমাত্র বার্ডস বাংলাদেশের পুরনো ছবিগুলোতেই দেখা যাবে, নয়ত ওল্ড এডিশন বইয়ের ভেতরে, বাবারা বাচ্চাকে পড়াবেন, জানো, আমাদের দেশে একদিন এই পাখিটা ছিল।

লেখা ও ছবি : ডা:নিসর্গ মহসিন

ক্রিসতং, রুংরাং এর ডায়েরীঃ পর্ব ০১

ট্যুর মেম্বার শুরুতে ছিলাম ৭ জন

লোকে বলে পাহাড় নাকি মানুষকে হাতছানি দিয়ে তার পানে যাওয়ার জন্য ডাকে। যার জন্য শত কষ্ট হবে জানা সত্ত্বেও মানুষ পাহাড়ে ছুটে যায়।

নইলে ঘুম, খাওয়া দাওয়া বাদ দিয়ে কেন মানুষ পাহাড়ে যাবে? পাহাড়ে এতো হাঁটাহাঁটি করে কী মজা পাওয়া যায়? অনেকের কাছেই এটা এক বিরাট প্রশ্ন! কিছু তো একটা অবশ্যই পাহাড়ে আছে যার দরুণ মানুষ পাহাড়ে বারবার ছুটে যায়!

ক্রিসতংএ বেশ কবছর ধরে যাবো যাবো করেও যাওয়া হচ্ছিলো না। এই নামটা যখন প্রথম শুনি তখনি মনে গেঁথে গিয়েছিলো।

একচুয়েলি, প্রথম যাবার প্ল্যান ছিলো ২ রা ফেব্রুয়ারিতে। ঐদিনের যাবার প্ল্যান ভেস্তে যাওয়ায় পরে ঠিক করি ১৬ ই ফেব্রুয়ারী যাবো। টানা ৩ দিন বন্ধ আছে। ইজিলি কাভার করা যাবে। সেই মোতাবেক Apu Nazrul ভাইয়ের সাথে কথা বলে তারিখ ফিক্স করলাম।

১৬ তারিখ যত সামনে আসে ততই ভয় কাজ করতে থাকলো। ছুটি যদি না পাই! তাইলে তো শেষ! নিজেও বুঝতে পারছিলাম এবার ক্রিসতং না যেতে পারলে সহসা যাওয়া হবে না। তাই যেভাবেই হোক ছুটি ম্যানেজ করতে হবে।

অবশেষে সোমবার মৌখিক ছুটি ম্যানেজ করা গেলো। ঐদিকে বন্ধু MD Rashel Siddiqui তার আগের সপ্তাহেই ইনবক্স গুঁতা দিয়েছিলো যাবো কিনা তা কনফার্ম তাকে জানাতে। তাহলে সেও ছুটি নিবে। আমার ছুটি কনফার্ম হবার সাথে সাথে তাকে জানিয়ে দিলাম বন্ধু এইবার তুই ব্যাকপ্যাক গোছাতে পারিস।

পাহাড়ে যাবার নিয়ত করা মানেই ভিতরে ভিতরে বিশাল একটা এক্সসাইটমেন্ট কাজ করে। প্রচুর হাঁটাহাঁটি করা লাগবে। এমনিতেই আমার হাঁটার অভ্যাস কম। ইদানিং সাইক্লিং করারও সময় পাচ্ছি না। একটু শারীরিক প্রিপারেশান লাগেই নইলে পাহাড়ে সমস্যা ভুগতে হয়। এমনিতেই ওজন বেড়ে গেছে। ওভার ওয়েট আছি। আগেরবার যখন অমিয়াখুম গিয়েছিলাম তখন ট্রেকিং করতে খুব একটা বেগ পোহাতে হয় নি হাইটফোবিয়ার প্যানিক টা ছাড়া।

কনফিডেন্স ছিলাম এবারো ঠিকটাক পেরে যাবো। যদিও ক্রিসতংরুংরাং এর ট্রেকিং করা অমিয়াখুমের চেয়েও অনেক বেশী কঠিন এবং ট্রেইলও বেশ বড়। সবচেয়ে বড় কথা এই ট্রেইলে পানির বেশ সংকট! প্রথম দিন ট্রেকিং এর শেষ ঘন্টা পানি নিয়ে বেশ মজার একটা কান্ড হয়েছিলো!

ট্যুর মেম্বার শুরুতে ছিলাম ৭ জন

ট্যুর মেম্বার শুরুতে ছিলাম ৭ জন। এর মধ্যে আমি আর শাকিল ভাই ছাড়া বাকী সবাই ঢাকা থেকে রওনা দিবে। চাঁদপুর থেকে রাত ৯ টার বাসে করে কুমিল্লা বিশ্বরোড এসে রাত ১১ টায় নামলাম। ওদিকে ঢাকার বাস তখনো কাঁচপুর ব্রিজও পার হয় নি অথচ বাস ছাড়ছে সোয়া ১০ টায় ফকিরাপুল থেকে। একে তো বৃহস্পতিবার তার উপর টানা ৩ দিন সরকারি বন্ধ।

নুরজাহান হোটেলে বসে অবসর সময় পার করা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। অপেক্ষা করাটা আমার খুবই অপছন্দের একটা কাজ। রাত ১ টার কিছু পর বাস আসলো। গন্তব্য চকোরিয়া। ঘুম যাওয়াটা মাঝে মাঝে বেশ কষ্টের পর্যায়ে পরে যায়। যদি সেটা হয় বাসে! রাস্তার জ্যাম, এক্সিডেন্ট সবকিছু মিলিয়ে চকোরিয়া পৌঁছাতে একটু দেরী হলো। চকোরিয়া পৌঁছে প্রথমে হাতমুখ ধুয়ে নাস্তা সারলাম।

হোটেলের নামটা বেশ অদ্ভুত ছিলো! বীর বাঙ্গালী!

চকোরিয়া নেমেই অপু নজরুল ভাই আলিকদমের বাস টিকেট কেটে ফেলেছিলেন। নাস্তা শেষ পর্যায়ে বাস কণ্ডাক্টার এসে তাড়া দিচ্ছিলো বাস ফুল হয়ে গিয়েছে এখনি তারা ছেড়ে যাবে।

বাসে উঠে পরলাম আরেক ঝামেলায়! আমরা টিকেট কেটেছিলাম সামনের সিটে। উঠে দেখি বাস কন্ডাক্টার আরেকটা ট্রাভেল গ্রুপকে সামনে বসিয়ে দিয়েছে। যাই হোক, পরে আমরা নিজেদের মধ্যে মিউচুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিং করে সেই ঝামেলা সলভড করি!

চকোরিয়া থেকে আলিকদমের দিকে যাবার রাস্তাটাও বেশ সুন্দর। লামা থেকে শাকিল ভাই আমাদের সাথে যোগ দিলো। আলিকদম পৌঁছাতে ঘন্টা দুয়েক সময় লাগলো।

আলিকদম পৌঁছে প্রথম কাজ হলো চান্দের গাড়ীতে করে ২১ কিলো যাওয়া। সেখান থেকে আমাদের ট্রেকিং শুরু। আলিকদম যাবার পর সেখানে দেখি ভার্টিক্যাল ড্রিমারের আয়োজনে ম্যারাথন হচ্ছে। মজার বিষয় হচ্ছে সেখানে দুইজন পূর্ব পরিচিত মানুষের সাথে বহু বছর পর দেখা হলো।

ওমর আর রাফি। ওমর বন্ধু কাউসারের কাজিন। সে ভার্টিক্যাল ড্রিমারের সদস্য এবং ম্যারাথনে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করছে। আর রাফি রানার হিসেবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছে। রাফির সাথে সেই ২০১৬ এর পর প্রথম দেখা। তিনাপ সাইতারে একসাথে গিয়েছিলাম আমরা। রাফি বড় মাপের ট্রেকার। মাল্টি ট্যালেন্টেড ছেলে। সে এখন সাদা পাহাড়ে ট্রেকিং করে বেড়ায়।

অপু নজরুল লোকটার সাথে মনে হয় বান্দরবানের সবারেই পরিচয় আছে। আলিকদমের অলিগলিতে তার পরিচিতদের ঠেলায় আমাদের রওনা দিতে দেরী হচ্ছিলো। একটু পর পরেই বিভিন্ন জন এসে তার সাথে কথা বলছে।

আলিকদমে বেশ মজার একটা ঘটনা ঘটেছে।

অপু নজরুল ভাই জানালো ম্যারাথনের একজন পার্টিসিপেন্ট নাকি আমাদের সাথে ক্রিসতং যাবে! উনি ১২ কিলো থেকে আমাদের সাথে এড হবে। মানুষের কী এনার্জি রে ভাই! এই গরমে পাহাড়ে দৌড়াদৌড়ি করে আবার ৩ দিনের ট্রেকিং করতে যাবে! শুনে চোখ কপালে উঠে যাবার জোগাড়! ১২ কিলো থেকে উনি আমাদের সাথে যোগ দিলো। আমার শহর চাঁদপুরের মানুষ। পাপ্পু দিদি! পুরা ট্যুরে এই মানুষটার ঝাড়ি খায় নাই এমন একজনও ছিলো না! সবচাইতে বেশি ঝাড়ি খেয়েছেগ্রেট আসিফ ভাই“!!

২১ কিলো থেকে আমরা ট্রেকিং যখন শুরু করি সূর্য তখন মাথার ঠিক উপরে। ঘড়িতে ১২ টা বাজে। প্রায় ১ বছর পর ট্রেকিং করতে যাচ্ছি। শুরুতে কিছুটা অস্বস্তি লাগছিলো। তার উপর কাঁধে বেশ ভারী ব্যাকপ্যাক! সাথে দুই লিটার পানির বোতল। এটা নিয়ে পুরো পথ ট্রেকিং করতে হবে। ঐদিকে রাসেলের নাকি পোর্টার লাগবে। কিন্তু এই ট্রেকে পোর্টার পাওয়া কঠিন।

১ম দিন আমাদের গন্তব্য খ্যামচং পাড়া। এটি মুরং পাড়া।

শুরুতে বেশ খানিকটা পথ ইটের সলিং করা রাস্তা। এই পথের সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে পানির সংকট। কোন ঝিরি এই পথে পরবে না। পানি খুব হিসেব করে খেতে হবে।

ক্রিসতং এর ডায়েরী
ক্রিসতং এর ডায়েরী

পুরো পথে আমরা প্রায় ২৫/৩০ টা পাহাড় উঠানামা করেছি। একবার উঠা তো আবার নামা। চোখ দিয়ে যা দেখা যায় তা কখনোই লিখে প্রকাশ করা সম্ভব না। এটা আমি বিলিভ করি। পথ টা অদ্ভুত রকমের সুন্দর ছিলো। ভাষায় প্রকাশ করা আমার জন্য অনেক কঠিন। এক সপ্তাহ পর সেই পথের কথা লিখতে বসে আবেগতাড়িত হচ্ছি না বললে মিথ্যা বলা হবে। মনে চাচ্ছে সেই বুনো পথ ধরে আবার হেঁটে চলি।

পাহাড় ভীষণ অদ্ভুত। সত্যিই অনেক অদ্ভুত! যে পাহাডের পথ মাড়ায় নি সে বুঝবে না পাহাড়ের পথেরও একটা ভাষা আছে, সুর আছে।

ট্রেকিং এর শুরুতেই ক্রিসতং, রুংরাং এর চূড়া দেখা যাচ্ছিলো। ক্রিসতং হচ্ছে চিম্বুক রেঞ্জের সর্বোচ্চ চূড়া। প্রায় ২৯০০ ফুট উঁচু। রুংরাং এর উচ্চতা ২৫০০ ফুটের আশেপাশে। যদিও আমাদের উদ্দেশ্য চূড়ায় সামিট করা না। বন ঘুরে দেখবো, বনে ল্যাটাবো এটাই ছিলো আসল উদ্দেশ্য।

ট্রেকিং এর শুরুতেই ক্রিসতং, রুংরাং এর চূড়া দেখা যাচ্ছিলো। ক্রিসতং হচ্ছে চিম্বুক রেঞ্জের সর্বোচ্চ চূড়া।
ট্রেকিং এর শুরুতেই ক্রিসতং, রুংরাং এর চূড়া

কিছুদূর যাবার পর ঐ দূরে তিন্দু, সাঙ্গু, বড় পাথর দেখা যাচ্ছিলো। বেশ স্পষ্টই দেখতে পাচ্ছিলাম। তিন্দুকে বলা হয় বাংলার ভূস্বর্গ। তিন্দু আসলেই অনেক সুন্দর। তিন্দুর সকাল আমার ভীষণ রকমের প্রিয়।

অপু নজরুল ভাই পথে বিভিন্ন পাহাড়ী ফুল দেখাচ্ছিলেন। এই লোকটার পাহাড়, ফুল, গাছ নিয়ে বেশ ভালো জ্ঞান আছে। উনার সাথে ঘুরলে অনেক কিছুর সম্পর্কেই জানা যায়। লোকটা একটাচলন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া“! পথে একটা জায়গায় এসে পরলাম যার দুপাশে বিশাল বড় বড় পাহাড়ী ঘাস।গ্রেট আসিফ ভাইএটাকে কোরিয়ান কি জানি একটা বলেন! এটা উনার নিজস্ব সংঙ্গা মেইবি!

পাহাড়ি ফুল
পাহাড়ি ফুল

এক পর্যায়ে পথ দুদিকে চলে গেছে। বামে ইটের সলিং ধরে গেলে তিন্দু বাজার পর্যন্ত যাওয়া যায়। আজকাল বাইকাররা অহরহ এই পথে তিন্দু যায়। তিন্দুতে এখন এ পথ দিয়ে বিদ্যুৎও চলে গেছে। আরেকটা পথ ডানদিক দিয়ে খ্যামচং পাড়ায় চলে গেছে। আমরা দ্বিতীয় পথেই যাবো। এখান থেকেই মাটির রাস্তা শুরু।

অপু নজরুল ভাই আর আসিফ ভাই ছাড়া এই রুট সবার জন্যেই নতুন। আসিফ ভাই গত বর্ষায় এসেছিলেন অপু নজরুল ভাইয়ের সাথেই। আছাড় খেতে খেতে খ্যামচং পাড়ায় গিয়েছিলেন। উনার মুখেই সেসব বর্ণনা শুনে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে যাবার অবস্থা খেয়েছিলো। গতবারের চ্যালেঞ্জ নিতে এবার এসেছেন।

আমরা শুরুতে বেশ বিশ্রাম নিতে নিতে যাচ্ছিলাম। এতো প্যারা নাই। পাড়ায় রাত ৮/৯ টায় গেলেই হবে। পথে খুব সুন্দর একটা জুম ঘর পরলো৷ সাথে হাড়িপাতিল কিছুই নাই। রান্না করবো কিভাবে এই ভেবে জুমঘরে রাত কাটানোর প্ল্যান বাদ দিতে হলো। যদিও আমাদের সাথে রান্নার সব রসদেই ছিলো।

জুম ঘর
জুম ঘর

পথ চলা আবার শুরু। চারপাশে তাকাতে তাকাতে ধীরলয়ে এগোতে থাকলাম। পথিপধ্যে বেশ কিছু উঁচু গাছ পরলো। পাখিদের গান তো আছেই। হিমন দাদা ডিএসএলআর নিয়ে আসছে। পাহাড়ে পাখির ছবি তুলবে বলে। উনাকে খুব হতাশ দেখলাম কবার! হাঁটতে হাঁটতে একটা ঘরের মতো পেলাম। শুরু হলো আবার ল্যাটানী। শুয়ে, বসে, চিতকাত হয়ে যে যেভাবে পারলো সেভাবেই ল্যাটাইলো। কেউ আবার ভাতঘুম দিয়ে দিলো!

 

ল্যাটানি শেষে আবার উঠলাম। এবার বেশ খানিকটা খাঁড়া পাহাড় বেয়ে উঠে গেলাম। উঠতেই হঠাৎ হাতে বামশাশের ঝোপে খসখসানি শব্দ কানে আসলো। প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম মানুষ। কয়েকবার হাঁকডাক দিলাম। কোনো সাড়াশব্দ আসলো না।

অমিক বারবার বলতেছিলো ভাল্লুক হবে। তার নাকি খুব ভাল্লুক দেখার শখ। আমি আর অপু নজরুল ভাই তাকে বারবার বোঝাচ্ছিলাম ভাল্লুক সামনাসামনি অনেক ভয়ংকর! কে শোনে কার কথা। অমিকের এক কথা সে ভাল্লুক দেখতে চায়! অপু ভাই তাকে বললো এক পাহাড়ী ছেলে ভাল্লুকের আক্রমণে এখানে মারা গিয়েছিলো।

যাই হোক ভাল্লুক, মানুষ কিছুই চোখে পরলো না। হয়তো গয়াল টয়াল হবে! পথের এ জায়গাটা বেশ ভালো লাগছিলো। শেষ বিকেলে বাতাস পাহাড়ে উপরের গাছের পাতাগুলোকে প্রাণোচ্ছল্লাসে ভরিয়ে দিচ্ছিলো। পাতাগুলোকে দেখে মনে হচ্ছিলো তারা খুশিতে দোল খাচ্ছে।

ঐদিকে পাপ্পু দিদিকে খুঁজে পাচ্ছি না। কিঞ্চিৎ টেনশন হতে লাগলো। কারণ একটু পর সন্ধ্যা নামবে। উনার কাছে লাইট নেই তাছাড়া রাতে পাহাড়ে একা ট্রেকিং করা একদমেই উচিত না। এ পথে ভাল্লুকের ভয় আছে। ভাত ঘুম দেয়ার পর থেকেই উনি কেমন যেনো চাঙ্গা হয়ে গিয়েছেন। হাতে ব্যাগ দুইটা নিয়ে সবার আগে আগে হেঁটে চলে গেছেন। উনার এমন কাজে টিম লিডার খানিকটা বিরক্ত!

লাল সূর্যটা পাহাড়ে কোলে ঘুমিয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে। সমুদ্রের বুকে সূর্য ডুব দেয়া আর পাহাড়ে সূর্যের ঘুম দুইটা পুরোই আলাদা লাগে। কোনটা বেশী সুন্দর সে তুলনায় যাবো না। সুন্দরের মধ্যে তুলনা করাটা ঠিক মনে হয় না কারণ প্রতিটি সুন্দর জিনিসের নিজস্ব স্বকীয়তা থাকে যার রং, রুপ, দর্শন একদমেই আলাদা।

পাপ্পু দিদির দেখা অবশেষে পেলাম। উনি নাকি ২০/৩০ মিনিট ধরে এক জায়গাতেই বসে আছেন। উনার ভাষ্যমতে পাহাড়ের নাকি আত্মা আছে। উনি সেই আত্মার সাথে বসে বসে কথা বলেছেন!

এবার অন্ধকারে পথ চলা শুরু। ব্যাগ থেকে আগেই হেডল্যাম্প বের করে রেখেছিলাম। রাতে ট্রেকিং এর আলাদা মজা আছে আবার প্যারাও আছে। মজাটা হচ্ছে রাতে হালকা ঠান্ডা লাগে খুব একটা ঘামায় না পানি তৃষ্ণা তাই কম লাগে অন্যদিকে প্যারাটা হচ্ছে দ্রুত ট্রেক করা যায় না। খুব সাবধানে পা ফেলতে হয়, চারপাশের দৃশ্য দেখা যায় না।

এই ট্রেকের মধ্যে বেশ কবার অপু নজরুল ভাই আর আসিফ ভাইয়ের মধ্যে পাড়ায় কখন পৌঁছাবো সেটা নিয়ে হালকা তর্ক হয়েছিলো। পথটা অনেক লম্বা ছিলো তাছাড়া প্রথম দিন ট্রেকিং এ একটু খারাপ লাগে। সবাই তাই বারবার জিজ্ঞেস করছিলো আর কতক্ষণ লাগবে খ্যামচং পাড়ায় যেতে। তো তখন অপু ভাই যে সময় বলে আসিফ তার চেয়ে আরো বাড়িয়ে বলেন। আসিফ ভাইয়ের মতে অপু ভাই সময় কম বলেন!

খ্যামচং পাড়ার গেটে চলে আসলাম। এর মধ্যে আসিফ ভাইয়ের উৎপাত শুরু। বেচারার কাছে যা পানি ছিলো তা শেষ। এখন উনি সবার কাছে পানি চেয়ে বেড়াচ্ছেন! উনার পানির চাওয়ার এক্সপ্রেশানটা বেশ মজার ছিলো। এই মানুষটা চলন্ত বিনোদন। তবে উনি মাল্টি ট্যালেন্ডেড লোক। পুরো ট্যুরে সবাইকে কি পরিমান যে বিনোদন দিয়েছেন বলে বুঝানো মুশকিল! ট্যুরে এমন মানুষ থাকলে সেই রকমের মজার হয়।

লাস্ট এক ঘন্টা পানির তেষ্টায় সবার অবস্থাই খারাপ। গলা শুকিয়ে চৈত্র মাস। মনে হচ্ছিলো কারবালার প্রান্তরে এসে পরেছি।

অপু ভাইয়ের কাছে আধা লিটার পানি ছিলো তাও শেষ। কারো কাছেই পানির নেই কিন্তু পাড়ায় পৌঁছাতে আরো ঘন্টা খানেক বাকী।

রাতে ঠিকঠাক ট্রেক করা যাচ্ছিলো না। এ পথটা সমান না। উঁচু নীচু পথ। তাও আবার পাহাড়ের ঢালের রাস্তা। ভুলভাল হলে নীচে পড়ার শংকা।

রাসেল, পাপ্পু দিদি সবার পিছনে। রাসেল দ্রুত ট্রেকিং করতে পারে না। তার নাকি সাফোকেশান হয় দ্রুত ট্রেকিং করলে। পাপ্পু দিদির চশমা ভেঙ্গে গেছে। তাই রাতে কিছু দেখতে পারছেন না ভালো করে। দুজনের কাছে লাইটও নেই। তাই শাকিল ভাই আর আমি তাদেরকে নিয়ে পিছনে বেশ আস্তে আস্তে হাঁটছি।

মাথায় শুধু একটাই চিন্তা কখন পাড়ায় পৌঁছাবো। পানির তেষ্টায় মাথা ঠিকমতো কাজ করছে না। মন চাচ্ছিলো এক দৌড় দিয়ে পাড়ায় চলে যাই। কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছিলো না। ট্রেকিং এ টিম ওয়ার্ক খুব জরূরী। একজন সমস্যায় পরলে বাকীদের তাকে সাপোর্ট দিতে হয়।

আহ! অবশেষে খ্যামচং পাড়ার দেখা মিললো। পাড়ার ঘরের আলো দেখে কী যে খুশি হলাম! উফ!

কিন্তু কোন ঘরে আমরা উঠবো তা তো জানি না। আমরা ৪ জন সবার পিছনে ছিলাম। বাকীরা বেশ আগেই পাড়ায় চলে আসছে। অপু ভাইয়ের নাম ধরে কয়েকবার চিৎকার দিয়ে ডাক দিলাম কিন্তু সাড়াশব্দ মেলে না। মেজাজ পুরাই খারাপ হয়ে আছে। একে তো পানির তেষ্টায় পুরাই অবস্থা খারাপ তার উপর বাকীদের পাচ্ছি না।

খ্যামচং পাড়ার মানুষজন বাংলা বোঝে না তেমন বলতেও পারে না! পাড়ার এক ঘরে জিজ্ঞেস করলাম কারবারীর ঘর কোনটা! কথায় যতটুকু বুঝলাম আরো নীচে যেতে হবে। পাহাড়ের পাড়াগুলো সমতলের মতো না। পাহাড়ের ঢালে ঘরগুলো বানানো হয়।

অবশেষে কথাবার্তা আওয়াজ শুনে কারবারী ঘর চিনলাম। আহ! শান্তি!

পাড়ায় ঢুকলাম রাত সোয়া ৮ টা নাগাদ। অপু ভাই ট্রেকিং এর শুরুতেই বলেছিলো পাড়ায় আসতে ৮ টা বাজবে।

ঘরে ঢুকেই এক পেট পানি খেলাম। অপু ভাই আগেই এসে কলা রেডী করে রেখেছিলো। সাথে সাথে ৩ টা পেটে চালান করে দিলাম। পাহাড়ী কলা যারা খেয়েছে তারাই এর স্বাদ বুঝবে!

ব্যাগ খুলে যা দেখলাম তাতে কান্না হাসি এর মাঝামাঝি অবস্থায় পরে গেলাম। এক লিটার বোতলের অর্ধেক পরিমান পানি ব্যাগের সাইডের ম্যাশ পকেটে! ঐদিকে ট্রেকিং এর শেষ একটা ঘন্টা পানির জন্য কতই না হাহাকার করেছি!

এবার রান্নাবান্নার পালা। আইটেম জুমের চালের সবজি খিচুড়ি আর মুরগী। আরেক দল ঐদিন পাড়ায় আসছিলো। তাদের থেকে একটা মুরগী ধার নেয়া হলো। তাদেরকে ম্যানিয়াং পাড়ায় যেয়ে মুরগী কিনে দেয়া হবে এই শর্তে।

আসিফ ভাইয়ের ডাক শুনে বারান্দা যেয়ে যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। পুরো আকাশ ভর্তি তারা। উফ! কোন বিশেষণেই এই দৃশ্যকে আটকানো যাবে না। শুয়ে শুয়ে তারা দেখলাম কিছুক্ষণ।

ঠান্ডা লাগছিলো খুব তাই বেশিক্ষণ থাকতে পারলাম না। নিজের উপর মেজাজ খারাপ হচ্ছিলো স্লিপিং ব্যাগ না নেয়ার জন্য। স্লিপিং ব্যাগ থাকলে সারারাত বারান্দাতেই শুয়ে আকাশে তারা দেখে কাটিয়ে দেয়া যেতো। এখানেই ঘুমানো যেতো! খুব মিস করলাম!

এক বুক আফসোস নিয়েই রান্নাবান্নার কাজে হাত লাগালাম। আম্মা আর উম্মে সারাহ যদি এই দৃশ্য দেখতো তাহলে আমার

খবরেই ছিলো। যে ছেলে বাসায় তেমন কিছু করে না সে কিনা পাহাড়ে রান্নার কাজে সাহায্য করছে!

রাত ১২ টায় রান্না শেষ হলো। এবার খাওয়া দাওয়ার পালা। খাবো কি ঘুমেই তো চোখ নিভু নিভু করছে। কোনো রকমে খেয়ে দিলাম এক ঘুম। শরীর খুব ক্লান্ত আজ।

পরের দিন ক্রিসতং এ যাবো। আমার বহুদিনের স্বপ্ন অবশেষে ধরা দিচ্ছে….একটি সুন্দর দিনের অপেক্ষা।

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

লিখাঃ Safa Uddin Ahmed

পরের পর্ব

মায়া হরিণ, Barking Deer, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, হবিগঞ্জ

মায়া হরিণ, Barking Deer, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, হবিগঞ্জ
মায়া হরিণ, Barking Deer, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, হবিগঞ্জ

সাতছড়িতে সকালে টাওয়ার থেকে প্রায় খালি হাতে ফিরেছি, তোলার মত একমাত্র ওই লালচেপিঠ ফুলঝুরি ছিল, সেও হাতছাড়া হল ক্যামেরার ফোকাস হান্টে। আমি আর Asif ভাই এবার বড়পুকুরে যাব। বিপদ হল, দুজনের কেউই বড়পুকুর চিনি না, দেরী হচ্ছে দেখে রানা – তানিম ভাই আমাদের ফেলেই আগে চলে গেছেন৷ দুজন একে ওকে বলি বড় পুকুর কই, কেউ চিনে না, হাসে, আমরাও ভুলে আরেক রাস্তায় ঢুকে পড়লাম। চারপাশে না আছে পুকুরের চিহ্ন, না পাখি, কি অবস্থা! এদিকে ফেরার রাস্তাও ভুলে বসে আছি।

এমন সময় বিদ্যুতের বেগে এক অপূর্ব প্রাণি ক্যামেরার ঠিক সামনে এসে দাড়াল, এ আর কেউ না, বহুল আরাধ্য মায়া হরিণ!

এর আগে রাতে এদের ডাক শুনেছি, এবার এদের সরাসরি দেখলাম মাত্র কিছু দূরত্বে, ওর পশম গোনা যায় যেন, কুঁচকানো ভ্রু নিয়ে ও আমার দিকে যতটা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, আমিও ততটাই অবাক হয়ে ওর গুটিকয়েক ছবি তুলতেই ভোঁ দৌড়। মনে হচ্ছিল ঘোরের মধ্যে আছি, এই অপ্রত্যাশিত প্রাপ্তি যে আমার মত একজন নতুন বুনোচিত্রগ্রাহকের জন্য, কতটা আনন্দের, কল্পনার বাইরে!

মায়া হরিণ, Barking Deer, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, হবিগঞ্জ
মায়া হরিণ, Barking Deer, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, হবিগঞ্জ ছবি: ড: নিসর্গ মহসিন

ভারতের বনে জঙ্গলে মায়াহরিণ খুব সহজলভ্য হলেও বাংলাদেশে এ মহার্ঘ্য, বাংলাদেশে মায়া হরিণ সুন্দরবনের চিত্রা হরিনের চেয়ে অনেক অনেক বেশি রেয়ার, এদের আকার যতটা ছোট, এদের খুঁজে পাওয়াও ততটা দুষ্কর। সাতছড়িতে মাঝেমধ্যে পুকুরে পানি খেতে আসে এরা, এই অবস্থায় অনেকের ছবি আছে, এতটা কাছে, সরাসরি বনের মধ্যের পোর্ট্রেট – সে আমার কল্পনাতীত ছিল নিতান্তই। গতবার এদের ডাক শুনেছিলাম, এবার সাক্ষাৎ হল। কি অপূর্ব এক প্রাণী! পুকুর খুঁজতে ভুল পথে হারিয়ে যাওয়াটাও সম্ভবত ছিল ঈশ্বরের উপহার, নয়ত পথ হারালাম ই কেন, আর ঠিক ওই মুহূর্তে ও আমার সামনে এসেই পড়ল কেন!

বিশ্বাসে মেলায় বস্তু, এইবার টাওয়ারে ফুলঝুরি, লটকন, লালবুক টিয়া, চিতিপাখ শালিক, সবকিছুই মিস হল, ক্ষতি কি, মায়া হরিণ ফ্রেমবন্দী করলাম, তাও সাতছড়ি যাওয়ার কয়েক ঘন্টার মধ্যে, এই আনন্দটুকুর জন্য ও বনে বনে হারিয়ে যেতে ইচ্ছা হয়।

মায়া হরিণ, Barking Deer.
Device : Nikon D500, With 200-500mm
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, হবিগঞ্জ l March, 2023

লেখা ও ছবি: ড: নিসর্গ মহসিন

‘জলির পাড়’ গ্রামের সোনালী অতীত

রাজৈরের ভুঁইয়া বাড়িতে সর্বশেষ নির্মান করা বাড়ির ছবি। সম্ভবত হাত বদল হয়ে‘ভুঁইয়া বাড়ি’ হতে ‘হাজী বাড়ি’ হওয়ার পর। এই ভুঁইয়া বাড়ির ‘১৩২৬ সাল, ২৯ বৈশাখ’ এর নির্মান করা অপর একটি দালানেরছবি দেওয়া হলো এই পোস্টে।
রাজৈরের ভুঁইয়া বাড়ি

জলির পাড়গ্রামের সোনালী অতীত

পঞ্চাশ বছর আগেও এদেশের অনেক গ্রামঝুমঝুমিকরতো উৎসবে, পালা, পার্বনে। আর কিছু না হোক, নৌকা বাইচ, ঘোড়দৌড়, ষাঁড়ের লড়াই, পৌষ মাঘে যাত্রাপালাএসব তো নিজের চোখে দেখা।

এখনো হয়, হাজার গ্রামের এক গ্রামে হয়তো ধরে রেখেছে। অবশ্য নুতন অনেক বিনোদনের যা আগে ছিলো না।

এমনই এক গ্রামেরঝুমঝুমিপর্বের সন্ধান পাওয়া গেলো একজনের চমৎকার  এক মন্তব্য থেকে। গ্রামটির নাম জলিরপাড়। মাদারীপুরের রাজৈরের প্রান্তসীমায়, গোপালগঞ্জে।

এখন এই নামে আছে কিনা কে জানে। থাকলেও নিতান্তই অচেনা অজানা যদিও পাকা সড়ক আর বিদ্যুৎ হয়তো চলে গেছে আরদাশটা গ্রামের মতো। কিন্তু কুড়ি বছর আগেওতো এমন সড়ক বা বিদ্যুৎ যায়নি এমন প্রত্যন্ত গ্রামে।

কিন্তু অর্ধ শতাব্দী আগে অপারেশন হতো সেই গ্রামের এক হাসপাতালে। মিশনারী হাসপাতাল। সাহেব ডাক্তার ছিলেন এইহাসপাতালে।

জানার নাঝে চন্দ্রঘোনাতেও ছিলো এমন একটি খ্যাতনামা মিশনারী হাসপাতাল।

মন্তব্যকারী গৌতম সাহা নিজেও একজন চিকিৎসক এখন বসবাস পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে। জন্ম হয়েছিলো এদেশেরমাদারীপুরের রাজৈর গ্রামের সাহাপাড়ায়।

তাঁর তিন ভাইয়ের অপারেশন হয়েছিলো জলিরপাড়ের এই মিশনারী হাসপাতালে। অনুমান করি স্বাধীনতার আগে পরে কোনএক সময়। কারণ গৌতম সাহার জন্ম ১৯৬২ সালে।

হাসপাতালে সাহেব চিকিৎসক ছিলেন। তবে এই অপারেশন করেছিলেন ডাঃ লক্ষীকান্ত কীর্তনীয়া।

হোসেনপুরেরহাজি বাড়ি’ (আগেরভুঁইয়া বাড়ি’) নিয়ে তিনদিন আহে করা আমার পোস্টে তাঁর মন্তব্য থেকে পাওয়া যায় চমকপ্রদআরো সব তথ্য। পুরো মন্তব্যটি তুলে ধরছি পাঠ করার জন্য

মাদারীপুর এখন বাংলাদেশের একটি জেলা। আর রাজৈর মনে হয় থানা।

আজ থেকে ষাট বছর আগে আমি যখন জন্মেছি তখন রাজৈর থানা থাকলেও মাদারীপুর ছিল মহকুমা। এর অধীনে অনেকগুলিথানা ছিল। রাজৈর তার মধ্যে একটি। এই গ্রামেই আমার জন্মভিটে। এখনও আছে। সাহাপাড়ায়। প্রায় সত্তর ঘর সাহা একসঙ্গেবাস করত।

বলতে গেলে সকলেই ব্যবসায়ী। বৈশ্য। কারও কাপড়ের আবার কারও মিষ্টির। আমার ঠাকুরদা কাপড়ের ব্যবসা করতেন। বাবাপ্রথম দিকে পাঠশালার শিক্ষক ছিলেন। নিজেরই পাঠশালা। পরে গ্রামীন চিকিৎসক হন। ওঁর কাছে হোসেনপুরের নাম শুনেছি। যেমন শুনেছিকালকিনিবরমগঞ্জঘাঘর, কুলপদ্দি এই সব জনপদের কথা।

জলিরপাড় নামে একটি জায়গা আছে। সেখানে আছে একটি মিশনারি হসপিটাল। আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ে। একটা বড় বাঁধতার পাশেই এই বিখ্যাত হাসপাতালটি। সাহেব ডাক্তার ছিলেন। ছিলেন ডাঃ লক্ষ্মীকান্ত কীর্তনীয়া। উনি আমাদের তিন ভাইয়েরঅপারেশন করেছিলেন।

জলিরপাড়ে দুর্গাপুজোর দশমীতে বিশাল নৌকাবাইচ হতো। একবার দেখতেও গিয়েছিলাম।

আড়িয়াল খাঁ শাখা নদ কুমারের পারেই ছিল আমাদের গ্রাম রাজৈর।

এখানেই শেষ নয়, নিজ মাতৃভূমি নিয়ে নিজের টাইমলাইনে করা গৌতম সাহার অনবদ্য একটি পোস্টও দেয়া হলো নীচে।

বলি

****

গৌতম সাহা

সকাল হলেই একটা উদ্দাত্ত কন্ঠের আওয়াজ কানে ভেসে আসত, মা, আনন্দময়ী মা।

ধরণী সা এই ধ্বনিতে সাহাপাড়া জেগে উঠত।

রাজৈর গ্রামে সাহাপাড়ায় প্রায় সত্তর ঘর সাহা সম্প্রদায়। বৈশ্য সাহা। পেশা—- ব্যবসা। কেউ কাপড়ের, কেউ মিষ্টির।

আমাদের ছিল কাপড়ের ব্যবসা। ঠাকুরদা করতেন। পরে বাবা প্রথম জীবনে শিক্ষকতা করলেও পরে ডাক্তারীকে পেশা করে নেন।

প্রায় সকলের বাড়ি টিনেরকাঠের। দুতিনটে দালানকোঠা ছিল। তার মধ্যে একটা ধরণী সা আর একটা গোকুল সার।

ধরণী সাহার উত্তরে ভিটে দালান। পূব ভিটেতে বিশাল মন্ডপ। দুর্গাপুজো, কালিপুজো হতো।

দুর্গা পুজোর অষ্টমীর দিন পাঁঠা বলি হত ধুমধাম করে। বলি দেখতে যেতাম।

একটা অবোলা জীবকে চান করিয়ে, তেল সিঁদুর মাখিয়ে, কাঠগড়ায় গলা ঢুকিয়ে খিল আটকে দিয়ে বন্দি করা হত। তারপরএকজন প্রাণিটির পেছনের পা দুটো টেনে ধরত এবং আর একজন খাঁড়া হাতে

জয় মাবলে এক কোপে ধড় থেকে মাথাটা আলাদা করে দিত। ভয়েভক্তিতে দেখতাম বটে, তবে মোটেই ভাল লাগত না।

************

উনিশশো একাত্তর সাল। পূর্ব পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে। শেখ মুজিবর রহমানের ডাকে পূর্ব বঙ্গ স্বাধীনতার জন্য উত্তাল। মুক্তিযুদ্ধে মুসলিম হিন্দু সব ধর্মের যুবক, কৃষক, মজুর, ছাত্রছাত্রী, বুদ্ধিজীবী প্রায় সকলেই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সেই সংগ্রামে।

শুধু কিছু স্বার্থান্বেষী ধান্দাবাজ পাকিস্তানপন্থী পাক সেনার সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।

পাক শাসকদের চোখে তখন সব হিন্দু, আওয়ামী লিগপন্থী, স্বাধীনতাকামী মুসলিমরা দেশদ্রোহী। এদেরকে হত্যা করতে হবে। শুরুহল শতাব্দীর এক ঘৃণ্য জেনোসাইড। গণহত্যা।

এপ্রিলমে নাগাদ গ্রামে মিলিটারি ঢুকল। তল্লাশি চলছে। যুবকযুবতী, বয়স্ক পুরুষ পেলেই ধরে নিয়ে যাচ্ছেপাকসেনারাজাকারেরা। তাদের পরিণাম হয় মৃত্যু নাহয় ধর্ষণ। অনেক নারী ধর্ষিতা হয়ে পরে আত্মহত্যা বা মিলিটারি, রাজাকার, আলবদর দ্বারা নিহত হয়েছেন।

সাহাপাড়ার প্রায় সব মানুষই দূরের গ্রামে, বিল অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে। অনেকে ভারতে পাড়ি দিয়েছে।

সেদিন সকালেই ধরণী তাঁর একমাত্র যুবা ছেলে বছর আঠারোর পরিমল একবার বাড়িতে গিয়েছিলেন।

মিলিটারি পাড়ায় ঢুকেছে এই খবর তাঁরা পাননি। তল্লাশিতে ধরা পড়ে গেলেন পাকসেনার হাতে। ধরণীর স্ত্রী কতোকাকুতিমিনতি করলেন ছেড়ে দেওয়ার জন্য। ওরা ছাড়ল না। পিছমোড়া করে বেঁধে নিয়ে গেল। পরিণতি সহজেই অনুমেয়।

দেশ স্বাধীন হল। বাংলাদেশ পেল পূর্ব বাংলার বাঙালীরা। একেএকে অনেকেই দেশে ফিরতে লাগল দেশত্যাগী শরণার্থীরা।নিজেদের ভিটেমাটি ফিরে পেল। বাড়িঘর লুটপাট হয়ে গেছে। তা হোক। আবার ঘরদোর বানাল তারা।

সবাই ফিরছে। ধরণীর স্ত্রী বিমলা স্বামীসন্তানের জন্য পথ চেয়ে বসে আছেন। ওঁরা ফিরবেন। ক্ষীণ হলেও একটু আশা বুকেনিয়ে বসে আছেন বিমলা।

শাঁখাসিঁদুর সবই পরছেন।

কিন্তু ওঁরা আর ফেরেন না।

নতুন দেশ জাগছে। কাচারী ঘর পরিমলের স্মৃতিতে ক্লাব ঘরে পরিণত হল।শহীদ পরিমল যুব সংঘ বিমলা আপত্তি করলেননা।

পাড়ার সকলে যখন দুর্গাপুজো করবে বলে বিমলার কাছে অনুমতি নিতে এল তখন তিনি অনুমতি দিলেন বারোয়ারী পুজোর।

একজন জিজ্ঞেস করল, মাসিমা, অষ্টমীতে বলি হবে তো?

বিমলা একটু নীরব থেকে বললেন, না, আর রক্তপাত নয়।

রাজৈরের ভুঁইয়া  বাড়িতে সর্বশেষ নির্মান করা বাড়ির ছবি। সম্ভবত হাত বদল হয়ে‘ভুঁইয়া বাড়ি’ হতে ‘হাজী বাড়ি’ হওয়ার পর। এই ভুঁইয়া বাড়ির ‘১৩২৬ সাল, ২৯ বৈশাখ’ এর নির্মান করা অপর একটি দালানেরছবি দেওয়া হলো এই পোস্টে।
রাজৈরের ভুঁইয়া বাড়ি

তিনদিন আগে করা সেই পোস্টে ছিলো এই রাজৈরের ভুঁইয়া  বাড়িতে সর্বশেষ নির্মান করা বাড়ির ছবি। সম্ভবত হাত বদল হয়েভুঁইয়া বাড়িহতেহাজী বাড়িহওয়ার পর। এই ভুঁইয়া বাড়ির১৩২৬ সাল, ২৯ বৈশাখএর নির্মান করা অপর একটি দালানেরছবি দেওয়া হলো এই পোস্টে।

লিখাঃ তপন রায়

সাকা হাফং/ত্লাংময়/মোদং তং – বাংলাদেশের আনঅফিশিয়াল সর্বোচ্চ বিন্দু অভিযান

স্বপ্ন চূড়া আরোহনের গল্পঃ

তারিখঃ ১৪ নভেম্বর ২০২১ ইং

সময়ঃ বিকেল ৪ টা ৪০ মিনিট (সামিট পুশ থান্দুই পাড়া থেকে আগের দিন রাত ১২ টা)

প্রাপ্ত উচ্চতাঃ ৩৪৮২ ফিট (অল্টিমিটার অফলাইন এ্যাপ)

অনেক চড়াইউৎরাইএর পর বাংলাদেশের আনঅফিসিয়াল সর্বোচ্চ বিন্দু/সর্বোচ্চ চূড়া সাকা হাফং / ত্লাংময় / মোদক তং এর সামিট পয়েন্ট খুঁজে পাওয়ার পর অনেক জোরে একটা চিৎকার দিতে খুব ইচ্ছে করছিল কিন্তু দিতে পারিনি। তবে সামিট পয়েন্ট খুঁজে পাওয়ার পর প্রথম তোলা নির্ভেজাল ছবিটাই সেই সময়ের অনুভুতি বুঝাতে অনেকটাই যথেষ্ট ……

তখন কি যে আনন্দ লাগছিল তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব না, এমন খুশি আমি আমার জীবনে আর কখনো হয়েছি বলে মনে পরে না।

আলহামদুল্লিলাহ, মহান আল্লাহ্‌র অশেষ অনুগ্রহে সেদিন আমরা ফাইনালি সফল হতে পেরেছিলাম। অনেক দিনের একটা অধরা স্বপ্ন সেদিন পূরণ হয়েছিল।

২০২১ ইং সালের জানুয়ারী মাসের যোগি জোতল্যাং ট্যুরে নিজের ফিটনেসের এসিড টেস্ট সফল ভাবে উৎরানোর পর সাকার স্বপ্নটা খুব বেশি রকমে চেপে বসেছিল মনে। কিন্তু প্রথমে নিজের অসুস্থতা তারপর পারিবারিক সমস্যা আর লকডাউনের কারনে কোন ভাবেই নিজের স্বপ্নের কাছে পৌছাতে পারছিলাম না।

তাই বর্ষা শেষে বিল্লালের “সাকা” ট্যুর দেখে কোন কিছু চিন্তা না করেই তার সাথে যোগাযোগ করে ট্যুর কনফার্ম করলাম। আসলে ২০২২ এ এসে সাকা যেমন ডালভাত হয়ে গিয়েছে তখনো তেমনটা হয়ে উঠেনি।  

ট্যুরের প্রথম দিন দুপুর দেড়টায় আমরা থানচি থেকে শেরকর পাড়ার উদ্দেশ্যে ট্রেক শুরু করি। বোর্ডিং পাড়া  পৌছতে পৌছতে সূর্য ডুবে যায়। এরপর অন্ধকারে ট্রেক করে শেরকর পাড়া পৌছাই রাত নয়টায়। পরদিন সকালে তাজিডং ২ টা পিক সামিট করে সিমত্লাম্পিং পাড়ায় পৌছাই সকাল ১১ টায়। সেখানে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে থান্দুই পাড়ায় পৌছাই বিকেল ৫ টায়। এরপর থান্দুই পাড়া থেকে রাত ১২ টায় শুরু হয়ে ট্রিপের মেইন ট্রেকিং। 

কিন্তু সামিট পুশ করার শুরুতেই দেখা গেল জিপিএস ট্রেক যে মোবাইলে ছিল সেটা কোন ভাবেই অন হচ্ছে না, তাই ট্রেইলের শুরু থেকেই পদে পদে আমরা হোচট খেয়েছি রাস্তা হারিয়েছি। রেমাক্রি খাল থেকে নেফিউ ঝিরির রাস্তা খুজে পেতেই প্রথমে হোচট খাই। তারপর সমস্যায় পরি নেফিউ ঝিরি থেকে ৩৬ কিলো উঠার রাস্তা খুজে পেতে। এর পরের সময় গুলো ছিল আরও ভয়াবহ।

নেফিউ ঝরনা পার হতে হতেই ভোরের আলো ফুটে যাওয়ায় নেফিউ পাড়া হয়ে সাকার দিকে যাওয়ার সুযোগ আর আমাদের রইল না। তাই ঝিরি দিয়ে ৩৬ কিলোর দিকে যাওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায় আমাদের হাতে আর রইল না।

এসময় বিল্লাল পাড়ার দিকে কিছুদূর একা গিয়ে রেকি করে ফিরে এসে বলল আর খুব বেশি সময় লাগবে না, আমরা এখানে আমাদের ব্যাগ রেখে যাবো এবং ফিরে এসে এখানেই সকালের নাস্তা করবো। সেই কথা মোতাবেক আমরা কয়েকটা খেজুর এবং কিসমিস মুখে দিয়ে ব্যাগ ঝিরিতে রেখেই কেবলমাত্র পানির বোতল সাথে নিয়ে রওনা দিলাম।

বর্ষা সিজনের কারনে এর আগের প্রায় ৭ মাসে এই চূড়ায় তেমন কেউ আরোহন না করায় অল্প কিছদূর উঠার পরই চূড়ায় পৌছানোর কোন ট্রেইলেরই অস্তিত্ব ছিল না। 

এরই মধ্যে ৩৬ কিলো থেকে সাকায় উঠতে শুরু করার অল্প কিছু পরই টিমের একমাত্র অভিজ্ঞ ব্যক্তি বিল্লাল শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পরে। ঘন জজ্ঞলের মধ্যেই তার প্রায় জ্ঞান হারানোর মত অবস্থা হয়ে পরে, সে চোখ মেলে তাকাতেও পারছিল না।

আমাদের সাথে তখন ২ বোতল পানি ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তাই তখন রেস্ট নেওয়া ছাড়া তার আর অন্যকোন উপায় ছিল না। একদিকে চূড়ায় উঠার ট্রেইল খুঁজে না পাওয়া অন্যে দিকে টিম লিডারের এমন অসুস্থতায় আমরা ভয়ানক বিপদের মুখোমুখি হয়ে পরি। 

পরে এই রকম একটা মহাপ্রতিকূল পরিবেশের সাথে যুদ্ধ করে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার গুরু দায়িত্বটা আমি নিজ থেকেই কাধে তুলে নেই। সাপ জোঁক বিচ্ছু বা অন্য কোন বিষাক্ত/ভয়ংকর প্রাণী কোন কিছুর কথাই তখন মাথায় আনিনি। সামনে কি পরছে কিছুই পরোয়া করিনি, কোথায় পা পরছে তাও কেয়ার করিনি।

চূড়ায় উঠার রাস্তা খুঁজে না পেয়ে আমরা দুই পাহাড়ের একটা খাঁজে চলে আসি, যেই খাঁজ থেকেই মুলত নেফিউ ঝিরির শুরু।  চিন্তা করলাম এই খাজ বেয়েই হয়তো আমরা উপরে উঠতে পারবো। ঝোপজঙ্গল, গাছ, মুলি বাঁশ যাই সামনে পরেছে হাতপা ব্যবহার করে ভেঙ্গে কেবলই সামনে এগিয়েছি, আর পেছনে ছিল বাকি চারজন।

যেকোন উপায়ে লক্ষ্য পৌছার অন্যরকম একটা নেশা পেয়ে বসেছিল তখন আমাদেরকে। আস্তে আস্তে সকাল গড়িয়ে দুপুর গড়িয়ে সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পরে। তখন আরেকটি ভয় এসে ভর করে এমন প্রতিকূল পরিবেশে অন্ধকারে কিভাবে নিচে নেমে আসবো।

অনেক কষ্টের পরে যখন চূড়ায় উঠলাম তখন শুরু হল আরেক যুদ্ধ। কোন ভাবেই সাকা সামিটের ল্যান্ডমার্ক সেই বিখ্যাত গর্ত খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমরা বিশেষ করে আমি আর বিল্লাল এদিক সেদিক তন্য তন্য করে খুজেও সেই সামিট পয়েন্ট পাচ্ছিলাম না। সামিট পয়েন্ট খুঁজতে গিয়ে আমরা চূড়ার বাশ ঝাড় তছনছ করে ফেলছি, উত্তর দক্ষিণে তিনবার এসেছি গিয়েছি। চূড়ার নিচের ক্যাম্পও দেখেছি কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সামিট পয়েন্টই খূঁজে পাইনি।

আমরা সবাই তখন চুড়ান্ত হতাশ হয়ে পরেছিলাম, ধরেই নিয়েছিলাম আমাদের ফাইনাল সামিট আর হচ্ছে না। এত কষ্ট করেও আমাদেরকে ব্যার্থতার গ্লানি নিয়ে ফেরত যেতে হবে। সূর্য ডুবতে তখন আর মাত্র বিশ মিনিট বাকি ছিল।

কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। সাথে খাবার পানি থাকলে রাতে চূড়ায় থেকে যেতাম কিন্তু সেটাও সম্ভব ছিল না। শেষ চেষ্টা হিসেবে আমি আর বিল্লাল তখন রিজ ধরে হাটা শুরু করলাম বাকিরা একটা জায়গায় বসে ছিল। অল্প কিছুদূর হাটার পরে আমিই প্রথম গর্তটা দেখলাম, আর বিল্লালকে ডাক দিলাম।

এরপর বাকি তিনজন আসলো। সামিট পয়েন্ট দেখার পর উত্তেজনায় খুব জোরে একটা চিৎকার প্রায় দিয়ে ফেলেছিলাম কিন্তু পাশে আরাকান মামুদের আস্তানা হওয়ায় নিজেকে আটকেছিলাম।

তারপর অন্ধকারে ঘন ঝোপঝাড় অতিক্রম করে মাত্র দুইটা মোবাইলের আলো সম্বল করে আমাদের ৫ জনের নেমে আসার কথাতো রয়েছেই। ভুল অনুমানের কারনে মাত্র একটা বোতল সাথে নিয়ে বাকি সকল ব্যাগ নেফিউ ঝিরিতে রেখে যাওয়ায় পাহাড়ের উঠার সময় মাত্র এক বোতল পানি ছাড়া আর কিছুই সাথে ছিল না।

ঝিরি থেকে চূড়ায় উঠা নামার এই দীর্ঘ সময়ে আমাদেরকে খাবার এবং পানির অবর্ননীয় কষ্টের মুখোমুখি হতে হয়েছে। তাই উপরে থাকার চিন্তা বাদ দিয়ে রাতের অন্ধকারেই এমন প্রতিকূল পথে আমাদের নেমে আসতে হয়েছে।

আমাদের খাবার আমাদের ব্যগে ছিল আর ব্যাগ ছিল ঝিরিতে। সেইসময় ব্যাগের কাছে পৌছানো আমাদের পক্ষে পুরোই অসম্ভব ছিল। তাই খাবারের জন্যে রাতে নেফিউ পাড়ায় ঢুকা ছাড়া আমাদের অন্য কোন উপায় ছিল না। রাত ১১ টার পর নেফিউ পাড়ার একটা দোকানে ঢুকে আমরা রাতের খাবারের ব্যবস্থা করতে পেরেছিলাম।

সেটা ছিল ভোরের খেজুর কিসমিস খাওয়া পরে সেদিন খাওয়া একমাত্র ভারী খাবার। সিদ্ধ ডিম আর ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে সেখানে চেয়ারে বসেই কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে রাত তিনটায় পাড়া থেকে ঝিরির উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পরলাম। ব্যাগের কাছে পৌছাতে পৌছাতে আবার সকাল হয়ে গেল। 

তারপর ছিল আমাদের থানচি ফিরে আসার কাহিনি। শালুকিয়া পাড়ার আগে ৩৩ কিলোতে সকালের মেঘ দেখে আমরা একটু দাড়িয়েছিলাম। এমন সময় প্রাতভ্রমণে বের হওয়া বিজিবির ৩ সদস্য আমাদের দেখে ব্যাপক জেরা শুরু করে। তাদেরকে কোন ভাবে বুঝিয়ে শালুকিয়া পাড়ায় চলে আসি। সেখান থেকে কিছু হেটে কিছুদূর পানির ট্রাকে কিছুদুর চাদের গাড়িতে আমরা থানচি পৌছাই।

জিপিএস বা গাইড বা নূন্যতম একটা দা না থাকার পরও কেবলমাত্র মহান আল্লাহর কৃপা আর নিজেদের দৃঢ় মনোবলের উপর ভর করে এমন প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে ঘন ঝোপঝাড় আর জঙ্গল চিড়ে সামনে এগিয়েছি। যুদ্ধ করে সফল হয়ে নিরাপদে ফিরেও এসেছি। 

সামিট পুশ থেকে চূড়ায় উঠতে সময় লেগেছে টানা ১৬ ঘন্টা আর উপরে ঘন জঙ্গল আর ঝোপঝাড়ের কারনে সাকার সামিট পয়েন্ট সেই বিখ্যাত গর্ত খুঁজে পেতেই লেগেছে আরও ১ ঘন্টা।

সেই সিজনে মাত্র ৭ মাসে বিল্লাল এর পরে আরও ১১ বার সাকা গিয়েছিল। সৌভাগ্যক্রমে সেই ১২ তম বারে  ২১ মে২২ইং তারিখে সেই স্বপ্ন চূড়ায় ২য় বারের মতো পা রেখেছি।  ৩৬ কিলো থেকে চূড়ায় পৌছাতে ১ম বার যেখানে প্রায় ১১ ঘন্টা লেগেছে সেখানে ২য় বার সেই পথ পেরুতে মাত্র ৪০ মিনিট লেগেছে। এতেই বুঝা যায় সাকার রুট পরবর্তীতে কতটা সহজ হয়ে গিয়েছে। আর এখনতো রীতিমতো ডে ইভেন্ট শুরু হয়ে গেছে সাকাতে।

২য় বারে সাকার চূড়ায় যখন যাই তখন ভোরের মেঘের চমৎকার ভিউ পেয়েছিলাম কিন্তু জয়ের ফিলিং ১ম বারের তুলনায় হাজার ভাগের একভাগও অনুভূতি হয়নি।

ঘন্টার পর ঘন্টা রাতে ট্রেকিং, জিপিএস ট্রেক না থাকা, ধারণা উপর ভর করে আগানো, বারবার রাস্তা হারানো, নেফিউ ঝিরির বিশাল বিশাল সব পিচ্ছিল বোল্ডার, খাড়া পথে উঠানামা, জোকের অবিরাম আক্রমণ, ঘন ঝোপজঙ্গল, আর্মিবিজিবি আর মামুদের সাথে লুকোচুরি খেলা, কি ছিল না আমাদের সেই ট্রেকে?

এই ট্রিপের কিছু স্মৃতি কেবলমাত্র একান্তই আমাদের পাঁচজনের হয়ে থাকবে আজীবন, হয়তো কখনোই তা কাউকেই বলা হয়ে উঠবে না, বুঝানোও যাবে না।

ঠান্ডা মাথায় ভাবলে আমাদের শেষ দিকের এক্টিভিটিগুলো পুরোই হিতাহিতজ্ঞানশূন্য পাগলামী মনে হচ্ছে এখন। এটা সহজ গমনযোগ্য কোন ট্রেক হলে আমি কখনোই শেষ দিকের সেই পাগলামি গুলো করতাম না, নিশ্চিত ফিরে আসতাম।

আন্তরিক ধন্যবাদ এবং অবিরাম ভালোবাসা টিম মেটদের……

Md Billal Hossain

শাকিল চৌধুরী শুভ 

Salma Patowary

Monir Hossain Sajid

মূল লেখা : কামরুল হাসান ভুঁইয়া

নাটেশ্বরের ‘বসুবাড়ি’

নাটেশ্বরের 'বসুবাড়ি'

এই নদীতেও নৌকা চলতো একসময়। তাও যেসে নৌকা নয়, বড় বড় বজরা। না এটা আমার কল্পনা নয়, এর সাক্ষ্য রয়ে গেছে নদীতীরে। এই সাক্ষ্য এই ঘাট, ধাপে ধাপে তলেদেশে নেমে আসা শান বাঁধানো ঘাট। ভাগ্যিস ঘাটটি ছিলো, নইলে জানাও যেতো নাবসুবাড়ির কথা বা নাম।

নাটেশ্বরের ‘বসুবাড়ি’

নদীটিও ছিলো দেখার মতো নইলেসিংহাসনকরবে কেন ঘাটের দু পাশে? একপাশেরসিংহাসনের নীচে ঘাটের নাম, ‘বজরা ঘাট’, আরেক পাশেরটার নীচে বাড়ির নাম, ‘বসুবাড়িশ্বেতপাথরে খোদাই করা। কত বছর আগের? এরও সাক্ষ্য আছে মন্দিরটিতে। 

স্বর্গীয় নীলকমল বসু মহাশয়ের স্মৃতিমন্দির, স্থাপিত বাংলা ১৩৩৭ বাংলা।

তার মানে বসু মহাশয় মারা গিয়েছেন আরো আগে। বাড়িটি তা হলে তারও আগের। হয়তো বানিয়েছিলেন নীলকমল বসু মহাশয়ের পুত্র। নদীটি মরে যাওয়াতে ঘাটটির আর উপযোগিতা নাই।

আমি গেলাম দু দু বার। মিনিট দশ পনেরো থাকা হয়েছিলো। কিন্তু জনমনিষ্যির চিহ্ন দেখিনি। বাড়ি থেকে ঘাটে আসতে এক পাশে একটু ভেতরে এই স্মৃতি মন্দির।

নীচতলা বর্গাকার। এক এক দিকে ৩টি করে খিলান। সারা গায়ে, পিলারে, কার্নিশে লতাপাতার পাথরের/চিনি টিকরির কাজ। এমন যার বাড়ির ঘাট আর পূর্বপুরুষের স্মৃতি মন্দির, বাড়িটা দেখা গেলো না।

না জানি কতো সুন্দর হবে বাড়িটি! ( বাস্তবে হয়তো হতাশ হতাম নুতন উঠা দালান দেখে!) 

আর এ জন্যই রহস্য থেকে গেলো। দেখারতো উপায়ও ছিলো না। দুবার গেলাম, ডিঙ্গিটিঙ্গিও নেই, সাঁকোও নেই। পুরো শুকোয়ও না যে জল কাদা মাড়িয়ে চলে যাবো ওপাড়ে। হয়তো যাওয়া যায় অনেক ঘুরিয়ে। এর জন্য দরকার স্থানীয় কারো সঙ্গ। 

বসুদের জন্য বিখ্যাত মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের মালখানগর। বুদ্ধদেব বসু, সুনির্মল বসুর পৈত্রিক গ্রাম।

আকাশ আমায় শিক্ষা দিল উদার হতে ভাইরের কবি সুনির্মল বসু। জন্ম ভারতের বিহারের গিরিডিতে, কিন্তু পৈত্রিক গ্রাম মালখা নগর। মালখানগরে এখনো দেখা যায় কয়েক গন্ডা বসু পরিবারদের বাড়ি।

বসুদের কেউ নেই। মালখানগরের বসুরা সম্ভবত জমিদার ছিলেন না। তবে শিক্ষাদীক্ষায় যে অগ্রসর ছিলো তা বহুজনবিদিত। স্বচ্ছল যে ছিলো এর চিহ্ন তো ভেঙ্গে পড়া বাড়িঘরের চিহ্নতেই বিদ্যমান।  

জানার মাঝে মালখানগরের জমিদার বাড়ি আছে একটা। এরা বসু ছিলেন না। বুদ্ধদেব বসুর পত্নী প্রতিভা বসু অর্থ্যাৎ রানু সোমের মামার বাড়ি। তবে এই ঘাট এই বাড়ি এই নদী বসু পরিবার খ্যাত মালখানগরে নয়। মুন্সিগঞ্জ হলেও সিরাজদিখানে নয়, এটি টঙ্গিবাড়ি উপজেলা। গ্রামের নাম নাটেশ্বর। গরমটা একটু পরে আসলে বাড়িটা টার্গেট করে আবার যাওয়া যায় টঙ্গিবাড়ির নাটেশ্বর।

বাড়ি না থাক, ঘাটটাতে বসে আসা যাবে একটু সময়। আরেকটু খোঁজখবর নিয়ে জেনে আসা যাবে নদীটির নামও।

লিখাঃ তপন রায়

খচড়ার হাওর আর রক্তি নদীর গল্প

০১

সুরমা নদী থেকে বোটে করে খচড়ার হাওরের পথ ধরে যাচ্ছি, সকাল দশটা । ঢাকা থেকে বাসে করে সুনামগঞ্জ শহরে নেমে নতুন বাস স্ট্যান্ডে নামলাম ।

খচড়ার হাওর আর রক্তি নদী

সাহেব বাড়ির ঘাটে সুরমা নদীতে আমাদের বোট লাগানে আছে। সুরমা নদী থেকে সরু শাখা নদী ধরে খচড়ার হাওড়ে প্রবেশ করলাম।

চারপাশের সৌন্দর্য্যে যারপরনাই মুগ্ধতা, শিল্পীর তুলিতে আঁকা এক হাওড় জীবন। এখানে প্রচুর ঘোড়া দেখতে পাবেন আপনি, এখানকার কৃষি ঘোড়া নির্ভর। বেশিরভাগ ঘোড়া জামালপুর থেকে আনা হয়।

আমরা খচড়ার হাওর হয়ে রক্তি নদীতে প্রবেশ করেছি, গন্তব্য যাদুকাটা নদী আর শিমুল বাগান !
( চলবে …….)

লেখক : Dr.Asif MRCEM-UK

বড় কাটারার নীরব কান্না

বড় কাটারার নীরব কান্না
বড় কাটারার নীরব কান্না

আমলটা ছিলো মোগল নির্মান আমলের স্বর্ণযুগ। এর আগে নির্মান হয়েছে তাজমহল, Akbar Tomb, Humayun Tomb, দিল্লী জামে মসজিদের মতো স্থাপনা।

সেই আমলে বুড়িগঙ্গার তীরের নির্মিত ঢাকার বড়কাটরা-‘র গায়ে সাহস করে উৎকীর্ণ করা হয়েছিলো –

“এর রূপের কাছে বেহেশতের সৌন্দর্যও ম্লান হয়ে যায়। এবং বেহেশতি সুখের পুর্ণ সুখ এখানে আস্বাদন করা যায়।”

এটির নির্মান হয়েছিলো শাহজাহান তনয় শাহ সুজার নির্দেশে তাঁর প্রাসাদ হিসাবে ।

Akbar Tomb, Humayun Tomb দেখার জন্য কবে থেকেই আমি হিসাব করছি মনে মনে! হয়ে উঠছে না। সেই সময়েই ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়া হলো শাহ সুজার সখের সেই ‘স্বর্গ’ বড়কাটরা।

শাহ সুজা ছিলেন বাংলার সুবেদার (১৬৩৯-১৬৬০)। বড়কাটরার স্থপতি ছিলেন শাহ সুজার মীর-ই-ইমারত (Chief Architect) মীর মোহাম্মদ আবুল হাশেম সামদানী। শাহ সুজার থাকা হয়নি এই প্রাসাদে। তিনি থাকতেন নীমতলি কুঠিতে।

বড়কাটরা-কে পরে করা হয় মুসাফিরখানা। তবে পরে মীরজুমলার বাসস্থান ছিলো এটি। শায়েস্তা খাঁ, মীর জুমলার দরবারও বসেছে এই সৌধে। পলাশীর পতনের পর সুবেদার জেসারত খাঁও ছিলেন কিছুদিন বড়কাটরাতে।

অবশ্য এর জৌলুস শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই, যখন রাজধানী সরে যায় ঢাকা থেকে মুর্শিদাবাদ। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী দেওয়ানী শাসনভার গ্রহন করলে জেসারত খাঁ ১৭৬৫ সালে উঠে আসেন নীমতলি কুঠিতে।

এর পর পুরোই পরিত্যক্ত হয় বড়কাটরা। নীমতলি কুঠির অবস্থান পড়ে গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পড়ে এশিয়াটিক সোসাইটি চত্বরে। তাই সাহস করে নি ভেঙ্গে শপিং মল করতে। নইলে সেটিও থাকতো না। সেটিকে রিস্টোর করা হয়েছে তিন-চার বছর আগে।

কিন্তু বড় কাটরা সেই পুরোনো ঢাকায়। তেমন কারো যাওয়াও পড়ে না নুতন ঢাকা হতে। ইংরেজ আমলেও চোখে পড়তো বুড়ি গঙ্গা থেকে। গাছগাছালিতে ঢাকা পড়েছিলো, তবে আকৃতি বুঝা যেতো।

ক্রমে এর চতুর্দিক ঘিরে একে একে নির্মান হয় কুৎসিত কদাকার সব দালান। ভাঙ্গার বছর দুই আগে আমি যখন শেষ দেখলাম, তখনতো একাংশও দেখা যেতো না। ছবি তোলার জন্য ফোকাস করতে হয়েছে আশপাশের সব দালানের ‘চিপা-চাপা’ দিয়ে।

বড় কাটারার নীরব কান্না

মাদ্রাসা একটি আছে শাহ সুজার সখের সেই প্রাসাদে। সেও দেশভাগের আগে থেকে, ১৯৩১ সাল থেকে। কওমী মাদ্রাসা, জামিয়া হোসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদ্রাসা। অতীত স্বর্গের নাম নিশানার কিছুই অবশিষ্ট নেই! বরং রীতিমতো কুৎসিত সব মিলিয়ে।

তারপরও একসময়তো স্বর্গ ছিলো। কল্পনায় ভেবে নিতে অসুবিধা কি ? Lucky আমি। যেটুক ছিলো, সেটুকুতো দেখেছি।

আজ গেলেতো তাও দেখতে পাবো না। অগত্যা দিল্লী আগ্রাই যেতে হবে, নান্দনিক সব মোগল স্থাপনা দেখতে, এদিকে শাহ সুজার সেই বেহেশত যখন ভাঙ্গা হচ্ছে, দেশপ্রেমীরা সব বুক চাপড়াচ্ছে প্রয়াত বৃটিশ রাণীর জীবদ্দশায় করা ‘লুটপাট’ নিয়ে।

তারা অপেক্ষায় আছে সেখানে শপিং মল হবে, মোগলাই খানার রেস্তোরাঁ হবে, টেবিলে মোগলাই খানার ছবি নিয়ে পোস্ট দিবে ফেস বুকে।

লেখা ও ছবি : Tapan Roy

ক্রিসতাং রিজার্ভ ফরেস্টের এক অতিকায় একাকী দানব

ক্রিসতাং রিজার্ভ ফরেস্ট
ক্রিসতাং রিজার্ভ ফরেস্ট

সময়ে গাছের নীচে দাঁড়াতে পারাও মনে হয় সৌভাগ্যের ব্যাপার। ছবির এই সৌভাগ্যের মুহুর্তটি গত জুন মাসের ১৮ তারিখের দুপুর দুই ঘটিকা।

এটা ‘খ্যামচং পাড়া’ থেকে ‘রুংরাং’ পাহাড় আর ‘ম্যানিয়াং পাড়া’ যাবার পথে। নামের শেষে ‘পাড়া’ থাকলেও ভিন্ন ভিন্ন দুটি পল্লী। পাহাড় ডিঙ্গানো বিস্তর দূরে দূরে ‘নিকটতম’ দুই ম্রো পল্লী।

ম্রো বা মুরুং হচ্ছে বান্দরবানের বিশিষ্ঠ পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। ঝুঁকিপূর্ণ চরম কষ্টকর এমন যাত্রাপথে অমূল্য কিছু মুহুর্তের একটি হচ্ছে এই বৃক্ষ মহারাজের সাক্ষাৎ লাভ।

ক্রিসতাং রিজার্ভ ফরেস্ট, দানবীয় কিছু বৃক্ষ আজও টিকে আছে
ক্রিসতাং রিজার্ভ ফরেস্ট, দানবীয় কিছু বৃক্ষ আজও টিকে আছে

ক্রিসতাং এর বনের বিশাল সব মহীরুহের বেশীর ভাগই নাকি মাদার গাছ। মাদার গাছই হোক আর যে গাছ, এমন এক মহীরুহের নীচে দাঁড়িয়ে শ্বাস নিতে পারাও এক মহা পূন্যের কাজ।

ক্রিসতাং রিজার্ভ ফরেস্ট, দানবীয় কিছু বৃক্ষ আজও টিকে আছে

এমন গাছের সান্নিধ্য যেখানে মিলে, এর চাইতে বড় আর কি তীর্থ হতে পারে। বনখেকোদের দৌরাত্মে পুরো বন যেখানে প্রায় বড় বৃক্ষশূণ্য, সেখানে এই অতিকায় বৃক্ষ স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে কি কষ্ট বুকে নিয়ে – কে জানে!

লেখা : Tapan Roy
ছবি : Tapan Roy, Asif Soikot

দামতুয়া ফলস, প্রকৃতির এক বিস্ময়

মাত্র একটি দিন পৃথিবী থেকে ছুটি নিতে চেয়েছিল। ওরা ১১ জন। পৃথিবীর বাইরে কোন স্বর্গ রাজ্যে।

এটা চেম্বার, ডিউটি এবং কাজ ছাড়া নিজেদের ভাবতে না পারা ভীষণ সৌখিন ছাপোষা চিকিৎসকের স্বর্গযাত্রার(!) কাহিনী!

আমার শত জনমের ভাগ্য এই ১১ জনের একজন আমি।

হাতে যদি একটু সময় থাকে পড়ে আসতে পারেন পাগলামিতে ভরা আমাদের একটি দিনের গল্প।

ভোর চারটায় ভূমিকম্প দিয়ে বান্দরবানের আলীকদম থেকে যাত্রার শুভ সূচনা। ঘুম ঘুম ভোরে সবার প্রথম গন্তব্য ‘১৭ কিলোমিটার’।

মখমলের মতো সবুজ পাহাড়ের বুকের উপর সাপের মত প্যাঁচানো আঁকাবাঁকা পথ। তার উপর দিয়ে চাঁদের গাড়ি যখন আমাদের সবার চোখের ঘুম উড়িয়ে দুর্দান্ত গতিতে ছুটে চলছে, তখনও মেঘের ঘুম ভাঙেনি। পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে পরম নির্ভরতায় আকাশ ঘুমিয়ে আছে। সম্ভবত ভোর বেলায় ভূমিকম্পে সে কিছুটা বিরক্ত! ঘুমিয়ে ছিল ভালই ছিল। হঠাৎ জেগে উঠলো। ঘুমিয়ে থাকার জন্য বোধহয় কোন কাজ পিছিয়ে গেছে। সে কাজের চাপ সইতে না পেরে কান্নাকাটি শুরু।

পাহাড়ী পথ

আর ১ ঘন্টা পিছিয়ে পড়লাম! আমার মেডিকেলের সিনিয়র ভাই এবং সিনিয়র বিসিএস পঙ্কজ ভাই । তিনি আবহাওয়াবিদ এর ভূমিকায় চলে গেলেন এই অবস্থায় ট্রাকিং কতটা ঝুঁকিপূর্ণ সেটি জাতিকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। আসলেই স্যাঁতসেঁতে এবং পিছলা হয়ে যাবে খাড়া পাহাড় আমাদের প্রথম ট্রেকিং ইত্যাদি ইত্যাদি!

কিন্তু কোন লাভ হলো না। আমাদের সবার শরীরে পাগলামির যে অ্যান্টিজেন ঢুকে গেছে তার কোন অ্যান্টিবডি নেই।

বৃষ্টি শেষ হলে ট্রেকিং শুরু হল। যাত্রীদের বেশিরভাগই জীবনে এটি প্রথম ট্রেকিং। যেখানে যাওয়া হচ্ছে সেই বিষয়েও কোন খুব একটা আইডিয়া ছিল না। হাতুড়ে ডাক্তার যেমন না জেনে অবলীলায় ফোঁড়া অপারেশন করতে পারেন, তেমনি আজকের এই দল ‘হাতুড়ে ট্রেকার’।



স্বভাবতই যে সময় পৌঁছানোর তার থেকে একটু সময় বেশিই লাগলো। পৌঁছানো থেকে নিরাপদে পৌঁছনো ছিল এই হাতুড়ে ট্রেকার দের মূল লক্ষ্য।

ট্রেকিংয়ে অবলীলায় হেঁটে গেছে ডা সুদীপ্ত,ডা নীপা,ডা মুকিত। নিপা মোটামুটি দেশের সব জায়গাতেই গেছে। সম্ভবত এইমাত্র যদি নতুন কোন ঝর্ণা আবিষ্কার হয় সে ওখানেও যাবে। এটাও হতে পারে যে নিপাই কোন জায়গা আবিষ্কার করেছে। ‘তাহার বন্ধু’ সুদীপ্ত যাকে আমার খুব ঠান্ডা বলে মনে হয়েছিল, কিন্তু সে খুলনার চুইঝাল। এর আগে সে মৌলভীবাজারের হামহাম গেছে। তার ভাষ্যমতে এই ট্রেকিং ওটার কাছে কিছুই না। মুকিত ভাই গেছে জাদিপাই ।

আমাদের মধ্যে সবথেকে সিনিয়র কিন্তু শিশু প্রসেনজিৎ ভাই ( শিশু ডাক্তার) যতক্ষণ পেরেছেন প্রত্যেককে উৎসাহ দিয়ে গেছেন। বরগুনার mocs মেহেদী যতক্ষণ পেরেছে গানে গানে ভরিয়ে রেখেছে। যার কথা না বললেই নয় আমাদের উখিয়ার রাজকুমার লিডার অফ দা ডে ইমরান ভাই।
যখনই অভিযাত্রী দল ঝিমিয়ে বা পিছিয়ে পড়েছে তখনই তিনি গর্জে উঠেছেন তার অমর বাণী নিয়ে

Guys ! Hold your Heart…
সমগ্র যাত্রায় এই দৈব বাণী টনিকের মত কাজ করেছে!

আমি আর আলামিন ভাই বৃষ্টি জড়ানো কাদা পথে কয়েকবার ডিগবাজি খেয়েছি। আসলে আমরা কিন্তু ইচ্ছা করেই খাচ্ছিলাম। আমরা ছোটবেলায় ফিরে যাচ্ছিলাম আর কি!!

সম্ভবত প্রথম দিকে তিনটি পাহাড় অতঃপর কিছুটা সমতল জায়গা। তারপর একটি বেশ ভাল রকমের খাড়া পাহাড় পার হতে হয়েছিল আমাদের।এক একটা পাহাড় সম্পূর্ণটা সবুজ দিয়ে মোড়ানো তাতে দূর থেকে ছোট ছোট আদিবাসীদের ঘর।

যেন বাইরের কেউ বেশি বিরক্ত না করে তাই মেঘ তার মেঘমালা দিয়ে পাহাড়কে পরম মমতায় জড়িয়ে রেখেছে।
বহিরাগতের অনুপ্রবেশ নিষেধ!

মনে হয় থেকে যাই এখানে সারা জীবনের জন্য…

যত গভীর মনে প্রবেশ করেছি ততই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঝিরির পরিমাণ। রীতিমতো সুগন্ধ সুরঙ্গ ভাব। দুপুর বারোটাতেও এতটুকু আলো কোনভাবে পৌঁছায়নি সেখানে। আমাজান জঙ্গলের মত। উপরে খাড়া পাহাড় নিচে ঝিরি।

যে পথগুলো ঝিরির মধ্য দিয়ে যেতে হয় সেগুলো একই সাথে খুব আরামের ও বিপদ সংকুল। কারণ ঠান্ডা পানি যখনই পায়ে লাগে তখনই ভালো লাগে ।

হাঁটার পথে কষ্টটা ঠান্ডা পানিতে কিছুটা প্রশমিত হয়। আর বিপদ সংকুল হলো কতটা নিচে পা দিতে হবে এটা বোঝা যায় না। এক একটা পাথরের উচ্চতা এক এক রকম। লাঠি দিয়ে পথ মেপে মেপে যেতে হয়।

দামতোয়া মূল ঝরণার আগে ব্যাং ঝর্ণা বলে একটি ঝর্ণা আছে এখানে আসার পরে আমি একটু প্রাণ ফিরে পাই। এর পরের লাফাতে লাফাতে সবার প্রথমে ঝরণায় পৌঁছালাম।

সম্ভবত আমি আমার জীবনে এর বেশি জোরে হর্ষধ্বনি করিনি। বিষ্ময়ে বিমুর হতবাক হয়ে গেলাম একসাথে দুই তিনটা ঝরনা দেখে। বৃষ্টি হওয়ার দরুন পানির উচ্চতা যেমন বেড়েছে তেমনি পানির রঙেও এসেছে গাঢ়ত্ব।

সমস্ত কষ্ট ভুলে গেলাম! ভুলে গেলাম আবারও হয়তো তিন ঘন্টা যাত্রা করে ফিরে যেতে হবে! ভুলে গেলাম সময় মতো আজকেই বিয়াম এ ১০টার মধ্যে পৌঁছাতে হবে। আগামী কাল সকাল ৫টায় পিটি সেশন! ভুলে যেতে চাইলাম জীবনের সমস্ত তিক্ত অভিজ্ঞতা! শুধু মনে হলো, আমাদের ১১ জনের জীবনের হয়তো একসাথে এই সময়টা আর আসবেনা।

বৃষ্টি পরবর্তী খরস্রোতা শীতল জলে ভাসিয়ে দিলাম মন পাবনের নাও। পৃথিবীর কোন শব্দ প্রযোজ্য নয় এই মুহূর্তের বর্ণনা দেবার জন্য। বিশাল জলের প্রবল স্রোতের সামনে আবারও মনে পড়ে গেল আমিত্ব কত ক্ষুদ্র একটি শব্দ।

কতক্ষণ ছিলাম এভাবে জলে ডুবে ডুবে মনে নেই। কিভাবে মনে থাকবে? সময় তো আমি আজ অনেক আগেই থামিয়ে দিয়েছি। হাতের স্মার্ট ওয়াচ বলছিল pulse কোনভাবেই ১২০ এর নিচে নয়। কিন্তু মস্তিষ্কের নিউরনে নিউরনে অনুরণিত হচ্ছিল Its ok…

ফেরার পথে উঠতে গিয়ে ভয়ংকর muscle cramp .. প্রথমে বসে পরলেন গোপালগঞ্জের mocs সাকিব ভাই, ইমরান ভাইয়ের কিঞ্চিত স্পা তাকে দ্রুত সুস্থ করে দিলেও পরপর উইকেট পড়তে লাগলো প্রসেনজিৎ ভাই আলামিন ভাই এবং আমার। আসলে ঝর্ণায় প্রচুর আনন্দ করার পর শরীর ছেড়ে দিয়েছিল।

এদিকে আবার কেউ কাউকে না নিয়ে আগাবে না। প্রচন্ড একটা টিমওয়ার্ক কাজ করছিল আমাদের সকলের ভিতরে। জীবনে এত স্যালাইন ডায়রিয়া হলেও খাইনি। একটু সুস্থ লাগছিল। পথে পেয়েছিলাম লোকোজ বাতাবি লেবু। ৫ মিনিট অপেক্ষা করার পর আবার রওনা দিলাম।

আমাদের guide MD Nurul Islam Raju কথা না বললেই নয়। যেভাবে ও সাপোর্ট দিয়েছে পুরোটা সময়। সুন্দরবনে আমি ওর গাইড হব এই প্রমিস করে এসেছি। প্যারাসিলিং করে আমার হার্টের ব্লক ছুটে গেছিল বলে মনে হয়েছিল, ট্রাকিং করে পেরিফেরাল হার্ট অর্থাৎ পায়ের muscle এ কোন ব্লক থাকলে আজ ছুটে গেছে বলে মনে করছি।

দুর্গম এলাকায় রাখাইনদের জীবনযাত্রা, ক্ষেতে কাজ করা নারীদের কানে বিশেষ ধরনের কানের দুল, নাচান ঘরের ছোট্ট জানালায় কৌতুহলী শিশুর মুখ দেখতে দেখতে এক সময় দেখলাম চোখে আরো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না।

ঘোর সন্ধ্যা নেমে আসছে। হৃদয়ের গহীন থেকে সৃষ্টিকর্তাকে ডাকতে শুরু করলাম কারণ এই পরিবেশের সাথে আমার জীবনে প্রথম পরিচয়। টান টান উত্তেজনায় হাঁটতে শুরু করলাম। পারতেই হবে যেকোনোভাবে। একদম শেষে দূরে দোকানের আলো দেখা গেল। ইমরান ভাইয়ের ভাষায় এটি লাইট অফ Hope !!

শুনলে হাস্যকর লাগতে পারে কেন যেন নিজেকে লাল আমস্ট্রন মনে হচ্ছিল!!!

বিভূতিভুষণের ‘জলে ডাঙায়’ উপন্যাসের সনদ চরিত্র মনে পরল। আমার মতো একজন ছাপোষা মানুষ যে এতোটুকু সময় পেলে ঘুমাতে ভালোবাসে সে জীবনের কোন একদিন এমন দুর্গম পর্বত বনে জঙ্গলে ঝরণা দেখার সুযোগ পাবে কে জানতো?

অনেকেই হয়তো বলবেন এতো কষ্ট করে অতো দূরে ঝরণা দেখার কি দরকার?? প্রকৃতি তার সবচেয়ে অসামান্য নৈস্বর্গিক সম্পদকে লোকচক্ষুর অন্তরালে আগলে রাখতে পছন্দ করে। প্রকৃতি কেবল যোগ্যতমদেরকেই তার এই সৌন্দয্য অবগাহন করার সুযোগ দেয় ।

The finest beauty for fittest !!

প্রায় ৭ঘন্টা (যেতে ৩ ,আসতে ৪) হাঁটার পর এমন লাইন মনে হলো! যদি সত্যি এ দুর্লভ দৃশ্য দেখতে চান তবে যাবেন না হলে বাসায় Discovery তেও অনেক দারুন দৃশ্য দেখা যায়। জীবনের কোন না কোন সময় কঠিন এর স্বাদ নিয়েও দেখা উচিত। সারা জীবন গল্প করার মত কিছু কঠিন আত্মস্থ করে রাখা উচিত।

কিছু টিপস

বন্ধুর পথে চলার জন্য বন্ধু খুব কম। অসুস্থ হলে তাকে সেখান থেকে ফেরত আনা প্রায় অপারগতার কাছাকাছি। তাই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শারীরিক শক্তির কাছে হার মানলেও মনের বল যেন অটুট থাকে।

দিনে দিনে ট্র্যাকিং করার চেয়ে ট্র্যাকিং করে এক রাত থেকে পরের দিন ঝরনা দেখে আবার ট্রাকিং করলে কষ্ট কম হবে। ওখানে রাতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

জোঁক এখানে Normal inhabitants .. বলতে গেলে তাদের ওখানে আপনি বেড়াতে যাচ্ছেন। তারা যেন আপনাকে বেশি একটা জামাই আদর না করে তার জন্য মোজা পরে যান।

পাহাড়ের কাছে গেলে নিজে উদার হবেন । বন্ধু বাৎসল হবেন। টিম ওয়ার্কিং এর মর্মার্থ বুঝতে পারবেন।

পর্যাপ্ত শুকনো খাবার এবং পানি স্যালাইন মাস্ট মাস্ট মাস্ট।

আমরা ১১জন‌। দেশের নানা প্রান্তের । খুলনা, বরগুনা, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, নারায়ণগঞ্জ। জোঁকের কামড় খাইয়া, Severe muscle cramp এর শিকার হইয়া, কাদা জলে আছাড় খাইয়া ১৭ কিলোমিটার থেকে চাঁদ দেখতে দেখতে চাঁদের গাড়িতে ফিরিয়া আসলাম!!

যা ছেড়ে আসতে পারলাম না তাহল শ্বেতশুভ্র ঝর্ণা, সবুজ পাহাড়, হলুদ প্রজাপতির স্মৃতি। এত বড় পাহাড়টা, এই ছোট্ট মনে ঢুকিয়ে না তো সম্ভব নয়। ঝর্ণার পানি এনেছিলাম স্রোত আনতে পারিনি। যে লাঠিটি ধরে পুরোটা সময় হেঁটেছি, সেই বাঁশের লাঠিটি চাঁদের গাড়ি পর্যন্ত সাথে ছিল তারপর আর মনে নেই।

যেটা বুঝলাম সৌখিন মানুষগুলোর প্রত্যেকের মধ্যে এক অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় বদ্ধ উন্মাদ বাস করে। আমরা মনের অজান্তেই আমরা এটা দমিয়ে রাখি। মাত্র একটা দিন আমরা ছুটি চেয়েছিলাম। আমরা ১১জন।

এটা সারা জীবনের জন্য শুধুমাত্র ছুটির দিন না হয়ে মে অসাধারণ এক স্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে বুঝিনি। শারীরিক কষ্টটা হয়তো কয়দিনের মধ্যেই চলে যাবে কিন্তু দুচোখ ভরে যে সৌন্দর্য অবগাহন করে গেছি হয়তো কোনদিন তার ভোলা হবে না।

ভালো থেকো দামতুয়া ঝরনা !
ভালো থেকো বান্দরবান!
আবার দেখা হবে!! হবেই!!!
thanks Mumeet Sami again ..

লিখেছেনঃ Sadia Monowara

error: Content is protected !!